‘ভালবাসা!
রসের খেলা! সব রসের খেলা!
আহারে বেচারা হরমোন! রসায়ন! রসায়নিক পদার্থ! নিউরোট্রান্সমিটার! আর মিস্টার ডোপামিন! এবং মিস্টার সেরেটোনিন!!
আচ্ছা অনেক ঠাট্রা হলো। এবার একটু সিরিয়াস হই!
বিজ্ঞানের ভাষায়, প্রেম বা ভালবাসা হলো আমাদের মস্তিষ্কের থ্যালামাসের একধরনের রাসায়নিক অবস্থা | যার জন্য একাধারে দায়ী আমাদের জিন। প্রেমের প্রথমদিকে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, গাল – কান লাল হয়ে যাওয়া, হাতের তালু ঘেমে যাওয়ার উপসর্গ গুলো দেখা যায়; বিজ্ঞানীদের মতে সেসবের পেছনে দায়ী হলো ডোপামিন, নরেপিনেফ্রিন হরমোন।
মাঝে মাঝে দেখা যায় কারো কারো প্রেমের আবেগ কমে যায়। তার কারণ মস্তিষ্ক থেকে ওই হরমোনগুলো নিঃসৃত হয় না। আবার এও দেখা গেছে যে কোনো মানুষের শরীরে কৃত্রিমভাবে এই হরমোন রসায়ন প্রয়োগ করা হলে তাদের মাঝে সেই প্রেমের অনুভূতি হয়। প্রেম ভালবাসা যাই বলি না কেন স্বর্গীয় ফরগীয় যাই বলি না কেন রে ভাই সবই রসায়নের রসের খেলা!
ডাঃ. মোহিত কামালের দারুণ একটা বই আছে “মানব মনের গতি প্রকৃতি”। ওখানে দারুণ করে ভালবাসা সহ মনের অন্যান্য রাসায়নিক ব্যাবচ্ছেদ করা হয়েছে’।
তো শ্রাবণের রসায়ন থেকে ঘুরে আসা যাক আরো গভীরে। দেখা যাক প্রেম ভালোবাসা নিয়ে শ্রদ্দেয় অভিজিৎ রায় তাঁর ‘ভালোবাসা কারে কয়’ বইতে কী বলেছেন।
দুই প্রেমিক প্রেমিকার সদা ঘোর লাগা অবস্থার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি? এ নিয়ে রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ববিদ হেলেন ফিশার এবং স্নায়ুচিকিৎসক লুসি ব্রাউন, আর্থার অ্যারোন প্রমুখ বিজ্ঞানীরা প্রায় ৪০ জন প্রেমে পড়া ছাত্রছাত্রীদের উপর এক গবেষণা চালান। তাদের গবেষণার ধরনটি ছিলো এরকমের। প্রেমিক- প্রেমিকাদের সামনে তাদের ভালবাসার মানুষটির ছবি রাখা হল, এবং তাদের মস্তিষ্কের ফাংশনাল এমআরআই (fMRI) করা হলো। দেখা গেলো, এ সময় তাদের মস্তিষ্কের ভেন্ট্রাল এবং কডেট অংশ উদ্দিপ্ত হচ্ছে, আর সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে ডোপামিন নামক এক রাসয়ায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ঘটছে। অবশ্য কারো দেহে ডোপামিন বেশি পাওয়া গেলেই যে সে প্রেমে পড়েছে তা নাও হতে পারে। আসলে নন-রোমান্টিক অন্যান্য কারণেও কিন্তু ডোপামিনের নিঃসরণ বাড়তে পারে। যেমন, গাঁজা কিংবা কোকেইন সেবন করলে। সেজন্যই আমরা অনেক সময়ই দেখি ভালবাসায় আক্রান্ত মানুষদের আচরণও
অনেকটা কোকেইনসেবী ঘোরলাগা অবস্থার মতোই টালমাটাল হয় অনেক সময়ই।
তবে ভালবাসার এই রসায়নে কেবল ডোপামিনই নয় সেই সাথে জড়িত থাকে অক্সিটাইসিন, ভেসোপ্রেসিনসহ নানা ধরনের বিতিকিচ্ছিরি নামের কিছু হরমোন। বিজ্ঞানীরা বলেন, এই হরমোনগুলো নাকি ‘ভালবাসা টিকিয়ে রাখতে’ মানে প্রেমিক প্রেমিকার বন্ধন দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে। এমনকি বিজ্ঞানীরা এও বলেন কেউ মনোগামী হবে না বহুগামী হবে – তা অনেকটাই কিন্তু নির্ভর করছে এই হরমোনগুলোর তারতম্যের উপর। দেখা গেছে রিসেপটর বা গ্রাহক জিনে ভেসোপ্রেসিন হরমোনের আধিক্য থাকলে তা পুরুষের একগামী মনোবৃত্তিকে ত্বরান্বিত করে। বিজ্ঞানীরা প্রেইরি ভোলস আর মোন্টেইন ভোলস নামক দুই ধরনের ইঁদুরের উপর গবেষণা চালিয়ে তারা দেখেছেন, একগামিতা এবং বহুগামিতার মত ব্যাপারগুলো অনেকাংশেই হরমোনের ক্রিয়াশীলতার উপর নির্ভরশীল। এমনকি বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম উপায়ে ভেসোপ্রেসিনের প্রবাহকে আটকে দিয়ে একগামী ইদুঁরকে
বহুগামী, কিংবা অতিরিক্ত ভেসোপ্রেসিন প্রবেশ করিয়ে বহুগামী ইঁদুরকে একগামী করে ফেলতে সমর্থ হয়েছেন।
কিন্তু কথা হচ্ছে তীব্র প্রেমের সময়গুলোতে কেন দ্বিগবিদ্বিগশুন্য নেশার ঘোর লাগা ভাবের উদয় হয়, কেন বুদ্ধিশুদ্ধি একেবারেই লোপ পায়? কেনই বা ভয়ভীতি উবে যায় রাতারাতি?
এ সময় বন্ধুদের পরামর্শও মাথায় ঢোকে না। যদি কেউ কুদ্দুসকে বলতো ‘ঐ ব্যাটা কুদ্দুস – সিমির পিছে অযথা ঘুইরা লাভ নাই, ওর জগৎ আর তোর জগৎ আলাদা…’ কুদ্দুসের মাথার দেওয়াল সেই তথ্য পৌঁছুবেই না। কিন্তু কেউ যদি আবার উলটো বলে যে,‘সিমি আজকে তোর সম্বন্ধে জানতে চেয়েছিলো …’ সাথে সাথেই কুদ্দুসের মনে হবে এ যেন ‘মক্কা বিজয়’! আসলে তীব্রপ্রেমের সময়গুলোতে কেন মানুষজনের বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পায় তার একটা ভালো ব্যাখ্যা আছে বিজ্ঞানীদের কাছে। আমাদের মস্তিস্কে অ্যামাগডালা বলে একটি বাদাম আকৃতির প্রত্যঙ্গ আছে। সেটা এবং মস্তিস্কের কর্টেক্সের কিছু
এলাকা আমাদের ভয়-ভীতি নিয়ন্ত্রণ করে, অকস্ম্যাৎ বিপজ্জনক পরিস্থিতি আসলে আমাদের আগাম সতর্ক করে দিতে পারে। দেখা গেছে প্রেমের রোমাঞ্চকর এবং উত্তাল সময়গুলোতে মস্তিকের এ এলাকাগুলোর কাজ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভয় ভীতি কিংবা ‘ক্রিটিকালি’ চিন্তাকরার ব্যাপার স্যাপারগুলো পুরোপুরি লোপ পায় তখন। দুর্মুখেরা বলে, বেশি পরিমাণে গাঁজাভাঙ খেলেও নাকি ঠিক এমনটিই হয়’।
আজকে এই পর্যন্তই থাক। ভালোবাসার আরো রসায়ন নিয়ে আমরা হাজির হবো আরেকদিন।
এই টিউনটি আগে এই ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিলঃ http://www.trickdon.com
আমি মন মাঝি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 28 টি টিউন ও 41 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
bro kono meyer mone valobasha kivabe sristi korbo..eta make koren