আমরা ছোট বেলা থেকে যে প্রশ্নটির উত্তর অনেক বেশিবার পরিবর্তন করি সে প্রশ্নটি হল ‘তোমার জীবনের লক্ষ্য কি?’ বা, ‘তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও?’ প্রশ্নটির উত্তর আমাদের বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন রকমের হয়। যেমনঃ কোন বাচ্চার একটা খেলনা রিক্সা আছে এবং সে এটি খুব পছন্দ করে; এখন তাকে যদি প্রশ্ন করা হয় ‘তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও?’ সে বলবে ‘রিক্সাওয়ালা’ !! কিছু ছেলে-মেয়েরা আসইক্রিম খেতে খুব পছন্দ করে তাই তাদের আদর্শ হলো ভবিষ্যতে আইসক্রিম বিক্রী করবে । কিছু কিছু ছেলে গাড়ী খুব পছন্দ করে , তাই তারা আশা করে , ভবিষ্যতে একজন ড্রাইভার হবে ।
আবার একটু পরিপক্ক বয়সের ছেলে-মেয়েকে একই প্রশ্ন করলে প্রায় একই ধরনের উত্তর পাওয়া যায়। যেমনঃ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনবিদ, ব্যবসায়ী প্রভৃতি । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের লক্ষ্য গুলো ছেলে-মেয়েরা নিজেরা ঠিক করেনা। এগুলো হয় বাবা-মা, চাচা-চাচী, আত্মীয়স্বজনের তৈরি করে দেওয়া সিদ্ধান্ত। এসব ক্ষেত্রে বাবা-মা বা আত্মীয়স্বজনের জাগতিক চাহিদার প্রতিফলন ঘটে থাকে। যেমনঃ ডাক্তার হলে অনেক টাকা। ডাক্তারের বাবা।
আবার কিছু ক্ষেত্রে পিতা বা পরিবারের বড়দের ব্যর্থতার দায়িত্ব ছোটদের লক্ষ্য নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। যেমন বাবা ডাক্তার হতে চেয়েছিলেন কিন্তু মেডিকেলে ভর্তি হতে পারেননি, তার ইচ্ছা ছেলে ডাক্তার হবে।
কিন্তু বাবা যখন আপনাকে এই লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছেন তখন কি তিনি একবারও চিন্তা করেছে যে, আপনার অন্য কোন বিষয়ে অধিক দক্ষতা থাকতে পারে। আপনি ডাক্তার না হয়ে সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেটার হতে পারেন, এ পি জে আব্দুল কালামের মতো বিজ্ঞানী রাষ্ট্রপতি হতে পারেন, কিংবা আপনিও একজন বিল গেটস্ হতে পারেন। আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও তো হতে পারেন।
এসব তো গেল বাল্য কালের কথা। যখন আপনি কিশোর, জীবনের লক্ষ্য স্থির করে সেই অনুযায়ী আপনাকে পড়াশোনা করতে হবে, সে সময়টাতে আপনি দিধা-দ্বন্দে ভোগেন। বাবা চায় আপনি ডাক্তার হোন কিন্তু সায়েন্স আপনি ভালো বুঝেন না। মা চায় আপনি ব্যরিস্টার হোন কিন্তু আপনি ভালোভাবে যুক্তিতর্ক বোঝেন না। চাচা চায় আপনি বড় কোন কোম্পানির ব্যবস্থাপক হোন কিন্তু আপনি হিসাব নিকাশে অপক্ক।
তাই বাবা-মা আত্মীয় স্বজন এর সিদ্ধান্তে নয় নিজের যে বিষয়ে প্রতিভা আছে সে বিষয়ে আরও দক্ষতা অর্জন করুন, নিজের লক্ষ্য নিজে স্থির করুন। আর বাবা-মায়েদের প্রতি আমাদের অনুরোধ আপনার সন্তানকে বুঝুন, সে কোন বিষয়ে অধিক দক্ষ, কি করলে সে জীবনে উন্নতি করতে পারবে তা বুঝুন। আপনার সন্তানকে সঠিক লক্ষ্য দেখিয়ে দেয়া আপনার দায়িত্ব।
কবি গুরুর একটি কথা খুব মনে পড়ছে-
‘বাতাস যখন জোরে বহে তখন পালের জাহাজ হুহু করিয়া দুই দিনের রাস্তা এক দিনে চলিয়া যাইবে, এ কথা বলিতে সময় লাগে না; কিন্তু, কাগজের নৌকাটা এলোমেলো ঘুরিতে থাকিবে কি ডুবিয়া যাইবে, বা কী হইবে তাহা বলা যায় না—যাহার বিশেষ কোনো-একটা বন্দর নাই তাহার অতীতই বা কী আর ভবিষ্যৎই বা কী। সে কিসের জন্য প্রতীক্ষা করিবে, কিসের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করিবে। তাহার আশাতোপমানযন্ত্রে দুরাশার উচ্চতম রেখা অন্য দেশের নৈরাশ্যরেখার কাছাকাছি।’
লক্ষ্য স্থির করতে গিয়ে ছেলে-মেয়েরা অনিশ্চয়তায় ভোগে। কারণ তাদের বেশির ভাগই অল্প কিছু পরিচিত পেশার সম্পর্কে জানে। যেমনঃ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, মেজিস্ট্র্যাট, এসপি, ডিসি, ব্যাংক কর্মকর্তা ইত্যাদি। কিন্তু আরও অনেক পেশা আছে যা আমার-আপনার জানা নেই বা জানা থাকলেও কিভাবে কি করলে আপনি ওই পেশায় যেতে পারবেন তা জানা নেই। যেমনঃ আপনি চাঁদে যেতে চান, মহাকাশ বিজ্ঞানী হতে চান, কিন্তু আপনি জানেনই না যে ওই পেশায় কি ধরনের কাজ আপনাকে করতে হবে, কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা আপরন পাবেন, ওই পেশা গ্রহন করতে কিভাবে আপনাকে পড়াশোনা করতে হবে। আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চান কিন্তু কিভাবে কি করলে আপনি তা হতে পারবেন সেটি জানেন না।
রবিঠাকুরের আরেকটি কথা প্রসঙ্গত উঠে আসে, ‘আমরা যে কী হইতে পারি, কতদূর আশা করিতে পারি, তাহা বেশ মোটা লাইনে বড়ো রেখায় দেশের কোথাও আঁকা নাই।’
তাই আমরা ‘আমার লক্ষ্য’ এর মাধ্যমে আপনাদেরকে বিভিন্ন পরিচিত-অপরিচিত, ছোট-বড় পেশার সাথে আমরা পরিচয় করিয়ে দিতে চেস্টা করবো। কোন পেশায় কি কাজ, কি সুযোগ-সুবিধা, কি অসুবিধা, কিভাবে পড়াশোনা করলে বা নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করলে সে পেশায় আপনি যেতে পারবেন সেসব তুলে ধরার চেস্টা করবো। যাতে করে আপনাদের প্রতিভা অনুযায়ী পেশা খুঁজে নিতে পারেন।
বর্তমানের এই র্যাট রেসের সময়ে দৌড়ানোর জন্য একটা সুনির্দিষ্ট দর্শন থাকা দরকার। সেই দর্শনের ওপর দাঁড়িয়ে ঠিক করে নিতে হবে আপনার জীবনের লক্ষ্য। এরপর যেটা থাকতে হবে সেটা হল, লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য প্রবল ইচ্ছাশক্তি। অল্প আগুনে যেমন কম উত্তাপ হয়, তেমনই দুর্বল ইচ্ছাশক্তিতে ফল মেলাও দায় হয়ে যায়। লক্ষ্য থেকে যায় অধরা। কীভাবে আপনি লক্ষ্যে পৌঁছবেন, তার একটা ছক কষে নিন। ছকটা মাথায় রাখুন অথবা ডায়েরির পাতায় লিখে ফেলুন। এক লাফে যেমন ছাদে ওঠা যায় না, তেমনই ধাপে ধাপে সিঁড়ি ভেঙেই লক্ষ্যে পৌঁছতে হয়। তাই পরিকল্পনার সময় ধাপগুলো পার হওয়ার জন্য ‘বড় লক্ষ্যের’ অধীনে ‘ছোট লক্ষ্য’ স্থির করুন। আর যদি লক্ষ্যে পৌঁছানোর রাস্তা জানা না থাকে, আমাদের বলুন। আমরা আপ্রাণ চেস্টা করবো সঠিক রাস্তা দেখাতে। জীবনটা আপনার তাই সঠিকভাবে লক্ষ্য স্থির করার দায়িত্বটাও আপনাকেই নিতে হবে।
‘আমার লক্ষ্য’ এর কোন ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্য নেই। এটি একটি অলাভজনক সংগঠন। শুধুমাত্র আপনাদের উৎসাহই আমাদের কাজের প্রেরণা।
এক্সপার্টস দের মূল্যবান উপদেশ সর্বোপরি সকলের সুচিন্তিত পরামর্শ প্রত্যাশা করছি।
ফেসবুকে আমরাঃ https://www.facebook.com/amr.lokkho
ওয়েবে আমরাঃ http://amarlokkho.com/
‘আমার লক্ষ্য’ এর ক্যারিয়ার বিষয়ক অন্যান্য টিউনসঃ
আমি Md_Nadim_Hossain। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 21 টি টিউন ও 63 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Nice.