আজকে আমি বিজ্ঞানের কোন প্রতিষ্ঠিত বিষয় মিয়ে আলোচনা করবনা। আজ শুধু আমার একটা ভাবনা আপনাদের সাথে শেয়ার করব শুধু। তবে তা অবশ্যই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক হবে।
আসুন প্রথম থেকেই শুরু করি। যদি আপনাকে বলা হয় আপনার শরীরে প্রধান অঙ্গ কোনটি? তাহলে আপনি নিশ্চিত ভাবেই বলবেন যে মাথা। হ্যাঁ, ঠিক। আপনার আমার সবার শরীরেরই প্রধান অঙ্গ হল আমাদের মাথা বা মস্তিস্ক বা ব্রেইন। এই মস্তিস্কই আমাদের সকল কিছুকে নিয়ন্ত্রন করে। একে বলতে পারেন আমাদের দেহের অপারেটিং সিস্টেম। আমাদের চিন্তা-চেতনা, খাওয়া-দাওয়া, চলে-ফেরা সব কিছুই এই মস্তিস্কের অধীন। তাছাড়া আমাদের দেহের হরমোনের কাজও নিয়ন্ত্রন করে এই মস্তিস্ক। তাহলে বলতে গেলে পৃথিবীর সকল কিছুই মস্তিস্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কারন পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রন করে মানুষ। এই মস্তিস্কের সাহায্যে পৃথিবীতে অনেক ভালো কাজ হয়েছে। আসলে বলতে গেলে পৃথিবীর উন্নতির পেছনের নায়ক হল আমাদের মস্তিস্ক। অন্যান্য প্রাণীর এই জিনিসটা না থাকার কারনেই তারা উন্নত নয়। আমাদের চারপাশের প্রযুক্তি, বিজ্ঞান সব কিছুই মাথার চিন্তার ফসল। কিন্তু সবসময়ই কিন্তু এই মাথা হতে সু-চিন্তা আসে না। পৃথিবীর অনেক সভ্যতার ধ্বংস, ভয়াবহতা, পারমাণবিক আক্রমণ, সিরিয়াল কিলিং সহ বহু কাজও কিন্তু এই মস্তিস্ক দ্বারাই পরিচালিত হয়েছে। তাছাড়া আপনারা হয়ত জানেন যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নাজি বাহিনীর অত্যাচারের কথা, জাপানের ইউনিট ৭৩১ এর বর্বরতার কথা। তারা হিউম্যান এক্সপেরিমেন্ট, বায়ো উইপন সহ অনেক জঘন্য পরিক্ষা করেছিল মানুষকে দিয়ে। সেইসব অপরাধীদের কিছু বিচার নুরেমবারগ ট্রায়ালে হলেও অধিকাংশই রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অর্থাৎ পৃথিবীর অনেক খারাপ কাজের পেছনেও এই মস্তিস্কই দায়ী। কিন্তু আমদের হাতে এখন প্রযুক্তি এসেছে। তাই আমরা ভালো কাজ গুলকে নিয়ন্ত্রন না করেও এই খারাপ কাজ গুলো থেকে বাঁচতে পারি। আমার আজকের বিষয় সেইটা নিয়েই।
বিজ্ঞানীরে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে, আমরা যখন চিন্তা করি তখন আমাদের ব্রেনে একধরণের তড়িৎ রাসায়নিক তরঙ্গ খেলে যায়। এই তরঙ্গের মাধ্যমেই আমাদের দেহ কাজ করে থাকে। অর্থাৎ শরীরের কোন অঙ্গে কোন নির্দেশ প্রেরন করা হলে তা তড়িৎ রাসায়নিক কাজের মাদ্ধমে হয়ে থাকে। মনে করুন আপনার হাতে একটা মশা পরেছে। তো আপনি এখন চোখ দিয়ে মশাটা দেখবেন বা হাতে অনুভব করবেন। এই দেখা বা অনুভবের বিষয়টা আপনার মস্তিস্কে যাবে এবং তখন মস্তিস্ক একটা নির্দেশ পাঠাবে আপনার হাতকে কিছু করার জন্য। (এই কাজটা অনেক সময় সুষুম্নাকাণ্ড দ্বারাও হয়ে থাকে যাকে প্রতিবর্তি ক্রিয়া বলে। তো যাই হোক, সেটা আমাদের আলোচনার বিষয় না।) এই সকল নির্দেশ কিন্তু তড়িৎ রাসায়নিক তরঙ্গের মাধ্যমে বাহিত হবে। যেমনটা হয় আপনার হাতের মোবাইল আর নেটওয়ার্কের মধ্যে। অর্থাৎ দেখা গেল যে আমাদের মস্তিস্ক তড়িৎ রাসায়নিক তরঙ্গের মাধ্যমেই সকল তথ্য আদান প্রদান করে বা কাজ সম্পন্ন করে। এখন মূল বিষয়টা এই যে, আলাদা আলাদা তথ্যের জন্য আলাদা আলাদা তরঙ্গ দৈর্ঘ্য থাকে। অর্থাৎ, আপনি যদি ভাবেন পানি খাবেন তাহলে সেই চিন্তার জন্য তড়িৎ রাসয়নিক তরঙ্গের দৈর্ঘ্য একরম হবে আবার যদি ভাবেন গান গাইবেন তাহলে অন্য এক দৈর্ঘ্যের তরঙ্গ আপনার মাথায় খেলে যাবে। সুতরাং বোঝা গেল যে ভিন্ন কাজ, ভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্য।
এই তড়িৎ রাসায়নিক তরঙ্গ কিন্তু শুধু আমাদের মাথার ভিতরেই ঘটে যাচ্ছে। তবে ওয়াই-ফাই সিগন্যাল যেমন বাইরে যায়, তেমনিই এই তরঙ্গও মাথার চারপাশে একটা নির্দিষ্ট এলাকা জুড়ে বিদ্যমান। আমরা ইচ্ছা করলে বাইরে থেকেই উন্নত ডিভাইস ব্যবহার করে এই তরঙ্গ শনাক্ত করতে পারব। আপনারা হয়ত অনেক হলিউডের ছবিতেই দেখে থাকবেন যে মাথায় এক ধরনের রাবার ক্যাপ পরানো হয় এবং সেই ক্যাপে অসংখ্য সেন্সর থাকে মাথার তরঙ্গ শনাক্ত করার জন্য। এটা কিন্তু বাস্তবেই সম্ভব। তাছাড়া বিজ্ঞানীরা তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গ প্রয়োগ করে মানুষের মস্তিস্ক নিয়ন্ত্রণ করতেও সক্ষম হয়েছেন। তারা দেখেছেন যে, আলাদা আলাদা দৈর্ঘ্যের তরঙ্গ মস্তিস্কে ব্যবহার করার ফলে মানুষের দেহের প্রতিক্রিয়াও ভিন্ন হয়। এভাবে ইলেকট্রিক সিগন্যাল প্রয়োগ করে কিছু না খেয়েও ভার্চুয়াল ভাবে খাবারের স্বাদ নেয়া সম্ভব হয়েছে। এখন কথা হল, আমরা যদি জানতে পারি কোন চিন্তার জন্য কত দৈর্ঘ্যের তরঙ্গ নির্গত হয় তাহলে আমরা মানুষের মন পড়তে পাড়ব বা থট রিডিং বৈজ্ঞানিক ভাবে সম্ভব হবে। এখানে একটা বিষয় জেনে রাখা ভালো যে মন বলতে আলাদা কিছু নেই। মানুষের মস্তিষ্কই তার মন। তো প্রথমে আমাদের জানতে হবে কি চিন্তা করলে কত দৈর্ঘ্যের তরঙ্গ নির্গত হয়? এভাবে সকল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে আমরা মানুষের চিন্তা ভাবনা বুঝতে সক্ষম হব। এখন আমাদেরকে এমন একটা ডিভাইস তৈরি করতে হবে যাতে সকল তথ্য ও উপাত্ত থাকবে এবং সেটা মানুষের চিন্তাকে বিশ্লেষণ করে আমাদেরকে জানাতে সক্ষম হবে। এখন যদি আমরা এই ডিভাইসকে মাইক্রো পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি তাহলে তা মাথের পেছনে লাগিয়ে দেয়া সম্ভব হবে। এবং যদি সেটাকে আন্তর্জাতিক একটা তথ্য কেন্দ্রের সাথে এমনভাবে সংযুক্ত করা হয় যেন, কেউ কোন খারাপ চিন্তা করলেই তা সাথে সাথে ধরা পরবে। এ ক্ষেত্রে খারাপের একটা মান দেয়া যেতে পারে। যেমন সাধারন, মোটামুটি ভয়ানক এবং অনেক ভয়ানক। এভাবে অপরাধীর অপরাধ নির্মূল করা যাবে অপরাধ করার আগেই। এই বিষয়টা অত্যন্ত ফিকশন টাইপ হলেও অসম্ভব কিছু না। আমরা আমাদের বর্তমান প্রযুক্তি ব্যবহার করেই এমন কিছু বানাতে পারি।
অনেকে হয়ত বলবেন যে, এতে বেক্তিগত প্রাইভেসি হরন করা হবে। হ্যাঁ, এই কথা মোটামুটি ভাবে সঠিক। তবে এনন কিছু সিস্টেম করা যেতে পারে যেখানে শুধু খারাপ ভাবনা গুলোই সনাক্ত করা হবে। যেমন ভাবে ভিবিন্ন সাইটে ব্যবহার করা পাসওয়ার্ড গোপন থাকে। ঠিক সেই ভাবে ভালো চিন্তাগুলোকে প্রকাশ করা হবে না। শুধু মাত্র মন্দ চিন্তার ক্ষেত্রেই সঙ্কেত দেয়া হবে। তাছাড়া এই যন্ত্র ব্যবহার করে অপরাধও অনুসন্ধান করা যাবে। এটি বর্তমানে প্রচলিত আমাদের লাই-ডিটেক্টর থেকেও অধিক উন্নত ও নির্ভরযোগ্য হবে। আমাদের পরিচিত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং কিন্তু এমন একটা যন্ত্রের ওপরই নির্ভর করে কাজ করছে। সুতরাং প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে।
অনেক দেশই এ নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। তারা টেলিপ্যাথিতেও অনেক উন্নত করে ফেলেছে। এইত কিছুদিন আগেই টেলিপ্যাথির মাধ্যমে প্রায় ২০০০ কিমি (২ হাজার) দূরে সংকেত প্রেরণ সম্ভব হয়েছে। আর হয়ত বেশিদিন নেই যে, আমরা এমন ডিভাইস দেখতে পাব। এতে মানুষ কিছুটা নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে গেলেও সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব হবে। হয়তবা আমরা দেখব যে আমাদের দেশেরই কেউ এমন কিছু তৈরি করে ফেলেছে! আমরা সেই দিনেরই অপেক্ষায় রইলাম...
বিজ্ঞানকে ভালোবাসুন, বিজ্ঞানের সাথে থাকুন।
টেকটিউনসে প্রকাশিত টিউনগুলো ওমেগা প্রাইম-মাসিক বিজ্ঞান ম্যাগাজিন ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশিত হয় না।
আমি কামরুজ্জামান ইমন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 33 টি টিউন ও 124 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।
বিজ্ঞানকে ভালবাসি। চাই দেশে বিজ্ঞান চর্চা হোক। দেশের ঘরে ঘরে যেন বিজ্ঞান চর্চা হয় সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।
nice