আজ মহাশূণ্যের কিছু তথ্য দিচ্ছি আপনাকে জানতে অনেক আগ্রহী করে তুলতে পারে।
জেনে নিন অবিশ্লেষ্য কিছু বিজ্ঞানের প্রশ্নের উত্তর ঃ
উত্তর ঃ আজ থেকে প্রায় কয়েক'শ বিলিয়ন বছর পূর্বে এক অতি অতিকায় বৃহৎ বস্তু পিণ্ড থেকে মহাবিশ্বের সকল পদার্থের সৃষ্টি। সৃষ্টি থেকে প্রত্যেক পদার্থই একে অপরের সাথে এক অবিচ্ছেদ্য আকর্ষণ বলে আকর্ষিত। এক পদার্থের সাথে অন্য একটি বস্তুর আকর্ষণকে "মধ্যাকর্ষণ বল" বলে। আর একটি বস্তুর সাথে অন্য একটা বস্তুর টান জনিত force কে "মধ্যাকর্ষণ শক্তি" বলে। একটি বড় বস্তুর সাথে ছোট একটা বস্তুর আকর্ষণ হয় শক্তিমুখী। অর্থ্যাৎ যার শক্তি যতটুকু সে ততটুকুই স্থির থাকার প্রাবল্যতা থাকে। আর অন্যান্যরা বড় বস্তুর সাথে যোগাযোগটা অবিচ্ছিন্ন রাখতে নির্দিষ্ট অরবিটে একটা গোলাকার কক্ষপথে নির্দিষ্ট বেগে ঘুরে চলে। পৃথিবীও তার ব্যতিক্রম নয়। সৃষ্টি থেকেই স্রষ্ট্রা মেনেই প্রতি ৩৬৫ দিনে একবার সূর্য নামের মাঝারি নক্ষত্রটিকে নির্দিষ্ট একটা বেগে ঘুরেয় চলেছে।
উত্তর ঃ গ্রহের মর্যাদা চ্যুত বস্তু প্লুটো। আমাদের পালক নক্ষত্রটা মহাবিশ্বের একটা মাঝারি সাইজের নক্ষত্র।
একটা কথা আছে " মুল্লার দৌর মসজিদ পর্যন্ত "। অর্থ্যাৎ কোন বস্তুর শক্তি যতটুকু সে ততটুকুই কেবল রাজত্ব্য করতে পারে। ঠিক তেমনি সূর্যের আকর্ষণ সীমা ততটুকু যতটুকুই সে আকর্ষণ করতে পারে। হয়ত পুরাতন বিজ্ঞানের দৃষ্টি সীমা প্লুটো পর্যন্ত ছিল। কিন্তু বর্তমান বিজ্ঞানের দৃষ্টি সীমা প্লুটোকে ছাড়িয়ে অন্যপথে।
মহাবিশ্বের অসংখ্য তারকার আরালে আমাদের মত জগৎ অসংখ্য। তাদেরকেও একটা নির্দিষ্ট কক্ষপথ পর্যন্ত কোন বস্তুই সর্বশেষ আকর্ষণ করে। সবারই আকর্ষণের একটা সীমা আছে।
উত্তর ঃ
প্লুটো আমাদের সৌরজগতের সর্বশেষ বস্তু। নবম এই গ্রহকে খুজতে সময় লেগেছিল ২৫ বছর। ১৯৩০ সালে ক্লাইড টমবাও ফটো প্লেটে এই গ্রহের সন্ধান পান। এটি ৯০,৭০০০ দিনে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। প্লুটো আকারে অনেক ছোট। এর কক্ষ পথ হওয়া উচিত ছিল নেপচুনের কক্ষপথের দ্বিগুণ দূরে। কিন্তু এর কক্ষপথ তার থেকেও অনেক কাছে। চলনের একপর্যায়ে প্লুটো নেপচুনের কক্ষপথের ভেতরে দিয়েই চলে যায়। প্লুটোর উপগ্রহ একটি এবং তার নাম "চ্যারন"। তাও আবার প্লুটোর চাইতে অনেক বড়। উপগ্রহ গ্রহের চাইতে বড় হতে পারে না। হয়তো প্লুটোই উপগ্রহ আর চ্যারনই গ্রহ। নয়তো দুইটিই গ্রহ বা উপগ্রহ নয়। এই দুইটি বস্তুই "আন্তগ্রহ"। আর এ ও হতে পারে যে বস্তু দ্বয় একধরণের "ভ্রাম্যমান গ্রহাণু"। কিন্তু এই প্লুটে গ্রহ বলা প্রায় অসম্ভব।
উত্তর ঃ মহাবিশ্বের পথে প্রান্তরে অজস্র পদার্থ এদিক সেদিক ঘুরা ঘুরি করে। কেউ কক্ষপথে আবার কেউ কক্ষপথ হীন ভাবে। এই সকল বস্তুর উৎপত্তি কি করে হল ?
এটা কল্পনার একটা বিষয়। বিভিন্ন মত বিশ্বাসীদের কাছে এই সৃষ্টি প্রক্রিয়া বিভিন্ন। আগেকার সময়ে ঈশ্বর বিশ্বাসী বা ধর্মান্ধরা বলতেন " ঈশ্বরই এ সব কিছুর সৃষ্টি কর্তা। ঈশ্বর মানুষের জন্ম দেন একটি স্থির গ্রহে। যার নাম পৃথিবী।" সূর্যের ব্যাপারে কাউকে প্রশ্ন করলে বলত, " সূর্য ভোরে একটা ঘুড়ার গাড়িতে চড়ে ১২ ঘন্টা সময় ব্যাপি পৃথিবীতে আলো দান করে সন্ধ্যার আড়ালে ক্লান্তি দূর করার জন্য গাড়ি থেকে নেমে বিশ্রাম নিত।" আবার অনেকের মুখে নানান আজেবাজে জিনিস শুনা গিয়েছিল। কার মুখে দেবতা হার্মিসের নাম আর কার মুখে মার্কারী দেবতার নাম।
যাই হোক সৃষ্টি রহস্যটা বিজ্ঞানের কাছে ভিন্ন। বিজ্ঞান বলে " আজ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর আগে এ মহাশূণ্যের সৃষ্টি হয় এক অপার মহা বিষ্ফোরণের ফলে। এই সৃষ্টি প্রক্রিয়া একটা ধীর ক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া সংগঠিত হতে অনেক সময় লেগেছিল। আকাশের ঐ মিটমিট তারা আর অন্যান্য সকল পদার্থ ছিল সে সময় ঘনিভূত। একটা অতিকায় বৃহৎ বস্তু পিণ্ড। উত্তপ্ত ঐ বস্তুপিণ্ডে তাপের ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক পর্যায়ে ঐ বস্তুটি তাপ সহ্য করতে না পেরে মহা এক বিষ্ফোরণের সহিত চুরমার হয়ে যায়। এই বিষ্ফোরণকে বিজ্ঞানের ভাষায় "বিগ ব্যাং" বলে। ঐ বিষ্ফোরণের ফলেই বিচ্যুত বস্তু গুলো তাপ বিকীরণ করে গ্রহ,উপগ্রহ,নক্ষত্র,ধুমকেতু ও গ্রহাণুতে রুপান্তরিত হয়।"
-এটাই বিজ্ঞান ভিক্তিক সৃষ্টি রহস্য।
উত্তর ঃ মহাবিশ্ব নামটায় বিষ্ময়কর। এতে অপার রহস্যে ভরপুর। তাই অনেক বস্তুই আছে যেগুলোকে বিশ্বাস করা অতি কঠিন।
বিশ্ব ব্রক্ষ্মাণ্ডের অসীম সীমায় বিজ্ঞানীরা এমন কিছু পদার্থের সংজ্ঞা পেয়েছেন যে গুলো চিন্তা করায় অকল্পনীয়।
এর মধ্যে সব চাইতে ভয়ংকর ও রহস্যময় হল "ব্ল্যাক হোল"।
ডিস্কভারী চ্যানেলটা আমাদের কাছে কম বেশি পরিচিত। ডিস্কভারী চ্যানেলের একটি প্রোগ্রামের নাম 'Curiocity'। এখানে একবার সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে একটা ইপিসোড দিয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল যে, " এমনো কিছু আপেক্ষিক পদার্থ রয়েছে যে গুলো বাস্তবিক কোন নিয়মের বাহিরে। আকাশে তাকালে আমরা কেবল বিন্দু বিন্দু আলোকেই দেখি। কিন্তু অজস্র দূর দূরান্তের পথে প্রান্তরে এমন অদ্ভুদ নিয়ম রয়েছে যেগুলো একপ্রকারের অলৌকিক বলা চলে।"
পৃথিবীর বহিরাবরণে আমরা কেবল গাছ গাছালি আর লতাপাতার প্রকৃতিতে জন্ম নিয়েছি। এই স্বাভাবিক নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে থাকার কারণে আমরা অস্বাভাবিক কিছুকে সহজেই উপলব্ধি করতে পারিনা। এটা আমাদের এক প্রকার দূর্বলতা।
ব্ল্যাক হোলের কথা সামান্য বিশ্লেষণ করি।
ব্ল্যাক হোল এমন একটা জিনিস যার মধ্যে সময় অচল। পদার্থের অতিঘনিভূত অবস্থার নাম ব্ল্যাক হোল। যদি পৃথিবীকে চাঁপ দিয়ে একটা গল্ফ বলের আকারে ছোট করা যেত তবে গল্ফ বলটি ব্ল্যাক হোলের একাংশ হত। এখন কল্পনা করুন ঐ গল্ফ বলটির মধ্যাকর্ষের টান কতটুকু হবে অর্থ্যাৎ এর ওজন কতটুকু হবে। আরও এমন একপ্রকার বিষ্ময়কর গ্রহ রয়েছে যে গুলো ভ্রাম্যমান। মহাবিশ্বের কোন নিয়মই এরা মানে না। এরা কক্ষপথ চ্যুত হয়ে এরকম ভব ঘুরে বেড়ায়। বিষ্মের ভিক্তিতে আরও অনেক প্রোসেস এবং অনেক পদার্থ রয়েছে। যেমন, ডার্ক ম্যাটার, অ্যান্টি ম্যাটার, হুয়াইট হোল, ওয়ার্ম হোল, সোপারনোভা, হাইপারনোভা, ওয়াইট ডিওয়ার্ফ, কেরিজ, কমেট, গ্যালাক্সী, গ্রহাণু ইত্যাদি।
উত্তরঃ অবশ্যই। আমরা যেমন দূরত্ব আয়তন গণনা করতে কি.মি. ও ঘন মিটার ব্যবহার করি ঠিক তেমনি মহাবিশ্বে গণনার জন্যও একক আছে। তবে কিলোমিটার বা ইঞ্চি,ফুট, গ্যালন নয়। এই একক গুলো অনেক বড় মাপের। নিচে এসম্পর্কে কিছু আলোচনা করছি।
তারাদের দূরত্ব নির্দেশের জন্য সবচাইতে ছোট একক হচ্ছে "আলোক বর্ষ"(Light Year)। আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে সেই অতিক্রান্ত দূরত্বই হল আলোক বর্ষ। আলোক বর্ষ সময়ের একক নয়। এটি দূরত্বের একক।
1 আলোক বর্ষ = 10^16 মিটার অর্থ্যাৎ ৬ মিলিয়ন মাইল। সূর্য আমাদের কাছ থেকে ৮ আলোক মিনিট দূরে আছে।
আলোকবর্ষের চেয়ে বড় একক হল 'পারসেক'(Persec) সংক্ষেপে 'PC'। পারসেকের পূর্ণ নাম 'প্যারালাক্স অফ ওয়ান সেকেন্ড অফ আর্ক'। ৩.২৬ =১ পারসেক। পারসেক থেকে বড় মাপের একক হল "কিলোপারসেক", "মেগাপারসেক", "গিগা পারসেক" এবং সর্ববৃহৎ 'ট্যারা পারসেক '।
উত্তর ঃ চমকপ্রদ মহাশূণ্যে আলোকীয় বস্তুই বেশি। তাই অবশ্যই এর শ্রেণীবিভাগ থাকবে।
সাধারণত আমরা একটা তারাকে যতটা উজ্জ্বল মনেকরি সেটাকে 'অ্যপারেন্ট ব্রাইটনেস' বলে। আর উজ্জ্বল্য তারাদের একসাথে যে উজ্জ্বলময় মনে হয় সেটাকে ধ্রুব প্রভা বা 'অ্যাবসোলুইট ব্রাইটনেস' বলে।
তবে উজ্জ্বল্যতা সম্পর্কে খ্রিষ্ট পূর্ব ১৩০ অব্দে ১০০০টি তারার প্রভা মেপেছিলেন হিপ্পারকাস।তিনি তারাগুলোকে অ্যাপারেন্ট ব্রাইটনেস অনুসারে ৬টি শ্রেণীতে ভাগ করেন। সর্বোচ্চ উজ্জ্বল, এর চেয়ে কম উজ্জ্বল, এর চেয়ে কম উজ্জ্বল একটা পর্যায়ক্রমিক প্রভার শ্রেণীবিন্যাস তৈরী করেছিলেন।পরবর্তিতে শ্রেণী বিন্যাসকে সাজান একটু ভিন্ন মানের মাধ্যমে।উজ্জ্বল তারার প্রভা স্থির করা হয় ০.০ (শূণ্য)। বেশি প্রভাময় তারাকে ঋনাত্মক মান পাই। যেমন, সূর্যের উজ্জ্বল্যতা -26.5 প্রভা, চাঁদের প্রভা -12.5, অভিজিৎ বা ভেগার প্রভা 0.।চিত্রা বা স্পাইকার প্রভা 1.0। আর সবচেয়ে প্রভাময় তারা লুব্ধক বা সিরিয়াসের প্রভা -1.4।
আর দ্বিতীয় প্রভাময় তারা অগস্ত্য বা ক্যানোপাসের প্রভা -0.7। তারার আলোক বর্ণালী ছট্টার উপর ভিক্তি করেও এর শ্রেণী বিন্যাসও আছে।এদের স্পেকট্রামের অবস্থা দেখেই আমরা তারাটির বায়ুমণ্ডল, উপরপৃষ্ঠ, ভেতর অংশের বিবরণ জানা সম্ভব।
সবচেয়ে গরম তারাগুলোকে বিন্যস্ত করা হয় O Class এ। এগুলোর তাপমাত্রা 40000 কেলভিন বা তার বেশি। এদের রং নীলতম। তারপরের শ্রেণীটার নাম B Class, এদের তাপমাত্রা 18000 কেলভিন ও রং নীলাভ। এরপরবর্তী A Class তারা। এদের তাপমাত্রা 10000 কেলভিন এবং রং নীলাভ সাদা।
পরবর্তী F Class তারা রয়েছে। এদের মধ্যাকার তাপমাত্রা 7000 কেলভিন এবং রং সাদা। G Class তারাদের তাপমাত্রা 5500 এবং এদের রং হলদে সাদা। পরে K Class তারার স্থান। এদের তাপমাত্রা 4000 কেলভিন ও রং কমলা। সর্বশেষ M Class তারাদের মধ্যাকার তাপমাত্রা 3000 কেলভিন এবং এগুলো সবচেয়ে লাল। মহাবিশ্বের 99% তারায় M Class এর।
আমাদের সূর্য কোন শ্রেণীর তারা ? @ আমাদের সূর্য G2 শ্রেণীর তারা।
উত্তর ঃ রাতের আকাশে বিন্দু বিন্দু অজস্র আলো দেখা যায়। যারা হলেন নক্ষত্র। এক বিন্দু আলো থেকে অন্য এক বিন্দু আলোর দূরত্ব অনেক। যে গুলো আমাদের কাছ থেকে কোটি কোটি মাইল দূরে আছে বলেই আমরা এত বড় সীমার দূরত্বকে কাছের মনে করি।এত বড় সীমার মধ্যে কি আছে ?
অবশ্যই গ্রহ কিংবা খালি স্থান। গ্রহ বা অন্যান্য পদার্থ থাকলে তো আর প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু খালি জায়গাটার জন্য উঠে আসে প্রশ্ন।
ঐ খালি জায়গাটাকে গ্যাসীয় মেঘ বা ধূলি মেঘ বলে। ঐ মেঘের ৭৫% ই হাইড্রোজেন, ২৪% হিলিয়াম এবং বাকি ১% কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন সহ অন্যান্য গ্যাস।
ধন্যবাদ
আমি সুরজিত সিংহ সৌর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 20 টি টিউন ও 9 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
একজন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রেমী... :)
অসাধারন।অনেকদিন পর একটা টিউন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লাম।অনেক ভালো লাগলো।