Motorola Razr – ফোল্ডেবল ফোনের দুনিয়ার নতুন দিগন্ত!

টিউন বিভাগ রিভিউ
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 34
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। তো আজকে আপনাদের জন্য একটি ফোনের রিভিউ নিয়ে আসলাম, আশা করছি আগামি দিন গুলোতেও এই ধরনের রিভিউ নিয়ে আসব ইনশাল্লাহ।

সবার কি সেই Motorola ফ্লিপ ফোনটির কথা মনে আছে? এক সময় তা ছিল জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এই ফোনটির আলোকে এই স্মার্ট যুগের সাথে তাল মেলানোর জন্য মটোরোলা নিয়ে এসেছে তাদের নতুন এক Android ফোন। মজার ব্যাপার হচ্ছে নতুন ফোনটিও হবে ফ্লিপ ফোন! কি অবাক হলেন? এই যুগে ফ্লিপ ফোন? অবাক হবার কিছু নেই তারা তা করে দেখিয়েছে। বিস্তারিত জানতে চলুন মূল টিউনে চলে যাওয়া যাক।

আগের Motorola Razr v3

বর্তমানের Motorola Razr

আজকে এই টিউনের মাধ্যমে আপনাকে ফোনটি সম্পর্কে পুরোপুরি একটি ধারনা দেয়ার চেষ্টা করব। চলুন শুরুতে আমরা একটি ভিডিও দেখে নিই যাতে করে আপনার ফোনটি সম্পর্কে একটি ধারনা হবে।

 

আয়তক্ষেত্র কাচের ফোন গুলো থেকে বিশ্ব কে মুক্তি দিতে The Motorola Razr ফোনটি একটি অনুপ্রেরণা মূলক প্রচেষ্টা। ফোনটি ফোল্ডেবল হওয়াতে, এটাকে সহজে পকেটে রাখতে, অসাধারণ সেলফি তুলতে পারবেন। ফোনটিকে ছোট রাখতে তারা ফোন থেকে হ্যাডফোন পোর্ট, মেমরি স্লট বাদ দিয়েছে। সাথে ফোনটিকে তৈরি করা হয়েছে কম ব্যাটারি ক্যাপাসিটি ও ফিক্সড অনবোর্ড স্টোরেজ দিয়ে। ফোনটির দাম অন্যান্য ফ্লাগশিপ ডিভাইস থেকে ৫০% বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেটের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে বলতে হবে এর বাজার দখল করা মোটামুটি কঠিন।

সুবিধা:

  1. চোখ ধাঁধানো ফোল্ডেবল ডিজাইন।
  2. সামনের মিনি স্ক্রিন।
  3. এক পকেটে সহজেই রাখা যাবে।

অসুবিধা:

  1. বেশি ব্যয় বহুল।
  2. দুর্বল স্টোরেজ ও ব্যাটারি।
  3. মাঝামাঝি ক্যামেরা সেটআপ।

২ মিনিট রিভিউ:

The Motorola Razr এর ডিজাইন এর ধারনাটি চমৎকার, কিন্তু ফোনটি দেখার পর ইউজারের বেশ কয়েকটি চাহিদার উদ্ভব হয়। এর আগের ভিভাইস গুলো সম্ভাবনাময় হলেও বর্তামানে মাত্রাতিরিক্ত দামের জন্য Razr উপযুক্ত না বলে আমার মনে হয়।

সহজ কথায় বলতে গেলে এর সুবিধা অসুবিধা গুলো দামের কাছে কিছুটা ম্লান হয়ে যায়। এবার যদি অসুবিধার কথা বলি তাহলে বলতে হবে, ফোনটির ক্যামেরা সেটআপ বাজে কারণ ক্যামেরাটি ফোনের মাঝখানে দেয়া, এতে পুরাতন অপারেটিং সিস্টেম  (Android 9) ব্যবহার করা হয়েছে, এবং এমন ভাবে ডিজাইন  করা হয়েছে যা ব্যবহারে অনেকের অসুবিধা হতে পারে।

তবুও বলা যায় Razr এর ডিজাইন অন্যান্য ফোন থেকে এগিয়ে। কিন্তু ফোনটির দাম পরে নির্ধারণ করলে ভাল ছিল যদি Samsung Galaxy Z Flip দাম কমায় তাহলে তাদের একাধিপত্য হারাবে।

আমি আশা করছি Razr 2 তারা ইন্টারফেস, ডিসপ্লে, স্টোরেজ তাদের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক আরও আধুনিক করবে। ফ্লিপ ফোন কিনে ধরা খায় নি এমন কাউকে আসলে এই ফোন কিনের সুপারিশ করা কঠিন।

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে ফোনটিতে আপনার পুরনো নেনো সিম ব্যবহার করতে পারবেন না কারণ এতে কোন সিম-কার্ডের স্লট নেই, ই-সিম ব্যবহার করতে হবে। তাই আমি সিম কার্ডের পারফর্মেন্স পরীক্ষামূলক ভাবে যাচাই করতে পারি নি।

দাম বিশ্লেষণ:

The Motorola Razr এর দাম পারবে  1, 499 ডলার (প্রায় ১, ২৭, ১৯৩ টাকা)। US থেকে নিলে আপনি ২৪ মাসের জন্য প্রতিমাসের $62.49(৫, ৩০২.৪১ টাকা প্রায়)  ইন্সটলমেন্ট এ নিতে পারবেন। তবে UK থেকে নিলে দাম বেশি পরে যাবে ২৪ মাসে প্রায় £2, 356(২, ৫২, ০৬৮ টাকা প্রায়) লেগে যাবে।

অস্ট্রেলিয়ার সংবাদ মাধ্যমের মতে the Razr ফোনটি ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬৯৯ ডলারে(২, ২৯, ০১৫ টাকা প্রায়) Telstra সহ JB hiFi থেকে বিক্রি হচ্ছে। এবং UAE তে এটির ধরা হয়েছে AED ৫৯৯৯(১, ৩৮, ৫৮৬ টাকা প্রায়) হিসাবে।

অঘোষিত শিপিং লেটারে The Razr বর্তমানে Us থেকে ক্রয় করা যাচ্ছে এবং UK থেকে অগ্রিম অর্ডার দেয়া যাচ্ছে। এটি শুরুর দিকে "Noir Black " এবং খুব শীগ্রই 'Blush Gold" রং এ পাওয়া যাবে।

ফোনটিতে দামি ডিসপ্লে দেয়ার পরেও Samsung Galaxy Fold (১, ৬৮, ০০৭ টাকা প্রায়) থেকে সাশ্রয়ী হলেও এর দাম অন্যান্য ফ্ল্যাগ-শিপ থেকে কম নয়। Samsung Galaxy z flip ফোনটি এই এই দামে অর্থপ্রকাশ করছে, এবং তাদের এই প্যাকেজ টি Razr এর সকল ক্যাটাগরির থেকে দাম বেশি।

Samsung Galaxy folds এর ডিসপ্লে সমস্যার প্রেক্ষিতে মটোরোলা তাদের ডিসপ্লের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসের সাথে পরিষ্কার তথ্য দিয়েছে। তারপরেও মটোরোলার ব্যবহারকারীরা কি আসলেই "ওয়ার্ল্ড ক্লাস সার্ভিস প্যাকেজ" পাবে? এটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

বর্তামানে কোম্পানিটি US এ তে ২৪/৭ চ্যাট সাপোর্ট এবং ১৪ ঘণ্টা কাস্টমার সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে এবং ফোনের সমস্যা বা ডিসপ্লে সমস্যা হলে ২৪ ঘণ্টার ভেতর ফোন চেঞ্জ করে দেয়ার গ্যারান্টি দিচ্ছে।

স্বাভাবিক ব্যবহারে ফোনের সমস্যা দেখা দিলে মটোরোলা তা ফ্রিতে ঠিক করে অথবা রিপ্লেস করে দিবে আর যদি ওয়ারেন্টটির (যা ১ বছরের জন্য দেয়া হয়) পরে ডিসপ্লে সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে তারা  তে ২৯৯ ডলার(২৫, ৩৭০ টাকা প্রায়) চার্জ করবে।

US ছাড়া অন্য দেশের কাস্টমার সার্ভিস সম্পর্কে এখনো না জানালেও খুব তাড়াতাড়ি তারা জানিয়ে দেবে।

ডিজাইন:

মটোরোলার Razr এর এই ডিজাইনটি একটি দুর্দান্ত ডিজাইন, যা হাস্যকর অথবা ক্রিয়েটিভ দুইটিই হতে পারে। এই স্মার্ট ফোনের যুগে ফ্লিপ ফোন নিয়ে আসা এটা আসলেই বেশ মজার। অবশ্য এই ডিজাইনের মাধ্যমে এক সময় বাজার কাঁপানো Motorla Razr v3 কে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে স্বীকৃত ডিজাইনের ফোনগুলোর মধ্যে একটি।

ফোনটিকে এমন ভাবে ফোল্ডেবল ডিজাইন দেয়া হয়েছে যা আগের জনপ্রিয় ফোনগুলোর সাদৃশ্য ধারণ করে। ফ্লিপটি খুলা হলে তা একটি বড় ডিসপ্লে দেয় যা মোটামুটি অন্যান্য Flagship ফোনগুলোর মতই। ফ্লিপটি বন্ধ করলে এটি তার সাইজের অর্ধেক হয়ে যায়।

ডিজাইন অনুযায়ী এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সফল। এছাড়া তাদের বর্তমান বাজার দখলটি বেশ ভালো। কারণ অন্যান্য ফোল্ডেবল ফোন  থেকে মার্কেটে তারা এগিয়ে। যেমন Samsung ফোল্ডবল ফোন গুলোতে ডিসপ্লে সমস্যা এবং তাদের স্থায়িত্ব নিয়ে এখনো ক্রেতারা চিন্তিত হওয়াতে মটোরোলা এখানে সুবিধা পাচ্ছে।

২০১৯ সালে আমরা প্রথম যখন Razr দেখেছিলাম তখন ফোনটি আনফোল্ড করা হলে Hinge (ঢাকনা) টির উপরে একটা গ্যাপ থাকতো যদিও সামনের ডিসপ্লেকে সমান এবং স্ক্রিনটিকে ভেতরের দিকে ঢুকিয়ে দেয়ার জন্য সেটি দারকার ছিল। এখন চিন্তার বিষয় হচ্ছে এর ভেতরে ধূলাবালি গেলে গিয়ার গুলো ঠিক মত কাজ করবে কিনা। এই বিষয়টি যদিও আমি আমার রিভিউ এর সময় খেয়াল করতে পারি নি তবে পরবর্তীতে এ বিষয়ে আপডেট দেয়া হবে ইনশাল্লাহ।

এখানে সবচেয়ে উদ্বেগ এর বিষয়টি হচ্ছে এই ডিসপ্লে নিয়ে, এক সপ্তাহের মধ্যেই আমি যখন ফোনটি ফোল্ড বা আনফোল্ড করি সেখানে এক ধরনের সাউন্ডের সৃষ্টি হয়। এখন পর্যন্ত সেখানে কোন ভাজের দাগ না হলেও শব্দটা আমার কাছে বিরক্তিকর ছিল।

আরেকটি বিরক্তিকর বিষয় হচ্ছে ফোনটি বন্ধ থেকে খুলতে ফ্লিপ করা, এটা করা কিছুটা কঠিন। ফোনের প্রস্ত-ভাগ Hinge এর সাথে এমন ভাবে লেগে থাকে যে তা একহাতে খুলা প্রায় কঠিন হয়ে যায়। এই সমস্যাটি ফ্লিপ ফোনের এমন একটি সমস্যা যা অন্য সুবিধা গুলো বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর প্রান্ত গুলো এতটা সংকীর্ণ যা খোলার জন্য উভয় পাশ থেকে একটি আঙ্গুল দিয়ে উপর দিকে ধাক্কা দিতে হবে সেটাও কিছুটা বিরক্তিকর।

তারপরও, ফোনের Edge ভালভাবে ফিট করার জন্য এর ভলিউম এবং পাওয়ার বোতাম নিচের দিকে দেয়া হয়েছে। যা ফোন খোলা বা বন্ধ উভয় অবস্থায় চাপা এবং আলাদা করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। মিডিয়া কন্ট্রোল বা সেলফি তুলার জন্য যেহেতু বোতাম গুলা ব্যবহৃত হয় সেহেতু এটাও বিরক্তিকর বিষয়।

পুরাতন Razr v3 ফোনের আলোকে তৈরি নতুন এই ফোনটি আসলেই প্রশংসার দাবি রাখে, এবং এ ফোনটিও তার উপরের অংশ খুব ভাল ভাবে নিচের অংশের সাথে মিশে যায় কিন্তু ডিজাইনে একটু জটিলতা আছে। আপনি ফোনের নিচের চিবুকের সাথে একটি USB-C পোর্ট পাবেন যার মাধ্যমে আপনি চার্জ দেয়া অথবা ডাটা আদান-প্রদান করতে পারবেন এবং এটি একটি স্পিকারের সাথে যুক্ত। এবং মটোরোলা জানায় তারা এই চিবুককে অডিও স্পিকার হিসাবে খুব ভালভাবে ব্যবহার করেছে।

ফোনটির চিন বা চিবুকের কিছু অসুবিধা আছে যেমন, চিবুকটি ফোনের ডিসপ্লে থেকে কিছুটা উপরে হওয়াতে ন্যাভিগেশন বারে টাচ করতে কিছুটা অসুবিধা হয় আবার ফিঙ্গার প্রিন্ট সেন্সর এমন ভাবে দেয়া হয়েছে এতে আঙ্গুল গুলো খাড়া ভাবে স্কেন করা যায় না।

দুঃখের বিষয় হচ্ছে ফোনের এই সমস্ত টাইট ডিজাইনের জন্য ফোন থেকে 3.5mm হেড-ফোন এবং মেমরি কার্ড স্লট বাদ দিতে হয়েছে। আপনি ফোনটিতে শুধু মাত্র eSIM এবং ১২৮ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ পাবেন।

এর ডিজাইনের কথা বলতে গেলে শেষ দিকে বলা যায় যে আমি ধরনা করছি ফোল্ড করার পর ছোট সাইজ ক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করবে। কারণ এটি ফোল্ড করা হলে খুব সহজেই চাবি, ওয়ালেট, এয়ারপড কেসের সাথে এক পকেটে রাখা যায়। iFixit এর একটি রিভিউয়ে দেখেছিলাম ফোনটি কিছু কিছু পকেটের তুলনায় খুবই চিকন এবং যা বহন করা বর্তমান অন্যান্য স্মার্ট ফোনের থেকে যথেষ্ট আরামদায়ক।

ডিসপ্লে:

মটোরোলার P-OLED ডিসপ্লে নিয়ে আরেকটি জটিল সমস্যা আছে সেটা হচ্ছে ফোল্ডিং ডিজাইনের জন্য মটোরোলাকে এর কিছু ফিচারের সাথে আপোষ করতে হয়েছে।

Razr কিছু ডিজাইনের জন্য ধন্যবাদ পেতেই পারে যেমন ফোনটির আনফোল্ড করা হলে এর মাঝখানে কোন ভাজ পড়ে না এবং স্ক্রিন খুব সুন্দর ভাবে Hinge এর গ্যাপের সাথে মিশে যায়। আমার কাছে যদিও ফোনটি বেশিদিন ছিল না তবুও বলতে পারি ফোনটি দীর্ঘ ব্যবহারেও স্ক্রিনে কোন ভাঁজ পরবে না।

এখানে একটা বিষয় আমাদের ভাবিয়ে তুলে সেটা হচ্ছে যখন ফোনটি ফোল্ড বা আনফোল্ড করা হয় সেখানে একটা সাউন্ড হয় যা খুবই বিরক্তিকর এবং মনে হয় হয়তো এটা কোন সমস্যা। যদিও এটা কোন সমস্যা না তবুও চিন্তার বিষয় হচ্ছে অন্য কোন ফোনে এই ধরনের কোন সাউন্ড হয় না।

Galaxy Fold এর মত এই ফোনও যেহেতু প্লাস্টিক দিয়ে বানানো তাই এটা যথেষ্ট চিকন। ফোনটি আনফোল্ড করা হলেও এর স্ক্রিন পুরোপুরি সমতল হয় না। আপনি স্ক্রিনে হাত বুলালে এর Hinge অনুভব করতে পারবেন।

আপনি স্বাভাবিক ভাবে স্ক্রিন জুড়ে আঙুল দিয়ে স্ক্রল করতে চাইবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত নিচের হাফে স্ক্রল বা টাইপ করতে পারছেন। যেহেতু ফোনের ডিসপ্লে পুরোপুরি সমতল নয়-খুবই সুতরাং এটা খুব দুঃখজনক। আমরা বলতে পারি এটা দাম সংক্রান্ত অভিযোগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত।

এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে আপনি ২৫% ছাড়ে Samsung Galaxy এর মত ফোন কিনে ফেলতে পারবেন। যদিও দুটি ফোন দুই উদ্দেশ্যে বানানো হয়েছে তারপরেও আমরা যদি Razr এর কথা বলি তাহলে বলতে হবে সেখানে আপনি দুইটি স্ক্রিন পাচ্ছেন। একটি হচ্ছে আনফোল্ড স্ক্রিন আরেকটি ফোল্ড অবস্থায় সামনের মিনি স্ক্রিন।

Razr এর ২.৭' OLED মিনি স্ক্রিন অন্য ফোনের ৪.৬' থেকে বেশি সুবিধা জনক। টাইম বা বেসিক নোটিফিকেশন চেক করার জন্য এটা যথেষ্ট ভাল একটা সুবিধা।

এবার আমরা যদি আসল ডিসপ্লেতে আসি তাহলে বলব, এটা HD+ (2142x 876) রেজুলেশন এর একটি ডিসপ্লে যা পরিষ্কার ভিডিও এবং ভিজ্যুয়ালাইজেশনের এই প্রাইস রেঞ্জের জন্য যথেষ্ট ভাল।

আমরা যখন মটোরোলা Razr কে একই সাথে Google pixel এবং iphone 11 pro Max এর সাথে তুলনা করেছিলাম তখন ভিডিও টেস্টের ক্ষেতে একই Hue Palettes পেয়েছিলাম, কিন্তু 'boosted' মুড থেকে 'natural' কালার মুডে নিতে একটু সমস্যা হয়েছিল। ইউটিউবে ভিডিও চালালে এর সংকীর্ণ প্রস্থের জন্য ভিডিও 720p রেজুলেশন এ প্লে হয়। এবং অন্যান্য ফ্ল্যাগ-শিপের থেকে Razr এ ভিডিও কিছুটা অস্পষ্ট ছিল।

এই অস্পষ্টতা গেম খেলার ক্ষেত্রে খুব একটা দৃশ্যমান হয় না। যেমন call of Duty: Mobile এর গ্রাফিক্স মটোরোলা Razr এবং iPhone 11 Pro Max এর ক্ষেত্রে একই ছিল। তবে কিছু রাউন্ড খেলার পর লক্ষ্য করবেন উপরের অর্ধেকটা স্ক্রিন সমান হলেও নিচের স্ক্রিন কিছুটা উপরে উঠে আসে। এবং স্ক্রিনে টাচ করলে মনে হবে গেম কন্ট্রোলারে ক্লিক করছেন। এর মধ্যমে আসলে কোয়ালিটির প্রশ্ন আসে না কারণ এটা হয় ফোনটিকে ল্যান্ডস্কেপ মুডে নিয়ে খেললে হয়।

ফোনটির ক্যামেরা ডিজাইন নিয়ে যদি বলি তাহলে বলতে হবে ক্যামেরা সেটআপ ভাল তবে তা ব্যতিক্রম কিছু নয়।

১৬ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাটি মাঝখানে এবং মিনি স্ক্রিনের নিচে বসানো হয়েছে। তার মানে আপনি চাইলে ফোনটি ফোল্ড অবস্থায় সেলফি ক্যামেরা এবং এবং আনফোল্ড অবস্থায় রের ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার কর‍তে পারবেন। ক্যামেরায় একটি ভাল Gesture ব্যবহার করা হয়েছে যার মাধ্যমে মিনি স্ক্রিনে নির্দিষ্ট Gesture এর মাধ্যমে ছবি গুলো দেখা যাবে। এটি এখন পর্যন্ত এর সেরা একটি ফিচার।

যেখানে সাটার বাটনে ক্লিক করলেই ছবি তুলতে পারতেন সেখানে আপনাকে ভলিউম বাটনে অথবা স্ক্রিনে ক্লিক করতে হবে যা একটু অদ্ভুত। এখানে একটা মজার বিষয় হচ্ছে আমরা যখন ছবি তুলি তখন খেয়াল করি বেশির ভাগ ছবি আমরা Portrait ভাবে তুলেছি। কেন? কারণ হচ্ছে ফোনটির নিচের দিকে একটু বেশি ভারী যেখানে আমরা ধরেছিলাম তাই Landscape এ ছবি তুলে কিছুটা কষ্টসাধ্য ছিল।

দিনের আলোর ছবি তুলার ক্ষেত্রে রের ক্যামেরা ভাল ছিল। মটোরোলা Razr সকল ধরনের ছবি তুলার ক্ষেত্রে একক ল্যান্স ব্যবহার করে। তাদের ক্যামেরার মেগা পিক্সেল Z4 থেকে কম হলেও সেন্সর যথেষ্ট বড় ছিল তাই ছবি গুলোতে ভাল Vibrant এবং contrast আসে।

নাইট মোড ছাড়া ছবি

নাইট মোড দিয়ে তুলা ছবি

দিনের আলোর ছবি গুলার প্রাণবন্তটতার জন্য Razr এর সাথে অন্য ফ্যাগশিপ ফোন গুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। রাতের ছবি গুলো কিছুটা খারাপ আসলেও নাইট ভিশন মূড এতে সাহায্য করে, বিশেষ করে টেবিলের খাবার গুলো দিকে দেখলে বুঝবেন। রাতের বাইরে আলোতে ছবি টি দেখলে বুঝবেন এখানে নাইট মূড ব্যবহার করা হয়েছে। মূডটি আসলে ছবিকে আরও বাস্তবিক করার জন্য আলোর প্রসারণ করে থাকে।

মাঝখানের ক্যামেরা আসলে অবাক করার মত কিছু না, আমরা জানি মটোরোলা কখনো তাদের তাদের ফোনে ফটোগ্রাফিকে গুরুত্ব দেয় নি। ক্যামেরাটি ৫ মেগাপিক্সেল এটা সাধারণত ছবি তুলার জন্য অথবা ভিডিও চ্যাট করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটা মোটামুটি ভাল হলেও মেইন ক্যামেরার তুলনায় এতটা চিত্তাকর্ষক না। তারা যেহেতু অনেক বেশি ফোকাস কন্ট্রোল ক্যামেরা দিবে বলে দাবি করেছিল সেহেতু এতে তারা একটু বেশি গুরুত্ব দিতে পারতো।

Razr এর ক্যামেরার ভেতরের ফিচার গুলো মটোরোলা অন্য ফোন গুলোর মত একই। যেমন software-assisted portrait, spot color, and the brand-labeled Cinema-graph mode

কর্মক্ষমতা:

Razr ফোনটি অন্যান্য ফ্ল্যাগ-শিপ ফোন থেকে বেশি দামী হলেও কম শক্তিশালী। যদিও বেসিক ন্যাভিগেশন বা মিডিয়া ব্যবহারে ফোনটি হ্যাং করে না তারপরেও এর Snapdragon 710 processor এবং 6GB RAM মিড-রেঞ্জের ফোনের জন্য বেশি উপযোগী।

ফোনটি বেসিক কাজ করার জন্য ভাল এমনকি Call of Duty: Mobile এবং PUBG খেললেও কোন রকমের সমস্যা হয় না স্মুথ ভাবেই খেলা যায়। কিন্তু কিছুটা Intesive টাস্কের ক্ষেত্রে এর চিপ-সেট কিছুটা চাপে পড়ে যায়। যেমন Greekbench 5 এর Multi-core টেস্টে এটি ১৫২২ স্কোর করে যেখানে Samsung Galaxy S10, ২০৫৬ এবং OnePlus 7 Pro, ২৬৬৬ স্কোর করে।

Razr এর একটি সীমাবদ্ধতা আছে এর স্টোরেজ নিয়ে কারণ এটি ১২৮ জিবি ইন্টারনাল দিয়ে তৈরি। কেউ এটিকে বাড়াতে পারবে না কারণ এখানে কোন মেমোরি স্লটের ব্যবস্থা নাই। স্টোরেজ ফুল হয়ে গেলে একটা ব্যবস্থা আছে সেটা হচ্ছে ক্লাউড স্টোরেজ।

আরেকটি অসুবিধা হচ্ছে এর অপারেটিং সিস্টেম নির্বাচন। ফোনটি Android 9 Pie দিয়ে তৈরি। আমি মনে করি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ফোনটি রিলিজ হবার পরেও এন্ড্রয়েডের ল্যাটেস্ট ভার্সন Android 10 না দেয়া ওদের একটা অদ্ভুত পছন্দ।

আপনি স্বাভাবিক ভাবেই কিছু কিছু নতুন অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন না। যেমন Android 10 এর Gesture Navigation এবং Dark mode ব্যবহার করতে পারবেন না যদিও তাদের নিজস্ব এই ফিচার আছে।

যেমনটি প্রত্যাশা করা হয়েছিল, মটোরোলা অতিরিক্ত কিছু Gesture যোগ করেছে যা তাদের সমজাতীয় ফোনগুলা থেকে বেশি আবেদন তৈরি করে। তাদের দুইটি ফিচার হচ্ছে যেমন ফোল্ড বন্ধ করলে Double-chop Flashlight এবং twist gesture যা সহজেই সেল্ফি তুলার কাছে ব্যবহৃত হয়।

ব্যাটারি:

Motorola Razr 2510 mAH ব্যাটারি দিয়ে মার্কেটে আসে। এই যুগে যেখানে মিড-রেঞ্জের ফোন গুলো 3000 mAH, অন্যান্য ফ্যাগশিপ গুলো 4000 mAH ব্যাটারি ব্যবহার করছে, এটা অবাক করার মত বিষয় যে এখানে Razr কত দিন ঠিকতে পারবে।

আমাদের ব্যাটারি টেস্টিং হিসাবে, ৯০ মিনিটের একটি ভিডিও ফুল ব্রাইটনেস দিয়ে দেখার পরে চার্জ ৮৪% এ নেমে আসে, এখানে ১৬% চার্জ কমা বড় কিছু না। যেখানে অন্যান্য ফোন গুলোর ক্ষেত্রেও চার্জ ১৫-২০% নেমে আসে।

Call of Duty:Mobile এ একটি মাল্টি প্লেয়ার ম্যাচে ৪% চার্জ কমে যেখানে একই ম্যাচে iPhone 11 Pro Max এর কমে ২%।

এখানে তারা একটি যুক্তি দেখায় যে টাইম আর নোটিফিকেশন চেক করতে মিনি স্ক্রিনে বেশি ব্যাটারি লাইফ শেভ হয়। কিন্তু এটা খুব বড় কোন ব্যাপার না কারণ ফোন পুরোপুরি ব্যবহার করতে আনফোল্ড করতেই হয়।

ক্যাপাসিটি কম থাকার কারণে স্বভাবতই ফোনটি দ্রুত চার্জ হয় এবং 18W চার্জার দ্রুত চার্জ নিশ্চিত করে। ফোনটির চার্জ প্রায় শেষ হয়ে আসলে সেখানে ব্যাটারি সাভার ব্যবহারেরও সুযোগ আছে।

কেন এই ফোন কিনবেন:

  • ১. আপনি যদি ফোল্ডিং ফোন অথবা Cutting-edge ডিজাইনের ভক্ত হয়ে থাকেন।
  • ২. হ্যাঁ, ফোনটি দেখতে ভাল, এটি দেখে মানুষের মাথা ঘুরে যাবে। এটি Samsung Galaxy Fold থেকেও বেশি চিকন। ফোনটি আপনাকে ওইদিন গুলোতে ফিরেয়ে নিয়ে যাবে যখন কালো আয়তক্ষেত্রের ফোন গুলো খুব জনপ্রিয় ছিল
  • ৩. যদি আপনার পকেটের সাইজ খুব ছোট হয়।
  • ৪. ফোন গুলো ওই সমস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য যাদের স্মার্ট ফোনের চাহিদা আছে কিন্ত এটি বহন করতে পকেটে অতিরিক্ত জায়গা দিতে চায় না।
  • ৫. যারা আশাকরিয়ে দেয় ছোট আকৃতির ফোন এখনো লাউডলি সাউন্ড করতে পারে।

কেন ফোনটি কিনবেন না?

  • ১. আপনি যদি সঠিক দামে সঠিক ফ্ল্যাগ-শিপ ফোন পেতে চান।
  • ২. বর্তমানে যুগে এই ফোনের থেকে অর্ধেক দামে এর চেয়ে ভাল পারফর্মেন্স এর ফোন পাওয়া যায়।
  • ৩. যদি আপনার বড় ব্যাটারির ফোন দরকার হয়।
  • ৪. Razr এর একটি বড় সমস্যা হচ্ছে এর ব্যাটারি ব্যাক আপ। আপনি চাইলে এই দামে ভাল পারফর্মেন্সের ডাবল ফোন কিনে ফেলতে পারবেন।
  • ৫. যদি ফোন ফটোগ্রাফি ভালবাসেন।
  • ৬. ফোনটির ক্যামেরা ভাল ছিল না। এর নাইট ভীষণ ক্যামেরা থেকে Google pixel এবং iPhone 11 এর ক্যামেরা অনেক ভাল। এই ফোন যেহেতু ১২৮ জিবি এবং সেখানে কোন মেমোরি স্লট নেই সুতরাং ছবি সংরক্ষণেও সমস্যায় পরতে পারেন।

শেষ হয়েও হলো না শেষ!

এবার এই ফোনটি সম্পর্কে যদি আমি ব্যক্তিগত ভাবে কিছু বলি তাহলে বলতে হবে,  Motorola Razr 2019 এর ডিজাইন আমার কাচে অসারণ লেগেছে। আর এটাই বুঝতে হবে এটা একটা বেশ সফল ফোল্ডেবল ফোন বা ফোল্ডেবল ফোনের শুরু। এধরনের ডিজাইন তৈরি করার জন্য ডিজাইন টিমকে বেশ কিছু স্পেসিফিকেশনে ছাড় দিতে হয়েছে। আর বুঝতে হবে এটা যেহেতু ফোল্ডেবল ফোনের শুরু তাই বেশ কিছু ত্রুটি থাকবেই। এটাই স্বাভাবিক। তবে ধীরে ধীরে ফোল্ডেবল ফোন ইউজারদের মনে জয়গা করে নেয় কিনা সেটাই দেখার বিষয়।  আমার এই ফোনটির যে বিষয় আমার পছন্দ হয় নি এর বড় কারণ হচ্ছে এর অতিরিক্ত দাম। এই ফোনের যে অভাব গুলো আছে সেই তুলনায় দাম আরো কমাতে পারতো অথবা এই দামে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিতে পারতো। যা তারা দিতে ব্যর্থ হয়েচে বরে আমি মনে করি।

তো এতক্ষন এই রিভিউ টিউনটি কেমন লাগলো তা অবশ্যই জানাবেন। আপনাদের ভাল লাগলে সামনে আরো রিভিউ নিয়ে হাজির হব ইনশাল্লাহ, পরবর্তী টিউনের আগ পর্যন্ত ভাল থাকুন আর অবশ্যই করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষা থাকতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।

Level 34

আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস