প্রিয় টিউনাররা, সবাইকে সালাম এবং শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজকের আমার এই টিউন আমাদের ফাহাদ ভাইয়ের প্রতি উৎসর্গ করলাম। তার প্রত্যেকটি টিউনই আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়। তিনি অনেক সাজানো গুছালো ভাবে টিউন করেন। আজ আমি চেষ্টা করবো তার মত করে টিউন করার জন্য। জানি, আমি কখনই তার নিকটস্থ মানের টিউন করতে পারব না। তবুও চেষ্টা করে দেখা আরকি। তো আপনাদের দোয়া সাথে নিয়ে শুরু করছি কম্পিউটার ইনপুট সিস্টেমের অন্যতম অংশ কম্পিউটার মাউস সম্পর্কে বিষ্ময়কর তথ্য ও তার ইতিহাস নিয়ে আমার আজকের টিউন।
আমাদের সকলেরই জানা আছে যে, একটি কম্পিউটার নিজে নিজে চলতে পারে না। এটি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন ব্যবহারকারির নির্দেশনার। আর এই নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আমরা কম্পিউটারে বিভিন্ন ইনপুট ডিভাইস ব্যবহার করি। এবং মাউস এবং কিবোর্ড হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনপুট ডিভাইস। সুতরাং কম্পিউটার পরিচালনায় মাউস এবং কিবোর্ড এর গুরুত্ব নিশ্চয়ই আপনাদের বুঝিয়ে বলতে হবে না। আর তা বুঝিয়ে বলা যাবেও না। কিবোর্ড সম্পর্কে ফাহাদ ভাই একটি অসাধারণ টিউন আমাদের উপহার দিয়েছেন। তাই আজ আমার বিষয় হল মাউস।
মাউস কম্পিউটার পরিচালনায় ব্যবহৃত একটি ইনপুট ডিভাইস। ১৯৬০ এর দশকে স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ডুগলাস এঙ্গেলবার্ট সর্বপ্রথম মাউস আবিষ্কার করেন। কিন্তু সত্তরের দশকের দিকে এটি কেবল জেরক্সের কম্পিউটার ছাড়া অন্য কথাও জনপ্রিয়তা পায়নি। ১৯৮০ এর দশকে অ্যাপল কম্পিউটার তাদের ম্যাকিন্টশ সিরিজে প্রথম এটি উপস্থাপন করে। এটির নাম দেয়ার ইতিহাস প্রায় সবাই জানেন। তারপরও যাদের অজানা তাদের জন্য আবারও বললাম। আবিষ্কারের পর এর আকৃতি ইঁদুরের মত হওয়ায় এর নাম মাউস হয়েছিল।
আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি মাউসের জনক ডগলাস এঙ্গেলবার্ট। তিনি ১৯৬৩ সালে তিনি তৈরি করেছিলেন বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার-মাউস। তার ছিল এ বিশ্বকে বদলে দেয়ার জন্য অদম্য ইচ্ছা ও প্রয়াস। আর তার এই ইচ্ছা ও প্রয়াসই কাজ করেছে মাউস আবিষ্কারের পিছনে। তিনি যখন মাউস উদ্ভাবন করেন, তখন তিনি ছিলেন ৩০ বছরের এক যুবক। আবার তখন তিনি নব্য বিবাহিত। তিনি তখন স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে গবেষক হিসেবে কাজ করতেন। সেখানে তিনি বিশাল এক প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। ডগলাস এঙ্গেলবার্ট একাধারে মাউসের উদ্ভাবক, আবার হাইপারটেক্সট, নেটওয়ার্ক কম্পিউটার ও গ্রাফিকস ইউজার ইন্টারফেসেরও গবেষক
তিনি যে প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন, সে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল কম্পিউটারের বড় বড় অংশকে কিভাবে ছোট ছোট অংশে পরিণত করা যায়। ভাবনায় নাড়া দেওয়া জিনিসগুলোকে কীভাবে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায় তাও এ প্রকল্পের উদ্দেশ্যের একটি অংশ ছিল। সেই প্রকল্পটির একটি ক্ষুদ্রাংশ এই মাউস উদ্ভাবন করা হয়। কাজে লেগে থাকতে থাকতে এক ধরনের বিষণ্ণতা আর হতাশা পেয়ে বসেছিল তাকে। বিয়ের পর তিনি হিসাব করে দেখলেন, তাঁর জীবনের লক্ষ্য সীমিত হয়ে এসেছে। অফিসে গবেষণা ও চাকরি ছাড়া আর কোনো লক্ষ্য বাকি ছিল না। এ উপলব্ধি থেকে মানুষের কল্যাণে কিছু করার কথা ভাবেন। একই সঙ্গে বিশ্বকে সুন্দর করার বিষয়টিও ভাবেন। এ জন্য মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগাতে হবে তাঁর। লক্ষ্য পূরণে কম্পিউটার হতে পারে আদর্শ। এবার তিনি শুরু করেন কাজ। ভ্যানেভার বুশের লেখা ‘অ্যাজ উই মে থিংক’ নামের বইটি থেকে অনুপ্রাণিত হন তিনি।
ডুগলাস ১৯২৫ সালের ৩০শে জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের পোর্টল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ওরেগন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িৎ কৌশল বিষয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে থেকে এমএস এবং পিএইচডি সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি এসআরআই ও অগমেন্টেশন গবেষণা কেন্দ্রে কাজ শুরু করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি একজন রাডার টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৩ সালে কম্পিউটারের জন্য বিশ্বের প্রথম মাউসটি তৈরি করেন এঙ্গেলবার্ট। স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে এটি তৈরি করেন তিনি। এটিকে ব্যবহারের সুবিধার্থে ইদুরের আকৃতি দেওয়া হয়েছিল। ফলে এর নাম হয় মাউস। মাউসের ফলে কম্পিউটারের গ্রাফিক্স ইউজার ইন্টারফেস বা অপারেটিং সিস্টেম জনপ্রিয় হয়। স্ট্যানফোর্ডে গবেষণার সময় মাউস আবিষ্কার করায় এর সব সুনাম যায় স্ট্যানফোর্ডের নামে। তাই মাউস আবিষ্কারের মত এত বড় অর্জন থেকে কোনো অর্থ পাননি তিনি। মাউস আবিষ্কারের পর স্ট্যানফোর্ডের গবেষকেরা একে ‘বাগ’ নামে ডাকতে শুরু করেন। তবে মাউসের সঙ্গে ইঁদুরের লেজের মতো তার যুক্ত থাকায় এর নাম ‘মাউস’-ই রাখেন এঙ্গেলবার্ট। তাঁর দেওয়া নামটিই জনপ্রিয় হয়। প্রথম সেই মাউসটির আকার আজকের পরিচিত মাউসের মতো ছিল না, বরং এটি তৈরি করা হয়েছিল একটি বাক্সের মধ্যে। মাউস নাড়াচড়া করার মতো বিশেষ চাকা ছিল বাক্সে। আকারে এটি ছিল বর্তমান মাউসগুলোর তুলনায় বেশ খানিকটা বড়। এ মাউসটি তৈরি করতে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছিল।
১৯৮০ সালে অ্যাপল কম্পিউটার তাদের ম্যাকিনটোশ সিরিজে প্রথম মাউসের ব্যবহার শুরু করে। এঙ্গেলবার্ট ২ জুলাই ৮৮ বছর বয়সে নিজ বাড়িতে মারা যান। তাঁর মেয়ে ক্রিস্টিনা এক ই-মেইল বার্তায় মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর অ্যাসপেন শহরের মাটির নিচে হারিয়ে গিয়েছিল প্রযুক্তির ইতিহাসের এক অমূল্য সম্পদ। কিন্তু অনুসন্ধানকারীরা খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন অ্যাপলের তৈরি সেই অমূল্য সম্পদ ‘লিজা মাউস’। তিন দশক ধরে মাটির নিচে গোপনে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল অ্যাপলের তৈরি লিজা কম্পিউটারের এই মাউস। ১৯৮৩ সালে অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস এক সম্মেলনে এই মাউসটি দেখিয়েছিলেন। এটি অ্যাপলের তৈরি প্রথম মাউস। কাঠ খোদাই করে তৈরি এই মাউসের নিচে মোশন ট্র্যাক করার জন্য দুটি চাকা রয়েছে।
১৯৭৯ সালে প্রথম যখন অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস বিজনেস কম্পিউটার বাজারে আনার কথা ভাবতে শুরু করেন তখন তিনি জেরক্স পার্ক রিসার্চ সেন্টারে যান এবং সেখানে যেসব প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা চলছিল তা পর্যবেক্ষণ করেন। সেখানেই কাজ চলছিল ডগলাস এঙ্গেলবার্টের তৈরি প্রথম মাউসটি নিয়ে। সত্তরের দশকে জেরক্সের কম্পিউটারে মাউসের ব্যবহার শুরু হয়। তখন এক সাক্ষাৎকারে অ্যাঙ্গেলবার্ট জানিয়েছিলেন,
‘আমার তৈরি মাউসটি পেটেন্ট করানোর সময় এর মূল্য বোঝা যায়নি। পরে অ্যাপল যখন এর পেটেন্ট করে তখন এর মূল্য বোঝা যায়। অ্যাপল মাউস দেখে এত বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছিল যে পুরো নকশা বদলে দিয়েছিল।’
১৯৮৩ সালে অ্যাপল লিজা কম্পিউটার বাজারে আনার সময় তার সঙ্গে যে মাউসটির পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল তা মাউসকে আমূল বদলে দিয়েছিল। ১৯৮৩ সালে অ্যাসপেন ইন্টারন্যাশনাল ডিজাইন কনফারেন্স নামের সম্মেলনে প্রযুক্তি জগতের ভবিষ্যৎদ্রষ্টা স্টিভ জবস আইপ্যাড, ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং অ্যাপ স্টোরের মতো বিষয়গুলো এই লিজা মাউসের সাহায্যে দেখিয়েছিলেন। পরে ‘অ্যাসপেন টাইম টিউব’ নামের একটি ক্যাপসুলে করে এই মাউসটিসহ আরও বেশ কিছু জিনিস অ্যাসপেন শহরের কোথাও মাটির নিচে পুঁতে রেখেছিল সম্মেলনের আয়োজকেরা। পরে এই গোপন টাইম টিউবটি ‘স্টিভ জবস টাইম ক্যাপসুল’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। কিন্তু এই টাইম ক্যাপসুলটি কোথায় পুঁতে রাখা হয়েছিল সে স্থানটির কথা একেবারেই ভুলে গিয়েছিলেন তারা।
২০০০ সালে আয়োজকেরা স্টিভ জবসের টাইম ক্যাপসুলটি মাটির নিচে থেকে তুলে আনার কথা চিন্তা করলেও তারা সেটি খুঁজে পাননি। এরপর ১৪ বছর ধরে হারিয়ে যাওয়া এই ক্যাপসুলটির খোঁজ চলেছে। প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট সিনেট এক খবরে জানিয়েছে, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের ‘ডিগার্স’ প্রোগ্রামের কর্মীরা গত বছরের সেপ্টেম্বরে অ্যাসপেন মিউজিক্যাল ফেস্টিভাল অ্যান্ড স্কুলের মাঠে এই ক্যাপসুলটি উদ্ধার করেছেন।
এই টাইম ক্যাপসুলে অ্যাপলের লিজা মাউসটি ছাড়াও ব্যালান্টিন বিয়ারের ক্যান, মুডি ব্লু টেপ, রুবিক কিউবের মতো বেশ কিছু জিনিস প্লাস্টিক ব্যাগে সংরক্ষিত ছিল।
অনেকক্ষণ ধরেতো মাউসের ইতিহাস সম্পর্কে। চলুন এখন অন্য কিছু সম্পর্কে আলোচনা করি।
যে মাউসে নিচের দিকে একটি গোলাকার বল লাগানো থাকে এবং সেটির নড়াচড়ার প্রেক্ষিতে মাউস পয়েন্টার নড়াচড়া করে তাকে মেকানিক্যাল মাউস বলে। এই ধরনের মাউস ব্যবহার করার জন্য কোন সমান জায়গা বা মাউস প্যাডের প্রয়োজন হয়।
লেজার মাউস হল একধরণের নতুন প্রজন্মের মাউস। এই মাউসটির দুইটি অংশ আছে। অংশ গুলো হলো লাইট ইমিটার ও লাইট ডিটেক্টর। একটি লেজার মাউস তার লেজারকে লাইট ইমিটার হিসাবে ব্যবহার করে এবং মাউসের নাড়াচাড়া লক্ষ্য করে মাউসের কাজকে পরিপূর্ণ করে।
এই ধরনের মাউস আমরা সবাই চিনি। এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করি। এর সম্পর্কে কিছু বলা লাগবে বলে আমার মনে হয় না।
এটি মাউসের জন্য এক ধরনের সেন্সর। এই সেন্সরটি মাইক্রোসফট দ্বারা উদ্ভাবিত। এই সেন্সরটি মাউসকে যে কোন স্থানে সঠিক ও কোন সমস্যা ছাড়া চলতে সাহায্য করে।
আজ আর না। টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে অন্য কোন বিষয় নিয়ে।
আমি আবু হাসান রুমি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 16 টি টিউন ও 156 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আরে একি করেছো তুমি? দ্য গ্রেট রুমির কাছে আমার টিউন তো নস্যি! যাহোক, অসম্ভব সুন্দর টিউন করেছো। বরাবরের মতোই তোমার টিউনের স্থান আমার প্রিয়তে। সেই সাথে নির্বাচিত টিউনও মনোনয়ন দিয়ে দিলাম। এমন টিউন নির্বাচিত না হলে আর কোনগুলো হবে?
রুমি, তোমার জন্য আমার সব সময় শুভ কামনা। তোমার প্রথম টিউন দেখেই বুঝেছিলাম তুমি দারুন কিছু করবে। সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে দেখে ভালো লাগলো।
আমার মতো অভাজনকে টিউন উৎসর্গ করে তো ভাইয়া ঋণী করে ফেললে! আমি আসলে এতোটা ভালোবাসার যোগ্য না!