বিয়ের বা প্রেমের ক্ষেত্রে কয়েক বছরের মধ্যে রোমন্টিকতায় ভাটা পড়াটা আসলে শুধু ব্রিটিশ বা পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য সত্যি তা কিন্তু না। এটা সত্য দুনিয়ার সব মানুষের জন্যই। কারণ, এর পেছনে আছে জৈব-রসায়নের খেলা।
মূলত আমাদের মধ্যে ভালোবাসা, কাম-তৃষ্ণা, রোমান্টিক ভাবাবেগ এইসব আবেগের পেছনের নায়ক হচ্ছে কিছু হরমোন। এই হরমোনের নিসঃরণের তারতম্যের উপর নির্ভর করে এর বাড়া-কমা। মোটা দাগে ইস্ট্রোজেন আর টেস্টোস্টরন হরমোন দুটোকে দায়ী করা হলেও বছর কয়েক আগের গবেষণায় আর কিছু নায়ক-খলনায়ক পাওয়া গেছে যেমন; এমফেটামিনস, ফিনাইলথাইলামিন (পি ম্যাটার নামেও পরিচিত), এন্ডরফিনস, নরিপিনেপ্রিন, অক্সিটোসিন, সেরোটোনিন ইত্যাদি।
চকিত চাউনি, মিষ্টি হাসি, ফ্লার্ট ইত্যাদির হঠাৎ ছলকে ওঠে এমফিটামিনস। সেইসাথে পি ম্যাটার (ফিনাইলথাইলামিন) আর নরিপিনেপ্রিন এর মাত্রায় হঠাৎ বেড়ে যায়। ভাললাগা, ভালবাসা জেগে ওঠে তখনি। এইখানে একটু বলে রাখি কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত এমফিটামিনস আবার ঔষধ হিসেবেও ব্যবহার হয়। কিন্তু কতিপয় অতি বুদ্ধিমান এই কৃত্রিম এমফিটামিনসকে নেশার কাজে ব্যবহার করে। বাংলাদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ইয়াবা এই এমফিটামিনস আর ক্যাফেইনের এক প্রকার যৌগ ছিল। মজার ব্যাপার হল এই যৌগটি বিশ্বযুদ্ধের সময় আবিষ্কার করেছিল নাৎসি বাহিনী, যা ব্যবহৃত হত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে, নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে।
পি ম্যাটার বা ফিনাইলথাইলামিনের কারণে জেগে ওঠে ভালবাসার তীব্র আকুলতা। কিন্তু একই রকম চেহারা, একই চোখ, একই গলার স্বর, একই স্পর্শে এই নিঃসরণের মাত্রা দীর্ঘদিন একইরকম থাকে না। শরীর-মনের এই পুলকিত তাগিদ কমে যায় শরীরে এই রাসায়নিক পদার্থটির সহনশীলতা বা টলারেন্স বেড়ে যাবার কারণে। ফলে বিক্রিয়া বেগ কমে যায় আর ভালোবাসার উত্তাল জোয়ারে পড়ে ভাটার টান। অতএব ভাই-ভাবী এন্ড বোন-দুলাভাইরা আমার, আপনার রোমান্টিকতায় ভাটা পড়লেই দয়া করে অযথা দোষারোপ করে বা মন খারাপ করবেন না যে আপনাকে অন্যজন ভুলে যাচ্ছে বা আর ভালবাসছে না। যা ঘটছে তা প্রকৃতির নিয়মেই ঘটছে। বয়স বেড়ে ধীরে ধীরে বুড়িয়ে যাওয়াতে যেমন আপনার সঙ্গীর কোন দোষ নেই, তেমনি এক্ষেত্রেও ব্যাপারটা অনেকটা ওইরকমই।
কিন্তু তারপরও আমরা আমাদের আশেপাশে কিন্তু অনেক দম্পতিই দেখতে পাই যারা সময়ের সাথে সেই প্রথমদিনের মতই থেকে যান। তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কি? আঁটুনি যখন ঢিলে হলে আসতে চায় তখন বাঁধন ধরে রাখার কাজে সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করে শক্ত গেরো। ভালেবাসার এই বাঁধনে শক্ত গেরো এঁটে দেয় এন্ডরফিনস আর অক্সিটোনিন নামক হরমোন। এন্ডরফিনস দু'জনার মাঝে শান্ত সৌম্য নিরাপত্তার অনুভূতি জাগায়, উন্মাতাল ঢেউ জাগায় না। এখানে একটু বলে রাখি কম বয়সী ভালবাসার উত্তাল ঢেউ দ্রুত কমে এলেও সেটা কিন্তু নিঃশেষ হয়ে যায় না। ঘুরতে থাকে পাত্র থেকে পাত্রে। তারপর একসময় মনে হয় এই ঘোরাঘুরি আর ভাল লাগছে না। এবার একটু থিতু হই। এর মানেটা হচ্ছে আপনি কাঁচা বয়স পেরিয়ে পরিণত (ম্যাচিউর) হয়ে উঠছেন। আপনার পি ম্যাটারের গুন্ডামি কমে এসেছে। এইবার জোয়ার আসছে স্থায়ী সৌম্য,শান্তিময় এন্ডরফিনস আর অক্সিটোনিনের। এই পর্যায়ে এই জোয়ার গা এলিয়ে শান্তির পথে না গিয়ে যদি হাঁচড়ে পাঁচড়ে উজানের রাস্তায় যাবার চেষ্টা করতে থাকেন (বেশিবভাগক্ষেত্রে কৃত্রিম ঔষধ খেয়ে বা ক্রমাগত সঙ্গী পাল্টাতে থেকে কাজটা করা হয়), জেনে রাখুন, আপনি একজন ভয়ংকর রকমের বোকা মানুষ।
সত্যিকারের ভালবাসার খনি বলে যদি কিছু থাকে তবে তার নাম অক্সিটোনিন হরমোন। ভালবাসায় পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি আর যত্নশীলতা হচ্ছে ভালবাসার মূল চালিকা শক্তি। আর অক্সিটোনিন হচ্ছে এই শক্তির জ্বালানি। মানুষের মধ্যে যতবেশি এই হরমোনটি নিসঃরিত হবে তত বেশি উভয়ে একে অপরের কাছাকাছি যাবে। অক্সিটোনিনের আরো একটা গুণ এটা এন্ডরফিনস এর নিসঃরণ মাত্রাকেও বাড়িয়ে দিতে পারে। আর এই এন্ডরফিনস আমাদের মনকে শান্ত করে, উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তা কমায়, নিরাপত্তাবোধ বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে দাম্পত্যে অব্যাহত অকৃত্রিম দেহমিলনের ফলে মানুষের শরীরে তৈরি হওয়া রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে অন্যতম এই অক্সিটোনিন। আধুনিক মনোবিজ্ঞানীরা এই রাসায়নিক উপাদানকে মাদক জাতীয় নির্ভরতা বলে চিহ্নিত করেছেন। অর্থাৎ মাদকদ্রব্য যতবেশি নেয়া হয় তত নেশা গাঢ় হয়, নির্ভরশীলতা তত বেড়ে যায়। এজন্য অব্যাহত মিলনকে দাম্পত্য বন্ধনের চাবি হিসেবে উল্লেখ করেছেন অনেক গবেষক।
টেকি বন্ধুরা আপনারা মনে হয় টিউনটি থেকে অনেক কিছু জানতে পারলেন মাইক্রোবায়োলজি বা সাইকোলজি নিয়ে পড়াশুনারত ছাত্ররা আরো ভালো বুঝবে।আসলে আমি এই টিউনটির মালিক না আমি এটি প্রজন্ম ফোরাম থেকে সংগ্রহ করেছি।এটি লিখেছেন উন্মাতাল_তারুণ্য ভাই।আমি এই পোষ্টটা পড়ার পর আমার এতো ভালো লেগাছে যে আমার মনে হলো এটা থেকে আসলেই কিছু শিখার আছে ।তাই এটা আমার টেকি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলাম ।আপনারা কেউ জদি এটিকে খারাপ মনে করেন তবে কমেন্ট করবেন আমি ডিলিট করে দিব।
পোষ্টটার আসল ঠিকানা http://forum.projanmo.com/viewtopic.php?id=8485
আমি ARO। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 11 টি টিউন ও 115 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ভাল লাগল। তারে কাছে পাইতে মঞ্চায়। এখন পাইলে কিছু “অক্সিটোনিন” এর ব্যবস্থা করতাম। মুছবেন কেন? ভালবাসি, আরও উৎসাহ পেলাম। মন খারাপ ছিল, কিছুটা ভাল হল। ধন্যবাদ রাইফুর ভাই।।।