আজকাল রোবটিক্স নিয়ে নতুন প্রজন্মের মধ্যে একটা অন্যরকম উত্তেজনা দেখা যায়। এরূপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। কেননা এই রোবটিক্সই হবে পরবর্তী যুগের হাতিয়ার। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এই রোবটিক্স নিয়ে অনেক মানুষের অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে যেখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণার সুযোগ কম, সেখানে এসব বিষয় নিয়ে অনেকের ভুল ধারণা থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই রোবটিক্স নিয়ে আমার জানা কিছু ধারণার সমন্বয়েই আজকের এই লেখাটি লিখতে বসেছি। আশাকরি অল্প হলেও, রোবটিক্স নিয়ে সঠিক এবং কার্যকরী কিছু বিষয় তুলে ধরতে পারব।
- রোবট ও রোবটিক্স :
"রোবট হলো এমন একটি স্বত্তা যার বুদ্ধিমত্তা বিদ্যমান হওয়ায়, তা মানুষের মতো কাজ করার ক্ষমতা রাখে। "
"আর রোবটের কাঠামো তৈরি, নির্মাণ, গঠন, এর কার্যকারিতা এবং তা প্রয়োগ নিয়ে প্রযুক্তির যে শাখায় বিষদভাবে আলোচনা করা হয় তাই রোবটিক্স। "
জর্জ ডেবলকে রোবটিক্স এর জনক বলা হয়। কারণ তিনিই প্রথম প্রোগ্রামেবল রোবট বানাতে সক্ষম হন।
- রোবটিক্স এর প্রয়োজনীয়তা:
আজকাল আমরা আমাদের অধিকাংশ কাজেই রোবটের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে থাকি। ধারণা করা হচ্ছে ভবিষ্যতের প্রায় সকল কাজই রোবটের সাহায্যে করা সম্ভব হবে। বর্তমানে রোবটকে ব্যবহার করা হয় এমন কিছু ক্ষেত্র নিচে তুলে ধরা হলো-
* বিপজ্জনক কাজে (যেমন বোমা ডিফিউজ করতে)
* ম্যানুফ্যাকচারিং
* শিল্প কারখানায়
* সামরিক কাজে
* চিকিৎসায়
* গবেষণায়
* ঘরোয়া কাজে (যেমন বাসাবাড়ি পরিষ্কার করতে)
* বিনোদনমূলক কাজে
* ট্রেনিংয়ের কাজে
* ভ্রমণের পথ প্রদর্শক হিসেবে
* অভ্যর্থনাকারী হিসেবে
* হিসাবরক্ষক হিসেবে
এছাড়াও আমরা নানান কাজে প্রতিনিয়তই রোবটকে ব্যবহার করে চলেছি।
- রোবটিক্স শিক্ষার পরিধি ও রোবটিক্স এর জন্য পরিধিসমূহের সম্ভাবনাসমূহ:
রোবটিক্স শিক্ষার পরিধি ব্যাপক এবং এতে সফল হওয়ার সম্ভাবনাও ব্যাপক। নিচে তা নিয়েই সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো-
- রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং:
রোবটিক্স এর যাবতীয় সকল বিষয় নিয়ে এই শাখায় আলোচনা করা হয়ে থাকে। রোবটিক্স বলতে মানুষ মূলত এই শাখাকেই বুঝে থাকে। আসলে এই শাখাটি হলো কেবলমাত্র রোবটিক্স এর জন্য গড়ে তোলা বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার সমন্বয়। কিন্তু আমাদের দেশের পাবলিক ইউনিভার্সিটি গুলোতে এই শাখাটি নেই। তবে বিদেশের অনেক বড় বড় ইউনিভার্সিটিগুলোতে এই শাখাটি রয়েছে। তাই বলে কি আমাদের দেশে রোবটিক্স শিক্ষা সম্ভব নয়? আসলে বিষয়টি তেমন নয়। আমাদের দেশে রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং না থাকলেও বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং এর শাখা থেকে লেখাপড়া করে রোবটিক্সকে পেশা বানানো সম্ভব। এছাড়াও আমাদের দেশে প্রতিনিয়তই রোবটিক্স এর পরিধি বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।
- আমাদের দেশে রোবটিক্স এর জন্য যে সকল বিভাগ রয়েছে তা নিয়েই নিচে আলোচনা করা হলো-
- মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং:
যারা রোবাটের অবকাঠামো নির্মাণ কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে চায়, তাদের জন্য এই শাখাটি নিয়ে লেখাপড়া করা প্রয়োজন। এই শাখায় রোবট তৈরি ও এর উন্নতি নিয়ে কাজ করা হয়। এছাড়াও রোবটের বিভিন্ন সেন্সর ও যন্ত্রাংশ নির্মাণও এই শাখার অন্তর্ভুক্ত।
- ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং:
এই শাখায় রোবট তৈরি থেকে শুরু করে রোবটের সার্কিট তৈরি, তা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ রক্ষণাবেক্ষণসহ প্রায় সকল কাজেরই সুযোগ রয়েছে। তাই রোবটিক্স এর জন্য এই শাখাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং:
রোবটিক্স এর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখাটি হলো কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং। কারন রোবটের প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে এর পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ, নির্দেশনা প্রদানসহ রোবটিক্স এর উন্নয়নেও এই শাখার ভূমিকা ব্যাপক।
- ম্যাথম্যাটিকস:
রোবটিক্স এ ব্যবহৃত অতি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর মধ্যে জ্যামিতি, ক্যালকুলাস, সংখ্যা বিশ্লেষণসহ অনেক বিষয়ই এই বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। তাই রোবটিক্স এর জন্য এই শাখাটি কম কার্যকরী নয়।
আশাকরি রোবটিক্স এর ধারণা, প্রয়োজনীয়তা ও পরিধি সম্পর্কে যে আলোচনা করা হলো তা একটু হলেও কারো জন্য কার্যকরী হবে। আজ এখানেই শেষ করছি। তবে রোবটিক্স নিয়ে আমার লেখা ইনশাল্লাহ পর্যায়ক্রমে চলতে থাকবে।