লেখক:রাহাদ
মটোরসাইকেল এবং বাইসাইকেল প্রমিকদের অন্যতম পছন্দের stunts হলো হুইলী (wheelie)। বর্তমানে আমাদের দেশেও এর ব্যাপক প্রচলন হয়েছে। যারা সাইকেল নিয়ে প্রাইভেট কিম্বা কোচিং এ যায় তাদেরকে রাস্তাঘাটে মাঝেমাঝেই এসব কেদ্দারী মারতে দেখা যায়।
প্রথম যখন এটা দেখেছিলাম, আমিতো হতভম্ব। কিভাবে এটা সম্ভব। আমার এক বন্ধু বললো "তুই না অনেক বিজ্ঞান জানিস আর এটা জানিস না,,, তাহলে কি জানিস তুই"। তখন ভাবলাম এর বিজ্ঞানটা আজ জেনেই ছাড়বো। বসেপড়লাম আমার নতুন সাইকেল আর খাতা কলম নিয়ে। কয়েক ঘন্টা পর,,,, ইউরেকা... ইউরেকা...
সাইকেলের সামনের অংশকে শূন্যে উঠিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাওয়কে হুইলী বলে। চলুন জেনে নেই এর কৌশল এবং বিজ্ঞানঃ-
হুইলী করার জন্য প্রথমেই চালক তার সাইকেলের গিয়ার কমিয়ে নেন। মানে এটা সাইকেলের এমন অবস্থা যাতে চালক অনেক বেশি পেডেল করলেও অল্প দূরত্ব অতিক্রম করে। এই গিয়ারে সাইকেল অনেক আস্তে চলে কিন্তু এর ক্ষমতা থাকে অনেক বেশি, ফলে লো গিয়ারে অনেক ভর বহন করা যায় এবং অনেক উঁচু স্থানে উঠতেও তেমন কোন সমস্যা হয় না।
হুইলীর কৌশল দুটি ধাপে বর্ণনা করছি-
১ম ধাপ:- প্রথমে সাইকেল চালক একটু ধীরে ধীরে চালাতে থাকেন এবং হঠাৎ করেই হেঁচকা টান দিয়ে সাইকেলের সামনের অংশটাকে শূন্যে তোলেন।
২য় ধাপ:- সাইকেলের সামনের অংশ শূন্যে ওঠার সাথে সাথেই চালক সাইকেলে দ্রুত পেডেল করতে শুরু করেন এবং সাইকেলের সামনের অংশ আরএকটু উপড়ে উঠে এভাবেই চলতে থাকে যতক্ষণনা চালক পেডেল করা বন্ধ করেন।
তাহলে কেন সাইকেলের সামনের অংশটা আবার মাটিতে না পড়েই শূন্যে ভেসে থাকে যতক্ষণ চালক পেডেল করতে থাকে?? বিজ্ঞানটা এখানেই,,,,
এটা কেন হয় তা ভাল ভাবে বুঝতে হলে আমাদেরকে একটু মহাশূন্য থেকে ঘুরে আসতে হবে, অভিকর্ষ জিনিসটাকে আমি এমনিতেই সহ্য করতে পারি না 🙂
ধরুন মহাশূন্যে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের গায়ে একট লোহার পাইপ লাগানো আছে। আপনি আপনার পছন্দের সাইকেল সেখানে নিয়ে গেলেন এবং ঐ পাইপের সাথে আপনার সাইকেলের পেছনের চাকাটা এমন ভাবে বাঁধলেন যেন সাইকেলটাকে পেছনের চাকাকে কেন্দ্র করে ঘুরানো যায়( বাড়িতেও করে দেখতে পারেন সাইকেলকে মাটিতে শুইয়ে পেছনের চাকা দুই হাত দিয়ে ধরে দেখবেন সাইকেলকে ঘুরাতে পারবেন পেছনের চাকাকে কেন্দ্র করে)। এখন যদি আপনি সাইকেলে চড়ে পেডেল করা শুরু করেন(মহাশূন্যে) তাহলে দেখতে পাবেন যে, সাইকেলটা চাকাকে কেন্দ্র করে ঘুরতে শুরু করবে পেছনের দিকে । সেই নিউটনের ৩য় সূএ:- প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান এবং বিপরীত মুখী পতিক্রিয়া আছে। আপনি যখন সাইকেলটাতে বল প্রয়োগ করছেন তখন চেইনের মাধ্যমে পেছনের চাকাতে বল প্রয়োগ করা হচ্ছে কিন্তু পেছনের চাকা যেহেতু পাইপের সাথে বাঁধা তাই এটা ঘুরতে পারবে না। ফলে এটা একটা পতিক্রিয়া বল সাইকেলে প্রয়োগ করবে যা হবে সমান ও বিপরীত মুখী। ফলে আপনি সাইকেলের চাকাটাকে সামনের দিকে ঘুরাতে চাচ্ছিলেন উল্টা আপনিই সাইকেল সহ পেছনের দিকে ঘুরবেন। প্রয়োজনের সার্থে আমি এই ব্যাপারটাকে হুই ইফেক্ট নাম দিলাম (পড়ে আলোচনায় কাজে লাগবে)।
চলুন এখন আবার পৃথিবীতে ফেরা যাক।
হুইলী করার জন্য যখন হেঁচকা টান দিয়ে সাইকেলের সামনের অংশটাকে উপরে তোলা হয় তখন সাইকেলের এবং চালকের সমস্ত ওজন চাপে পেছনের চাকার উপরে। ফলে সাইকেলের পেছনের চাকায় মহাশূন্যের ওই বেঁধে রাখা চাকার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়(আংশিক) যেহেতু এর উপরে অনেক ভর চাপানো আছে, কিন্তু আংশিক হওয়ার কারণ হলো এটা একেবারে বাঁধা অবস্থাতেও নেই। এখন যদি চালক পেডেল করতে শুরু করেন তাহলে হুই ইফেক্ট এর কারণে সাইকেলটা উপরের দিকে উঠতে চাইবে, কিন্তু অভিকর্ষও তো ছেড়ে কথা বলবেনা,, সেও তার কাজ করতে চাইবে কিন্তু চালককে এতটা জোরে পেডেল করতে হবে যেনো হুই ইফেক্ট এর শক্তির পরিমাণ অভিকর্ষকে হার মানায়। তবে অতিরিক্ত জোড়ে পেডেল করার ফলে যদি হুই ইফেক্ট এর পরিমান অভিকর্ষের তুলনায় বেশি হয়ে যায় তাহলে সাইকেল উল্টে যাবে। এসব জিনিস মাথায় রেখে চালককে পরিমাণ অনুযায়ী পেডেল করতে হবে তবেই চালক হুইলী করতে পারবেন। সাইকেল কিছুটা সামনের দিকেউ এগিয়ে যাবে কেননা সাইকেলতো মাটির সাথে একেবারে আটকানো নেই।
আমি অবশ্য হুইলী করতে পারিনা, কিন্তু এর বিজ্ঞানটা জানি। কোনটা বেশি আনন্দের: হুইলী করতে পারার , নাকি এর বিজ্ঞানটা জানার! 🙂
এই জরাজীর্ণ ধরায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বানে সাতাঁর কাটতে যোগ দিতে পারেন সায়েন্স এভরিথিং টিমের সাথেe
মজার সব ইউনিক কন্টেন্ট পাবেন আমাদের অনলাইন সায়েন্স ম্যাগাজিন সাইটে
আমি সাঈদ মোহাম্মদ ফাহিম আবরার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 24 টি টিউন ও 67 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি এস এম ফাহিম আবরার। ভালবাসি প্রযুক্তিকে জানতে। নিজের জানা জিনিস অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। আমার ফেসবুক আইডি http://fb.com/lazyfahim
valo! Thanks