কৃষ্ণশক্তি ও কিছু অসঙ্গতি- INCONSISTENCY IN THE DARK ENERGY CONCEPT

আসসালাম ওয়ালাইকুম,দীর্ঘ সময় পর টিউন নিয়ে আসলাম।এই লেখাটি আমার বাবার ব্লগ থেকে নেয়া।

সময় পরিবর্তনের দীর্ঘ পরিসরে ভাবুকদের মনে মহাকর্র্ষ শক্তি ঘুরপাক খাচ্ছিল প্রবলভাবে, কিন্তু এই মহাকর্ষ ও তাদের কাছে বিপত্তি হয়ে দাঁড়াল যখন তারা জাতে পেলেন আমাদের মহাবিশ্ব সম্প্রসারনের ধারায় এক অজানার পথে ছুটে চলেছে অমিয় গতিতে। তারা এই বিপত্তির সুরাহা করতে উঠে পড়ে লাগলেন; যদিও তাদের মনে আগে থেকেই সন্দেহ দোলা দিচ্ছিল এই ভেবে যে, মহাকর্ষের এই বিপুল সমাহারে মহাজাগতিক বস্তুগুলো কিভাবে অসীম গতিতে ঘুরছে ও পরিক্রমন করছে। মনকে বুঝাবার জন্যে তারা ধরে নিয়েছিলেন মহাজাগতিতক এই বস্তুগুলো মহাবিস্ফোরনে সৃষ্টি হবার সময় থেকেই প্রাপ্ত হয়েছে ইক্ত গতি এবং প্রকৃতির নিয়মেই আজও সচল রয়েছে। কিন্তু বিষয়টা তাদের কাছেও অসামজ্ঞস্যপূর্ণ রয়ে গেছে। তাই গবেষণা থেমে থাকেনি। ১৬৮৭ খৃষ্টাবেদ বিজ্ঞান পিতা নিউটন তার বিখ্যাত গ্রন্থ Plilosophiae Naturalix Principia Mathematica তে মহাকর্ষের পূর্নাঙ্গ চিত্র তুলে ধরেন। বিজ্ঞান জগতে প্রায় ৩০০ বছরের বিবর্তনের ধারায় বিজ্ঞান ১৯৯০ সালের শেষের দিকে স্থির নিশ্চিত হয়েছে যে, আমাদের মহাবিশ্ব তরান্বিত গতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে। প্রবল মহাকর্ষের বিরুদ্ধে এই সমপ্রসারণ প্রক্রিয়ায় প্রচুর শক্তি ঘনত্বের প্রয়োজন; বিজ্ঞানীরা যখন এই সত্যকে আর অস্বীকার করতে পারলেননা তখন তাদের সামনে প্রশ্ন এসে দাঁড়াল, মহাবিশ্ব এই শক্তি পাচ্ছে কোথায়? অথচ মহাকর্ষের প্রবল টানে আমাদের মহাবিশ্ব চুপসে যাওয়াই ছিল যুক্তিযুক্ত। ১৯৯৮ সালে যখন হাবল টেলিস্কোপ প্রমাণ করল যে, আমাদের মহাবিশ্ব ত্বরাণ্বিত গতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে; তখন বিজ্ঞানীদের অনেকের মনেই এক নতুন ধারনার জন্ম নিল, তারা বললেন, সম্ভবত কোন এক অজানা প্রাকৃতিক শক্তির প্রবাহ আমাদের মহাবিশ্বকে পূর্ণ করে রেখেছে,এর প্রভাবেই সৃষ্টি থেকে অদ্যাবধি এই মহাজাগতিক ত্বরণ সৃষ্টি হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এই শক্তির নাম দিলেন কৃষ্ণ শক্তি। অনেক পরীক্ষা নীরিক্ষা তথ্য প্রমানের মাধ্যামে তারা নিশ্চিত হলেন যে আমাদের মহাবিশ্ব এই কৃষ্ণ শক্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে আছে; তবে তারা এই শক্তির উৎসের কোন ব্যাখ্যা দিতে পারলেননা। প্রায় ১৫ শত কোটি বছর ধরে এই সম্প্রসারণ চলে আসছে, তারা সময়ের সাথে সম্প্রসারণের লেখচিত্র অঙ্কণ করে দেখলেন যে, সময়ের সাথে তা বেকে যাচ্ছে এবং মাঝপথে এসে এই লেখ যথেষ্ট বাঁক নিয়েছে অর্থাৎ মাঝামাঝি সময়ে সম্প্রসারণের গতি যথেষ্ট ত্বরাণ্বিত হয়েছে। জ্যোতিবিজ্ঞানীরা বললেন, এক রহস্যময় শক্তি ছায়াপথগুলিতে দ্রুত বেগে দূরে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। তারা হিসেব করে বললেন মহাবিশ্বের ৭০ শতাংশ এই কৃষ্ণশক্তি আর ২৫ শতাংশ কৃষ্ণপদার্থ বাকী ৫ শতাংশ মহাজাগতিক পদার্থ।

 

সূধী পাঠক, আসুন দেখি এই কৃষ্ণশক্তি নিয়ে বিজ্ঞান তার ভাষায় কি বলছে, ভৌত সৃষ্টি তত্ত্ব ও জ্যোতিবিজ্ঞানে কৃষ্ণশক্তি এক প্রকার তাত্ত্বিক শক্তি যা সমগ্র মহাশূণ্য জুড়ে রয়েছে এবং মহাশূণ্যের ত্বরান্বিত সম্প্রসারন কাজে সহযোগিতা করছে। বর্তমানে এটিই মহাবিশ্বের সম্প্রসারণে সবচেয়ে বেশী গ্রহনযোগ্য তত্ত্ব। সৃষ্টিতত্ত্বের আদর্শ কাঠামো অনুযায়ী পদার্থ-শক্তির সাম্যতার ধারনার উপর ভিত্তি করে প্লাঙ্ক মিসন দল বলছেন যে, আমাদের দৃশ্য মহাবিশ্বের ২৬.৮% কৃষ্ণ পদার্থ, ৬৮.৩% কৃষ্ণ শক্তি এবং অবশিষ্ট ৪.৯% দৃশ্য সাধারন পদার্থ রয়েছে। ভর-শক্তি সাম্যতা অনুযায়ী কৃষ্ণ শক্তির ঘণত্ব 1.67 × 10−27 kg/m3   যা আমাদের হিসেবে অত্যান্ত কম; বলা যায় সমগ্র সৌর মণ্ডলে প্লুটোর ব্যসার্ধ অনুযায়ী কৃষ্ণ শক্তির পরিমান মাত্র ৬ টন; তথাপি এই শক্তিই মহাবিশ্বের ভর-শক্তিকে শাষণ করছে।

সূধী পাঠক, আমরা দেখলাম, বিজ্ঞানের ভাষ্যমতে প্লুটোর কক্ষ পরিধীতে যে পরিমান কৃষ্ণশক্তি রয়েছে তার ওজন মাত্র ৬ টন; সূত্র- উিইকিডিয়া ‘dark energy

Again on a mass–energy equivalence basis, the density of dark energy (1.67 × 10−27 kg/m3) is very low: in the solar system, it is estimated only 6 tons of dark energy would be found within the radius of Pluto’s orbit. However, it comes to dominate the mass–energy of the universe because it is uniform across space.[6]From Wikipedia, the free encyclopedia

প্রাক্কলিত এই হিসেব থেকে আমরা যদি সৌর মণ্ডলে মোট কৃষ্ণশক্তির পরিমান কল্পনা করি তা হলে হয়তোবা কয়েক মিলিয়ন টন হতে পারে; কিন্ত আমরা বিজ্ঞানের কাছে জেনেছি শুধুমাত্র আমাদের মাতৃ গ্রহটির্ পদার্থ ভর 5.97219×1024 kg, আর সূর্যের ভর হল (1.98855±0.00025)×1030 kg[1],যা আমাদের পৃথিবীর ভরের প্রায় 333000 গুণ; এমতাবস্থায় সৌর মণ্ডলের পদার্থ ভর হিসেব করলে হয়তো তা অকল্পনীয় হয়ে দাঁড়াবে। মহাবিশ্ব সৃষ্টি নিয়ে বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক ধারণা ছিল, এই বস্তুনিলয় শূণ্যতা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানের কাছে সৃষ্টির উৎস জানা নেই বলেও এই শূণ্যতার প্রস্তাবটি সকল বিজ্ঞানী খুশী মনে মেনে নিতে পারলোনা; কারণ বিজ্ঞান যুক্তির বাইরে কথা বলতে নারাজ। গবেষণা চলতে লাগলো, বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেলেন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের ধারা। মহাবিশ্বের এই এই সম্প্রসারণশীল সাম্রাজ্যে বিজ্ঞানীরা মহাকর্ষ নিয়ে পড়লেন বিপাকে, জটীল সমস্যা; এই দূর্বার আকর্ষণ শক্তিকে আগ্রাহ্য করে মহাবিশ্বের বস্তুনিলয় ছুটে চলেছে অজানার পানে। এই সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞান খুঁজে পেল কৃষ্ণশক্তিকে। শুরু হল কৃষ্ণশক্তির উৎসের সন্ধান, অদ্যাবধি কোন খোঁজ পাওয়া গেলন। শেষ অবধি বিজ্ঞান ধরে নিচ্ছে মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময়ে বিগব্যাঙ থেকে এই শক্তির প্রবাহ শুরু হয়েছে এবং সেই শক্তিই আজও আমাদের মহাবিশ্বকে বয়ে চলছে। বিজ্ঞান আরও বলছে মহাজাগতিক বস্তুনিলয় তৈরীর উৎসও এই কৃষ্ণশক্তি। মোটামুটিভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য কিছুটা হলেও হালকা হয়ে এল। এ ক্ষেত্রে আমরা ধরে নিলাম মহাবিশ্ব সৃষ্টিকালীন সময়ে আপনা থেকেই এই অজানা শক্তিটির অভূদ্বয় ঘটেছে। এখন বিজ্ঞানের সামনে প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে এই শক্তির ঘণত্ব ও পরিমান নিয়ে। একদিকে বিজ্ঞান বলছে বিগব্যাঙ থেকে সুনির্দিষ্ট পরিমান শক্তি ঘণত্ব নিয়ে মহাবিশ্ব যাত্রা শরু করেছে, আর মহাজাগতিক সকল বস্তুসামগ্রী এই শক্তিরই বিবর্তন থেকে উৎপন্ন হয়েছে, অপর দিকে বলছে এই শক্তির ঘণত্ব নিতান্ত কম। উল্লিখিত এই তিনটি ব্যবস্থার সমন্বয় করতে গেলে বিষয়টি ব্যাখ্যাশূণ্য হয়ে পড়ে।

বিজ্ঞান বলছে,মহাবিশ্বের সার্বিক ভর শক্তির পরিমান নিত্য; অর্থাৎ বিগব্যাঙ থেকে প্রাপ্ত শক্তি ও অদ্যাবধি আবির্ভূত ভরের যোগফল সমান; বিষয়টি আরও পরিস্কার করে বললে বলতে হয়,মহাবিস্ফোরনের সময় শক্তির যে প্রবাহ ঘটেছিল তার পরিমান স্থির। বিবর্তনের ধারায় যত মহাজাগতিক বস্তু তৈরী হয়েছে তা সবই শক্তির রূপান্তরিত অবস্থা। এখানে ধরে নেওয়া হয়েছে মহাবিস্ফোরনটি একটি আকষ্মিক ঘটনা। আমরা যদি তাকে বেদবাক্য ধরেও নেই তবে এ কথা বলার সুযোগ নেই যে,তারকা সৃষ্টি কোন আকষ্মিক ঘটনা। আর বিজ্ঞান যদি এ কথা বলতে চায়ও তবে আর ভাবনা চিন্তার প্রয়োজন নেই, যেখানে ব্যাখ্যা শূণ্যতার সৃষ্টি হয় সেখানেই আকষ্মিক ঘটনা বলে চালিয়ে নেওয়া যায়। যাক সে কথা- বিজ্ঞান তা বলেনি, কিন্তু বর্তমান মহাবিশ্বের শক্তি ঘণত্ব ও এ পর্যোন্ত উৎপন্ন পদার্থ ও মহাকাশে প্রক্রিয়াধীন পদার্থের কোন সুষ্ঠ হিসেব বিজ্ঞানের হাতে নেই,এবং তা করতে বসলেও সামঞ্জস্যহীন হয়ে পড়ারই কথা।

আমরা জানি বর্তমান মহাবিশ্বে শক্তি ঘণত্ব 1.67 × 10−27 kg/m3 , যা অত্যান্ত কম। এমনিতর ঘণত্বের মাঝে মহাকাশীয় বস্তুনিলয়ের জন্ম ও তার বিবর্তন এবং একসময়ে অতিকায় ভর বিশিষ্ট বস্তুতে রূপান্তর সার্বিকভাবে ব্যাখ্যাশূণ্য হয়ে পড়ে। তার পরেও যদি বলাহয় পদার্থের রূপায়ন কৃষ্ণশক্তি তেকেই ঘটে তবে তা ব্যাখ্যার দাবী রাখে। সে ক্ষেত্রে বিজ্ঞানকে নতুন করে সার্বক্ষণিক শক্তি উৎপাদন ও প্রবাহের কোন উৎসকে স্বীকার করে নিতেই হবে; নইলে মহাজাগতিক পদার্থ সৃষ্টি ব্যাখ্যা শূণ্য হয়ে পড়ে।

আধুনিক বিজ্ঞানের কর্ণধার বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন, E=mc², যা বিজ্ঞান জগতে চিরন্তন সত্যের রূপ নিয়েছে। এই সূত্রটি শক্তি ও ভরের সুসম্পর্ক স্থাপন করেছে। পরীক্ষার মাধ্যামে এর সত্যতা যাচাই করা হয়েছে। পরীক্ষার মাধ্যামে যাচাই করা হলেও এখানে যৌক্তিক দিকটা বিবেচ্য। সুতরাং মহাজাগতিক বস্তুর সৃষ্টিতে অপরিমেয় শক্তি ঘণত্বের প্রয়োজন, যা বিগব্যাঙের অনুমেয় হিসেবের সাথে মিলেনা,বিজ্ঞান বলছে,ঘণিভূত শক্তির অতি ক্ষুদ্রায়তন থেকে সৃষ্টি হয়েছে আমাদেরএই মহাবিশ্বের ভ্রূণ; আর সেই ভ্রূণ বিবর্তীত হয়ে সৃষ্টি করেছে বর্তমান মহাবিশ্বকে। অর্থাৎ আদিতে মহাবিশ্বের অতি ক্ষুদ্র ভ্রূণ সৃষ্টি হয়ে সময়ের পরিবর্তনে তা বর্তমান আকৃতি পেয়েছে; এমতাবস্থায় ভেবে দেখার সুযোগ রয়েছে যে, সেই ক্ষুদ্রাকৃতি ভ্রূণমহাবিশ্বের মধ্যস্থিত ভরশক্তি কি করে এতবড় মহাবিশ্বে বিবর্তীত হল? এপ্রশ্ন আজও বিজ্ঞানের কাছে প্রশ্ন হয়েই রয়েগেছে। বিজ্ঞানীরা প্রমান করতে চেয়েছেন যে, ঐ ক্ষুদ্রায়তনেই যাবতীয় ভর শক্তি ঘণীভূত অবস্থায় থাকা সম্ভব। তবে ভৌত পদার্থবিদ্যা বিষয়টিকে মানতে নারাজ।

এ ছাড়াও রয়েছে তাপীয় অবস্থায় অসামঞ্জস্যতা। বিজ্ঞান বলছে মহাবিস্ফোরণের পর মহাবিশ্বের তাপীয় অবস্থা ছিল বয়াবহ রকমের। তাপমাত্রা ছিল বিলিয়ন বিলিয়ন ডিগ্রী। আমরা জানি কোন পদার্থের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে তার নিজস্ব তাপীয় অবস্থা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত; অভ্যান্তরীণ তাপ বৃদ্ধির ফলেই পাশাপাশি বস্তুর তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। এখন প্রশ্ন হল বস্তুর তাপমাত্রা কতদূর বৃদ্ধি সম্ভব? বিজ্ঞান বলছে কোন বস্তুর তাপমাত্রা নির্দিষ্ট পরিমান বৃদ্ধি করা যায়। কোন বস্তুর তাপমাত্রার পরিমান অসীম সংখ্যায় বৃদ্ধি করা যায়না। যে কোন কঠিন পদার্থকে তাপ দিলে তার তাপমাত্রা একটা নির্দিষ্ট পরিমান বৃদ্ধির পর তার আকৃতির পরিবর্তন ঘটতে থাকে; অর্থাৎ বস্তুটি তরল হয়ে অবশেষে বাস্পীভূত হয়ে যায়। তাহলে বলাযায় খোলা অবস্থায় কোন পদার্থেরই তাপমাত্রা তার বাস্পীভবন তাপমাত্রার বেশী বাড়ানো যায়না। আবদ্ধ পাত্রে কোন পদার্থের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে অভ্যান্তরীণ চাপ বৃদ্ধি পায় এবং তা একসময় বিস্ফোরণ পর্যোন্ত গড়াতে পারে। হতে পারে এমনি কোন উপায়ে বিগব্যাঙ সংঘটিত হয়েছিল, তবে এ ক্ষেত্রে পাত্র এবং অভ্যান্তরীণ পদার্থ সমজাতীয় হলে তা বিস্ফোরিত না হয়ে দ্রবীভূত হয়ে পড়বে। যদি ভাবা হয় বিগব্যাঙ বহিস্থ তাপে বিস্ফোরনের মাধ্যামে ঘটে ছিল তবে ধরে নিতে হবে সেই পদার্থগলো ছিল বিস্ফোরক জাতীয়, যার মধ্যে শক্তি সুপ্ত অবস্থায় থাকে। আমরা এও ধরে নিতে পারি যে এমনি কোন সুপ্ত শক্তির বিস্ফোরন থেকেই আমাদের এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। এখন সমস্যা হল সেই ঘণীভূত পদার্থের পরিমান নিয়ে। বিজ্ঞান যে সুক্ষ আয়তনের ঘণীভূত পদার্থের হিসেব দিয়েছে তাতে বিস্ফোরণের পর তাপমাত্রাবৃদ্ধির বিষয়টি নিতান্তই সামঞ্জস্যহীন। আমরা জানি কোন পদার্থের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে তার তাপের পরিমান বৃদ্ধির কারণে। পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে ধারণ ক্ষমতার একটা সম্পর্ক রয়েছে; ধারণকৃত তাপের পরিমানের উপর নির্ভর করে তাপমাত্রা বৃদ্ধিপায়। সুতরাং অতি সুক্ষ পরিমান পদার্থভরের তাপমাত্রা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়া প্রায় অসামঞ্জস্যতা পূর্ণহয়ে যায়।

আমরা জানি কোন দর্শণ যুক্তির মাধ্যামে বিজ্ঞান কর্তৃক প্রকল্পিত হয় এবং তা পরীক্ষা নীরিক্ষার মাধ্যামে নিত্যতা পায়। আমরা যদি আইনস্টাইনের সূত্রটিকে সঠিক ধরে নেই তবে, m = E/c²., অর্থাৎ সামান্য ভর তৈরীতে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন। মহাকাশে যে শক্তিঘণত্বের হিসেব দেওয়া হয়েছে তাতে অসীম আয়তনের নক্ষত্র সৃষ্টি অসামঞ্জস্যতা পূর্ণ হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে পরিমানগত দিক থেকে ভরের নিত্যতার সূত্রের সত্যতা থাকেনা। আবার এমনও নয় যে, মহাকাশের সমগ্র পদার্থভর সেই মহা বিস্ফোরন থেকেই তৈরী হয়ৈছে। নিত্য নৈমিত্তিক এই সৃষ্টি প্রকৃয়া চলছে। বিবর্তনের ধারায় নতুন নতুন মহাকাশীয়বস্তু তৈরী হচ্ছে। ফলে বিগব্যঙ থেকে প্রাপ্ত সামান্য পদার্থ দিয়ে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি কোন রকমেই বাস্তব সম্মত নয়। এই সৃষ্টিতে প্রয়োজন হয়েছে অফুরন্ত শক্তিঘনত্ব। শুধুযে বিগব্যাঙের সময়েই তার যোগান হয়েছিল তা নয়, এই শক্তির প্রবাহ হচ্ছে সার্বক্ষণিক, আর এই শক্তির প্রবাহ থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে বিশালকায় পদার্থ সমুহ; কিন্তু বিজ্ঞানের কাছে সেই অফুরন্ত শক্তির কোন সন্ধান নেই, সন্ধান রয়েছে পবিত্র কোরআনে। সূরা আয যারিয়াতের ৪৭ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন,

وَالسَّمَاء بَنَيْنَاهَا بِأَيْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ

৫১:৪৭ আমরা শক্তির দ্বারা আকাশ নির্মাণ করেছি এবং অবশ্যই আমরা ইহার সম্প্রসারক।

মানুষ বার বার আয়াতটি পড়েছে, তরজমা করেছে,অনেকে সঠিক শব্দ চয়ন করতে পারেননি ফলে ভাবধারা পাল্টে গেছে, কিন্তু ভাবুকরা তো ঠিকই বুঝতে পেরেছে, অনেক ভাবুক আনন্দে আহ্লাদিত হয়েছে, আবার কেউ কেউ সব জেনে বুঝেও বিপাকে পড়েছে; কারণ কথাগুলো যে পবিত্র কোরআনের বাণী একে মেনে বিশ্বস্রষ্টাকে অস্বীকার করার কোন উপায় থাকেনা আবার এও বলা যায়না যে, এই বাণী নবী মোহাম্মদ (সাঃ) কর্তৃক রচিত আবার অনেকে বলে থাকেন পরিস্কার পরিভাষায় কিছু বলেনি

সূধী পাঠক একটু ভাল করে ৫১:৪৭ আয়াতটির দিকে তাকিয়ে দেখুন, এর চেয়ে পরিস্কার বক্তব্য আর কি হতে পারে? এখানে কি কৃষ্ণশক্তির উৎসকে খুঁজে পাওয়া যায়না? আবার অনেকে আহ্লাদিত হয়ে বলে থাকেন বিজ্ঞানীরা এ তথ্য কোরআন পড়েই জেনেছে আর এখন তার বাহবা নিতে চাচ্ছে সূধী পাঠক বিষয়টা এমন নয় যে, পবিত্র কোরআন কোন প্রতিযোগিতায় নেমেছে আর পবিত্র কোরআন পদার্থ বা জ্যোতিবিজ্ঞানের কোন পুস্তক নয় যে, তার মধ্যে বিজ্ঞানের সকল তত্ত্ব লিপিবদ্ধ রয়েছে এটি মহান আল্লাহর বাণী, তিনি অবতীর্ণ বাণীর মধ্যে কখনো কখনো কিছু বৈজ্ঞানীক ধারনার ইঙ্গিত দিয়ে ভাবুকদেরকে আহ্বান করেছেন যাতে তারা স বিষয়গুলোকে নিয়ে ভাবে বিজ্ঞানীদের বেলায়ও ঘটেছে তাই, তারা সেই ইঙ্গিতগুলোকে নিয়ে ভেবে চিন্তে বিস্তারিত তথ্য আবিস্কার করেছেন; ফলে বাহবা যা কিছু পাওয়ার তাদেরই প্রাপ্য আর এখানেই পবিত্র কোরআনের সার্থকতা অথচ এমন স্বতঃসিদ্ধ বিষয়টি বিজ্ঞান জগতের কিছু বড়ধরনের সারথির কাছে পছন্দ হয়নি; বিখ্যত বিজ্ঞানী ষ্টিফেন হকিন্স তার Grand Design বইতে লিখেছেন আমাদের এই মহাবিশ্ব স্বতঃস্ফূর্ত সৃষ্টিতার প্রমান স্বরূপ বলেছেনযে, পরীক্ষাঘারে প্রমাণ হয়েছে পদার্থ গঠনকারী মৌলিক কণা শূণ্যতারমাঝেও আপনা থেকেই সৃষ্টি হয় প্রকৃতির নিয়মের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এরসৃষ্টি কৌশল তিনি আরও বলেছেন, বিজ্ঞানের নিয়ম নীতি এই সৃষ্টির ব্যাখ্যা দিতে পারে এখন প্রশ্ন হল বিজ্ঞান কি ভাবে তার ব্যাখ্যা দিতে পারে? এক্ষেত্রে বিজ্ঞান বলছে পরীক্ষাঘারে দেখা গেছে একবারে শূণ্যতার মাঝেও পদার্থ কণার সৃষ্টি সম্ভব এ ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআন বলছে, মহান আল্লাহ শক্তি থেকে পদার্থ কণার সৃষ্টি করেছেন এখানে কোরআন ও বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য শুধু শক্তির উপস্থিতি; তার পরেও ভৌত বিজ্ঞান এই শূণ্যতাকে মেনে নিতে পারেনি; তাই হকিন্স সাহেবের সিদ্ধান্তকে অধিকাংশ বিজ্ঞানী মেনে নিলেও সেই শূণ্যতার ব্যাখ্যা শূণ্যই রয়ে যায় বিজ্ঞান সত্যের সন্ধানী, থেমে থাকেনি গবেষণা সেই ব্যাখ্যা শূণ্যতাকে পূরণ কারার লক্ষে বিজ্ঞানীরা মত দিলেন আমাদের মহাবিশ্ব কৃষ্ণ শক্তিতে ভরপুর তবে এখন্ও তা তত্ত্ব রূপেই রয়েগেছে; চাক্ষুস প্রমান এখন সময়ের ব্যপার বিজ্ঞান আরও বলছে এই কৃষ্ণ শক্তিই মহাকর্ষের বিপুল বাধা ডিঙিয়ে মহাবিশ্বের বস্তুনিলয়দের নিয়ে যাচ্ছে অজানার পানে বিজ্ঞানী নিউটন বোধহয় তার নিজের আবিস্কৃত মহাকর্ষের বাঁধাকে কোন রকমে এড়িয়ে যাবার জন্যেই বলেছিলেন,‘স্রষ্টাই মহাবিশ্বের সকল বস্তুকে গতিময় করে দিয়েছিলেনকিন্তু হকিন্স সাহেব এই মন্তব্যকেতুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন,‘ মহাবিশ্বের সকল বস্তু বিগব্যাঙ থেকেই গতিপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী নিউটন প্রকৃতির আইনকে সমুন্নত করতে গিয়ে দিয়েছেন তার বিশ্ব বিখ্যাত মহাকর্ষ সূত্র; আর আধুনীক বিজ্ঞানী হকিন্স সাহেব দিলেন তা ভেঙে তাতে ফল দাঁড়াল এই যে, প্রকৃতির আইন চলে গেল প্রকৃতিরই আইনের বিপক্ষে অর্থাৎ প্রকৃতির নিয়মে সৃষ্ট মহাবিশ্ব প্রকৃতির নিয়মকে ভঙ্গ করে ছুটে চলেছে অনির্দিষ্ট গন্তব্যে এই নিয়ম ভাঙা প্রকৃতিকে নিয়ে বিজ্ঞান পড়লো বিপাকে, জোড় গবেষণা চলতে লাগলো, দেখা গেন প্রকৃতির কোন নিয়মই সুনির্দিষ্ট নয়, ক্ষেত্রভেদে প্রয়োজনমত তা ব্যবহৃত হয় আবার প্রয়োজনে সেই নিয়ম ভেঙে যায়, যেন খামখেয়ালী স্বেচ্চাচারিতা মানুষের মনে প্রশ্ন জাগল, তাহলে এই নিয়ম ভাঙার পিছনে কি কোন অলৌকিক হাত রয়েছে? অবস্থা দৃষ্টে উত্তরটা যদিও এমনই হয়ে দাঁড়ায় তথাপি বিজ্ঞানীগণ এই জবাবটা মেনে নিলেননা; কারণ, তাহলে হকিন্স সাহেবকে স্বীকার করতে হয় যে যবনিকার অন্তরালে এক মহা শক্তিশালী প্রভু রয়েছেন যিঁনি অসীম শক্তি দ্বারা এই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন যিঁনি তার স্বাধীন ইচ্ছায় প্রকৃতির নিয়ম ভেঙে নতুন নিয়ম গড়ছেন আর হকিন্স সাহেবের শ্রমলব্দ ধারণাকেই প্রকারান্তরে পরিপূর্ণ করছেনঅর্থাৎ শূণ্যতার মাঝেই আবির্ভূত হচ্ছে মহাজাগতিক সৃষ্টি; পার্থক্য শুধু এটুকুই, যা কিছু হচ্ছে সবই তাঁর স্বাধীন ইচ্ছায় তারই অন্য এক সৃষ্টির বিবর্তন থেকে, আর সেই সৃষ্টিটি হল শক্তি;হয়তোবা বিজ্ঞানের ভাষায় কৃষ্ণ শক্তি

এখন প্রশ্ন হল এই শক্তির পরিমান তার উৎস নিয়ে। আমরা যদি মহাবিশ্বে শক্তির সার্বিক পরিমানকে স্থির ধরে নেই তবে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে; আর যদি স্থির না হয়ে থাকে তাহলে এই শক্তি প্রবাহের একটা উৎস অতীব জরুরী। বিজ্ঞান সেই উৎসকে মেনে না নিলেও তার উপস্থিতি ছাড়া মহাবিশ্বের বিবর্তন কিছুতেই সম্ভব নয়। আবার সেই শক্তি প্রবাহের পরিমানকেও সুনির্দিষ্ট করার কোন উপায় নেই; কারণ মহাজাগতিক বস্তু নিলয় তৈরী থেমে যায়নি। এটি চলমান প্রক্রিয়া; যতদিন এ প্রক্রিয়া চলবে ততদিনই শক্তির প্রবাহ প্রয়োজন; অর্থাৎ শক্তির প্রাচুর্যতা মহাবিশ্বের বিবর্তনের পূর্ব শর্ত। বিজ্ঞান এই প্রাচুর্যতার হিসেব মিলাতে না পারলেও পবিত্র কোরআন দিয়েছে তার সঠিক সমাধান।

সূধী পাঠক, প্রকৃতিতে যেদিকেই তাকাননা কেন, প্রাচুর্যোতাই যেন তার প্রধান বৈশিষ্ট। কোন কিছুরই অভাব নেই; যেন উপছে পড়ছে সব। নদী-সাগরের দিকে তাকিয়ে দেখুন, পানির কত সমাহার; বিজ্ঞান বলছে, পৃথিবীতে পানি তৈরীর কোন পরিবেশ ছিলনা, বহির্জগৎ থেকে এসেছে এই পানি। এখন প্রশ্ন হল এই বিশ্বভ্রহ্মাণ্ডে সৃষ।ট বস্তুর এত বিশাল সমাহার কেন? কি প্রয়োজন তাদের? এ ভ্রহ্মাণ্ড কি অপরিকল্পিত ভাবে তৈরী হয়েছে? যদি তাই হয়ে থাবে তবে এও বলা যায় যে, এ সৃষ্টি আপনা থেকেই হয়েছিল;এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সকল সৃষ্টি বাস্তবে এসছিল কোন একদিন। এই বিশাল সৃষি।টর মাঝখানে দাঁড়িয়ে কোন ভাবুক যদি এই প্রশ্নগুলো করে তবে কি তার জবাব?যদিও বিজ্ঞানের কাছে এর সঠিক জবাব নেই তথাপি পবিত্র কোরআন দিয়েছে এর পরিপূর্ণ ধারণা;চেয়ে দেখুন নীচের আয়াতগুলো;

وَإِن مِّن شَيْءٍ إِلاَّ عِندَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلاَّ بِقَدَرٍ مَّعْلُومٍ

১৫:২১ আমার নিকট রয়েছে প্রতিটি বস্তুর অফুরন্ত ভাণ্ডার এবং আমি তাদের সরবরাহ করি এক পরিজ্ঞাত পরিমাপে।

خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ بِالْحَقِّ تَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ

১৬:৩ যিনি আকাশরাজি ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছেন পরিমিত পরিমানে।তিঁনি মহিমান্বিত ও প্রশংশিত তাদের থেকে তারা যা শরীক করে।

এখানে মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির প্রাচুর্যোতার কথাই বলেছেন। তাঁর সকল সৃষি।টই অপুরন্ত; তিঁনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন,লক্ষ্য করে দেখুন কি পরিমান পানি সাগর মহাসাগরকে ভরে রেখেছে। আকাশের দিকে তাকান, এর কোন সীমা পরিসীমা নেই, বিজ্ঞান বলছে, মহাবিশ্বের বর্তমান পরিধী প্রায় ৪৫ বিলিয়ন আলোক বর্ষ। পবিত্র কোরআন বলছে, আমাদের এই বিশাল মহাবিশ্ব দয়াময় প্রভুর এক ছোট্ট সৃষ্টি, সাত আকাশের ছোটটি। আর এই সবই তিনি সৃষ্টি করেছেন শক্তির দ্ধারা। মহাকাশের সকল মহাজাগতিক সৃষ্টি মহান প্রভু সেই শক্তি থেকেই সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনের এই ধারনা মতে মহাকাশ সৃষ্টিতে শক্তির পরিমানের একটা আন্দাজ করা যায়; আর এই পরিমান অবশ্যই বিজ্ঞানের প্রাক্কলিত হিসেবের সাথে মিলবেনা; এখানেও রয়েচে পাচুর্যোতা; বলাযায়, সৃষ্টির প্রয়োজনে যতশক্তি দরকার তার পূর্ণ প্রবাহের ব্যবস্থা রয়েছে মহান স্রষ্টার কাছে। এমতাবস্থায় ভরশক্তির নিত্যতার সূত্রকে নতুন করে সাজাতে হবে, মহাজগতে ভরশক্তিকে নিত্য বলা যাবেনা, ভর সৃষ্টির প্রয়োজনে রয়েছে অফুরন্ত শক্তির মজুত; E=m.c²,   E/c²=m বা, ১/ c². E= m, আইষ্টাইনের এ সূত্রটি দিয়ে আমাদের পক্ষে মহাবিশ্বে শক্তির পরিমান নির্ণয় করা কঠিন হয়ে গেল,কারণ এই সৃষ্টি যে একটি চলমান প্রক্রিয়া;

 

কৃষ্ণশক্তির বৈশিষ্ট

বিজ্ঞানীরা ধরে নিয়েছেন কৃষ্ণশক্তির সমস্বত্ত দ্রবনের ন্যায় পরিপূর্ণ করে রেখেছে আমাদের এই মহাবিশ্বকে; তবে এর ঘণত্ব খুব বেশী নয় প্রায় 10−30 g/cm3 । এখনো রসায়নাঘারে একে নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি; কিন্তু মহাবিশ্বে এই শক্তির প্রভাব এতটাই সুগভীর যে, মহাবিশ্বের প্রায় ৬৮ শতাংশ জুড়ে রয়েছে এই শক্তি। বিজ্ঞানীরা মনে করেন এর চাপ ঋণাত্মক; অর্থাৎ এটি মহাকর্ষের বিপরীতধর্মী।

 

কৃষ্ণশক্তির কার্যোকারিতা

কৃষ্ণশক্তির প্রকৃত বৈশিষ্ট হল এটি ঋণাত্মক চাপ সমৃদ্ধ অর্থাৎ বিকর্ষন কিয়া করে, যা মহাবিশ্বের সম্প্রসারণে দৃশ্য ত্বরণ ঘটায়। সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব মতে পদার্থের মধ্যবর্তী চাপ মহাকর্ষীয় আকর্ষণ তৈরী করে এবং তার পরিমান নির্ভর করে পদার্থের ঘণত্বের উপর। তবে কৃষ্ণশক্তির ঋণাত্মক চাপ মহাকর্ষীয় বস্তুনিলয়ের পারস্পারিক আকর্ষণকে বাঁধাগ্রস্ত করেনা; তবে মহাকর্ষের ফলে সম্প্রসারণের বিপরীত ক্রিয়াকে প্রতিহত করে মহাজাগতিক বস্তুনিলয়কে দূরে ঠেলে দেয়-অর্থাৎ মহাবিশ্বকে চুপসে যাওয়া থেকে রক্ষা করে সম্প্রসারণকে তরান্বিত করে। -সূত্র কৃষ্ণ শক্তি উইকিপিডিয়া

সূধী পাঠক, এই যে বলা হল কৃষ্ণশক্তি ঋণাত্মক চাপ সমৃদ্ধ; অর্থাৎ মহাকর্ষ শক্তিকে প্রতিরোধ করে বা বিকর্ষণ করে, কিন্তু বস্থুর পারমানবিক আকর্ষণকে বাঁধাগ্রস্থ করেনা। বিষয়টা ব্যাখ্যার দাবী রাখে; বিজ্ঞানের ধারনা থেকে আমরা জানি, বিভিন্ন পদার্থের পরমানু একে অপরের সাথে সংযুক্ত হয়ে দৃশ্য অবস্থা প্রাপ্ত হয়। এই সংযুক্তি নির্ভর করে পরমাণুগুলোর নিজস্ব বৈশিষ্টের উপর; অর্থাৎ তাদের সংযুক্তি প্রবণতার উপর। বিজ্ঞান বলছে এই সংযুক্তি প্রবণতা নানা কারণে তৈরী হয়। সাধারনতঃ পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটন সংখ্যা সমান থাকায় সকল পরমানুই আধান নিরপেক্ষ থাকে তবে তাদের মধ্যে ইলেক্ট্রন বিণ্যাসের কারণে কোন কোন পরমাণু নিজের ইলেক্ট্রন অন্যকে দিয়ে উভয়ে আহিত হয়ে পরে অনু গঠণ করে। এ ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রন সংখ্যার পরিবর্তনের কারণে বৈদ্যুতিকভাবে আহিত হয় এবং পরস্পর বিপরীত আধানে মিলিত হয়ে পদার্থের অণু গঠণ করে এবং আন্তআনবিক আকর্ষনের দ্বারা নিজেদের মধ্যে সংঘবদ্ধ হয়ে পদাথের বাস্তব রূপ লাভ করে। আবার আধান নিরপেক্ষ পরমাণুগুলো ইলেট্রন শেয়ারের মাধ্যামে তাদের ইলেক্ট্রন বিণ্যাসে স্থিতিশীলতা এনে অনু গঠণ করে। প্রতিটা অনুই কোন না কোন উপায়ে অধান নিরপেক্ষ হয়ে যায় (কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন পদার্থ রয়েছে যার মধ্যে পুরাপুরি নিরপেক্ষ হয়না,যেমন পানি)। এই নিরপেক্ষ অনুগুলো কিভাবে পরস্পর জড়িত থেকে পদার্থের স্তুপ সৃষ্টি করে তা আজও ভাবুকদের কাছে এক প্রশ্ন। বিজ্ঞান বলছে আন্ত আনবিক আকর্ষণ বলই অনুগুলোকে স্তূপীকৃত করে রাখে। কিন্তু এই আন্তআনবিক বলের কোন পরিক্ষীত ব্যাখ্যা বিজ্ঞানের কাছে নেই;ফলে এই আন্ত আণবিক আকর্ষণ এখনও বিজ্ঞানের কাছে রহস্য হয়েই আছে। অপর দিকে বিজ্ঞান বলছে পদার্থের মধ্যে মহাকর্ষ বল সৃষ্টিকারী কণা গ্রাভিটোন পরমাণুর মধ্যেই প্রোথিত থাকে। এখন আমরা যদি ধরে নেই এই গ্রাভিটোন কণাই আন্তআনবিক বলের জনে দায়ী তবে নতুন করে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। আমরা জানি আধান দুই প্রকারের এবং পরস্পর বিরোধী শক্তিতে পূর্ণ থাকে। কিন্তু আন্তআনবিক বল কেবলই আকর্ষণ ধর্মী। আবার গ্রাভিটোন ও শুধুই আকর্ষণ ধর্মী; ফলে আমরা আন্ত আকর্ষণকে গ্রাভিটোন দিয়েও ব্যাখ্যা করতে পারি তবে বিজ্ঞান এ ক্ষেত্রে পরিস্কার করে কিছু বলছেনা।

আমরা যদি গ্রাভিটোন দিয়ে আন্ত আনবিকআকর্ষণকে ব্যাখ্যায়িত করি তবে কৃষ্ণশক্তি নিয়ে সৃষ্টি হয় এক মহা বিপাক; কারণ কৃষ্ণ শক্তি গ্রাভিটোন বিরোধী। বিজ্ঞান বলছে কৃষ্ণশক্তির মধ্যে রয়েছে ঋণাত্মক চাপ যা মধ্যাকর্ষণকে প্রতিহত করে। এই যদি হয় প্রকৃত অবস্থা তবে কৃষ্ণশক্তির উপস্থিতিতে পদার্থের আন্তআনবিক শক্তি প্রশমিত হয়ে সকল পদার্থ পরমানুতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা,কিন্তু তা হচ্ছেনা। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বলছে,কৃষ্ণশক্তি আন্তআনবিক শক্তির উপর ক্রিয়া করেনা। তাহলে বলতে হয়, হয় আন্তআনবিক বলের সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা প্রয়োজন,নয় কৃষ্ণশক্তির বৈশিষ্ট নিয়ে নতুন করে ভাবা দরকার,অথবা ধরে নিতে হবে যে, কৃষ্ণশক্তি এতটাই মেধাবী যে সে নিজে থেকে আন্ত মহাজাগতিক বস্তুনিলয়ের আকর্ষণকে আলাদাভাবে চিনে নিতে পারে। আমরা বিজ্ঞানের কথামত এমনটা ধরে নিলেও যে মহাকর্ষশক্তিকে নতুনভাবে সঙ্গায়িত করতে হয়। কারণ মহাকর্ষের সঙ্গায় বলা হয়েছে যে, এ শক্তি বস্তুর মধ্যস্থিত পদার্থগত। এবং তার প্রাবল্য নির্ভর করে পদার্থের ঘণত্বও আন্ত দূরত্বের উপর; অর্থাৎ এ শক্তি তৈরী হয় পদার্থস্থিত অনুর মধ্য থেকে যার সম্মিলিত প্রভাব একে অপরকে আকর্ষণী বন্ধনে ধরে রেখেছে। এখন কৃষ্ণশক্তি যদি সে শক্তিকে ভেঙে দেয় তবে এই মহাবিশ্বকে তার নিজস্ব কাঠামোতে ধরে রাখা শুধুমাত্র তখনই সম্ভব হবে যদি আমরা ধরে নেই যে, কৃষ্ণ শক্তির কোন নিয়ন্ত্রক রয়েছেন যিনি কৃষ্ণশক্তিকে প্রয়োজনমত নিয়ন্ত্রিত উপায়ে ব্যবহার করেন, অথবা তিনি কৃষ্ণশক্তিকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন যেখানে কৃষ্ণ শক্তি চাপ নিরপেক্ষ। অবশ্য বিজ্ঞান পরীক্ষা নীরিক্ষার মাধ্যামে কৃষ্ণশক্তির ঋ্ণাত্মক চাপ সম্পর্কে সুনিশ্চিত করতে পারেনি। বিজ্ঞানীরা মহাশূণ্যের সম্প্রসারণকে যৌক্তিক ধারায় ব্যাখ্যা করার জন্যে কৃষ্ণশক্তিকে ঋণাত্মক চাপ সমৃদ্ধ করে বর্ণনা করেছেন। যাই হোক বিজ্ঞানই আমাদের মধ্যে ভাবুক সম্প্রদায়ের মুখপাত্র, সে যা বলে তাকেই আমরা সত্যের কাছাকাছি ধরে নেব; আর এই ধারনার সাথে কৃষ্ণ শক্তিকে মহাবিশ্বের বিবর্তনের ধারায় সমন্বিত করতে হলে অবশ্যই একজন নিয়ন্ত্রকের প্রয়োজন; পবিত্র কোরআন সেই নিয়ন্ত্রকেরই সন্ধান দিয়েছে তার অমীয় বাণীতে।

৫১:৪৭ আমরা শক্তির দ্বারা আকাশ নির্মাণ করেছি এবং অবশ্যই আমরা ইহার সম্প্রসারক।

লক্ষ্য করুন পবিত্র কোরআন, মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে বিগব্যাঙের ব্যাখ্যা করেছে, কৃষ্ণ শক্তির পরিচয় দিয়েছে, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের কথা বলেছে; কিন্তু বিগব্যাঙের সময় ভরশক্তির কোন পরিমান উল্যেখ করেনি; বিজ্ঞান সেই পরিমানকে পরিমিত করেই পড়েছে বিপাকে, পবিত্র কোরআন শক্তির প্রবাহকে নিশ্চিত করেছে কিন্তু পরিমাপের নিত্যতা উল্যেখ করেনি।কারণ ভর শক্তিকে নিত্য ধরে নিলে মহাবিশ্বের বিবর্তন বন্ধ হয়ে যায়। বিজ্ঞান এখানে ব্যাখ্যা শূণ্য।

 

সূধী পাঠক এখানেও দেখা যাচ্ছে প্রকৃতির নিয়ম লঙ্গিত হচ্ছে। মহাকর্ষ এবং সম্প্রসারণ দু’টি বিপরীত ধর্মী ক্রিয়া। এই বৈপরীত্যের কারণে সৃষ্ট অসামঞ্জস্যতাকে দূর করার জনেই বিজ্ঞানীগণ কৃষ্ণশক্তির অবতারণা করেছেন,কিন্তু তাতেও সৃষ্টি হচ্ছে বিপাক। কৃষ্ণমক্তির ঋণাত্মক চাপ মহাকর্ষের বিপরীতে ক্রিয়া করার ফলে মহাজাগতিক বস্তুনিলয়ের পারস্পারিক আকর্ষন কমে যাওয়া এমনকি নিস্ক্রিয় হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আর যদি তা ঘটে তবে তারকাপুঞ্জ, নক্ষত্র মণ্ডল, ছায়াপথ ইত্যাদির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা,কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছেনা। এই বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক অঙ্ক কষে হিসেব নিকেষ করে বললেন,কৃষ্ণশক্তি এমনটা করেনা। তার ঋণাত্মক চাপ তারকাপুঞ্জ, নক্ষত্রমণ্ডল, ছায়াপথ ইত্যাদির মধ্যস্থিত বস্তুনিলয়ে পারস্পরিক মধ্যাকর্ষণের উপর ক্রিয়া করেনা, এ শুধু এই গুচ্ছগুলোর পারস্পরিক মহাকর্ষের টানে একত্রিত হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে এবং তাদেরকে দূরে ঠেলে দেয়। তাহলে কৃষ্ণশক্তির ক্রিয়াকর্ম রহস্যজনক নয় কি? আর যদি তাই হয় তবে এর ক্রিয়াকর্মকে প্রকৃতির বা বিজ্ঞানের নিয়মে ব্যাখ্যা করতে পারার কথা নয়। তাহলে কৃষ্ণশক্তি প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীদের ধারণাকে মূল্যায়ন করতে হলে বলতে হয়, কৃষ্ণ শক্তি কোন সুণির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী ক্রিয়া করে, যা মহাবিশ্বের সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনে সুচিন্তিত নির্দেশণা অনুযায়ী ঘটে থাকে। এই ‘সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন ও সুচিন্তি নির্দেশণা’ শব্দ ক’টিকে মেনে নিলে তা আর প্রকৃতির সাধারণ নিয়মের আওতায় পরেনা,বলতে হয় তা প্রকৃতির বিশেষ নিয়ম যা বলবৎ করে থাকেন এক মহামহিম মহা শক্তিশালী স্রষ্টা,যিঁনি কোন নির্দিষ্ট নিয়মের অধীন নয়। নিজ স্বাধীন ইচ্ছায় তিঁনি নিয়ম ভাঙেন আবার প্রয়োজনে নিয়ম গড়েন। তিঁনি বিজ্ঞানের নিয়মে কাজ করেননা, বিজ্ঞানীদের জন্যে বিজ্ঞানের নিয়ম তিনি তৈরী করেন।

১৯৯৯ তে গঠিত কসমোলজি প্রজেক্টের বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ সাত বছর পরীক্ষা নীরিক্ষার পর সৃষ্টিতাত্ত্বিক মাইকোওয়েভ পরিমাপ(cosmic microwave background)থেকে বলছেন যে, আমাদের মহাবিশ্বের সমুদয় পদার্থের(বেরিয়ন কণা ও কৃষ্ণপদার্থ সহ)মধ্যে ৭২.৮ শতাংশ কৃষ্ণশক্তি,২২.৭ কৃষ্ণপদার্থ এবং অবশিষ্ট ৪.৫ শতাংশ সাধারন পদার্থ। তবে ২০১৩ সালে প্লাঙ্ক মহাশূণ্য যানের তথ্য অনুযায়ী হিসেব থেকে বলা হচ্ছে ৬৮.৩% কৃষ্ণ শক্তি,২৬.৮% কৃষ্ণ পদার্থ এবং ৪.৯% সাধারণ পদার্থ। এই তত্ত্ব মতে আমাদের মহাবিশ্ব অনেকটাই চেপ্টা আকৃতির মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। অতি অধুনা হিসেব করে বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, আমাদের মহাবিশ্বে সমুদয় পদার্থের(বেরিয়ন কণা ও কৃষ্ণপদার্থ সহ)মধ্যে ৭১.৩% কৃষ্ণশকি, ২৭.৪% কৃষ্ণপদা্র্থ, বাকী সব দৃশ্য সাধারণ পদার্থ।

সূধী পাঠক,আমরা এখন পবিত্র কোরআনের কিছু আয়াত দেখবো যেখানে মহান আল্লাহ কৃষ্ণ শক্তি সম্পকে ইঙ্গিত দিয়েছেন; আমার আকর্ষণ ও গতি প্রবন্ধে দেখেছি মহান আল্লাহ বহির্জগত থেকে বোঝা স্বরূপ মহাজাগতিক পদার্থ এনে পৃথবীর বস্তুভর বাড়িয়েছেন যাতে তার মধ্যাকর্ষণ ও অন্যান্ন প্রয়োজনীয় নিয়ামকগুলো প্রাণীকুলের জীবন সহায়ক হয়। নীচের আয়াত দু’টি লক্ষ্যকরুন, সূরা আদ দারিয়াতের ৪৮-৪৯ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন যে, তিঁনি ভূমি তথা পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন অর্থাৎআকৃতিতে বড় করেছেন; এখানে প্রচলিথ তরজমায় বলা হয়েছে ‘আমি ভুমিকে বিছিয়েছি’। উদ্ধৃতাংশের ভাবধারা হয় , পৃথিবীকে সমতল ক্ষেত্ররূপে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বিস্তৃতি করণ নিয়ে আমরা আগের আলোচনায় দেখেছি বিষয়টা পৃথিবীকে বড় করা বা পৃথিবীর পদার্থভর বাড়ানোর সাথে সম্পৃক্ত। তা ছাড়াও সমতল ক্ষেত্র রূপে বিছিয়ে দেওয়া বিষয়টা বাস্তবতা প্রসূত নয়। এমনকি পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময়েও ভাবুক লোকদের ধারণা এমনটা ছিলনা।

وَالْأَرْضَ فَرَشْنَاهَا فَنِعْمَ الْمَاهِدُونَ

51:48 আমি ভূমিকে বিছিয়েছি। আমি কত সুন্দরভাবেই না বিছাতে সক্ষম।

وَمِن كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ

51:49 আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম

فَلَا أُقْسِمُ بِمَا تُبْصِرُونَ

৫১:৪৯ আয়াতটি এক বিষ্ময়কর আয়াত; এই ধারণার বিস্তৃতি মহাবিশ্ব জুড়ে রয়েছে। আজকের বিজ্ঞান বলছে মহাবিশ্বের সকল সৃষ্টি কোন না কোন উপায়ে যুগল রূপে হয়েছে; আমরা যদি কৃষ্ণ শক্তিকে সাধারন শক্তির যুগল রূপে ধরে নেই তবে বলা যায় কৃষ্ণপদার্থ ও সাধারন পদার্থও একই রূপে যুগলবন্দী হয়ে পড়ে। কোরআন গবেষকরাও তাই মনে করেন।

সূধী পাঠক, এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জ্ঞাতব্য; মহান আল্লাহ ৫১:৪৭ আয়াতে বলছেন, তিনি মহাবিশ্বকে শক্তির দ্বারা বা শক্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আমাদের ধারণায় বিষয়টির ভাবধারা যদি দ্বিধা ভিবক্ত হয়ে যায় তবে সার্বিক অনুভূতিতে সমন্বয়হীনতা চলে আসবে। আমরা যদি মনে করি, ‘মহান আল্লাহ প্রচণ্ড শক্তি বল প্রয়োগ করে মহাবিশ্বর সৃষ্টি কর্মটি করেছেন’ তবে মহাবিশ্বের কাঁচামাল হয়ে দাঁড়ায় অন্য কোন পদার্থ। আর যদি মনে করি,‘মহান আল্লাহ মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন শক্তি থেকে বা শক্তি দিয়ে’; তবে যে ভাবধারা তৈরী হয় তাহল ‘মহাবিশ্বের কাঁচামালই শক্তি’ অর্থাৎ শক্তিকে রূপান্তর করে তাবৎ বস্তুভর তৈরী করা হয়েছে; আর এই ধারণাটাই সর্বশেষ বিজ্ঞান প্রায় স্বতঃসিদ্ধের মত মেনে নিয়েছে। তাহলে কৃষ্ণশক্তি ও কৃষ্ণপদার্থের উপস্থিতি কোন বিরল ঘটনা নয়। প্রাণখুলে বলা চলে আমরা অর্থাৎ এই মহাবিশ্ব তথা মহাজাগতিক বস্তুনিলয় কৃষ্ণশক্তির মহাসমুদ্রে ভেসে বেড়াচ্ছে,যেমনি ভেসে জলজ প্রাণী মহাসমুদ্রে । মহান আল্লাহ যেখানে যেখান মনে করছেন কিছু দৃশ্যবস্তু বা সাধারণ পদার্থ সৃষ্টি করবেন সেখানেই তা ঘণিভূত হয়ে মহাজাগতিক পদার্থরূপে আবির্ভূত হচ্ছে। আজকের বিজ্ঞানও প্রকারান্তরে এমনটাই বলছে। তারা বলছে, মহাশূণ্যের কন্দরে কন্দরে কোন এক অজানা শক্তির ঘণায়ন থেকে মহাজাগতিক বস্তুগুলো জন্ম নিচ্ছে। আমরা নক্ষত্র সৃষ্টির ইতিহাস থেকে এমন ধারনাই পাচ্ছি। তাহলে বিজ্ঞানী ও কোরআন গবেষকদের ধারণার মধ্যে পার্থক্য শুধু একজন মহাশক্তিশালী বিজ্ঞ স্রষ্টার উপস্থিতি।

নীচের আয়াত দূ’টি লক্ষ্য করুন;

فَلَا أُقْسِمُ بِمَا تُبْصِرُونَ

69:38 তোমরা যা দেখ, আমি তার শপথ করছি।   -সূরা আল হাক্বক্বাহ

وَمَا لَا تُبْصِرُونَ

69:39 এবং যা তোমরা দেখ না, তার-

মহান আল্লাহ কত পরিস্কার ভাবে দৃশ্য অদৃশ্য দু’টি বিষয়কে একত্রিত করে মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন; তারপরেও যদি বলা হয় কোরআন পরিস্কার করে কিছুই বলেনি, তাহলে মানুষের মেধা ও অভিধাকে শুধুই অপমান করা হয়। আবার এই বিষয়গুলোর অবতারনা করে মহান আল্লাহ ভাবুক লোকদের আহ্বান করেছেন ভেবে দেখার জন্যে। দূর্ভাগ্য আমাদের আমরা চোখ মেলে তাকাইনি, ভেবেছি পবিত্র কোরআনের বাণী সবই বুঝি ধর্মের অনুশাষন, আমাদের জীবন জীবিকার পথ। ভাবনা চিন্তার বিষয়ও পবিত্র কোরআনে থাকতে পারে- এমনটা ভাবলে হয়তো এই আয়াত দু’টোর মর্মবাণী মহান আল্লাহতে অবিশ্বাসীদের আগে বিশ্বাসীদেরই চোখে পড়ার কথা। কেন হলনা তা একমাত্র মহান আল্লাহই জানেন ভাল। তার পরেও অন্তত বিষয়গুলোকে সমন্বয় করার দ্বায়িত্বটুকুতো আমাদেরকেই নিতে হবে, তাই এ ব্যপারে আমরা কায়মনে মহান আল্লাহর সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করছি।

আজকের জ্যোতির্বিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ট আবিস্কার কৃষ্ণশক্তি ও কৃষ্ণপদার্থ পবিত্র কোরআনের পাতায় ১৪০০ বছর ধরে ‘দৃশ্য অদৃশ্য’ বস্তু রূপে পঠিতব্য হয়ে আছে। যা আমরা প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় সুরেলা কণ্ঠে শুধু পড়েই যাচ্ছি অনুধাবন করছিনা যে, এই শব্দ দুটোর মধ্যে বিজ্ঞানের কত রহস্য লুকিয়ে আছে। মরুভূমির বুকে যখন পবিত্র কোরআন নাযিল হচ্ছিল, তখনকার মানুষের কাছে শুধুমাত্র দৃশ্য পদার্থের পরিচ্য়ই জানা ছিল,অদৃশ্যের খবর জানতোনা। তখনকার কোরআন গবেষকগন এই অদৃশ্য বলতে মহান আল্লাহর কর্মকাণ্ডকেই বুঝাতেন। সময়ের এই দীর্ঘ পরিসরে মানুষ অনেক অদৃশ্যের সাথে পরিচিত হয়েছে। তন্মধ্যে সুক্ষ বস্তুকণা থেকে শুরুকরে কৃষ্ণশক্তি, কৃষ্ণপদার্থ, অসংখ্য তড়িৎচুম্বক তরঙ্গও রয়েছে। অদৃশ্য জগতে মানুষ সবেমাত্র প্রবেশ করেছে; আর বুঝতে পারছে যে,এই অদৃশ্য জগতের সীমা পরিসীমা নেই। আজকের পরিপক্ক বিজ্ঞান অদৃশ্য জগতের সামান্যই জানতে পেরেছে। এবার তাহলে ভেবে দেখুন,১৪০০ বছর আগে পবিত্র কোরআন কি বিষ্ময়কর বিষয়ের সাথে মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।

সূধী পাঠক, পবিত্র কোরআনে কৃষ্ণশক্তিকে অপরিসীম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এবং এপ্রসঙ্গে প্রচুর আয়াত নাযিল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ভাববারও অবকাশ রয়েছে। আমরা কি কখনো মহাবিশ্বের বর্ণ নিয়ে কখনো ভেবে দেখেছি? কি তার পকৃত বর্ণ? কোন বস্তুর বর্ণ বলতে আমরা যা বুঝি তা হল ঐ বস্তুর রঙ- অর্থাৎ তার দৃশ্য অবস্থা; আর এই দৃশ্য অবস্থা আলোর সাথে সম্পৃক্ত। এবার ভেবে দেখুন মহাবিশ্বের সৃষ্টিকালীন অবস্থার কথা। এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞান বলছে, বিগব্যাঙ থেকে সৃষ্ট ভ্রূণ মহাবিশ্ব বিবর্তনের ধারায় আলোকীয় বস্তুর জন্মদেয় বহু পরে। আর এই সময়ের পরিসর হল আমাদের ধারনায় অসীম- লক্ষ কোটী বছর। তাহলে সময়ের এই বিশাল পরিসরে মহাবিশ্বের আলোকীয় অবস্থা কি ছিল? নিশ্চই অসীম অন্ধকার! এখন প্রশ্ন হল সেই বিশাল অন্ধকার মহাজগতে কি ছিল, নিশ্চই কোন মহাজাগতিক বস্তু নয়; ছিল মহাশক্তির প্রবাহ; আজকের বিজ্ঞান যার নাম দিয়েছে কৃষ্ণ শক্তি। আর এই অন্ধকারকে পরিচয় করিয়ে দিতে মহান আল্লাহ সূরা ইয়াসীণের ৩৬-৩৭ নং আয়াতে বলছেন;

سُبْحَانَ الَّذِي خَلَقَ الْأَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنبِتُ الْأَرْضُ وَمِنْ أَنفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُونَ

৩৬:৩৬ পবিত্র তিনি যিনি যমীন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদকে, তাদেরই মানুষকে এবং যা তারা জানে না, তার প্রত্যেককে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন।   -সূরা ইয়াসিন

وَآيَةٌ لَّهُمْ اللَّيْلُ نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَإِذَا هُم مُّظْلِمُونَ

৩৬:৩৭ তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত্রি, আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি, তখনই তারা অন্ধকারে থেকে যায়।

সূধী পাঠক, ভাল করে লক্ষ্যকরুন আয়াত দু’টো। আয়াত ৩৬:৩৬ বলছে মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকুলকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন, বিষয়টি অনেকটা আমাদের জানার মধ্যেই পড়ে,কিন্তু আরও বলা হয়েছে ‘যা তারা জানেনা’ এই অংশটুকু অত্যান্ত বিষ্ময়কর তথ্য। এবার ঠিক তার পরের আয়াতটি লক্ষ্য করুন, আগের আায়াতের সাথে সম্পূর্ণ সঙ্গতি বিহীন ভাবে আলো ও অন্ধকারের উপমা দিয়ে ভাবুক সম্প্রদায়কে সেই অন্ধকার জগতের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। হয়তো বলবেন আয়াৎটি শুধুমাত্র রাত-দিনের ই পরিচয় দিচ্ছে। না! ঠিক তা নয়; রাতদিনের সাথে মানুষের আজন্মকালীন পরিচয়। অহর্নিশি মানুষ তা দেখে আসছে। উপরের আয়াতে ‘যা তারা জানেনা’ বলতে যে অজানা রাজ্যের খোঁজ দেওয়া হয়েছে,যেখানে রয়েছে কৃষ্ণ শক্তি ও কৃষ্ণপদার্থ; এই কৃষ্ণশক্তি ও কৃষ্ণপদার্থ কোনটাই মানুষের দৃষ্টিলভ্য নয় এমনকি এপর্যোন্ত আবিস্কৃত কোন যন্ত্রের মাধ্যামেও অনুভব করা সম্ভব নয়; সম্ভবত সেই অন্ধকার রাজ্যের পরিচয় দিতেই মহান আল্লাহ পরের আয়াতে সেই উপমা টেনেছেন(আল্লাহই জানেন ভাল)।

সূধী পাঠক, আমাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল বিজ্ঞান কর্তৃক প্রদত্ব কৃষ্ণশকির ধারণায় কিছু লুক্কায়িত অসংগতি ও পবিত্র কোরআনের বক্তব্যে তার পূর্ণতা। আমাদের ক্ষুদ্রজ্ঞানে যৎসামান্য চেষ্টা করেছি মাত্র, হয়তো পূর্ণাঙ্গতা দিতে পারিনি; তাই মহান প্রভুর কাছে মিনতি এই যে, তিনি যেন এই আলোচনার পূর্ণঙ্গতা দানের সুযোগ করে দেন!

 

আবদুল আজিজ খন্দকার

৩০শে জানুয়ারী, ২০১৫।

প্রথম প্রকাশ

http://sciencewithquran.com

Level 0

আমি হৃদয় খন্দকার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 35 টি টিউন ও 60 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

وَالسَّمَاء بَنَيْنَاهَا بِأَيْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ
৫১:৪৭ আমরা শক্তির দ্বারা আকাশ নির্মাণ করেছি এবং অবশ্যই আমরা ইহার সম্প্রসারক। এই অর্থ কি ঠিক? যে আল্লাহ “আমরা” কথাটি উচ্চারণ করেন? যেখানে সৃষ্টিকর্তা এক। “আমরা” তো বহু বচন, কথাটি কি এই হবে না-আমি শক্তির দ্বারা আকাশ নির্মাণ করেছি এবং অবশ্যই আমি ইহার সম্প্রসারক।

    @জামান: আপনার উদ্রিতির জন্য অশেষ ধন্যবাদ।আরবি ভাষা সাহিত্যে “আমরা” শব্দের এরূপ ব্যবহারকে বলা হয় “Royal plural” অর্থাৎ রাজকীয় বহুবচন।মহান আল্লাহ্‌ এরূপ বহুবচন পবিত্র কোরআন এ বহু যাগায় ব্যবহার করেছেন।(পবিত্র কোরআন এর তর্জমা দ্রষ্টব্য )

জামান ভাই ঠিক বলেছেন ।

valo laglo onek kisu janta parlam thanks!

আপনাকেও ধন্যবাদ। রাসেল সরকার

Level 2

Khub e valo hoise. Comment korar jonno login korlam. 🙂