বেশ কিছু আনুষ্ঠানিক ও টেকনিক্যাল স্তর পার করে অবশেষে টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার হওয়ার সৌভাগ্য হলো আমার। দেশের জনপ্রিয় রাইটিং সাইটের একজন ট্রাস্টেড সদস্য হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। টেকটিউনসের সকল নিয়মকানুন সঠিকভাবে মেনে এবং সকল নির্দেশনা সঠিকভাবে সম্পন্ন করে ট্রাস্টেড টিউনারশীপ অর্জন করতে পারব এই আশা একদমই ক্ষীণ ছিল। তবে আমি পেরেছি জীবনে প্রথমবারের মতো নিজের ক্যারিয়ারের একটি সফল ভীত তৈরি করতে।
আজকের টিউনের মাধ্যমে আমি আমার টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনারশীপ অর্জনের পুরো যাত্রা সম্পর্কে আলোচনা করবো। সেই সাথে নিজের ব্যক্তিগত পরিচয় ও কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিজের পরিচয় তুলে ধরবো। যারা টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার হওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন তাদের জন্য আমার আজকের টিউনটি একটু হলেও উপকারী হবে বলে আশাকরি। তাহলে দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।
টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার হওয়ার পুরো যাত্রা সম্পর্কে আলোচনা করার আগেই আমার নিজের পরিচয়টা দিয়ে নিচ্ছি। আমি শারমিন আক্তার। জন্ম বরিশালে এবং ছোট থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বেড়ে উঠেছি বরিশাল শহরেই। জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে বরিশালের মাটিতে।
বৈবাহিক সূত্রে বর্তমানে ঢাকা বিভাগের গাজীপুর জেলায় বসবাস করছি। উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষা শেষ করার পরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই এবং গাজীপুরে শ্বশুর বাড়িতে চলে আসি। বর্তমানে গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে ইংরেজি বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছি।
বর্তমানে আমি টেকটিউনসে লেখালেখি করার পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্যান্য কয়েকটি ওয়েবসাইটে কনটেন্ট রাইটিং এর কাজ করি। তবে চাচ্ছিলাম স্থায়ীভাবে নিজের ক্যারিয়ার দাঁড় করাতে। আর টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনারশীপ পাওয়ার মাধ্যমে নিজের ক্যারিয়ার সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছি। এখন নিজেকে একজন দায়িত্বশীল টিউনার হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আশাকরি টেকটিউনস এর সাথে কাজ করার মাধ্যমে নিজের ক্যারিয়ারের একটি শক্ত ভীত তৈরি করতে পারবো।
ছোটবেলা থেকেই বাড়তি বই, খবরের কাগজ ও ম্যাগাজিন পড়তে ভালো লাগত। তখন ভাবতাম এই লেখাগুলো তো আমার মতো কোনো একজন মানুষই লিখেছে। আমিও তো চেষ্টা করলে লিখতে পারি। তো তখন থেকেই টুকটাক লিখতে চেষ্টা করতাম এবং লিখতামও। তবে সবথেকে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল লেখা প্রকাশ করা নিয়ে। নিজেই লিখতাম, আবার নিজেই পড়তাম। মনে মনে ভাবতাম কোনো একদিন হয়তো এই লেখালেখি আমার পরিচয়ের প্রধান মাধ্যম হবে।
অন্যদিকে স্মার্ট ফোন হাতে আসার পর থেকেই চেষ্টা করতাম এই মোবাইলের মাধ্যমে কীভাবে আয় করা যায়। অনেক ভাবে চাকরি করার চেষ্টা করেছি অনলাইনে। কিন্তু সবই ছিলো ধোঁকা। তবে আশা ছাড়িনি। অনলাইনে ব্যবসা করারও চেষ্টা চালিয়েছি কয়েকবার। তবে এই বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান থাকলেও প্রয়োজনীয় ডেলিভারি সিস্টেম না থাকায় এই সেক্টরেও খুব বেশি সফল হতে পারিনি।
হঠাৎ একদিন একটা পেইজ থেকে 'লেখা আহ্বান' করে একটি টিউন স্পন্সর করে এবং সেই পোস্টটি আমার সামনে আসে। ঐ পেইজে ২৫০ টাকার বিনিময়ে একটি ১০০০ শব্দের আর্টিকেল লিখে দেয়ার আহ্বান জানায়। সাহস করে লিখে ফেলি একটা আর্টিকেল। সাথে সাথে তারা ২৫০ টাকা পেমেন্ট করে। এভাবেই কনটেন্ট রাইটিং এর যাত্রা শুরু হয় আমার।
এভাবে আস্তে আস্তে অনেক লোকাল সাইটের সাথে পরিচয় হয় এবং নিয়মিত কনটেন্ট রাইটিং এর কাজ করতে থাকি। একটা পর্যায়ে দেখতে পাই সারাদিন টিউশন করে যা আয় হয় তার থেকে রাইটিং এর কাজে বেশি আয় হয়। তাছাড়া অন্যান্য কাজের থেকে এই কাজে একটা আলাদা শান্তি পাই। নিজের লেখা হাজার হাজার মানুষ পড়ে এটাও একটা বড় প্রাপ্তি। তাছাড়া রাইটিং এর কাজের কোনো ধরাবাঁধা সময় নেই। নিজের পছন্দমতো যে কোনো সময়ে কাজ করার সুযোগ পাই।
সার্বিক ভাবে সব দিক মিলিয়ে দেখলাম বাংলাদেশের মার্কেটে ভালো মানের কনটেন্ট এর বেশ চাহিদা এখনও রয়েছে। সেই সাথে আমারও যেহেতু আগে থেকেই লেখালেখির প্রতি আগ্রহ তাই এই সেক্টরে আগানো যেতেই পারে। এদিক থেকেই কনটেন্ট রাইটিং এর ওপর একটি বিশেষ ভালোলাগা সৃষ্টি হয়। আর বর্তমানে লেখালেখি করার এমন এক অভ্যাস তৈরি হয়েছে যে নিয়মিত লেখালেখি না করলে মানসিক প্রশান্তি আসে না।
অনলাইনের খুটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানার ও এক্সপার্ট হওয়ার আগ্রহ জন্মায় স্মার্ট ফোন হাতে পাওয়ার পর থেকেই। কীভাবে মোবাইলের মাধ্যমে আয় করা যায় এই বিষয়ে টানা কয়েকবছর চেষ্টা চালিয়েছি। অনেক ধাক্কা খেয়েছি, ধোঁকার শিকার হয়েছি। তাই অনলাইনে আয় করার এই সেক্টর সম্পর্কে লেখালেখি করতে বেশ ভালোই লাগে। অনলাইন আয়ের বিষয়ে বেশ ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে বলেই আমার লেখাগুলো পড়লে বিগিনার-দের বেশ উপকার হবে।
আমি মোটামুটি সংসারী বললেই চলে। বিশেষ করে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে ঘরের যাবতীয় কাজ করতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তাই আধুনিক ডিভাইস সম্পর্কে মোটামুটি বেশ ভালো আয়ত্ত আছে। স্মার্ট হোম ও সাংসারিক প্রয়োজনীয় আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে লিখতে ভালোবাসি। কীভাবে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দৈনন্দিন জীবনের কাজ সহজ করে তোলা যায় এসকল বিষয়ে লেখালেখি করি।
এছাড়াও মোবাইল হ্যাকস সম্পর্কেও লিখতে ভালোবাসি। ভ্রমণকে কীভাবে প্রযুক্তির মাধ্যমে সহজ করা যায় সে সম্পর্কে অনেক লেখালেখি করেছি এবং করছি। পাশাপাশি আধুনিক বিভিন্ন প্রযুক্তি ও গেজেট রিভিউ নিয়ে লেখালেখি করি। ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টর সম্পর্কেও লেখালেখি করি। এছাড়া লাইফস্টাইল, খাওয়া দাওয়া ও দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কাজকর্মে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়েও লেখালেখি করি।
মোটকথা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সব ধরনের লেখা আমার টিউনার প্রোফাইলে পাবেন। তাছাড়া অনলাইন বিজনেস সম্পর্কিত বিভিন্ন হ্যাকস ও টিপস সম্পর্কে বিভিন্ন টিউন পাবেন আমার টিউনার প্রোফাইলে।
কনটেন্ট রাইটিং কাজের সাথে যুক্ত হওয়ার পরে বিভিন্ন লোকাল ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করতাম। তাদের কাজগুলো হতো অর্ডার ভিত্তিক। কখনও অনেক কাজের চাপ থাকতো আবার কখনও একটানা বেশ কয়েকদিন কোনো কাজ পেতাম না। তখন ভাবলাম বাংলাদেশে এমন কোনো সাইট আছে কিনা যেখানে নিয়মিত কাজ পাবো। সেই ভাবনা থেকেই গুগলে সার্চ করতে লাগলাম বাংলা রাইটিং সাইট সম্পর্কে।
গুগল সার্চ করে মোটামুটি বেশ কয়েকটি আর্টিকেল পড়ার পরে টেকটিউনস সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেলাম। দেখলাম বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় রাইটিং সাইট আছে। এভাবেই নিজের প্রয়োজনের তাগিদে গুগল সার্চ করার মাধ্যমে টেকটিউনস সহ অন্যান্য রাইটিং সাইট এর সাথে পরিচিত হলাম। তবে সবগুলো রাইটিং সাইট এর থেকে টেকটিউনস আমার কাছে সবথেকে বেশি গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে।
গুগল সার্চ করে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি রাইটিং সাইটের সাথে পরিচিত হওয়ার পরে প্রতিটি সাইট সম্পর্কে ভালোভাবে রিসার্চ করেছি। প্রতিটি সাইটের লেখার ক্যাটাগরি, পেমেন্ট পদ্ধতি ও টেকনিক্যাল সিস্টেম সম্পর্কে জানতে পেরেছি আলাদা আলাদা আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে। দেখা গেল টেকটিউনস এর টিউন টপিক হিসেবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। আর আমারও এই সেক্টরে লেখালেখি করার আগ্রহ এবং অভিজ্ঞতা আছে। তাই এই সাইটের প্রতি একটু বেশিই আকৃষ্ট হলাম।
তারপর টেকটিউনস থেকে আয় করার সিস্টেম সম্পর্কে জানতে একটি আর্টিকেল পড়লাম। সেখান থেকে জানতে পারলাম টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার হওয়া ছাড়া এই সাইট থেকে আয় করা সম্ভব না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার হওয়ার সকল প্রসেস সম্পন্ন করে ট্রাস্টেড টিউনার হবো।
টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে আরও একটি কারণ ছিলো। বেশ কয়েকটি সাইটের সাথে তুলনা করে দেখলাম টেকটিউনস থেকে আয় তুলনামূলক সবথেকে বেশি। তাছাড়া টেকটিউনসে আয়ের মাত্রা নির্ভর করে একজন টিউনারের দক্ষতার ওপর। এসকল বিষয়গুলো টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার হওয়ার জন্য আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। অবশেষে টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার হবার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরে ট্রাস্টেড টিউনার হওয়ার সকল শর্ত সমূহ খুব মনোযোগ সহকারে কয়েকবার পড়েছি। প্রথমবার সকল শর্ত ভালোভাবে পড়ার পরেও বেশ কিছু বিষয় বুঝতে পারিনি। তাই সময় নিয়ে বেশ কয়েকবার ট্রাস্টেড টিউনার হওয়ার শর্তগুলো পড়েছি। সেখানে মূলত দুইটি শর্ত ছিলো। প্রথমত টেকটিউনস প্রোফাইল সেটআপ পলিসি অনুযায়ী প্রোফাইল সেটআপ করতে হবে এবং ভেরিফিকেশন করতে হবে। দ্বিতীয়ত টেকটিউনস টিউন প্রকাশের সকল শর্ত মোতাবেক ১০ টিউন প্রকাশ করতে হবে।
প্রথমে প্রোফাইল সেটআপের সকল নিয়ম মেনে প্রোফাইল সেট করেছি। প্রোফাইল সেট করার পরে ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদন করেছি। পরবর্তীতে প্রোফাইলের সকল ভুল ত্রুটি আবার সংশোধন করে প্রোফাইল ভেরিফাই করেছি। টেকটিনস ট্রাস্টেড টিউনার হওয়ার প্রথম শর্ত পূরণ করা হলে দ্বিতীয় পদক্ষেপের দিকে অগ্রসর হলাম। অর্থাৎ টেকটিউনসে টিউন প্রকাশের নিয়ম অনুযায়ী ১০ টি টিউন প্রকাশের কাজ শুরু করলাম। মূলত এভাবেই টেকটিউনসে ট্রাস্টেড টিউনার হবার কাজ শুরু করলাম।
টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার হওয়ার প্রক্রিয়া গুলোকে আমি আমার মতো করে চারটি ভাগে ভাগ করেছি। এগুলো হলো:
নিচে প্রত্যেকটি প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ট্রাস্টেড টিউনার হওয়ার প্রথম শর্ত হলো টেকটিউনস একাউন্ট ভেরিফাইড হতে হবে। এজন্য প্রোফাইল সেটআপ এর সকল নিয়ম মেনে প্রোফাইল সেটআপ করতে হবে। তারপর প্রোফাইল ভেরিফিকেশন করার জন্য টেকটিউনস ডেস্কে আবেদন করতে হবে। আমি সবার প্রথমে প্রোফাইল সেটআপ পলিসি অনুযায়ী প্রোফাইল সেটআপ করেছি। তারপর ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদন করে প্রোফাইল ভেরিফাই করে নিয়েছি।
এই পর্যায়ে টেকটিউনসে টিউন প্রকাশ করার সকল নিয়ম ভালোভাবে আয়ত্ত করে নিয়েছি। তারপর সঠিক নিয়ম মেনে ধারাবাহিক ভাবে ১০ টি টিউন প্রকাশ করেছি। টিউন প্রকাশ করা শেষ করে টিউন রিভিউ করার জন্য ডেস্কে আবেদন করেছি। পরবর্তীতে টেকটিউনস অপস টিম থেকে আমার টিউনের ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়েছে।
এ পর্যায়ে নিজের ভুলগুলো পুনরায় সংশোধন করে পুনরায় টেকটিউনস অপস টিমকে অবগত করেছি। পরবর্তীতে আমাকে টিউন থাম্বনেইল তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়। সেই অনুযায়ী ১০ টি টিউনের জন্য উপযুক্ত টিউন থাম্বনেইল তৈরি করে টিউনে সেট করার মাধ্যমে সফলভাবে ১০ টি টিউন প্রকাশের কাজ সম্পন্ন করি।
সফলভাবে ১০ টি টিউন প্রকাশের সাথে সাথে সেই টিউন শেয়ার করার নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে ও টেকটিউনস ফেসবুক গ্রুপে প্রতিটি টিউন আলাদা আলাদা ভাবে শেয়ার করেছি। টিউন শেয়ার করার পরে সেই ফেসবুক টিউনের পার্মালিংক সংগ্রহ করে সাবমিট করার নির্দেশনা অনুযায়ী সাব-মিট করেছি। এভাবে ১০ টি টিউন সাবমিট করার মাধ্যমে টিউন প্রকাশের কাজ সফলভাবে শেষ করি। ১০ টি টিউন সফলভাবে প্রকাশ করার পরে টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার হিসেবে যোগ্য বলে বিবেচিত হই।
১০ টি টিউন সফলভাবে প্রকাশের পর একটি ছোট ইন্টারভিউ এর আয়োজন করা হয়। সেখানে টিউন প্রকাশের পুরো যাত্রা সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পরে দেখা গেল কিছু প্রশ্নের উত্তর ভুল ছিল। আমাকে আবারও আরেকটি সুযোগ দেয়া হয় ভুল সংশোধনের জন্য। এভাবে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দেয়ার মাধ্যমে ইন্টারভিউ সম্পন্ন হয়।
পরবর্তীতে আমাকেও প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়া হয়। সেইসাথে সবগুলো প্রশ্নের আশানুরূপ উত্তর প্রদান করে টেকটিউনস অপস টিম। এভাবেই আমার ইন্টারভিউ শেষ হয়। পরিশেষে আমাকে টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার ব্যাজ প্রদান করা হয়।
টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার হতে যে সকল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি তার মধ্যে প্রধান হলো টিউন সাবমিট পলিসি অনুযায়ী টিউন শেয়ার ও সাবমিট করা। শর্ত ছিলো প্রকাশিত টিউন ফেসবুক প্রোফাইলে ও গ্রুপে শেয়ার করে সেই টিউনের পার্মালিংক সাবমিট করা। কিন্তু ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ারকৃত টিউনের পার্মালিংক সংগ্রহ করার বিষয়টি আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না। টেকটিউনস অপস টিম থেকে বার বার দিক নির্দেশনা দেয়ার পরেও সঠিকভাবে কাজটি করতে পারছিলাম না। তবে আমিও টেকটিউনসকে বার বার প্রশ্ন করেছি এবং অনেকবার চেষ্টা করেছি। অবশেষে পার্মালিংক সংগ্রহ করে টিউন সাবমিট করতে সক্ষম হয়েছি।
প্রোফাইল সেটআপ করতে গিয়েও সমস্যায় পরেছিলাম। প্রোফাইল সেটআপের আইডি ফটো অপশনে ভুল ছবি আপলোড করেছিলাম। পরবর্তীতে বার বার সেই ছবি পরিবর্তন করার চেষ্টা করেও সফল হইনি। অবশেষে টেকটিউনস ডেস্কে এই বিষয়ে জানানোর পরে টেকটিউনস অপস টিম থেকে সমস্যাটির সমাধান করা হয়।
প্রোফাইল সেটআপ করার সময় বিকাশ নম্বর দিতে গিয়েও সমস্যায় পরেছি কিছুটা। সেখানে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে তৈরি করা বিকাশ একাউন্ট নম্বর দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আমার জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে কোনো বিকাশ একাউন্ট তৈরি করা ছিল না। ফলে ২ দিন সময় নিয়ে বিকাশ একাউন্ট তৈরি করে তারপর প্রোফাইল সেটআপ করেছি।
আরেকটি বিষয় নিয়ে সমস্যায় পরতে হয়েছিল, আর তা হলো হাই রেজুলেশন পিকচার। টিউন থাম্বনেইল ও টিউনের সাব হেডিং এর নিচে ব্যবহৃত টিউন ফটো হাই রেজুলেশন হতে হবে। কিন্তু আমি হাই রেজুলেশন পিকচার সম্পর্কে খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছিলাম না। তাই আমার টিউনে ব্যবহৃত বেশিরভাগ ফটো পরিবর্তন করতে হয়েছিল। টেকটিউনসের সার্বিক সহায়তায় আমি পরবর্তীতে খুব সহযেই হাই রেজুলেশন পিকচার ডাউনলোড করার পদ্ধতি শিখতে পারি এবং সফলভাবে টিউন প্রকাশ করতে পারি।
এছাড়া আর কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছিল না আমার টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার হওয়ার পথে। কেননা টেকটিউনস অপস টিম প্রতিটি বিষয় খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে। সেই সাথে যে কোনো সমস্যার খুব দ্রুত সমাধান করে দিয়েছে।
হয়তো ভাবতে পারেন এতোগুলা টেকনিক্যাল স্তর পার হওয়ার জন্য আমার ল্যাপটপ কিংবা ডেক্সটপ কম্পিউটার প্রয়োজন হয়েছে। কিন্তু জানলে অবাক হবেন যে টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার হওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি আমি মোবাইলের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছি! কেননা টেকটিউনস সম্পূর্ণ স্মার্টফোন ফ্রেন্ডলি ও স্মার্টফোন রেস্পন্সিভ একটি ওয়েবসাইট। এই সাইটে লেখালেখি করে আয় করার জন্য হাতে থাকা সাধারণ স্মার্ট ফোনটিই যথেষ্ট।
যখন আমি টেকটিউনসে প্রথম টিউন করি তখন মোবাইল দিয়ে টিউন করার বিষয়ে ভালোভাবে কিছুই জানতাম না। নিজের মতো ফর্মেটিং করে টিউন করতাম। টেকটিউনস অপস টিম তখন এই নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিল মোবাইল দিয়ে সঠিক ফরমেটে টিউন করার সকল কৌশল। এই টিউটোরিয়াল ভালোভাবে পড়ার মাধ্যমে সঠিকভাবে টিউন ফরমেট করতে পেরেছি।
এরপরে দেখলাম টিউনের সাথে ছবি যোগ করতে হবে। কিন্তু এই বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না৷ পরবর্তীতে টেকটিউনস থেকে এই টিউটোরিয়াল প্রদান করা হয়। পুরো টিউটোরিয়াল পড়ার মাধ্যমে আমি ভালোভাবে ছবি যোগ করার বিষয়টি বুঝতে পারি। ফলে মোবাইল দিয়ে খুব সহজেই আমি টিউনে ইমেজ যোগ করতে পারি।
এরপরে আসে টিউন থাম্বনেইল তৈরি ও টিউনে সঠিকভাবে থাম্বনেইল সেট করার বিষয়টি। এই পর্যায়ে এসে আমি কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম। টিউন থাম্বনেইল তৈরির বিষয়টি আমার কাছে বেশ জটিল বলেই মনে হয়েছে৷ তবে টেকটিউনস নিজ দায়িত্বে টিউন টেমপ্লেট তৈরি করে দিয়েছে, ফলে মোবাইল দিয়ে থাম্বনেইল তৈরির বিষয়টি বেশ সহজ হয়েছে আমার জন্য। প্রত্যেক ট্রাস্টেড টিউনারের জন্য টেকটিউনস আলাদা আলাদা টিউন থাম্বনেইল টেমপ্লেট এসাইন করে থাকে৷ ফলে মোবাইল দিয়ে সহজেই টিউন থাম্বনেইল তৈরি করা যায়।
টিউন সঠিকভাবে প্রকাশ করার পরে টিউন শেয়ার করে সাবমিট করার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয় টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার গাইডলাইন এর মাধ্যমে। পুরো গাইডলাইন পড়ে সঠিকভাবে টিউন প্রকাশ করে টিউন সাবমিট করার বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি। তবে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করা টিউনের পার্মালিংক আইডি সংগ্রহ করার বিষয়টি কোনো ভাবেই বুঝতে পারছিলাম না। পরবর্তীতে মোবাইল থেকে পার্মালিংক আইডি সংগ্রহ করার বিষয়টি ভিডিও টিউটোরিয়াল এর মাধ্যমে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি। অতঃপর সফলভাবে টিউন প্রকাশ করে টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার হতে পেরেছি।
যারা মনে করছেন ট্রাস্টেড টিউনার হওয়ার জন্য ল্যাপটপ কিংবা ডেক্সটপ কম্পিউটার প্রয়োজন তাদের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কেননা নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে মোবাইলের মাধ্যমেই আপনি টেকটিউনসে কাজ করতে পারবেন৷ তাইতো মোবাইলের মাধ্যমে টেকটিউনসে কাজ শুরু করেছি এবং এখনও নিজের হাতে থাকা মোবাইলের মাধ্যমে কাজ করছি।
টিউন মোবাইল দিয়ে করা হচ্ছে নাকি কম্পিউটার দিয়ে করা হচ্ছে সেটা মূল বিষয় না। টিউন কতোটা মানসম্পন্ন হচ্ছে এবং গাইডলাইন অনুযায়ী হচ্ছে এটাই আসল বিষয়। তাইতো নিশ্চিন্তে নিজের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে টেকটিউনসে নিয়মিত টিউন করছি।
টেকটিউনসে ট্রাস্টেড টিউনার হতে গিয়ে আমার সবথেকে বেশি যেটা ভালো লেগেছে তা হলো টেকটিউনস অপস টিমের সাপোর্ট। যে কোনো সমস্যায় বা প্রয়োজনে টেকটিউনস অপস টিম খুব দ্রুত সাড়া প্রদান করে। রাইটিং সেক্টরে যারা একেবারে নতুন তারাও এই সাইটে খুব সহজেই কাজ করতে পারবে। কেননা টেকটিউনস অপস টিম থেকে প্রতিটি নির্দেশনা খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়। তারপরও যদি বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে বার বার প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে। টেকটিউনস একজন টিউনারের সকল প্রাসঙ্গিক ও অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিরক্ত হয় না।
আরেকটি বিষয় আমার ব্যক্তিগত ভাবো ভালো লেগেছে। আমাকে টেকটিউনস টিউন থাম্বনেইল তৈরি করার জন্য ক্যানভা ব্যবহার করে তৈরি করা একটি ডিজাইন এসাইন করা হয়েছে। নির্দেশনায় বার বার বলা হয়েছিল যাতে ঐ ডিজাইনের কনসিসটেনসি নষ্ট না করি। কিন্তু ভুল বসত দুইবার আমি ঐ ডিজাইনের কনসিসটেনসি নষ্ট করেছি। টেকটিউনস অপস টিম আবার ডিজাইনটি রিস্টোর করে দিয়েছে। এখানে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করলে নির্ঘাত বকা শুনতে হতো।
টেকটিউনস এর সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হয় প্রফেশনাল পদ্ধতিতে। একই নিয়ম সবার জন্য প্রযোজ্য এবং এই নিয়ম মানতে সবাই বাধ্য। এই বিষয়টি টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার হওয়ার পদ্ধতির মধ্যে আমি সব সময়ই লক্ষ করেছি। এই বিষয়টি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।
আসলে টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার হিসেবে অভিনন্দন মেসেজটি যখন আমি দেখতে পেলাম তখন যে কতোটা আনন্দিত হয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। বেশ কয়েকদিন একটানা চেস্টার পরে আমি ট্রাস্টেড টিউনার হতে পেরেছি। এটা আমার জীবনের অনেক বড় একটি সাফল্য বলে আমি মনে করি। কয়েকবার ভেবেছি হয়তো আমার দ্বারা এটা সম্ভব হবে না। কিন্তু চেষ্টা করেছি শেষ পর্যন্ত এবং সফলও হয়েছি।
ক্যারিয়ার নিয়ে অনেকটাই চিন্তিত ছিলাম এতোদিন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে জীবনের একটা রাস্তা খুঁজে পেয়েছি। সবথেকে বড় কথা অনলাইন সেক্টরে কাজ করার স্বপ্ন আমার ২০১৮ সাল থেকেই। এই সেক্টরে নিজেকে দাঁড় করাতে পেরে আমি গর্বিত। ধন্যবাদ টেকটিউনসকে আমাদের মতো সাধারণ মানের রাইটার দের জন্য চমৎকার একটা প্লাটফর্ম তৈরি করার জন্য।
টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার হবার পর আমার মূল পরিকল্পনা নিয়মিত কমপক্ষে দুই থেকে তিনটি টিউন করে নিজের একটিভিটি বজায় রাখা। নিজের পরিচিতি গড়ে তুলতে টেকটিউনসকে আমি সবার আগে প্রাধান্য দিতে চাই। টেকটিউনসে টিউন করাকে আমি আমার পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছি। প্রতিদিন কমপক্ষে আট থেকে দশ ঘন্টা সময় দিয়ে আমি ভালো মানের কনটেন্ট লেখার চেষ্টা করবো টেকটিউনস এর জন্য।
সবার জীবনেরই একটা লক্ষ থাকে। আমার জীবনের লক্ষ একজন ভালো মানের কনটেন্ট রাইটার হওয়া। পাশাপাশি লেখালেখিকে জীবীকার প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা। সেই উদ্যেশ্য সফল করার তাগিদে আজ থেকে কাজ শুরু করলাম। টেকটিউনস এর একজন নিয়মিত টিউনার হিসেবে নিজের সুনাম ধরে রাখার চেষ্টায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম।
সবশেষে এটাই বলবো, টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার হতে পারা আমার জন্য অনেক বড় একটি প্রাপ্তি। একটু চেষ্টা করলে আপনিও হতে পারবেন টেকটিউনস ট্রাস্টেড টিউনার। প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে স্বাধীন ভাবে কিছু করতে চাইলে এই সেক্টরে একবার চেষ্টা করে দেখতেই পারেন। আশাকরি খুব ভালো কিছু হবে। সবশেষে টেকটিউনসকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে ট্রাস্টেড টিউনার হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য। আমিও আমার এই অবস্থান ধরে রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। সেই সাথে নিজের দক্ষতাকে আরও বাড়ানোর প্রচেষ্টা সচল রাখবো।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
এটা কিসের লিংক? এখানে কেন দেয়া হয়েছে। কারণ জানতে পারি?