আমরা কি এই সুবিশাল মহাবিশ্বে একা?এই অসিম মহাবিশ্বের সূর্য নামক নক্ষত্রের পৃথিবী নামক গ্রহেই কি একমাত্র প্রানের অস্তিত্ব আছে? পৃথিবী ছাড়া আর কোথাও কি বুদ্ধিমত্তা নেই?এইসব প্রশ্ন মানুষের প্রাচীনতম প্রশ্নের মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।কারন এই প্রশ্নগুলোর সাথে জড়িত আছে মানুষের অস্তিত্ব আর সৃষ্টির রহস্য।তাই মানুষ মানুষে পরিনত হয়ার পর থেকেই এইসব প্রশ্নের উত্তর খুজে ফিরছে এবং এখনো এর উত্তর খুঁজছে।তাই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা আমাদের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি অপরিহার্যও বটে।আমাদের বর্তমান বিজ্ঞান এর উত্তর এখনো খুঁজে না পেলেও আর কিছুদিনের মধ্যেই যে খুঁজে পাওয়া যাবে সেই আশা করা যায়।কারন এখন আমাদের কাছে আছে প্রচুর তথ্য-প্রমান।তো এর উত্তর খুঁজে পাওয়ার জন্য দরকার তথ্যগুলোকে একত্রিত করা এবং সঠিক ভাবে বিশ্লেষণ করা।প্রাপ্ত তথ্যমতে বিশ্লেষণ করলে প্রান থাকার অনেক সম্ভাবনা পাওয়া যায় তার সাথে পাওয়া যায় বুদ্ধিমান প্রাণীরও অস্তিত্ব।আমাদের এই গালাক্সিতে প্রায় ১০১১টি নক্ষত্র আছে এবং এরকম প্রায় আরো ১০১১টি গ্যালাক্সি আছে আমাদের এই দৃশ্যমান মহাবিশ্বে।এখন আমরা যদি এই মহাবিশ্বের গ্রহের সংখ্যা হিসাব করি এবং তার ক্ষুদ্রতম ভগ্নাংশেও যদি প্রান থাকার আশা করি তাহলেও দেখা যায় যে আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বেই অসংখ্য প্রান ধারণকারী গ্রহ থাকার সম্ভাবনা আছে।আর বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক ড্রেকের সমীকরণে যদি ক্ষুদ্রতম মানও বসাই তাহলেও দেখা যায় যে আমাদের এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই প্রায় ১০০০ বুদ্ধিমান প্রান ধারণকারী গ্রহ থাকার কথা।যদিও আমাদের প্রযুক্তিগত কারনে আমরা তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি,তবুও এই কথা বলাই যায় যে আমাদের নিজস্ব গ্যালাক্সিতেই অসংখ্য বুদ্ধিমান প্রানি আছে। হয়তবা একদিন তাদের সাথে আমাদের দেখা হবে এবং সেই সাক্ষাৎ হবে অবশ্যই মঙ্গলজনক।এক্ষেত্রে মহাবিশ্বে প্রান বা বুদ্ধিমত্তা খুঁজে পাওয়া আর না পাওয়ার সাথে জড়িত আছে আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন আর মানুষের অতীত ও ভবিষ্যৎ জানার দুয়ার। ১.ভুমিকাঃ আমাদের এই মহাবিশ্ব অত্যন্ত বিচিত্র।আর তার চেয়েও বেশি বিচিত্র হল মহাবিশ্বে প্রানের অস্তিত্ব।মোটা দাগে মূলত আমাদের মহাবিশ্বের সমস্ত বস্তুকে দুইভাগে ভাগ করা যায়।তার একভাগ হল প্রান আর অন্য ভাগ হল জড়।কিন্তু আবার দেখতে গেলে দেখা যাবে যে এই প্রান আর জড়ের মধ্যে অত্যন্ত সূক্ষ্ম একটা মিল আছে।অর্থাৎ প্রত্যেক প্রাণীর যদি কোন নির্দিষ্ট অংশের দিকে লক্ষ্য করা যায় তাহলে দেখা যা যে আলাদা ভাবে এদের কাররই প্রান নেই অর্থাৎ সবাই প্রাণহীন।এককথায় বলতে গেলে জড়।আবার যখন তাদের একত্রে দেখা হয় তখন তাদের মধ্যে প্রানের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়।তাই দেখা যায় যে সকল প্রানই হল কিছু জড় পদার্থের নির্দিষ্ট পরিমাণের মিশ্রণ।এভাবেই প্রানের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা যায়।আর আমাদের পৃথিবীর প্রানের মুল হল অ্যামিনো এসিড।আর এই অ্যামিনো এসিড তৈরির মুল উপাদান হল হাইড্রোজেন,নাইট্রোজেন,কার্বন ও অক্সিজেন।এই উপাদান গুলো মহাবিশ্বে প্রচুর পরিমাণে আছে।তাই মহাবিশ্বে প্রানের সম্ভাবনাও ব্যাপক।কিন্তু শুধু এই উপাদান গুলো থাকলেই হবে না।উপাদানগুলোর বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রানের একক ডিএনএ বা অ্যামিনো এসিড তৈরির জন্য পরিবেশও বিরাজ করতে হবে।তাহলেই কেবল প্রান থাকা সম্ভব হতে পারে।যার উত্তম উদাহরন হল ইউরি-মিলার পরীক্ষা যা ১৯৫৩ সালে করা হয়।প্রান গঠনের উপযুক্ত পরিবেশ এই সুবিশাল মহাবিশ্বে থাকাটা একেবারেই স্বাভাবিক।কিন্তু কথা হল তাদের বিবর্তনের মাধ্যমে বুদ্ধিমান প্রাণীতে পরিনত হওয়া আর নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে।কিন্তু বিবর্তনের মাধ্যমে বুদ্ধিমান প্রাণীতে পরিনত হওয়া এবং অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কিছু নির্দিষ্ট এককের উপর নির্ভরশীল। এগুলো হল নক্ষত্র থেকে গ্রহের দূরত্ব,নক্ষত্রকে ঘিরে গ্রহের কক্ষ পথের আকার-আকৃতি,নক্ষত্রের আয়ুস্কাল,গ্রহের আকার এবং উপাদান ইত্যাদি।এইগুলো ঠিক থাকলে প্রান সৃষ্টি হওয়া বাধ্যতামূলক এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সেখানে অবশ্যই বুদ্ধিমান প্রাণীর আবির্ভাব ঘটবে।তাত্ত্বিকভাবে হিসাব করে দেখা যায় যে আমাদের এই আকাশগঙ্গা গ্যালাক্সিতেই প্রায় ১০০০ হাজার বুদ্ধিমান প্রানি সমৃদ্ধ গ্রহ থাকা উচিত।কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখনো তাদের কোন হদিস পাইনি।তাহলে ওরা কোথায়?আসলেই কি তাদের অস্তিত্ব আছে বা ছিল?এখানেই মানুষ জাতির জন্য একটা ভয়ের খবর অপেক্ষা করছে। কারন হয়তবা বুদ্ধিমত্তার একটা নির্দিষ্ট অংশে পৌঁছে সকল প্রাণীই মুখ থুবড়ে পরে গিয়েছে এবং সমূলে ধ্বংস হয়েছে।তাই মানুষের ভবিষ্যৎ জানার জন্য এ বিষয়ে আমাদের গবেষণা করতে হবে এবং এর সাথে সম্পর্কিত সমস্ত প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে।
২.কার্যপদ্ধতিঃ মহাবিশ্বে প্রান ও বুদ্ধিমত্তার অস্তিত্ব অত্যন্ত জটিল একটা বিষয়।কিন্তু মানুষসহ পৃথিবীর সকল প্রাণীর অতীত এবং ভবিষ্যৎ জানার জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।কারন এসকল প্রশ্নের সমাধান করতে পারলেই আমরা কেবল আমাদের সম্পর্কে জানতে পারব।আমার এই গবেষণা করার জন্য প্রথমেই দেখতে হবে প্রান কাকে বলে বা প্রান কি?প্রানের একক কি এবং তা কিভাবে গঠিত হয়?প্রান আর জড় পদার্থের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?এবং কোন পরিবেশে প্রান টিকে থাকেতে পারে? বিগতদিনের পরীক্ষা নিরীক্ষা থেকে বিজ্ঞানীরা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মানলেই কোন যায়গায় প্রান থাকা সম্ভব।তবে এই ক্ষেত্রে আর একটা বিষয় রয়েছে।তাহল,প্রান কি মহাবিশ্বের বিভিন্ন যায়গায় আলাদা আলাদা ভাবে সৃষ্টি হয়েছে নাকি কোন নির্দিষ্ট নক্ষত্রে সৃষ্টি হয়ে এই পুরো মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পরেছে।এই পদ্ধতিকে বলা হয় প্যাঁনস্পারমিয়া।যদি প্রথম অনুকল্পটি সঠিক হয় তবে সম্ভাবনা রয়েছে হয়ত পৃথিবী ছাড়া আর কোথাও কোন বুদ্ধিমান প্রাণী দূরে থাকুক প্রানের অস্তিত্বই নেই।আর যদি দ্বিতীয় অনুকল্পটি সঠিক হয় তাহলে মহাবিশ্বে প্রান ও বুদ্ধিমান সত্ত্বার সম্ভাবনা অনেক।তবে প্রথম অনুকল্প মতেও মহাবিশ্বে প্রান থাকতে পারে।কারন প্রান সৃষ্টির জন্য যে পরিবেশ প্রয়োজন বলে ধারনা করা হয়, বেশিরভাগ গ্রহই সেই পরিবেশের মধ্য দিয়ে তার জীবনকাল অতিক্রম করে।আর দ্বিতীয় অনুকল্প মতে একটা বিষয় খেয়াল করা উচিত,তাহল প্রান কতটুকু চরম পরিবেশে থাকতে পারে?কারন প্যাঁনস্পারমিয়া অনুসারে কোন প্রাণকে বিভিন্ন চরমপরিবেশের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।যেমন প্রচণ্ড তাপ,চাপ,গতি এবং দীর্ঘ সময় টিকে থাকার ক্ষমতা।আর আমাদের পৃথিবীতেই কিছু প্রাণী আছে যারা চরমজীবী। তাই দেখা যায় যে আমাদের এই মহাবিশ্বে প্রান থাকাটা অত্যন্ত স্বাভাবিক।হয়তবা আমাদের সৌর জগতেই প্রানের অস্তিত্ব আছে।হয়ত তারা লুকিয়ে আছে শনির উপগ্রহ টাইটানের মিথেন সাগরে অথবা বৃহস্পতির পানি সমৃদ্ধ উপগ্রহ ইউরোপার বরফের পুরু আস্তরের নিচে অথবা অন্য কোন চরমপরিবেশের গ্রহে।কিন্তু বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব পাওয়া কঠিন হলেও একেবারে ক্ষীণ নয়।আমাদের মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান প্রাণী খোঁজ করার জন্য অনেকগুলো সংস্থা বরতমানে কাজ করে চলছে।তার মধ্যে অন্যতম হল SETI(Search for Extraterrestrial Intelligence).এই সংস্থা সারাক্ষণ তাদের সকল টেলিস্কোপ আকাশের দিকে তাক করে রেখেছে বুদ্ধিমান প্রাণীর মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ অনুসন্ধান এবং তা বিশ্লেষণ করার জন্য।এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার অন্যতম পথিকৃতি ড. ফ্রাঙ্ক ড্রেক মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান প্রাণী খোঁজার জন্য দারুন একটা পদ্ধতি দেখিয়েছেন। তিনি এইটা একটা সমীকরণের মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন।তার এই সমীকরণটি বুদ্ধিমান প্রাণী খোঁজার জন্য অত্যন্ত নিখুঁত নাহলেও কার্যকারী।ড. ফ্রাঙ্ক ড্রেকের এই সমীকরণটি হলঃ N = R* . Fp . Ne . Fl . Fi . Fc . L যেখানে, N=সভ্যতার সংখ্যা R*=আমাদের ছায়াপথে প্রতি বছরে জন্ম নেওয়া জীবন সহায়ক নক্ষত্রের সংখ্যা Fp=এই নক্ষত্রগুলোর মধ্যে যেগুলোতে গ্রহজগত আছে তার সংখ্যা Ne=প্রতিটি নক্ষত্রের গ্রহজগতের মধ্যে প্রান সহায়ক গ্রহের সংখ্যা Fl=প্রান বিকাশ সম্ভব গ্রহসমূহের মধ্যে সত্যিকারে প্রানের বিকাশ হয়েছে এমন গ্রহের সংখ্যা Fi=প্রানের বিকাশ হওয়া গ্রহসমূহের মধ্যে আবার যেগুলোতে বুদ্ধিমান প্রাণীর বিকাশ হয়েছে তার সংখ্যা Fc=বুদ্ধিমান প্রাণী যারা যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে বেতার তরঙ্গ ব্যাবহার করে তার সংখ্যা L=ঐ সকল সভ্যতার গড় আয়ুস্কাল আমাদের ছায়াপথের জন্ম হয়েছে প্রায় ১০-২০বিলিয়ন বছর আগে এবং এখানে আছে কয়েক বিলিয়ন নক্ষত্র। এই হিসাবে আমাদের ছায়াপথে নক্ষত্র সৃষ্টির গড় হার ২০ এবং এর অর্ধেক প্রান সহায়ক।নক্ষত্রগুলোর মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশের গ্রহ জগত থাকতে পারে।তবে বর্তমান গবেষণা অনুসারে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে এই সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।যেসব নক্ষত্রের গ্রহ জগত আছে,সেসব গ্রহের অন্তত একটি প্রান সহায়ক গোল্ডিলক অঞ্চলে থাকতে পারে। তাই Ne এর মান হবে ১।ড্রেক Fl এর মান ধরেছেন ১০শতাংশ।যা এখনো যুক্তিসংগত।পৃথিবীতে গবেষণা থেকে দেখা যায় যে সকল প্রাণীই ধিরে ধিরে তাদের মস্তিস্কের আকার বৃদ্ধি করছে।তাই কোনযায়গায় প্রান থাকলে সেখানে বুদ্ধিমান প্রাণীর আবির্ভাব হওয়া অবশ্যম্ভাবী।তাই Fi এর মান ধরা হয় ১।Fc এর মানও একশ শতাংশ অর্থাৎ ১ ধরা হয়।তবে এই মান কমার সম্ভাবনাই বেশি।কারন উন্নত প্রানিরা মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গের পরিবর্তে অপটিক্যাল ফাইবারও ব্যাবহার করতে পারে।তবে আন্ত গ্রহ যোগাযোগের জন্য মাইক্রো ওয়েভ ব্যাবহার করতেই হবে।আর সভ্যতার আয়ুস্কাল ধরা হয় ১০,০০০ বছর।তবে এটা বারতেও পারে আবার কমতেও পারে।এই মানগুলো সমীকরণে বসিয়ে পাই, N = ১০X.১ X ১X ১X .১X ১X ১০০০০ = ১০০০ অর্থাৎ সবকিছুর ন্যূনতম মান ধরেও পাওয়া যায় আমাদের গ্যালাক্সিতেই ১০০০(এক হাজার) বুদ্ধিমান প্রাণীর সভ্যতা থাকতে পারে।আর আমাদের গ্যালাক্সির ব্যাস হল ১ লক্ষ্য আলোকবর্ষ। তাহলে হিসাব করে দেখা যায় গড়ে প্রতি ১ শ আলোকবর্ষের মধ্যে একটি বুদ্ধিমান প্রাণী আছে এমন গ্রহ থাকবে।তাহলে আমাদের পৃথিবী থেকে ১শ আলোকবর্ষ দূরেই বুদ্ধিমান প্রাণীর গ্রহ আছে।আর গবেষণা মতে অনুমান করা যায় এর মধ্যে অসংখ্য গ্রহে ইতিমধ্যে প্রানের আবির্ভাব ঘটেছে।
৩.ফলাফলঃ উপরোক্ত গবেষণা থেকে দেখা যায় যে আমাদের গ্যালাক্সি বুদ্ধিমান প্রানে পরিপূর্ণ।আর সরল প্রান আছে অহরহ।অর্থাৎ প্রান মহাবিশ্বে কোন বিরল ঘটনা নয়।প্রান বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ এবং প্রয়োজনীয় উপাদান পেলে যেকোনো যায়গাতেই প্রানের বিকাশ ঘটা শুধু সম্ভবই না বরং হওয়া উচিত।তাই দেখা যায় যে আমাদের গ্রহের আশে পাশেই প্রান থাকতে পারে এবং আমাদের তা খুঁজে বের করতে হবে।
৪.আলোচনাঃ আমার এই গবেষণা থেকে দেখা যায় যে মহাবিশ্বে দূরে থাকুক আমাদের নিজস্ব গ্যালাক্সিতেই অসংখ্য বুদ্ধিমান প্রান থাকা উচিত।এমনকি আমাদের সৌর জগতেই জটিল না হোক অন্তত পক্ষে সরল প্রান থাকতেই পারে।যদিও আমার এই গবেষণার অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, তবুও এর অনুকল্পগুলোর পেছনে জোরাল যুক্তিও রয়েছে।উদাহরন হিসেবে দেখা যায়, ১৯৫৩ সালে ইউরি-মিলারের পরীক্ষায় আমাদের পৃথিবীর জন্মের সময়ের পরিবেশের ধারনা করে সেই পরিবেশ কৃত্তিম ভাবে তৈরি করা হয়েছিল এবং সেখানে প্রান সৃষ্টির উপাদান গুলো দিয়ে বিক্রিয়া করানো হয়।সেই পরীক্ষায় বর্তমানে আমাদের প্রাপ্ত ২০টি অ্যামাইনো এসিডের মধ্যে ৯টিই কৃত্তিম ভাবে তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল।যার অন্যতম হল গ্লাইসিন।এ থেকে সহজেই ধারনা করা যায় মহাবিশ্বের অন্য কোথাও এরকম পরিবেশ পেলে প্রান সৃষ্টি হতেও পারে।আর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেখা গেছে মহাবিশ্বে অসংখ্য গ্রহ এই অবস্থার মধ্য দিয়ে তাদের জীবনকাল অতিবাহিত করেছে।তাই আমাদের মহাবিশ্বে অসংখ্য প্রান থাকতে পারে।আর যেখানে প্রান আছে সেখানে একদিন না একদিন বুদ্ধিমান প্রাণীর আবির্ভাব হবেই,যদি তারা প্রয়োজনীয় সময় পায়।কারন পৃথিবীর মধ্যে মানুষ সরবচ্চ বুদ্ধিমান প্রাণী এবং গবেষনায় দেখা গেছে অন্যান্য প্রানিরাও তাদের বুদ্ধির বিকাশ করছে।উদাহরন হিসেবে আফ্রিকার কিছু বানরকে উল্লেখ করা যায়।তাদের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে যে তারা দুই পায়ে হাটার চেষ্টা করছে এবং তারা তাদের খাবার সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন হাতিয়ারও ব্যাবহার করা শিখেছে।তাই সকল তথ্যাদি একসঙ্গে করলে দেখা যায় মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান প্রাণী আছেই।আর যেসব গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণী থাকার সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অনেক গুলোরই বয়স অনেক বেশি।অপরদিকে তাত্ত্বিক ভাবে হিসাব করে দেখা গেছে যদি কোন বুদ্ধিমান প্রাণী আলোর গতির একশ ভাগের দশ ভাগ গতিতেও চলে প্রতি ৫০০বছরে তাদের নিজের গ্রহ থেকে অন্য দুইতি গ্রহে যেয়ে উপনিবেশ করে,আর যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে পুরো মিল্কিওয়ে গালাক্সিতে উপনিবেশ গড়ে তুলতে তাদের মাত্র ৩৭.৫ মিলিয়ন বছর লাগবে যা মহাবিশ্বের সময়ের স্কেলে অতি ক্ষুদ্র।কিন্তু এখনো আমরা কোন বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব খুজেই পাইনি।কেউ এখনো আমাদের পৃথিবীতে আসেনি।আর আমাদের তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে ওরা কোথায়?এর পেছনে কিছু কারন থাকতে পারে।এর অন্যতম কারণগুলো হতে পারে ক.আমরাই প্রথম খ.মহাবিশ্বে প্রান বিরল অথবা গ.গ্রেট ফিল্টার।
৪.১(ক)আমরাই প্রথমঃ হতে পারে মহাবিশ্বে আমাদের গ্রহেই প্রানের আবির্ভাব ঘটে প্রানী বুদ্ধিমান প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। এবং অন্য সকল গ্রহে প্রান এখনো সরল প্রানেই আছে,বুদ্ধিমত্তা তৈরি হয়নি।কিন্তু এই অনুকল্পটিকে সহজেই কিছু যুক্তি দিয়ে বাতিল করে দেয়া যায়।যেমন মহাবিশ্বে বা আমাদের গালাক্সিতে পৃথিবী একটি নবীন গ্রহ।পৃথিবীর থেকেও অনেক বেশি বয়স সমৃদ্ধ এবং প্রানের উপযোগী গ্রহ গালাক্সিতে আছে।তাই এই অনুকল্পের তেমন ভিত্তি নেই বললেই চলে।যদিও এই ধারনাই অধিক গ্রহণযোগ্য। ৪.২(খ)মহাবিশ্বে প্রান বিরলঃ এই অনুকল্প মতে হতে পারে মহাবিশ্বের একমাত্র পৃথিবীতেই প্রান আছে।আর কোথাও এখনো প্রানের বিকাশ হয়নি।অর্থাৎ মহাবিশ্বে প্রান সৃষ্টি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র।কিন্তু এটা সম্ভব না।কারন পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে প্রানের বিকাশ সম্ভব এমন পরিবেশে প্রান সৃষ্টির প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো থাকলেই প্রান সৃষ্টি হয়।তবে পরীক্ষাগারে এখনো প্রান সৃষ্টি করতে না পারলেও প্রান সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক উপাদান অ্যামিনো এসিড তৈরি করা গেছে।
৪.৩(গ)গ্রেট ফিল্টারঃ এই অনুকল্পটি সত্যি হওয়ার পেছনে যথেষ্ট কারন রয়েছে।এই অনুকল্প মতে হয়ত মহাবিশ্বে বহু প্রান ছিল এবং তারা বুদ্ধিমত্তায়ও পৌঁছেছিল।কিন্তু বুদ্ধিমত্তার একটা নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছে সবাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে আর কেউই আগাতে পারেনি।এই ধ্বংস হতে পারে প্রাকৃতিক কোন কারন যেমন সুপারনোভা বিস্ফোরণ অথবা নিজেদের মধ্যে কলহের কারনে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করে ফেলেছে। উপরে বর্ণিত ৩টি অনুকল্পের মধ্যে গ্রেট ফিল্টার অনুকল্পটিই অধিক গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়।যদি এই গ্রেট ফিল্টার সত্যিই থাকে তাহলে হয়ত আমাদের জন্য সামনে রয়েছে দুর্ভাগ্য।অথবা হতে পারে সৌভাগ্যও।হতে পারে এই গ্রেট ফিল্টারের অবস্থান আমাদের বানর থেকে মানুষে পরিনত হওয়ার সময়টা নয়ত সরল জীব থেকে জটিল জিবে পরিনত হওয়াই এই গ্রেট ফিল্টার।আর যদি তা না হয় তাহলে আমাদের সামনেই রয়েছে এই গ্রেট ফিল্টার বা বৃহৎ ছাঁকন।এর উদাহরন হিসেবে দেখা যায় যে,আমাদের পৃথিবীতে বর্তমানে যে পরিমান পারমাণবিক শক্তি আছে তা দিয়ে পৃথিবীকে শুধু একবার নয় কয়েকবার ধ্বংস করা যাবে।তবুও ধ্বংসের পর কিছু নিম্নমানের অণুজীব থেকেই যাবে।আর তারা হয়ত আবার বিবর্তন প্রক্রিয়ায় বুদ্ধিমান প্রান সৃষ্টি করবে।হিসাব করে দেখা গেছে যে বুদ্ধিমান প্রাণীর বিকাশ ঘটতে যদি সাড়ে ৬ কোটি বছর লাগে এবং পৃথিবীর বয়স যদি ৫শ কোটি বছর হয় তবে পৃথিবীতে মোটামটি প্রায় ৭৫বার প্রানের আবির্ভাব ঘটা সম্ভব।আর প্রত্যেক বারই হয়ত আগের বারের ভুল গুলো সংশোধন করে নিবে।আর এভাবেই প্রান টিকেও যেতে পারে। তাই আমাদেরকে আরো সতর্ক হতে হবে আমাদের শক্তি ব্যাবহার করার ক্ষেত্রে।যেকন ধরনের ভুলই হতে পারে আমাদের ধ্বংসের কারন।আর এ সমস্ত বিষয়ের জন্যই আমাদের আর গবেষণা করে জানতে হবে মানুষের অতীত ও ভবিষ্যৎ।জানতে হবে আমরা কোথা থেকে এসেছি আর কোন দিকেই বা যচ্ছি।দাড়া করতে হবে শক্ত থিউরি।এই গবেষণা থেকে দেখা যায় যে মহাবিশ্বে প্রান থাকা সম্ভব এবং তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগও ঘটতে পারে।শুধু খেয়াল রাখতে হবে আমাদের অবস্থা যেন অ্যামেরিকান রেড ইন্ডিয়ানদের মত না হয়।
৫.তথ্যসূত্রঃ এই গবেষণা পত্র সম্পন্ন করার জন্য অনেক বই পত্র পড়তে হয়েছে এবং সেখান থেকে নেয়া তথ্য সুত্র এই গবেষণা পত্রে ব্যাবহার করা হয়েছে।যেসব স্থান থেকে সাহায্য নেয়া হয়েছে তা হলঃ
১.অভিজিৎ রায় ও ফরিদ আহমেদ:মহাবিশ্বে প্রান ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে(ঢাকা:অবসর প্রকাশনী,২০০৭)
২.রেজাউর রহমান:মহাবিশ্বে জিবনের সন্ধান(ঢাকা:প্রথমা প্রকাশনী,২০০৯)
৩.আবদুল্লাহ আল-মূতি:মহাকাশে কি ঘটছে(ঢাকা:অনুপম প্রকাশনী,১৯৯৭).পৃ.১১৪-১৩৪
৪.ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী:মানুষ,মহাবিশ্ব ও ভবিষ্যৎ(ঢাকা:প্রথমা প্রকাশনী,২০১৩).পৃ.১০৬-১১৫
৫.ভবেশ রায়:মহাকশে প্রানের সন্ধান(ঢাকা:অনুপম প্রকাশনী,২০০৮)
৬. http://en.wikipedia.org/wiki/Great_Filter
৭. http://www.seti.org/seti-institute/project/details/fermi-paradox
৮.আবদুল্লাহ আল মাহমুদ(http://bn.zero2inf.com/category/article/1600/fermi-paradox-the-great-filter#.U_7fQMVdWx0)
৯.আবদুল্লাহ আল মাহমুদ(http://bn.zero2inf.com/category/article/1592/fermi-paradox-where-is-everybody)
৬.কৃতজ্ঞতা-স্বীকারঃ আমার এই গবেষণা পত্রটি লেখার পেছনে অনেকেরই অবদান রয়েছে।তবে বিশেষ ভাবে যাদের অবদান সবথেকে বেশি তারা দুজন হলেন “ইব্রাহিম মুদাছছের” ও “শিবলি বিন সরওয়ার” ভাই।তাদের দিক নির্দেশনা ছাড়া আমার এই গবেষণা পত্রটি হয়ত দাঁরাই হত না।তাই তাদের প্রতি জানাই বিশেষ কৃতজ্ঞতা। তারপরেই যেই গোষ্ঠীর কথা না বললেই নয়, তারা হল রকমারি.কম টিম।তাদের সাহায্যেই আমি আমার গবেষণা কাজ সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সব বই খুঁজে পেয়েছি।তাই তাদের জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ।তারপরেই ধন্যবাদ জানাই গুগলকে আমাকে বিভিন্ন তথ্য খুঁজে দেয়ার জন্য।
টিটির আগে এই পত্রটি আমাদের জার্নাল.কম ও নিজস্ব সাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানের সাথে থাকুন, বিজ্ঞানকে ভালোবাসুন।
টেকটিউনসে প্রকাশিত টিউনগুলো ওমেগা প্রাইম-মাসিক বিজ্ঞান ম্যাগাজিন ও আমার ব্যাক্তিগত ব্লগ ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশিত হয় না।
আমি কামরুজ্জামান ইমন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 33 টি টিউন ও 124 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।
বিজ্ঞানকে ভালবাসি। চাই দেশে বিজ্ঞান চর্চা হোক। দেশের ঘরে ঘরে যেন বিজ্ঞান চর্চা হয় সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।
তথ্যবহুল, যুক্তিগত, সুন্দর উপস্থাপন । এক কথায় চমত্কার লিখেছেন ভাইয়া । আসলেই মহাবিশ্বে আমরা ছাড়াও আরো প্রাণ আছে এসম্পর্কে আমার বিশ্বাস আরো দৃঢ় হলো । টিটিতে অনেক দিন লগ ইন করি না । কিন্তু আজ এই কমেন্ট করার জন্য লগ ইন করলাম ।