স্মার্টফোন জগতে মাত্র ২/৩ বছর আগেও আমরা মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি ব্রান্ডের নাম শুনে থাকতাম। এগুলো হচ্ছে Apple, Samsung, Huawei, LG, Motorolla, Nokia, Microsoft ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমানে এই ব্রান্ডগুলোর পাশাপাশি আরো নতুন কয়েকটি ব্রান্ড বাজারে বেশ ধামাকা করেই তাদের লেটেস্ট স্মার্টফোনগুলোকে নিয়ে আসছে। আমি আজ আপনাদের সামনে তেমনই একটি নতুন হাইফাই স্মার্টফোন নিয়ে কিছু কথা বলতে এসেছি, হ্যাঁ! আমি আজ কথা বলবো নতুন Vivo Nex S ডিভাইসকে নিয়ে। মাত্র ২ মাস আগে (জুন, ২০১৮) ডিভাইসটি মুক্তি দিয়েছে কোম্পানিটি।
বাংলাদেশের বাজারে মেইনস্ট্রিম স্মার্টফোন কোম্পানি হিসেবে অপ্পো ইতিমধ্যেই তাদের স্থানকে শক্ত ভাবে গড়ে নিয়েছে। কিন্তু এই Vivo কোম্পানিটি এক্ষেত্রে একদমই নতুন। এই ভিভো নেক্স এস ডিভাইসটিকে দূর থেকে দেখলে আপনার অনান্য বড় ডিসপ্লেওয়ালা স্মার্টফোনের মতোই লাগবে, কিন্তু কাছে এসে দেখলে দেখবেন যে ডিভাইসটির ডিজাইন একটু ইউনিক!
কারণ ডিভাইসটিতে রয়েছে in-display ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর! মানে ডিসপ্লের ভিতরে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর! আরো রয়েছে পপ আপ সেলফি ক্যামেরা। যা বেশ চমৎকার এবং স্টাইলিশ। চাইনিজ কোম্পানিগুলো নতুন নতুন টেকনোলজি প্রয়োগ করছে এবং এর মাধ্যমে বেশ ঝুঁকি বহন করছে এটা একটি চমৎকার উদাহরণ হলো এই Vivo Nex S ডিভাইসটি।
ডিভাইসটির প্রথম যে জিনিসটি সবাই লক্ষ্য করবে তা হলো এটার স্ক্রিণ। ডিভাইসটির স্ক্রিণে ব্যবহার করা হয়েছে 95% Screen-to-Body রেশিও। মানে প্রায় সর্বত্রই স্ক্রিণ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ডিভাইসটিতে রয়েছে ৬.৫৯ ইঞ্চি AMOLED ডিসপ্লে। আর এই ফিচারের তেমন অন্য কোনো স্মার্টফোন আপনি দেখতে পাবেন না। হ্যাঁ আপনি Oppo Find X এর কথা বলতে পারেন। তবে আপনি জানেন কি চাইনিজ BBK Electronics কোম্পানিটি এই Oppo এবং Vivo দুটোকেই ম্যানেজ করে থাকে? তার মানে এখন Oppo ও Vivo এর মাঝে অভ্যন্তরীণ লড়াই হচ্ছে।
প্রায় Bezels বিহীন স্মার্টফোন তৈরি করতে গিয়ে ভিভো কোম্পানিকে স্মার্টফোনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো অবস্থান নিয়ে বেশ চিন্তা করতে হয়েছে এবং অনান্য উপাদানের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্যেও বেশ গবেষণা করা হয়েছে। ডিভাইসটির earpiece এর কথাই ধরুণ! লক্ষ্য করলে দেখবেন যে ভিভো নেক্স এস ডিভাইসে কোনো earpiece ই নেই! তাহলে ফোন আসলে অপর প্রান্তের কথা শুনবেন কি করে? ভিভো ডিভাইসটির স্ক্রিণের ভেতরে একটি Vibrating Exciter বিল্ট করেছে যা ফোন আসলে মূলত সম্পুর্ণ ডিসপ্লে প্যানেলটাকেই earpiece আকারে রুপান্তর করে দেয়! মানে কথা আপনি ঠিকই শুনতে পারবেন কিন্তু চমকিয়ে যাবেন যে অপর প্রান্তের কথাগুলো কোথা থেকে আসছে!
ক্যামেরার দিক থেকে বলতে গেলে ডিভাইসটির পেছনে রয়েছে ডুয়াল ক্যামেরা সিস্টেম। যেখানে আপনি ১২ এবং ৫ মেগাপিক্সেলের Bokeh-filled ক্যামেরা পাবেন। আর সামনে পাবেন “pop-up” ৮ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা, সেটা ছবি তোলার সময় উপরের চেসিস হতে বেরিয়ে আসে! যা দেখতেও বেশ চমৎকার। চেসিস হতে ক্যামেরা পপ আপ হতে মাত্র ১ সেকেন্ড সময় নেবে। ভিভো কর্তৃপক্ষ বলেছে যে ডিভাইসটির পপ আপ সেলফি ক্যামেরা দিয়ে ৫০০০০ সেলফি তোলা যাবে। মানে তারা ৫০ হাজার ক্যামেরা ক্লিকের অফিসিয়াল ওয়ারেন্টি দিচ্ছে! তো আমি নিজেও এত গুলো সেলফি ৫ বছরে তুলবো কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে!
এবার আসি ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর নিয়ে। ট্রাডিশনাল সাইডে বা ব্যাক সাইডে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর না দিয়ে কোম্পানিটি তাদের এই ডিভাইসে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি দিয়ে দিয়েছে ডিসপ্লের ভেতর! কর্মাশিয়াল ভাবে এটাই প্রথম স্মার্টফোন যেটার in-display ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর রয়েছে।
তবে এটা একদমই নতুন মডেলের সেন্সর হওয়া কাজের ক্ষেত্রে এটা একটু স্লো। তো মূল কথা হচ্ছে ডিভাইসটি বেশ চমৎকার এবং ফিউচার কেন্দ্রিক একটি ডিভাইস।
তবে আমি একটা কেনার জন্য রেকোমেন্ড করবো না। কারণ ডিভাইসটি আমাদের “আমজনতা”দের জন্য ব্যবহার উপযোগী স্মার্টফোন নয়। ডিভাইসটির ভাষা ইংরেজিতে করে দিলেও অনেকগুলো প্রি-লোডেড অ্যাপসের ভাষা আপনি চাইনিজ পাবেন।
ডিভাইসটির ভালো দিক | ডিভাইসটির খারাপ দিক |
---|---|
চমৎকার অল-স্ক্রিণ ডিজাইন | ওয়ের্স্টান ব্যবহার জন্য সফটওয়্যার রেডি নয় |
লং ব্যাটারি লাইফ | নতুন ফিচারগুলো তেমন ভালো ভাবে কাজ করে না |
নতুন ধরনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এবং সেলফি ক্যামেরা | ক্যামেরার কোয়ালিটি এভারেজ |
দারুণ পারফরমেন্স | ৫৩ হাজার টাকা বাজার মূল্য (৬২৭ মার্কিন ডলার) |
৬.৬ ইঞ্চি FHD + AMOLED ডিসপ্লে |
স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ প্রসেসর |
৮ গিগাবাইট র্যাম |
FunTouch অপারেটিং সিস্টেম |
৪০০০ mAh ক্ষমতার ব্যাটারি |
USB-C |
তবে ডিভাইসটিকে আমি খারাপ বলছি না। কারণ এখানে ভালো বা খারাপ বলে আমি আসিনি। জাস্ট আমার পক্ষ থেকে একটা ছোট্ট রিভিউ দিতে এসেছি। ডিভাইসটিতে কোম্পানিটি টপ টায়ার কম্পোনেন্ট দিয়ে রেখেছে। স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ চিপসেট, ৮ গিগাবাইট র্যাম, ২৫৬ গিগাবাইট স্টোরেজ। এগুলো থাকা স্বত্তেও এ বছরের অনান্য ডিভাইসগুলোর মতো ফাস্ট পারফরমেন্স দিতে পারেনি এই ভিভো নেক্স এস স্মার্টফোনটি।
কারণ হিসেবে স্মার্টফোনটির অপারেটিং সিস্টেম FunTouch কে আপনি দোষ দিতে পারেন। অ্যান্ড্রয়েড ৮.১ ওরিও থেকে নেওয়া হলেও এই FunTouch য়ে কোম্পানিটি বেশ অনেকগুলোই ফিচার যুক্ত করে পুরো অপারেটিং সিস্টেমটিকে “ওজনে ভারী” করে ফেলেছে। আর iOS থেকে বেশ অনেকগুলোই ডিজাইন এই অপারেটিং সিস্টেম কোম্পানিটি দিয়ে দিয়েছে। আপনি যদি ইউনিক কোনো স্মার্টফোন নির্মাণ করতে চান সেখানে অবশ্যই অন্য কোনো পপুলার ডিজাইন থেকে কপি করা উচিত নয়।
টেকনিক্যাল লেভেলের দিক থেকে Vivo NEX S ডিভাইসটি বেশ চমৎকাল। স্মার্টফোনটি দিয়ে ভিভো প্রমাণ করে দিলো যে তারা একটি উন্নয়নশীল বা উন্নয়নরত একটি স্মার্টফোন কোম্পানি। এরা ভবিষ্যৎতে আরো নতুন নতুন ফিচারের চমৎকার সব ডিভাইস আনার ক্ষমতা রাখে। আর চীন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ব্রান্ডটি ধীরে ধীরে গ্লোবালের দিকে এগোচ্ছে এটাও একটি ভালো দিক।
তবে এখন আমার কথা বলে জাস্ট ডিভাইসগুলোর রিভিউ দেখতে থাকুন, কিন্তু নিজের রিস্কে এগুলো কিনবেন। হাহাহা! কারণ ধরুণ, এই পপ আপ সেলফি ক্যামেরাটি “কোনো কারণে” পকেটে থাকা অবস্থায় যদি পপ আপ হয়ে যায় তখন কি করবেন?
এটা হতেই পারে বলা যায় না, আর সাড়ে ছয় ইঞ্চির স্মার্টফোন আপনি যেন তেন পকেটে ফিটও করতে পারবেন না। আর ডিভাইসটির 1080 x 2316 পিক্সেলের রেজুলেশনে আপনি পাবেন ৩৮৮ PPI যা গ্যালাক্সি এস৯ প্লাস ডিভাইসের 529ppi এর ধারে কাছেও নেই।
আমার মূল কথা হলো ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ফোন যখন কিনবেন তখন ভালো ব্রান্ডের ফোন কিনুন।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!