বিবর্তনবাদের উপর যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমালোচনামূলক লেখা লিখতে যেয়ে ছদ্ম-নিকধারী কিছু ব্লগার থেকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে বেশ কয়েকবার একটি "উপদেশবাণী" শুনতে হয়েছে, যেন এ বিষয়ে আমার কোন ধারণাই নাই! আমার লেখাতে যেহেতু বিভিন্নভাবে যুক্তি দিয়ে বিবর্তন তত্ত্বকে ভুল, অবৈজ্ঞানিক, কল্পকাহিনী বলে দাবি করা হয়েছে সেহেতু মূল লেখাকে এড়িয়ে যেয়ে কিছুটা ব্যঙ্গ করে আমার লেখাকে বৈজ্ঞানিক জার্নালে পাঠানোর জন্য উপদেশ দেয়া হয়েছে। এমনকি ব্যঙ্গ করে আমার নো-বেইল পুরষ্কার বিজয়ের কথাও বলা হয়েছে! যারা এই ধরণের অযাচিত উপদেশ দেয় তারা আসলে অজ্ঞ নাকি অতি চালাক তা জানা নেই। অজ্ঞ হলে হয়ত মেনে নেয়া যায় তবে অতি চালাক হলে কিন্তু গলায় দড়ি পড়বে! এ বিষয়ে আমার সংক্ষিপ্ত জবাব:
১. বাংলা ব্লগে যারা দীর্ঘদিন ধরে বিবর্তনবাদের পক্ষে লিখছেন তাদের কারো লেখা বৈজ্ঞানিক জার্নালে পাঠানোর কিংবা প্রকাশ হওয়ার কথা কখনোই শোনা যায়নি। তাদের লেখা-ই যদি বৈজ্ঞানিক জার্নালে পাঠানো না হয়ে থাকে তাহলে যারা বিবর্তনবাদের বিপক্ষে লিখছেন তাদের লেখা বৈজ্ঞানিক জার্নালে পাঠানোর জন্য উপদেশ দেয়াটা নিঃসন্দেহে হাস্যকর শুনায়। এজন্য তাদের লজ্জিত হওয়া উচিত।
২. বৈজ্ঞানিক জার্নালে আমার লেখা পাঠানোর প্রশ্ন তখনই আসবে যখন আমি বিবর্তন তত্ত্বের বিপক্ষে যে মৌলিক বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছি সেগুলোর পক্ষে বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রমাণস্বরূপ পেপার থাকবে। আমার উপস্থাপিত মৌলিক বিষয়গুলোর পক্ষে যদি বৈজ্ঞানিক জার্নালে কোন পেপারই না থাকে তাহলে তার বিপক্ষে বৈজ্ঞানিক জার্নালে পেপার পাঠানোর জন্য উপদেশ দেয়াটা কেমন শুনায়? যেমন আমার লেখাতে প্রকৃতি থেকে ডজনেরও বেশী মৌলিক উদাহরণ উপস্থাপন করে যুক্তি দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে যে এই ধরণের বিবর্তন বাস্তবে সম্ভব নয়। এ পর্যন্ত একজনও আমার যুক্তির বিপক্ষে বৈজ্ঞানিক জার্নাল থেকে কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি। প্রমাণ থাকলে নিশ্চয় হাজির করা হতো।
৩. আমাকে উল্টোটা প্রমাণ করে বৈজ্ঞানিক জার্নালে পাঠানোর জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে যা একেবারেই হাস্যকর। অথচ কোন পজিটিভ দাবির পক্ষে দাবিদারকেই প্রমাণ উপস্থাপন করা উচিত, অবিশ্বাসী বা সংশয়বাদীকে নয়, যদি বিষয়টিকে বৈজ্ঞানিক বলে দাবি করা হয়।
৪. ডারউইনবাদীদের এত বড় বড় [অস্বাভাবিক] দাবির পক্ষে যেখানে এ পর্যন্ত একজন ডারউইনবাদীও বিবর্তন তত্ত্বের উপর নোবেল পুরষ্কার পায়নি, অথচ অনেক পাওয়ার কথা ছিল, সেখানে বিবর্তন তত্ত্বের সমালোচকদেরকে ব্যঙ্গ করে নো-বেইল পুরষ্কার পাওয়ার কথা বলা মানে কি এই নয় যে ডারউইনবাদীদের অবস্থা একেবারেই নাজুক!?! বিবর্তন তত্ত্ব বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সত্য হলে এ পর্যন্ত একজনও নোবেল পুরষ্কার পেল না কেন? মুসলিমদের ষঁড়যঁন্ত্র না তো!
যাহোক, বিবর্তন তত্ত্বকে যেহেতু বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব বলে দাবি করা হচ্ছে সেহেতু ডারউইনবাদীদেরকেই প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। এই তত্ত্ব বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে বিবর্তনের মৌলিক বিষয়গুলোর পক্ষে অবশ্যই প্রমাণ থাকতে হবে, আর মৌলিক বিষয়গুলোর পক্ষে প্রমাণ থাকা মানে সেগুলো অবশ্যই বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশ করা হবে। বৈজ্ঞানিক জার্নালে যদি কিছু না থাকে তাহলে অবশ্যই ধরে নিতে হবে যে বিবর্তনের মৌলিক বিষয়গুলোর পক্ষে কোন প্রমাণ নাই। যেমন:
-আমার লেখাতে দাবি করা হয়েছে এককোষী একটি জীব থেকে এলোমেলো পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে পুরো উদ্ভিদজগত ও প্রাণীজগত বিবর্তিত হওয়ার পক্ষে যেমন কোন প্রমাণ নাই তেমনি আবার সেটা কারো পক্ষেই প্রমাণ করা সম্ভব নয়। অথচ এটি বিবর্তন তত্ত্বের মূল মন্ত্র। ফলে বিবর্তন তত্ত্বকে কোন ভাবেই বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বলা যেতে পারে না।
-“প্রকৃতির বৈচিত্র্য: ডারউইনবাদীদের নাইটমেয়ার” শিরোনামে দশ পর্বের সিরিজের ১ম পর্বে দাবি করা হয়েছে শিং-বিহীন প্রাণী থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শিং-ওয়ালা প্রাণী বিবর্তিত হওয়ার পক্ষে কোন প্রমাণ নাই এবং বাস্তবেও এমন বিবর্তন সম্ভব নয়। অনুরূপভাবে, লেজ-বিহীন প্রাণী থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে লেজ-ওয়ালা প্রাণী কিংবা লেজ-ওয়ালা প্রাণী থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে লেজ-বিহীন প্রাণী বিবর্তিত হওয়ার পক্ষে কোন প্রমাণ নাই এবং বাস্তবেও এমন বিবর্তন সম্ভব নয়। [বিস্তারিত দেখুন]
-২য় পর্বে দাবি করা হয়েছে অস্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ধাপে ধাপে স্তন্যপায়ী প্রাণী বিবর্তিত হওয়ার পক্ষে কোন প্রমাণ নাই এবং বাস্তবেও এই ধরণের বিবর্তন সম্ভব নয়। [বিস্তারিত দেখুন]
-৩য় পর্বে দাবি করা হয়েছে সাপের দেহে বিষ, আত্মরক্ষার জন্য স্প্রে করার পদ্ধতি, এবং দর্শনীয় ফণা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে বিবর্তিত হতে পারে না এবং তার পক্ষে কোন প্রমাণও নাই। [বিস্তারিত দেখুন]
-৪র্থ পর্বে দাবি করা হয়েছে জলজ প্রাণী থেকে ধাপে ধাপে উভচর প্রাণী, উভচর প্রাণী থেকে ধাপে ধাপে সরীসৃপ, এবং সরীসৃপ থেকে ধাপে ধাপে পাখি হয়ে আকাশে উড়তে শিখা সম্ভব নয়, বাস্তবে এমন কিছু ঘটতে দেখা যায় না, এবং এই ধরণের বিবর্তনের পক্ষে কোন প্রমাণও নাই। [বিস্তারিত দেখুন]
-৫ম পর্বে দাবি করা হয়েছে সরীসৃপ প্রজাতির লম্বা জিহ্বা আর শিকার ধরার পদ্ধতি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে অন্য কোন প্রাণী থেকে বিবর্তিত হতে পারে না এবং এই ধরণের বিবর্তনের পক্ষে কোন প্রমাণও নাই। [বিস্তারিত দেখুন]
-৬ষ্ঠ পর্বে দাবি করা হয়েছে হামিং বার্ড ও মৌমাছির পাখা, পাখার দ্রুত গতি, এবং দৈহিক অবস্থা যদি যুগপৎভাবে বিবেচনা করা হয় তাহলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে অন্য কোন প্রাণী থেকে বিবর্তিত হওয়া সম্ভব নয় এবং এই ধরণের বিবর্তনের পক্ষে কোন প্রমাণও নাই। আরো দাবি করা হয়েছে যে চিতাবাঘ ও হরিণের মধ্যে যে দৌড়ের প্রতিযোগীতা দেখা যায় সেটি একটি পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি, যেখানে ক্ষীপ্র গতির ব্যাপারও জড়িত। এরকম একটি পদ্ধতি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে অন্য কোন প্রাণী থেকে বিবর্তিত হতে পারে না এবং এই ধরণের বিবর্তনের পক্ষে কোন প্রমাণও নাই। অনুরূপভাবে, মাছরাঙা যে পদ্ধতিতে মাছ শিকার করে সেই পদ্ধতি সহ মাছরাঙার মতো কোন প্রজাতি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে অন্য কোন প্রাণী থেকে বিবর্তিত হতে পারে না। [বিস্তারিত দেখুন]
-৭ম পর্বে দাবি করা হয়েছে হৃৎপিন্ডের মতো একটি মেশিন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে বিবর্তিত হতে পারে না এবং এই ধরণের বিবর্তনের পক্ষে কোন প্রমাণও নাই। [বিস্তারিত দেখুন]
-৯ম পর্বে দাবি করা হয়েছে পা-বিহীন প্রাণী থেকে পা-বিশিষ্ট প্রাণী, দ্বিপদী প্রাণী থেকে চতুষ্পদী প্রাণী, চতুষ্পদী প্রাণী থেকে ষষ্ঠপদী প্রাণী, অথবা এগুলোর বিপরীত, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ধাপে ধাপে বিবর্তিত হওয়া যেমন সম্ভব নয় তেমনি আবার এই ধরণের বিবর্তনের পক্ষে কোন প্রমাণও নাই। [বিস্তারিত দেখুন]
-১০ম পর্বে দাবি করা হয়েছে ফল/ফুল বিহীন কোন গাছে এমনি এমনি একদিন ফল/ফুল ধরা শুরু করতে পারে না। অনুরূপভাবে, একটি ফল/ফুলের গাছ থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে ভিন্ন একটি ফল/ফুলের গাছ বিবর্তিত হতে পারে না। [বিস্তারিত দেখুন]
উপরে যা উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো বিবর্তনের একেবারে মৌলিক বিষয়। প্রকৃতি থেকে এরকম আরো অসংখ্য উদাহরণ দেয়া সম্ভব। এগুলোর কোন একটি সত্য হওয়া মানে বিবর্তন তত্ত্বই ভুল প্রমাণ হওয়া। ফলে এই ধরণের মৌলিক বিষয়ের পক্ষে প্রমাণ থাকা অতি আবশ্যক। আর প্রমাণ থাকা মানে এতদিনে অবশ্যই বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশ হতে হবে। মানুষ সহ পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গের বিবর্তন তো রয়েই গেল!
বিশেষ দু-একটি বাংলা ব্লগে দীর্ঘদিন ধরে বিবর্তন তত্ত্বকে বিজ্ঞানের নামে প্রতিষ্ঠিত সত্য হিসেবে চালিয়ে দিয়ে ধর্মের মতো করে প্রচার করা হচ্ছে, এমনকি বিবর্তন দিয়ে আব্রাহামিক ধর্ম ও স্রষ্টাকে পর্যন্ত নাকচ করে দেয়া হয়েছে। উপরের এক বা একাধিক মৌলিক বিষয়গুলোর পক্ষে বৈজ্ঞানিক জার্নালে পেপার প্রকাশ হয়ে থাকলে তাদের অবশ্যই জানার কথা। কেননা এই বিষয়গুলো এতটাই মৌলিক যে, এগুলোর কোন একটির পক্ষে প্রমাণ পাওয়া মানে সারা দুনিয়া জেনে যাওয়া! অতএব, এই ব্লগের পাঠকদেরকে সাক্ষী রেখে উপরোল্লেখিত মৌলিক বিষয়গুলোর পক্ষে পীয়ার-রিভিউড বৈজ্ঞানিক জার্নাল থেকে বাংলা ডারউইনবাদীদেরকে প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। তারা কোন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন কিনা দেখুন। প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারলে এতদিন ধরে বিবর্তন তত্ত্বকে বিজ্ঞানের নামে প্রতিষ্ঠিত সত্য হিসেবে চালিয়ে দিয়ে অনেককেই যে বোকা বানানো হলো তার কী হবে? বিচারের ভার সচেতন পাঠকদের উপর ছেড়ে দেয়া হলো।
পড়ুন: বিবর্তন তত্ত্বের পক্ষে প্রতারণাপূর্ণ প্রমাণ উপস্থাপন
আমি এস. এম. রায়হান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 27 টি টিউন ও 123 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ভাই আমার ব্লগটা একবার দেখুন তো, ৪ মাস গবেষণা করে লেখা-(বিবর্তনের বিপক্ষে)
http://evolve-theory.blogspot.com/