আসসালামুআলাইকুম ও শুভেচ্ছা সবাইকে 🙂 । আশা করি ভালো আছেন?
বিংশ শতাব্দীতে বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা আকাশ কতৃক সুরক্ষার বৈশিষ্ট্যটি প্রমাণিত হয়েছে। স্যার Venn Allen পৃথিববি বাসীর কাছে গবেষনালব্ধ ফলাফল প্রকাশ করে বলেন যে,- আমাদের পৃথিবী পৃষ্ঠের নীচে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী Magnetic field আছে যা আমাদের বায়ুমন্ডলের চারিপাশে একটি বেল্টের মতো বলয় সৃষ্টি করেছে, পরবর্তীতে আরো গবেষনায় বিজ্ঞানীগন নিশ্চিন্ত হন এবং তারঁ নামানুসারে এ বলয়ের নামকরন হয় “Venn Allen belt” । জীবনের অবিরাম গতিধারা বজায় রাখার জন্য পৃথিবীকে ঘিরে যে বায়ুমন্ডল রয়েছে তা বেশ গুরত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছে। যখন বড়, ছোট বহু উল্কা পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে, তখন বায়ুমন্ডল এদের বেশিরভাগকেই ভূপৃষ্ঠে পতিত হতে দেয় না। এভাবে পৃথিবীর জীবজগতকে উল্কা পতনের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচিয়ে দেয় বায়ুমণ্ডল। তা ছাড়া মহাশূণ্য থেকে জীবিত বস্তু সমূহের জন্য ক্ষতিকর যে রশ্মি নির্গত হয় তাকে ফিল্টার করে বা ছেঁকে শোধন করে বায়ুমন্ডল। কৌতুহলের ব্যাপারটি হলো এই যে, যেসব রশ্মিসমূহ জীবের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং উপকারী, যেমন, দর্শনযোগ্য আলো, Near Ultraviolet Light আর বেতার তরঙ্গকেই বায়ুমন্ডল অতিক্রম করতে দেয়। এ সমস্ত রশ্মি জীবনের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। Ultraviolet Ray, যেটি কিনা কেবল আংশিকভাবে বায়ুমন্ডল কর্তৃক আসতে পারে, তা উদ্ভিদের সালোক সংশ্লেষণ আর সমস্ত জীবসমূহের টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। সূর্য থেকে যে অতি গাঢ় আল্ট্রভায়োলেট রশ্মি নির্গত হয়, তা বায়ুমন্ডলের ওযোন স্তর দিয়ে ফিল্টার হয় ; এভাবে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির অত্যন্ত সীমিত আর অতি প্রয়োজনীয় অংশ ভূ-পৃষ্ঠে এসে পোঁছে। বায়ুমন্ডলের সুরক্ষার কাজ এখানেই শেষ হয়না, মহাশূণ্যের প্রায় -২৭০ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের মতো বরফ ঠান্ডা তাপমাত্রা থেকেও বায়ুমন্ডল পৃথিবীকে রক্ষা করে থাকে। আল-কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা আকাশের একটি অত্যন্ত কৌতুহলকর বৈশিষ্ট্যের প্রতি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন :
021.032 وَجَعَلْنَا السَّمَاءَ سَقْفًا مَحْفُوظًا وَهُمْ عَنْ آيَاتِهَا مُعْرِضُونَ
আর আমি আসমানকে সৃষ্টি করেছি একটি সুরক্ষিত ছাদরূপে, কিন্তু তারা তার নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।(সুরা আম্বিয়া- ২১ : ৩২)(অনুবাদ:- মাওলানামুহিউদ্দীন, উম্মুলকোরা, সৌদিআরব)
সূর্যে প্রতি মিনিটে বিস্ফোরণের ফলে নির্গত শক্তি যে কি পরিমাণ ক্ষমতা রাখে তা মানব মন কদাচিতই ভাবতে পারে। এর একটিমাত্র বিস্ফোরণ হিরোশিমায় পতিত ১০০বিলিয়ন এটম বোমার সমতুল্য। বায়ুমন্ডল আর ভ্যান এলেন বেল্টের জন্য এই শক্তির ক্ষতিকর দিক থেকে মহাবিশ্ব নিরাপদ রয়েছে।মানব জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সৃষ্ট পৃথিবী থেকে বায়ুমণ্ডলের বাইরে মহাশূণ্যে যদি আমরা সরে যাই, তবে প্রচন্ড বরফ শীতল ঠান্ডার কবলে পড়বো। পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ড দ্বারা তৈরী ম্যাগনেটোস্ফিয়ার স্তর পৃথিবীকে মহাশূণ্যজাত বস্তুর ক্ষতিকর কসমিক রশ্মি এবং কণাসমূহ থেকে নিরাপদে রাখার জন্য বর্ম হিসেবে কাজ করে। ম্যাগনেটোস্ফিয়ার যার নাম ভ্যান এলেন বেল্ট - সেটিই উপরের চিত্রে দেখা যাচ্ছে। পৃথিবী থেকে সহস্র সহস্র কিলোমিটার উপরে অবস্থিত এই বেল্টটি মারাত্মক ক্ষতিকর শক্তি থেকে পৃথিবীর জীব জগৎকে রক্ষা করে যাচ্ছে, নচেৎ মহাশূণ্য থেকে ভয়ানক এই শক্তি পৃথিবীতে এসে পৌঁছুত। এ সমস্ত বৈজ্ঞানিক তথ্যাদি প্রমাণ করে যে, বিশেষ এক পদ্ধতিতে পৃথিবী নিরাপদ রয়েছে। গুরত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো যে , ১৪০০ বছর পূর্বে এ আয়াতটি দ্বারা এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা জানানো হয়েছে :
” আর আমি আসমানকে সৃষ্টি করেছি একটি সুরক্ষিত ছাদরূপে...”
ভ্যান এলেন বেল্টটি যদি না থাকতো তবে সূর্যের ভেতরে ঘন ঘন সংঘঠিত বিশাল বিস্ফোরনের শক্তি যা Solar Flare নামে পরিচিত তা পৃথিবীর সমগ্র প্রাণী জগতকে ধ্বংস করে দিতো।আমাদের জীবনের জন্য ভ্যান এলেন বেল্ট এর গুর ত্বের কথা বলতে গিয়ে ডঃ হিউগ রস কে বলতেহয়েছে :প্রকৃতপক্ষে সৌর জগতের অন্য যে কোন গ্রহের চাইতে আমাদের পৃথিবীর ঘনত্ব অনেক বেশী। বিশাল নিকেল-লৌহ স্তর আমাদের বিশাল ম্যাগনেটিক ফিল্ড এর জন্য দায়ী। এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডটিই ভ্যান এলেন রেডিয়েশন বর্মটি তৈরী করেছে যা রেডিয়েশনজনিত গোলাবর্ষণ থেকে ভূপৃষ্ঠকে রক্ষা করছে। এই বর্ম বা ঢালটি না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব
অসম্ভব হয়ে দাড়াতো। বুধ আরেকটি পর্বতময় গ্রহ যার ম্যাগনেটিক ফিল্ড রয়েছে - এই স্তরের ক্ষমতা পৃথিবীর ভ্যান এলেন বেল্টটির চেয়ে ১০০ গুণ কম। এমনকি শুক্র গ্রহ যেটি আমাদের পাশের গ্রহ যার কোন ভ্যান এলেন বেল্ট নেই। ভ্যান- এলেন রেডিয়েশনের এই ঢালটি এক মাত্র পৃথিবীর জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে অনন্যরূপে। বিস্ফোরণের (Solar Flare) ৫৮ মিনিট পর পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে,কম্পাসের ম্যাগনেটিক সূচকটি অস্বাভাবিক নড়াচড়া প্রদর্শন করছে। আর পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ২৫০ কিলোমিটার উপরে তাপমাত্রা সহসা বেড়ে গিয়ে ২৫০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে পৌছেঁছে। সংক্ষেপে ভূ-পৃষ্ঠের উপরে উঁচু স্তরে একটি নিখুঁত সিস্টেম কর্মরত রয়েছে। এটি আমাদের বিশ্বেরচারিদিক জুড়ে কর্মরত এবং বিশ্বকে বাইরের আসন্ন বিপদ বা আশংকা থেকে রক্ষা করছে। যদিও শতশত বছর পূর্বে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে আমাদের অবহিত করেছেন যে, পৃথিবীর বায়ুমন্ডলএকটি সুরক্ষিত ঢাল হিসেবে কাজ করছে। অথচ বিজ্ঞানীগণ কেবল সেদিনই তা জানতে পেরেছেন।এ সমস্ত বৈজ্ঞানিক তথ্যাদি প্রমাণ করে যে, বিশেষ এক পদ্ধতিতে পৃথিবী নিরাপদ রয়েছে।
এ ছবিটিতে দেখানো হয়েছে যে, একটি উল্কা পিন্ড পৃথিবীতে প্রায় আঘাত হানতে যােছ। মহাশূণ্যে চলমান বন্তুগুলো ভূ-পৃষ্ঠের জন্য ভয়ানক ভীতিকর হতে পারতো। কিন্তু যিনি (আল্লাহ) সবচেয়ে সমন্বিতভাবে সৃষ্টি করেছেন তিনি সুরক্ষার ছাদও বানিয়েছেন। বিশেষ ধরণের এই ছাদের বদৌলতে বেশির ভাগ উল্কাপিন্ড খন্ড খন্ড হয়ে বায়ুমন্ডলে পতিত হয়, কিন্তু তারপরও ভূ-পৃষ্ঠের কোন ক্ষতি করে না। গগনমন্ডল অবলোকন করতে গিয়ে বেশীরভাগ মানুষই বাযুমন্ডলের সুরক্ষার বা নিরাপদ রাখার বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখেনা। তারা প্রায় কখনই চিন্তা করেনা যে, যদি বায়ুমন্ডলের এধরণের গঠন না থাকতো, পৃথিবী কি ধরণের জায়গা হতো। উল্কার পতনের ফলে আমেরিকায়, আরিজনাতে যে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে তাই দেখাচ্ছে উপরের ছবিটি। বায়ুমন্ডল না থাকলে মিলিয়ন মিলিয়ন উল্কাপিন্ড পৃথিবীতে এসে পড়তো, যার ফলে তা বসবাসের অযোগ্য জায়গা হয়ে যেতো। কিন্তু বায়ুমন্ডলের সুরক্ষার দিকটি পৃথিবীর জীবজগতকে নিরাপদে বসবাস করার সুযোগ দিচ্ছে। নিশ্চয়ই এটি মানুষকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহরই একটি সিস্টেম এবং একটি অলৌকিক জিনিষ যা কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে।
আপনাকে ধন্যবাদ সময় নিয়ে পোষ্টটি পড়ার জন্য।
শাহরিয়ার আজম
B.Sc.IT (S. M University,India),/ M.A & Ph.D (Paris University, France), DEW, Belgium
http://www.facebook.com/pages/Al-Quran-Modern-Science/140069416050931
http://muslim.zohosites.com/ http://www.quranic-science.blogspot.com/
আমি Sharear Azam। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 42 টি টিউন ও 365 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ধন্যবাদ আপনাকে এমন জ্ঞানগর্ব আলোচনা উপস্থাপন করার জন্য।