কিডনী রোগটি পৃথিবীতে মহামারি আকার ধারন করতে পারে ।

বিশ্বে আনুমানিক২০ থেকে ২৫ কোটি লোক ভুগছে  ডায়াবেটিসে। এভাবে চলতে থাকলে ২০২৫ সালে তা ৪৪ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে অনুমান। অনেকেই জানেননা যে ডায়াবেটিসের সঙ্গে কিডনি রোগের রয়েছে ঘনিষ্ট সম্পর্ক। বস্তুত: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত  লোকের এক তৃতীয়াংশের রয়েছে ডায়াবেটিস জনিত কিডনি রোগ, ডাক্তারি ভাষায় ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি। এসব বিষয় জনগণকে জানাতে হবে, জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর আচরণ না করা, স্থূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করা, এবং ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্ত চাপের সনাক্ত করণের জন্য আগাম স্ক্রিনিং করা এসব কাজের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত কর্মসূচী ও উদ্যোগ।

এমন অনেক লোক রয়েছেন যাঁরা জানেনইনা যে ইতিমধ্যে তাঁদের কিডনির অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে অজান্তেই। যখন তা জানা গেলো তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। কিডনি রোগ যদি আগাম সনাক্ত করা যায় তাহলে এড়ানো যাবে ডায়ালিসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপনের মত দুর্ভোগ ব্যবস্হার মাধ্যমে। আর ডায়ালিসিস যে কি কষ্টের জিনিস তা নিচের ছবিগুলো দেখলেই টের পাবেন ।

c_kidney_kids_470x350 dialysis-248x300

যারা ইতিমধ্যে কিডনি রোগে আক্রান্ত তারা যা করতে পারেন তা হলো তাঁরা তাদের রোগ ঘটার গল্প লিখতে পারেন, বলতে পারেন, বন্ধু ও স্বজনদেরকে। কিডনি রোগের ঝুঁকি সম্বন্ধে সচেতন করে তুলতে পারেন। রয়েছে জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশন দেশে দেশে, আছে আমাদের দেশেও। সরকারের সঙ্গে একত্রে তারা এব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা ও কিডনি রোগ আগাম সনাক্ত করার ব্যাপারে বড় রকমের উদ্যোগ নিতে পারেন। আমাদের দেশের কিডনি ফাউন্ডেশন সে লক্ষ্যে কাজ করছেন  ।

isn-logo1 logo

বিশ্ব কিডনি দিবস প্রতিবছর দেশে দেশে পালিত হয় আন্তর্জাতিক নেফ্রোলজি সমিতি (ISN) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব কিডনি ফাউন্ডেশন (IFKF) যৌথ উদ্যোগে। বিশ্ব কিডনি দিবসের লক্ষ্য হলো সার্বিক স্বাস্থ্যে কিডনির গুরুত্ব সম্বন্ধে জনগণকে সচেতন করা এবং কিডনি রোগের প্রকোপ ও অনুষঙ্গী স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো বিশ্বজুড়ে হ্রাস করার প্রচেষ্টা নেওয়া। । বিস্ময়কর এই দেহযন্ত্র কিডনি সম্বন্ধে সচেতনতা বাড়ানো অন্যতম উদ্যোগ । ক্রনিক কিডনি রোগের মূল ঝুঁকি হলো ‘ডায়াবেটিস’ ও ‘উচ্চরক্ত চাপ’ একে জোরালো ভাবে উপস্থাপন করা ।  ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ যাদের রয়েছে তাদের সবাইকে পর্যায়ক্রমে ক্রনিক কিডনি রোগ রয়েছে কিনা তা স্ক্রিনিং করে দেখা ।  প্রতিরোধমূলক আচরণ সম্বন্ধে অবহিত করা ।  ক্রনিক কিডনি রোগ  বিশেষ করে উচ্চ ঝুঁকি মানুষের মধ্যে আগাম চিহ্নিত করার ব্যাপারে চিকিৎসা পেশাজীবিদের প্রধান ভূমিকা সম্বন্ধে শিক্ষিত করে তোলা। স্থানীয় ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও দায়িত্ব রয়েছে ক্রনিক কিডনি রোগ প্রতিরোধে, সে সম্বন্ধে জোরালো ভাবে তাদের জানানো।

আগাম চিহ্নিত হলে, ক্রনিক কিডনি রোগের চিকিৎসা করা যায় ফলপ্রসূভাবে, কমে যায় জটিলতা এবং এভাবে বিশ্বজুড়ে ক্রনিক কিডনি রোগ ও হৃদরোগের কারণে মৃত্যু ও রুগ্নতা কমবে নাটকীয়ভাবে। কিডনি রোগ নীরবে ধীরে ধীরে হতে থাকে শরীরের মধ্যে, আর প্রথম পর্যায়ে রোগ পৌছানোর সময়ে দেখা দেয় উপসর্গ, তখন ডায়ালিসিস ও ট্রান্সপ্লান্ট করা ছাড়া কোন গতি থাকেনা। মূত্রের কটিন পরীক্ষা, রক্তের ক্রিয়োটিনিন ও রক্তচাপ মেপে দেখলে কিডনি রোগের আগাম সংকেত পাওয়া যায়। অনেকে জানেন না যে ক্রনিক কিডনি রোগের সূচনা পর্যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধরা পড়েনা। অথচ একে পরীক্ষা করতে হলে চাই রক্ত ও প্রস্রাবের নমুনা এবং তাও সামান্য পরিমাণে। কিডনির ক্ষতি হলে প্রস্রাবে প্রোটিন যেতে থাকে। তাই প্রস্রাবে এলবুমিন (প্রোটিন) আছে কিনা সেজন্য রয়েছে অত্যন্ত কম খরচে, কার্যকরী পরীক্ষা। পরপর ক’দিন প্রস্রাবে প্রোটিন যাওয়া ক্রনিক কিডনি রোগের চিহ্ন।

19615 Kidney_stone_photographs

কিডনির সার্বিক অবস্থা জানানোর জন্য ডাক্তার রক্তের নমুনায় ক্রিয়েটিনিন মান দেখেন, গণনা করে দেখেন কিএফআর বা গ্লমেরুলার ফিলট্রেশন হার। আর ডায়াবেটিস আছে কিনা তা জানেন রক্তের সুগার মেপে। মেপে দেখেন রক্তচাপও।

তাই আগাম চিহ্নিত করলে এবং ক্রনিক কিডনি রোগের চিকিৎসা করলে কেবল যে রোগীর কিডনি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে যাওয়াই ঠেকায় তাই নয়, হ্রাস করে আনে হৃদরোগের সম্ভাবনা, যা বিশ্বজুড়ে অকাল মৃত্যুর একটি বড় কারণ।

আমরা যদি রক্তের ক্রিয়েটিনিন সম্বন্ধে একটু জানি তাহলে রিপোর্টের ভাল কি মন্দ দিকটা আমরা নিজেরাই অনেকটা অবগত হয়ে যেতে পারবো । তখন ডাক্তারের সঠিক পরামর্শটা আমাদের কাছে সহজ এবং বোধগম্য হবে ।

‘ক্রিয়েটিনিন’ হলো রক্তের একটি বর্জ্য যা পেশির কাজকর্ম থেকে উদ্ভূত। এটি রক্ত থেকে স্বাভাবিকভাবে সরিয়ে নেয় কিডনি, তবে যখন কিডনির কাজকর্ম ধীর হয়ে আসে, তখন রক্তে ক্রিয়েটিনিন মান বেড়ে যায়। রক্তের ক্রিয়েটিনিন মানকে চিকিৎসক ব্যবহার করে বের করে ফেলেন কিডনি ফাংশন বা জি.এফ.আর। গ মেরুলার ফিলট্রেশন রেট  রক্তের জিএফআর থেকে জানা যায় কিডনির কাজ কর্মের পরিমাণ। রক্তের ক্রিয়েটিনিন মান জানলে, একটি বিশেষ ফর্মূলা ব্যবহার করে, জিএফআর গণনা করা যায়। স্বাভাবিক জিএফআর হলো ১০০ মিলিলিটার/মিনিট এর চেয়ে নিচে হলে বোঝা যায় কিডনির কাজকর্ম কমে আসছে। জিএফআর যদি ৬০ মিলি লিটার/ মিনিটের নিচে নামে তাহলে একজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানো জরুরী। জিএফআর ১৫ এর নীচে হলে কিডনি বিকল হওয়ার নিদর্শন-ডায়ালিসিস বা কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট তখন প্রয়োজন হতে পারে।

কিডনিকে ভালো রাখার জন্য রয়েছে সাতটি সুবর্ণ সূত্র:- কিডনি রোগ হলো নীরব ঘাতক। যা জীবনে গুণগত মানের উপর প্রভাব ফেলে। তবে কিডনি রোগ যাতে না হয় সেজন্য রয়েছে কিছু সহজ উপায়।

১. শরীরকে ফিট রাখা ও সক্রিয় থাকা- কমে রক্তচাপ-কমে কিডনি রোগের ঝুঁকি।

২. রক্তের সুগার নিয়মিত নিয়ন্ত্রণে রাখা।

৩. রক্তের চাপ মেপে দেখা, ১২০/৮০ থাকতে হবে।

৪. স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ করা এবং ওজন ঠিক রাখা। নুন কম খান, আধ চামচের বেশী নয়।

৫. ধূমপান না করা।

৬. যখন তখন নিজের ইচ্ছামত ওষুধ কিনে না খাওয়া।

৭. যদি থাকে, ডায়াবেটিস উচ্চরক্ত চাপ, স্থূলতা, পরিবারে যদি কারো থাকে কিডনি রোগ-আফ্রিকান, এশিয়ান ও আদিবাসী হলে কিডনির কাজকর্ম চেক করে দেখতে হবে।

মূল লেখকঃ- অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী

পরিচালক, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস, বারডেম, ঢাকা

পরিশেষে এসে কিছু কথা বলতে চাই  সেটা হলো খাবার সমন্ধে । খাবারই সকল নষ্টের মূল । কথাটা এভাবে না বলে বলা যায় অতিরিক্ত খাবার বা আহারই সকল অনিষ্টের মূল । বেশীর ভাগ অসুখের মূল কারনই হচ্ছে অতিরিক্ত ভোজন ।

খাবারের ব্যাপারে নবীজী বলেছেন কম খেতে এবং শুধুমাত্র ক্ষুধা লাগলেই খাওয়ার জন্য আদেশ করেছেন ।

আর আমরা মুসলমান হিসাবে খাবারের নবীজীর দেয়া সুন্নত নিয়ম ছেড়ে  যেই ফ্যাশনে আজকাল পার্টিতে রাস্তায় ক্লাবে দাড়িয়ে খাবার খাচ্ছি তা সত্যিই আমাদের স্বাস্হের যে অভাবনীয় ক্ষতি করছে তা আমরা টেরই পাচ্ছিনা ।ডাক্তাররা আজ সেই কথাই বলছে দাড়িয়ে খাওয়া মাথা বা ব্রেন এর জন্য মারাক্তক ঝুঁকি। আর ভেজাল খাবারের কথা আর কি বলবো । প্রতিদিন ভেজাল বিরোধী অভিযান চলছে আর ধরে জরিমানা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে । আরে ব্যাটা এগুলোরে নিয়ে রিমান্ডে তিনদিন লাগাতার পেটানো উচিত । এরপর এদের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা উচিত । এটাই হবে সঠিক বিচার । কারন মালে ভেজাল করে জনগনের সামনে বিক্রি করার ব্যাপারে নবীজী অনেক কঠোর ভাবে হুশিয়ার করেছেন ।

খাবারের আদব সংক্রানত একটি বই পড়ার যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে নিচের বইটি নামিয়ে আগ্রহীরা পড়তে পারেন ।

বইটির লেখক -- হযরত মাওলানা তকী উসমানী ।

ডাউনলোড

Level 0

আমি shohel islam। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 14 টি টিউন ও 139 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Level New

খুবই উপকারি তথ্য শেয়ার করার জন্য আন্তঃরিক ধন্যবাদ।সেই সাথে টেকটিউন্স কর্তৃপক্ষকেও ধন্যবাদ এবং চিকিৎসা বিসয়ক আলাদা বিভাগ খোলার জন্য অনুরোধ থাকল।

কিডনি সম্পর্কে অনেক মুল্যবান কথা গুলো ধন্যবাদ। আমাদের নিজের সচেতনতার পাশাপাশি আমাদের আসে পাশে যারা থাকে তাদেও সচেতন করতে হবে।

ইসলাম এমন একটি জীবন ব্যবস্থা যার প্রত্যেকটা দ্বারাই মানুষের কল্যানের জন্য।কোরান এবং নবী করিম(সঃ) সুন্নাহ আমাদের জীবন চলার সঠিক পথ দেখায়।আজ বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত,নবী(সঃ) এর প্রত্যেকটা সুন্নাহই মানুষের স্বাস্থ এবং জীবন গড়ার জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারি।শুধুকি তাই অর্থনিতিতে দেখেন আজকে এমেরিকার মতন একটা ইসলাম বিরোধি রাষ্ট্র স্বীকার করছে,বর্তমান অর্থনীতির মন্ধা থেকে এক মাত্র বাঁচার উপায় হলো ইসলামী অর্থনীতির ব্যবস্থা।তাই আজকে নির্ধিদ্বায় বলতে পারি ইসলামী জীবন ব্যবস্থাই এক মাত্র সকল মানুষের স্বাস্থ,অর্থনীতি,পারিবারিক ভাল সম্পর্কের,সামাজিক নিরাপত্তা সহ সকল বিষয়ে একশ ভাল নিরাপত্তা প্রদান করতে সক্ষম অন্য কোন মানুষের গড়া আইন বা জীবন ব্যবস্থা নয়।আল্লাহ সুবহানা হুয়াতায়ালা আমাদের সবাইকে হেদায়েত ও হেফাজত করুন।
আপনার টিউনটি অসম্ভব ভাল হইছে এই জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।আর আল্লামা ত্বকী উসমানির বই খানা দেয়ার জন্য আপনার কাছে কৃতজ্ঞ রইলাম আপনার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করছি।
আমারো অনুরোধ থাকবে টেকটিউন্স কর্তৃপক্ষের নিকট চিকিৎসা বিষয়ক আলাদা একটা বিভাগ খোলার।

চমৎকার টিউন, অনেক ধন্যবাদ। কিডনি, হা্র্ট, লিভারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ন অংগ আমরা সামান্য সচেতন হলেই ভাল রাখতে পারি। সব ধর্মেই ভাল কথা লিখা আছে, কিন্তু আমরা কেউ তা মানি না। বিষয়টা হল সুস্থ থাকা, না থাকা। আমাদের সামাজিক জীবনে অনেক বিষয় আছে যা কিনা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে, কিন্তু যথেষ্ট নয়। খাদ্যাভাস বদলাতে হবে। যেমন, সকালের আহার সবচেয়ে বেশি পরিমান ও পুষ্টিসম্মত হওয়া প্রয়োজন কিন্তু আমরা তা করি না, আবার দুপুর ও রাতের আহার পরিমিত হওয়া প্রয়োজন, আমরা করি তার উল্টো।

Level 0

জীবনের জন্য খুব প্রয়োজনিয় টিউন করেছেন, ধন্যবাদ।

চমৎকার টিউন । সবাই পানি বেশি বেশি করে খাবেন 😉

চিন্তার বিষয়।

Level 0

Eat করতে থাকেন…

ভালোই তো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমার অনেক উপকার হলো। আশাকরি সবার উপকার হবে। ডায়াবেটিস সর্ম্পকে জানতে ভিজিট করুন
ডায়াবেটিসের কারন ও প্রতিকার