‘বিগ ব্যাং’, মহাবিশ্বের সূচনা, মহাবিশ্বের সব কিছুর উৎপত্তি। সকল পদার্থ ও শক্তির সৃষ্টি।
আজ থেকে প্রায় ১৪০০ কোটি বছর আগে পরমানুর চেয়েও বহুগুন ক্ষুদ্র প্রায় শুন্য আয়তনে ঘটা একটি বিস্ফোরনের মধ্য দিয়ে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি।
‘বিগ ব্যাং’ এর পর সময়ের পরিক্রমায় ধাপে ধাপে এই মহাবিশ্ব বর্তমান অবস্থায় আসে। গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যলাক্সি সব কিছুর শুরু ‘বিগ ব্যাং’।
‘বিগ ব্যাং’ এর পর পর্যায়ক্রমে পৃথিবীর সৃষ্টি এবং পৃথিবীতে ‘প্রথম প্রান’ সৃষ্টির উপযুক্ত পরিবেশ গঠিত হবার সময় পর্যন্ত একটি ধারাবাহিকতা তুলে ধরা হয়েছিল প্রথম পর্বে।
দ্বিতীয় পর্বে তুলে ধরা হয়েছে পৃথিবীতে ‘আদি-প্রাণ’ নামক প্রথম প্রাণের সৃষ্টি হবার পর পর্যায়ক্রমে বর্তমান মানুষের সরাসরি পূর্বপুরুষ ‘প্রাইমেট’ এর উৎপত্তি পর্যন্ত সময়ে প্রাণের ক্রমবিকাশের ধারা।
এখন তৃতীয় পর্বে উল্লেখ করা হচ্ছে প্রথম ‘প্রাইমেট’ এর উৎপত্তি থেকে পৃথিবীতে প্রথম আধুনিক মানুষের আবির্ভাব পর্যন্ত সময়ে প্রাইমেট ও পৃথিবীর বিভিন্ন পরিবর্তন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা।
- পাচ কোটি বছর পূর্বে আমাদের পূর্বপুরুষ ‘প্রাইমেট’ দের উদ্ভব হয় পৃথিবীতে। সেসময় আফ্রিকা ও আমেরিকা মহাদেশ নির্দিষ্ট আকৃতি প্রাপ্ত হয় যেটি প্রায় বর্তমানের কাছাকাছি। পৃথিবী হয়ে ওঠে উত্তপ্ত।
এসময় উত্তর আফ্রিকার কাছাকাছি সমুদ্রের তলদেশে ঘটে এক অভুতপূর্ব ঘটনা। সমুদ্রতলে ক্ষুদ্র একপ্রকার জীবের মৃতদেহ বহু আস্তরনে জমা হতে থাকে যাদের দেহের উপাদান ছিল মুলত ক্যালসিয়াম এবং কার্বন। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে জমা হয়ে এই আস্তরন রুপান্তরিত হয় চুনা পাথরে।
এই চুনাপাথরই মানব সভ্যতার সপ্তাশ্চর্যের একটি ‘পিরামিড’ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। এমনকি আমাদের বসবাসের বাড়িঘর তৈরীতে যে সিমেন্ট ব্যবহৃত হয় তার অন্যতম মূল উপাদান চুনা পাথরও সেই কোটি বছরের পুরনো লক্ষ বছর ধরে রুপান্তরিত হওয়া চুনা পাথর।
- এখন থেকে প্রায় এক কোটি বছর অতীতে পৃথিবীতে তৈরী হতে শুরু করে আমাদের বর্তমান পৃথিবীর মত দৃশ্যপট। কলোরাডো নদী ও গ্র্যান্ড ক্যনিয়নের সৃষ্টি হয়, তৈরী হয় হিমালয় পর্বত। হিমালয় এসময় এতই উচু হয়ে যায় যে এটি আবওহাওয়ার ধরনের পরিবর্তন ঘটায়। উত্তপ্ত পৃথিবীকে তুলনামূলক ঠান্ডা একটা অবস্থায় নিয়ে আসে।
আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যেদিয়ে চ্যানেলের মত একটি অবিচ্ছিন্ন দ্বীপ সৃষ্টি হয়ে উত্তর ও দক্ষিন আমেরিকার মধ্যে সংযোগ ঘটায়। এর ফলে সৃষ্ট সমুদ্রস্রোতের পরিবর্তন পৃথিবীকে আরো ঠান্ডা করে এক বরফ যুগের সূচনা করে।
‘প্রাইমেট’ রা বসবাস শুরু করে পৃথিবীর উষ্ণ অঞ্চল গুলোতে।
- বর্তমান থেকে সত্তর লক্ষ বছর পূর্বে ‘প্রাইমেট’ বিবর্তিত ও প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে টিকে গিয়ে হয়ে ওঠে আমাদের আরো কাছাকাছি পূর্বপুরষ যার নাম ‘এপ’। এরা বৃক্ষবাসী হয়ে এসময় বেশ সাচ্ছন্দেই জীবন যাপন করছিল পৃথিবীতে।
তখনই পৃথিবীতে ঘটে আরেকটি বিপ্লব যেটি ‘এপ’ কে ‘মানুষ’ এ বিবর্তিত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছিল। ঘটে যায় ‘ঘাস বিপ্লব’। পৃথিবীর বুকে দেখা যায় ঘাস নামের নতুন একধরনের উদ্ভিদ। আকারে ছোট হয়েও পৃথিবীতে বিস্তীর্ন অঞ্চল দখল করে নেয় ঘাস। বিশাল বিশাল বৃক্ষ জঙ্গল বিলুপ্ত হয়ে সেখানে সৃষ্টি হয় তৃনভুমি। আফ্রিকার তৃনভুমি, ইউরেশিয়ার তৃনভুমি, উত্তর আমেরিকার তৃনভুমি, আর্জেন্টিনার বৃহত্তর তৃনভুমি ঘাস বিপ্লবের সময় সৃষ্ট।
ঘাস বিপ্লব ঘটার পরবর্তী সময়ে পূর্ব আফ্রিকায় কিছু সংখ্যক ‘এপ’ বাস করত। সেখানে তখন তৃনভূমির ভেতরেও কিছু বৃক্ষ অবশিষ্ট ছিল ‘এপ’ দের জন্য। তবে সেগুলোর একটা থেকে আরেকটি ছিল বেশ দূরে দূরে। তাই এক গাছের ‘এপ’ রা সেই গাছেই থাকত। প্রজন্মান্তরে একই গাছে ‘এপ’ এর সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং খাদ্যাভাব দেখা দেয়। খাদ্যসংস্থানের তাগিদে কিছু ‘এপ’ নেমে আসে গাছ থেকে মাটিতে। যেটি মানবসভ্যতা তথা মানুষ সৃষ্টির পথে এক বড় ধরনের অগ্রগতি।
গাছের ‘এপ’ মাটিতে নেমে আশার পর থেকেই শুরু হয় তাদের মানুষে বিবর্তনের মূল প্রক্রিয়া। তারা ঘাসের উপর দিয়ে মাথা উচু করে দেখার চেষ্টা করে শত্রু থেকে নিরাপদ থাকতে। এভাবে তারা একসময় দুইপায়ে ভর করে দাড়াতে ও হাটতে সক্ষম হয়। এটি ছিল মানব সভ্যতার জন্য যুগান্তকারী একটি ঘটনা। কারন দুই পায়ে দাড়ানোর সাথে সাথে ‘এপ’ রা পায় দুটি আপাত মুক্ত অঙ্গ; যার নাম ‘হাত’। এ হাত দিয়েই মানুষ শুরু থেকে সভ্যতা নিয়ে এসেছে আজকের অবস্থায়। এসময় এই ‘এপ’ রা বিবর্তিত হতে থাকে ‘প্রোটো-হিউম্যান’ নামে পরিচিত ‘হোমিনিড’ এ।
- আজ থেকে প্রায় ২৫ লক্ষ বছর পূর্বে ‘হোমিনিড’ রা দুই পায়ে সচ্ছন্দে ঘুরে বেড়ায় পৃথিবীর পাথুরে মাটিতে। তখনকার মাটিতে ছড়িয়ে থাকা পাথর ছিল সিলিকন অক্সাইডে পূর্ন। সিলিকন অক্সাইডে পূর্ন থাকায় ‘হোমিনিড’ রা সেই পাথর নিয়ে সহজেই ভেঙ্গে ধারাল প্রান্ত তৈরী করে যেটি ছিল মানুষের প্রথম অস্ত্র বা প্রথম তৈরী কোন শিকার সরঞ্জাম।
এই সেই সিলিকন যেটা ২৫ লক্ষ বছর পূর্বে আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবনে নিয়ে এসেছিল বৈপ্লবিক পরিবর্তন আবার ২৫ লক্ষ বছর পরে বর্তমানে আমাদের জীবনে নিয়ে এসেছে অবিস্মরনীয় অগ্রগতি। হাতের ইলেক্ট্রনিক ঘড়ি, পকেটের সেলুলার ফোন, রিমোট কন্ট্রোল থেকে শুরু করে পারসোনাল কম্পিউটার, সুপার কম্পিউটার এবং রোবট ও কৃত্রিম স্মৃতি ও বুদ্ধিমত্তার প্রধান উপাদান ইলেক্ট্রনিক আইসি এবং চীপ এর মূল কাচামাল হিসাবে ব্যবহৃত সেমিকন্ডাক্টার সেই একই পদার্থ সিলিকন। - এরপর সময় এগিয়ে চলে। প্রায় ১৫ লক্ষ বছরের পথ পরিক্রমায় হোমিনিড রা বিবর্তিত ও প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে পর্যায়ক্রমে হোমো ইরেকটাস, হোমো হ্যাবিলিস এবং সবশেষে হোমোসেপিয়েন্সে পৌছে। যে হোমো সেপিয়েন্স আমরা, ‘মানুষ’।
- প্রায় আট লক্ষ বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষেরা; আদি মানুষ প্রথম আগুনকে নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়। আগুনে ঝলসিয়ে খাবার গ্রহনের জন্য বেশি শক্তি পাওয়া সম্ভব হয়, যেটি সেসময়ের মানুষের আরো বড় আকারের মস্তিস্ক তৈরীতে সাহায্য করেছিল।
আর এই প্রায় আট লক্ষ বছর আগের প্রথম নিয়ন্ত্রিত ও প্রথম কাজে লাগানো আগুন সভ্যতার সকল পর্যায়ে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে ও আসছে। এই নিয়ন্ত্রিত আগুনকে কাজে লাগিয়ে পাত্র তৈরী, যুদ্ধাস্ত্র তৈরী থেকে শুরু করে প্রথম ইঞ্জিন - স্টীম ইঞ্জিন এবং বর্তমানের হাজার হর্সপাওয়ারের IC Engine এর গাড়ি সবই লক্ষ বছরের পুরানো আগুনের ব্যবহার, যা আমরা শিখেছি আদি-আত্মীয়দের কাছ থেকে। - প্রায় ২ লক্ষ বছর পূর্বে বিবর্তিত ‘প্রাইমেট’ বর্তমান ‘মানুষ’ এ বিবর্তনের পূর্নতা লাভ করে। মানুষের গঠন পূর্নাঙ্গভাবে আধুনিক মানুষের সমকক্ষ হয়। ষড়যন্ত্র জটিল গঠনের হয় যাতে শুধু কোন নির্দিষ্ট শব্দ না হয়ে যা থেকে উৎপন্ন করা যায় নানাবিধ ভিন্ন ধরনের সংকেত।
এ পর্বে প্রথম প্রাইমেট থেকে প্রথম মানুষ পর্যন্ত সময়ে প্রাইমেট ও পৃথিবীর অবস্থার পরিবর্তন-পরিবর্ধন নিয়ে আলোকপাত করা হল। পরবর্তী পর্বে থাকছে প্রথম ‘আধুনিক মানুষ’ আবির্ভাবের পর থেকে বর্তমান মানব সভ্যতার উন্মেষের কথাচিত্র।
তথ্যসূত্রঃ-
১. http://www.history.com
২. সভ্যতা ব্লগ
৩. উইকিপিডিয়া
বিঃদ্রঃ - টিউনের প্রতিটি অংশ উল্লেখিত সূত্র থেকে সংগৃহীত। টিউনের কোন অংশে কোন প্রকার তথ্যগত ত্রুটি, অনিচ্ছাকৃত ভুল বা অন্য যেকোন বৈজ্ঞানিক বিষয়ের ভুল অবতারনা থাকলে সেটিকে যথাযথ বৈজ্ঞানিক প্রমান, প্রামাণ্য দলিল বা নির্ভরযোগ্য সূত্রের সাপেক্ষে ধরিয়ে দিলে তা সানন্দে সংশোধন করা হবে।
বিজ্ঞান; তত্ত্ব, তথ্য, যুক্তি, প্রমান ও পর্যবেক্ষনগত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়।
তাই কারও কোন ব্যক্তিগত, জাতিগত বা সামষ্টিক "বিশ্বাসের" পরিপন্থি কিছু থাকার জন্য সেটিকে ভুল বলে আখ্যায়িত করা হলে তা গ্রহনযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। এধরনের কারনে একে ভুল বলে কোন টিউমেন্ট করা হলে টেকটিউনসের নীতিমালা ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে টিউমেন্টের কোন উত্তর না দিয়েই তা অপসারন করা হবে।
চালিয়ে যান। দারুন হচ্ছে । পরেরটা কবে পাব ?