আসসালামুআলাইকুম ও শুভেচ্ছা সবাইকে 🙂 ।সবাই ভাল আছেন আল্লাহর রহমতে আশা করি।
কুর’আনে প্রযুক্তি [পর্ব-২৩] :: সমুদ্রের গভীর অন্ধকার আর আভ্যন্তরীণ তরঙ্গমালা
Marine Science ও “Oceans” বইয়ের শিক্ষা-
যারা Marine Science বা Engineering নিয়ে পড়াশুনা করছেন বা করেছেন তাদের কাছে “Oceans” বইটি ধারাপাত বাল্যশিক্ষার শিক্ষার মতো পড়তে হয় কারন এটা শিক্ষানবীষগনের জন্য অতি basic education – “Ocean” বা সাগর জগৎ সম্পর্কে শেখার জন্য। বইটিতে গভীর সমুদ্রের সাধারণ পরিবেশের কথা বর্ণিত হয়েছেঃ গভীর সমুদ্রের নীচে নিকষ অন্ধকার, পূর্বে মানুষের পক্ষে সর্বোচ্চ ২০-৩০ মিটার পর্যন্ত যাওয়া যেতো। মানুষ, বিশেষত: যারা সমুদ্রে মুক্তা সংগ্রহ করে, সাধারণত সমুদ্রের ২০ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত গভীরে ডুব দেয়, যেখানে তারা সবকিছু পরিষ্কার দেখতে পায়। কেউ যদি ২০০ মিটারের (৬৬০ ফুট) বেশি নীচে যায় পানির প্রচন্ডচাপে সে মারা যাবে। আলো যখন সাতটি আলো (বেগুনী, নীল, সবুজ, কমলা, লাল, আসমানী, হলুদ-বেনিআসহকলা) নিয়ে পানিতে প্রবেশ করে তখন প্রতি ১৫-২০ মিটার পরপর এক একটি অদৃশ্য হতে শেষ পর্যন্ত বেগুনি রংটি পানির ২০০ মিটার পর হারিয়ে যায়। গভীর সমুদ্র ও মহাসমুদ্রসমূহের গভীরে ২০০ মিটার ও তারও নীচে এক আঁধার পরিবেশ বিরাজ করে। এ পরিমাণ গভীরতায় প্রায় কোন আলো নেই। আর প্রায় ১০০০ মিটার (৩২৮০ ফুট) গভীরতায় একদমই কোন আলো থাকে না।
এছাড়া এ সম্পর্কে আরো তথ্য পাওয়া যাবে-Danny Elder, and John Pernetta, Oceans, (London: Mitchell Beazley Publishers: 1991), 27. বইটিতে।
জেদ্দা ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত সমুদ্র-বিজ্ঞানীর বক্তব্য-
প্রফেসর দূর্গারাও একজন ভারতীয় বিজ্ঞানী ও বিশ্ববিখ্যাত সমুদ্র ভূ-তত্ত্ববিদ (বর্তমানে - জেদ্দা ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত)। তিনি বলেন: বিজ্ঞানীরা আজ সাবমেরিনের মাধ্যমে সমুদ্রের অন্ধকারাচ্ছন্নতার কথা জানতে পেরেছে। অথচ আল-কুরআন বিষয়টি পরিষ্কার করে বলেছে অনেক আগেই। তিনি গবেষণা করে বলেন, আল্লাহ সাগর বক্ষের যে অন্ধকারের কথা বলেছেন, তা যে কোন সাগরের জন্য নয়, বরং নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যধারী সাগরের জন্যই আল্লাহর এ বর্ণনা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে এ জাতীয় অন্ধকার স্তরের দু’টি কারণ-(১) রং এবং (২) আলো।
অর্থাৎ-পানির মধ্যে সাত প্রকারের রং রয়েছে। একটির স্তর অতিক্রম করে অন্যটিতে উপনীত হলেই অন্ধকারের মাত্রা বেড়ে যায়। আর আলো রশ্মি যখন পানিতে পতিত হয়, তখন সাতটি রঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। আর তা হলো রশ্মি যখন মহা সাগরের গভীরে প্রবেশ করে তখন দেখেছি, ওপরের স্তর প্রথম ১০ মিটার পর্যন্ত লাল। অতঃপর ৪৯ মিটার পর্যন্ত কালো, ৫০ মিটারের পরে হলুদ, ১০০ মিটারের পরে সবুজ, ২০০ মিটারের পরে নীল। অতঃপর কঠিন অন্ধকার। এ কারণেই ৩০ মিটার গভীরে পোঁছার পরে কোন ডুবুরির ক্ষত স্থান থেকে রক্ত বের হলে তা আর লাল রঙ্গের দেখা যায় না। আর এসব কারণেই আলোর স্তরে অন্ধকার ঘটে।
সমুদ্রের অন্ধকারের বিস্তারিত বিশ্লেষন-
“প্রথম ধরনের অন্ধকারঃ
সাধারণতঃ সমুদ্রের ১০ মিটার গভীরতায় লাল ৩০ মিটারে কমলা, ৫০ মিটারে হলুদ, ১০০ মিটারে সবুজ এবং ২০০ মিটারে নীল আলো অদৃশ্য হয়ে যায়। এরপর মাছ পর্যন্ত নিজের শরীরের আলোর সাহায্য ছাড়া দেখতে পায় না। কারণ গভীর সমুদ্রের তলদেশ সম্পূর্ণ অন্ধকার। এ অন্ধকারই হলো প্রথম ধরনের অন্ধকার।
২য় ধরনের অন্ধকারঃ
সাগরের উপরিভাগ শান্ত হওয়ার পরিবর্তে বাতাস বা অন্য কারণে যদি ঢেউ এর উপরে ঢেউ হয় তা’হলে সূর্যের আলোর অধিকাংশই প্রতিফলিত হয়ে ঢেউ এর তেরছা বা হেলানো দিক দিয়ে অপসৃত হয়ে যায়, এবং আলোর পরিমাণ দারুণভাবে হ্রাস পায়। এই সময় সাগরের তলদেশের অন্ধকার অনেক বৃদ্ধি পায়। একে বলে দ্বিতীয় ধরনের অন্ধকার।
৩য় ধরনের অন্ধকারঃ
আমরা জানি যে, মেঘ হলো ঘনীভূত জলীয় বাষ্পের সমষ্টি। (এর মধ্যে থাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বৃষ্টি-কণা এবং তুষার-কণা! এই কণাগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ায়। বৃষ্টি-ভরা মেঘকে বলা হয় জমাট-মেঘ যার আকার বিশাল মেঘের পর্বতের মত। এর খাড়া-উচ্চতা বেশ দীর্ঘ এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন। এর গভীরতার ব্যাপ্তি ২৫,০০০ থেকে ৩৫,০০০ হাজার ফুটের মধ্যে।) উপর থেকে সূর্যের আলো যখন একে ভেদ করে তখন আলো প্রতিফলিত হয়ে যায়। ফলে সূর্য-কিরণের বড় অংশটা মেঘ কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ঢেউ এর উপর পড়ে কদাচিৎ পানির গভীরতা অতিক্রম করতে পারে। ফলে সাগরের তলদেশ সমগ্র আলো থেকে বঞ্চিত হয়। এর ফলে সাগরের তলদেশে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার বিরাজ করে। এ ধরনের অন্ধকারে কেউ তার নিজের হাত পর্যন্ত দেখতে পায় না;-এমনকি হাত চোখের সামনে তুলে ধরলেও। তা’হলে অন্ধকারের গভীরতা কতটা বিশাল! ” তথ্যসুত্র-M. Grant Gross, Oceanography, A View of Earth, 6th ed., (Englewood Cliffs: Prentice-Hall Inc.: 1993), 205.
সমুদ্রের নিচে ঢেউয়ের উপর ঢেউ আবিষ্কার-
অর্থাৎ সংক্ষেপে বললে-আমরা জানি আলোক রশ্মি সৃষ্টি হয় সূর্য থেকে। আর মেঘমালা সূর্যের নীচে অবস্থান করে একটি প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে। এটাই অন্ধকারের প্রথম স্তর। অতঃপর সমুদ্রের ঢেউয়ের ওপরে আলোক রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে নিম্নদেশে আরেকটি অন্ধকার সৃষ্টি করে এটা হল দ্বিতীয় স্তর। আর যে সমুদ্রের ঢেউ নেই তথায় আলোক রশ্মি প্রতিফলিত হয় না। আর অপ্রতিফলিত আলোক রশ্মি সমুদ্র বক্ষের অনেক গভীর পৌঁছতে সক্ষম। এ ভাবেই মহাসাগরকে দু’টি স্তরে বিন্যস্ত করা যায়। একটি হল উপরিভাগ আরেকটি হল নিম্নভাগ। সাধারণত উপরিভাগ বিশেষভাবে আলো ও উষ্ণতাপূর্ণ। অপর দিকে গভীরাংশ অন্ধকার ও শীতলতায় পূর্ণ। আবার উপরিভাগ ঢেউ দ্বারা চিহ্নিত আর নীচের অংশ শান্ত বলেই পরিগণিত। তবে কোন কোন সময় নীচের অংশেও প্রচন্ড ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। যা মেরীন বিজ্ঞানীরা ১৯০০ সনে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। সমুদ্রের গহিন অন্ধকারে এবং অতল গভীরে মাছেরাও দেখতে পায় না। অন্য কোন প্রাণীর দেখার বিষয়টি তো প্রশ্নই আসে না। এ সকল বিষয়ে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার অতি সম্প্রতি।
অথচ আল-কুরআন এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিয়েছে ১৪০০ বৎসর পূর্বেই। তরঙ্গের ওপর তরঙ্গ, ঢেউয়ের ওপর ঢেউ, বিষয়টি উপলব্ধির জন্য আমরা নিম্নোক্ত বর্ণনাটির প্রতি লক্ষ্য করতে পারি।এমন এক যুগে এ আয়াত নাজিল হয়েছিল সে যুগে ছিল না কোন ডুবুরি। না ছিল কোন জাহাজ, না ছিল কোন আবিষ্কৃত বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি। সেই যুগের মানুষের জানা ছিল না যে সাগরের অভ্যন্তরীণ তরঙ্গ রয়েছে। সাগরের গভীর তলদেশে রয়েছে অন্ধকার একথাও ছিল তাদের অজানা, আসলে এ ধরনের জ্ঞান সেই যুগে কোন মানুষেরই থাকা সম্ভব ছিল না।
আসুন এবার দেখি কুরআন কি বলে:-
বিজ্ঞানীরা বর্তমানে এ বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করেছে যে, সমুদ্রের ওপর যে আলো পতিত হয় তা সমুদ্রের তরঙ্গের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়। এভাবে তার একটি অংশ সমুদ্রে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়। সমুদ্রে নিয়ত গতিশীল তরঙ্গমালার বিভিন্ন স্তর রয়েছে। এই তরঙ্গগুলি স্তরে স্তরে একটির ওপর আরেকটি সঞ্চালিত হয়। এ কারণে তরঙ্গের গতি ও গভীরতার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন স্তরের তরঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার আলো প্রতিফলিত হয়। ফলে, সাগরে যে আলো প্রবেশ করে তা গভীরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস পেতে থাকে এবং অবশেষে তলদেশ পর্যন্ত কোনো আলোই পৌঁছতে পারে না। এই ব্যাপারটি কুরআন মাজিদের উপরোক্ত আয়াতের বিষয়বস্ত্তর সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ যে, ‘অন্ধকারের স্তরসমূহ একটির ওপর আরেকটি।’ এই আয়াতের অপর একটি ব্যাখ্যা আলোর প্রতিসরণের রহস্যের মধ্যে
নিহিত। সম্মানিত পাঠকগন উপরোক্ত আলোচনাগুলি বিস্তারিত করেছি এ কারনে যাতে কুরআনের সংক্ষিপ্ত বার্তা বুঝতে আপনাদের সমস্যা না হয়। প্রথমেই কুরআনের আয়াত দিয়ে আলোচনায় আসা যেত কিন্তু তাহলে আমার মতে আপনাদের নিকট আয়াতটিকে একটু গোলমেলে মনে হতো। বিখ্যাত এ বৈজ্ঞানিক আয়াতটি আমরা পাই আল কুরআনের সুরা নুর ২৪ : ৪০-
024.040 أَوْ كَظُلُمَاتٍ فِي بَحْرٍ لُجِّيٍّ يَغْشَاهُ مَوْجٌ مِنْ فَوْقِهِ مَوْجٌ مِنْ فَوْقِهِ سَحَابٌ ظُلُمَاتٌ بَعْضُهَا فَوْقَ بَعْضٍ إِذَا أَخْرَجَ يَدَهُ لَمْ يَكَدْ يَرَاهَا وَمَنْ لَمْ يَجْعَلِ اللَّهُ لَهُ نُورًا فَمَا لَهُ مِنْ نُورٍ
024.040 Or (the Unbelievers' state) is like the depths of darkness in a vast deep ocean, overwhelmed with billow topped by billow, topped by (dark) clouds: depths of darkness, one above another: if a man stretches out his hands, he can hardly see it! for any to whom Allah giveth not light, there is no light! (Translated by- Brother Marmaduck Picktall)
অথবা সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের ন্যায় যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ যার উপরে ঘন কালো মেঘ আছে। একের উপর এক অন্ধকার। যখন সে তার হাত বের করে তখন তাকে একেবারেই দেখতে পায় না। আল্লাহ যাকে জ্যোতি দেন না তার কোন জ্যোতিই নেই (সূরা নূর ৪০)।(অনুবাদ:- মাওলানা মুহিউদ্দীন, উম্মুল কোরা, সৌদি আরব)
”
আরো তথ্য Reader digest “Sea world, 1035-p”-
“আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে Satellite ocean scanner or ডুবো জাহাজ ও বিশেষ যন্ত্রাদির মাধ্যমে বিজ্ঞানীগণ এই তথ্যসমূহ পেতে পারেন।কোন ধরনের বিশেষ যন্ত্রাদির সাহায্য ছাড়া মানুষ সাগরের ৪০ মিটার গভীরে বা আরো নীচে ডুব দিতে বা যেতে পারে না। যেমন, ২০০মিটার গভীরে সমুদ্রের গভীর অন্ধকার অংশে কোন প্রকার সহায়তা ছাড়া বেঁচে থাকতে পারবে না মানুষ। এ সমস্ত কারণেই বিজ্ঞানীগণ সম্প্রতি সমুদ্র সম্পর্কে সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম তথ্যাদি উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন।”
অধুনা সমুদ্রের সাধারণ গঠনপ্রণালী, এর মাঝে বিদ্যমান জীবসমূহের বৈশিষ্ট্যাবলী, এর ঘনত্ব, এর ধারণকৃত পানির পরিমাণ, এর পৃষ্ঠতল আর গভীরতা সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। অথচ ১৪০০ বছর আগেই সূরা নূরে ’’সমুদ্রের আঁধার’’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছিল। এটা অবশ্যই কোরআনের অলৌকিকত্ব প্রমাণের পক্ষে একটি যুক্তি কেননা এ তথ্যটি কোরআনে এমন সময় প্রদান করা হয়েছে, যখন মানুষ মহাসমুদ্রের গভীরে গিয়ে তথ্যাদি খুজেঁ আনার মত কোন যন্ত্রাদির অস্তিত্বই ছিল না।
অধিকন্তু, ’’তরঙ্গের পর তরঙ্গ, যার উপরে রয়েছে কালোমেঘ ; অন্ধকারের উপর অন্ধকার’’ - সূরা নূরের এ আয়াতটিও কোরআনে বর্ণিত আরেকটি অলৌকিক বিষয় হিসেবে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে।সাম্প্রতিক কালে বিজ্ঞানীগণ উদঘাটন করেছেন যে, সেখানে রয়েছে আভ্যন্তরীন তরঙ্গমালা যারা ‘‘পানির ভিন্ন ভিন্ন ঘনত্বের স্তরের মাঝে সৃষ্টি হয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্তরে ভিন্ন ভিন্ন রূপে অবসান করে’’। আভ্যন্তরীন তরঙ্গমালা বা ঢেউসমূহ সাগর ও মহাসাগর সমূহের গভীর পানির স্তরগুলো ঢেকে থাকে, কেননা উপরকার পানির চেয়ে ভেতরের পানির রয়েছে বেশী মাত্রার ঘনত্ব।
Encyclopedia Britannica “The Ocean, p- 559”- র বর্ননা-
”সমুদ্রের পানিতে আলো প্রবেশ করার পর তা তার অঙ্গীভূত সাত বর্ণে বিভক্ত হয়। সমুদ্র বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এ কথা প্রতিষ্ঠা করেছেন যে, সমুদ্রের গভীর অংশ একটি সুনির্দিষ্ট বর্ণ বা নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো শুষে নেয়। তারা সম্প্রতি দেখিয়েছেন, লাল বর্ণই সর্বপ্রথম ৩০ মিটার গভীর পর্যন্ত শোষিত হয়। অন্য কথায়, যদি কোনো ডুবুরী আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং এই গভীরতার মধ্যে তার শরীর থেকে রক্ত বের হয় সে তা দেখতে পায় না। দ্বিতীয় যে রং শোষিত হয় তা হল কমলা। পরে হলুদ বর্ণ, যা শোষিত হয় ৫০ মিটার পর্যন্ত। এরপরে সবুজ ও বেগুনী বর্ণ ১০০ মিটার গভীর পর্যন্ত শোষিত হয় এবং সর্বশেষ যে বর্ণ শোষিত হয় তা হল নীল, যা ২০০ মিটার পর্যন্ত প্রবেশ করে। এভাবেই সাগরের তলদেশ ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে যায় এবং এই অন্ধকারাচ্ছন্নতা বিরাজ করে বিশেষ স্তরসমূহে,
একটির পর অন্যটি। এটা শুরু হয় ৩০ মিটার গভীরতা থেকে এবং পর্যায় মে ধীরে ধীরে বিভিন্ন বর্ণ স্তরে ২০০ মিটারের গভীরতা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকে, এরপরে বিরাজ করে পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্নতা। ”
সমুদ্র সম্পর্কে সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত এই তথ্য কুরআন মাজিদের উপরে বর্ণিত আয়াতের সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ।
সমুদ্রের গভীর অন্ধকার জগতেও প্রানের অস্তিত্ব ও জীবন-পদ্বতি-
যেখানে ঘুটঘুটে অন্ধকার জগত স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নের উদ্ভব হতে পারে যে, সাগরের নিচে গভীর অন্ধকারে কি তাহলে সৃষ্টি জীবসৃষ্টি জীব নেই? যদি থাকে তবে তারা কীভাবে দর্শনের কাজ সম্পন্ন করে থাকে?
আজকের যুগের সর্বাধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্য ও জ্ঞানের ভিত্তিতে প্রকাশিত যে গভীর সাগরের তলদেশে অত্যধিক অন্ধকার রয়েছে এবং সেখানে রয়েছে তরঙ্গ বা ঢেউ যেমন ঢেউ রয়েছে পানির উপরিভাগে। উপগ্রহের মাধ্যমে ছবিসহ এসব তথ্য আবিষ্কার করেছে। অথচ আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে পবিত্র কুরআন আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক আবিষ্কার গুলোর কথা কি করে এত নিখুঁত সত্যতার সাথে পূর্বাহ্ণেই বলে দিয়েছে। সমুদ্রগর্ভে যে অন্ধকার এর ওপর রয়েছে প্রথম ঢেউ, যা সমুদ্রের গভীর অংশকে উপরিভাগ থেকে পৃথক করে রেখেছে। এ খাতটিও কুরআনে হাকিমে উলে¬খ রয়েছে, এই যে বিভিন্ন ঢেউ, তরঙ্গ, অন্ধকার, রং ঘনত্ব, উপরিভাগ এবং নিম্নভাগের পার্থক্য, দুই সমুদ্রের মোহনা একই বিন্দুতে মিলন অথচ কেউ কারো সাথে মিশে না। ইত্যাদি বিষয় মেরীন বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছে। অথচ নিরক্ষর মুহাম্মদ (সা) এর সব জ্ঞান নিখুঁতভাবে প্রচার করেছেন ১৪০০ বৎসর পূর্বেই।
এক সৃষ্টিকর্তার দিকে আসুন যিনি বহুল তথ্য সমৃদ্ধ কুরআন-কারিম আপনাকে উপহার দিয়েছেন-
আধুনিক বিজ্ঞান প্রকাশ করেছে যে, এই সব গভীর অন্ধকারে সে সবকটি পতঙ্গ বসবাস করছে তারা চক্ষু ছাড়া সৃষ্টি, তাদের কোন চক্ষু নেই, দর্শনের কোন যন্ত্র নেই।যেহেতু তাদের দর্শনের কোন যন্ত্রের প্রয়োজন হয় না সেহেতু তারা গভীর অন্ধকারে বসবাস করছে। আর তাদের রয়েছে শ্রবণ যন্ত্র এরা রাডারের মতো কৌশল দ্বারা হাজার হাজার মিটার নীচে নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে। নিশ্চয়ই এটা সেই স্রষ্টার আলৌকিকতার যিনি সব কিছু জানেন তিনি ভাল ভাবেই জানেন যে, এই সব সৃষ্টি এমন স্থানে অবস্থান করবে যেখানে গভীর অন্ধকার। সেখানে আলোর ব্যবস্থা নেই তাই সেখানে এদের চোখের প্রয়োজন হবে না। অতএব সুন্দর সঠিক ভাবে তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করছেন। প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে নির্ধারিত পরিকল্পনা রয়েছে। উক্ত পরিকল্পনার অধীনে একই পদ্ধতিতে সুনিয়ন্ত্রিত ভাবে সৃষ্টি হয়েছে প্রত্যেক জীব।
এটি কুরআন মাজিদের একটি মুজিজা, তা কেবল সমুদ্রের তলদেশের অন্ধকার সম্পর্কেই বর্ণনা দেয় নি; বরং তার অন্ধকারের অবস্থা সম্পর্কেও বর্ণনা দিয়েছে। বলেছে, ‘অন্ধকার’ এক স্তরের ওপর আরেক স্তর’। অন্ধকারের এই অবস্থা সম্পর্কে বর্তমানে সমুদ্র বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অথচ বৈজ্ঞানিকভাবেও সত্য এ নিদর্শনখানাই পবিত্র কোরআনে সূরা নূরে ১৪০০ বছর আগেই ঘোষিত হয়েছিল- যা কি-না কেবল সেদিন আজিকার Oceanologist গন উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন।উপরের ব্যাখ্যাগুলোর সঙ্গে কোরআনের উক্তিসমূহ সুসামঞ্জস্যপূর্ণ। কোন প্রকার গবেষণা ব্যতীত একজন কেবল সমুদ্রপৃষ্ঠের ঢেউগুলোকেই চর্মচক্ষে অবলোকন করতে পারে। সমুদ্রের আভ্যন্তরীন তরঙ্গ সম্পর্কে অবহিত হওয়া একজনের পক্ষে অসাধ্য ব্যাপার। তারপরেও সূরা নূরে আল্লাহ তাআলা সমুদ্রের বিভিন্ন ঘনত্বে আরেক ধরণের তরঙ্গের প্রতি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। নিশ্চিতভাবেই অতি সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞানীগন যা উদঘাটন করতে পেরেছেন, তা আরো একবার প্রমাণ করে যে, কোরআনের প্রতিটি কথাই আল্লাহ সোবহানাল্লাহ তাআলার কথা।
একটি উদ্যেগ ও আহবান:
এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে বাংলাদেশের ৯৭% মুসলিম হয়েও এখনো বাংলা সহিহ হাদিসের Free digital Software বানানো হয়নি। প্রায় ২৮ কোটি বাংঙ্গালীগন অকাযর্করের ও অবহেলার ভূমিকা নিয়েছি, এ মহান দায়িত্ব থেকে আমরা মুসলিমগন একরকম নেহাতই পালিয়ে বেড়াচ্ছি। অনেকেই আছেন অন বা “অফ লাইনে কাজ করার সময় UNICODE টেক্সট হাদিস হাতের কাছে তৈরি না থাকায় সবাইকে কষ্ট করে টাইপ করতে হয় অথবা অনেকে ঝামেলা এড়িয়ে যান। কিন্তু এই দিন শেষ ।
আসুননা আমরা সমম্বিতভাবে উদ্বেগ নিয়ে বাংলা সহিহ হাদিসের Unicode Software সৃষ্টি করি। আপনারা শুনে খুশি হবেন আমাদের সহিহ বুখারীর কাজ প্রায় শেষ ।মুসলিম শরীফের কাজ চলছে। সফটওয়্যারটি chm ফরমেটে তৈরি হবে, ইনষ্টলের কোন ঝামেলা নেই। 1 click – এ উইন্ডো ওপেন হবে এবং সহজেই ডাটা কপি,পেষ্ট করা যাবে, এছাড়াও রয়েছে পাওয়ারফূল সার্চ ও কিওয়ার্ড অপশন। যেহেতু হাজার হাজার হাদিস এর জন্য অবশ্যই টিম ওর্কের প্রয়োজন যার নামকরন করা হয়েছে সংক্ষেপে DBHT-(ডিজিটাল বাংলা হাদিস টিম)। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সম্মানিত ভায়েরা বিনা পারিশ্রমিকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে অতি দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাচ্ছেন যার বেশিরভাই ছাত্র। উদ্দেশ্য একটাই-২৮ কোটি বাংলাভাষীর জন্য সম্পূর্ন বিনামূল্যে বাংলা হাদিসের অনবদ্য একটি ইউনিকোড সফটওয়্যার। এ মহৎ কাজে পিছিয়ে কেন ...আসুন আমাদের সাথে। সম্মানিত ভাই/ বোন যারা সদস্য হতে চান এ টিমের কর্মপদ্বতি হবে নিম্নরুপ-
1)যারা অংশ নেবেন Contribution- এ তাদের নাম ও প্রোফাইল লিংক থাকবে।
2) প্রত্যেককে সদস্য হতে হলে কমপক্ষে 100 হাদিসের ডাটা এন্ট্রি করে নিম্নলিখিত এড্রেসে পাঠিয়ে দিতে হবে।(সময় খুব বেশি হলে মাত্র তিন ঘন্টার একটা কাজ)
3)পিডিএফ ফরম্যাটে হাদিস দেয়া হবে আপনি MS Word-এ টাইপ করে মেইলে এটাচ করে পাঠিয়ে দেবেন, আপনার প্রোফাইল লিংক যদি দেন ভাল হয়।
4) আপনার হাদিস পাবার পর সেটা আপডেট করে ফেসবুকে লিংক দেয়া হবে যেখান থেকে আপনি ডাউনলোড করে কাজের অগ্রগতি দেখতে পাবেন।
বিঃদ্রঃ:- এটি কোন কর্মাশিয়াল উদ্যেগ নয়। শধুমাত্র ভলান্টিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে DBHT-এর হাদিসের Digital interface তৈরি করার একটা যৌথ প্রচেষ্টা। বাংলাতে শুধু এন্ট্রি করবেন আরবী ও ইংলিশ আমরা ম্যানেজ করবো ইনশাআল্লাহ। যে কোন Unicode ফন্টে ডাটা রেডি করতে পারবেন।আপনার প্রোফাইল লিংক ও Mob-নং ও বাংলাদেশের কোত্থেকে কাজ করছেন উল্লেখ করবেন। ১০ দিনের মধ্যে করতে পারলে ভালো হয়, তারপরও না পারলে সময় নিদ্ধারন করে দিন।। আপনি ডাটা পাঠানোর পর আমরা সেটা অতি দ্রুত আপডেট করে ফেসবুকে লিংক দেবো ইনশাআল্লাহ। ধন্যবাদ। যোগাযোগ করুন।
শাহরিয়ার আজম
মেইল এড্রেস- [email protected]
Mob-01714351057
DBHT-(ডিজিটাল বাংলা হাদিস টিম)
http://www.facebook.com/pages/DBHT/603417713008497
**আলহামদুলিল্লাহ আমরা তিনটি ভাষায় হাদিস প্রকাশ করছি (আরবী, বাংলা ও ইংলিশ) যা এখনো পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়নি।
অন্যান ওয়েব---
http://www.facebook.com/pages/Al-Quran-Modern-Science/140069416050931
http://muslim.zohosites.com/ http://www.quranic-science.blogspot.com
আমি Sharear Azam। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 42 টি টিউন ও 365 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
**আলহামদুলিল্লাহ আমরা তিনটি ভাষায় হাদিস প্রকাশ করছি (আরবী, বাংলা ও ইংলিশ) যা এখনো পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়নি।
আপনার কথা বুঝলাম না, সৃষ্টি হয়নি মানে কি?