জাতিগত দ্বন্দ্ব একটি ঐতিহাসিক বিষয়। যুগে যুগে ঔপনিবেশিক শক্তি একে ব্যবহার করেছে নিজেদের পুঁজির সুরক্ষায়, নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠায়। এই বিষয় নিয়ে অনেক কালজয়ী চলচ্চিত্র তৈরী হয়েছে, তেমনই একটি চলচ্চিত্র টেরি জর্জ পরিচালিত "Hotel Ruwanda" ২০০৪ সালে নির্মিত এই ঐতিহাসিক মুভিটি ৩ টি বিভাগে একাডেমিক অ্যাওয়ার্ডে মনোনয়ন সহ অসংখ্য অ্যাওয়ার্ড লাভ করে। মুভিটির আইএমডিবি রেটিং: ৮.১, ব্যক্তিগত রেটিং: ৮.৮। রুয়ান্ডার সাধারণ জনগোষ্ঠী ২ ভাগে বিভক্ত ছিল : হুতু ও তুতসি। দুধ ও মধুর জন্য বিখ্যাত আফ্রিকার দেশটিতে পশুপালন ছিল মূল পেশা। অধিক সংখ্যক পশুর মালিক অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত ধনশালী গোষ্ঠীর লোকজন ছিল তুতসি সম্প্রদায় ভুক্ত বাকীরা ছিল হুতু। তবে সংখ্যায় হুতুরা ছিল মোট জনগোষ্ঠির ৮৫ ভাগ আর তুতসীরা ছিল ১৪ ভাগ। অপেক্ষাকৃত ধনী হওয়ায় তুতসীদের গায়ের রং ছিল তুলনামূলক ফরসা এবং হুতুদের তুলনায় লম্বা। প্রথমে জার্মানীর উপনিবেশ এবং পরবর্তীতে বেলজিয়ামের উপনিবেশে দেশটিতে সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী শুরু থেকেই তুতসিদের প্রাধান্য দিত এবং দেশের গুরুত্ববহ কার্যাদি তুতসিদের মাধ্যমেই সম্পন্ন করত। স্বাভাবিক ভাবেই সংখ্যাগুরু হুতুদের মনে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ছিল। তাদের এই জমানো ক্ষোভেরি বিস্ফোরণ ঘটে যখন বেলজিয়াম রুয়ান্ডা ছেড়ে যাওয়ার সময় শাসন ভার হুতুদের হাতে ন্যস্ত করে যায়। সবসময় ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা তুতসীরা বিদ্রোহী হয়ে উঠে, গড়ে তোলে আর পি এল (রুয়ান্ডান পেট্রিয়টিক ফ্রন্ট)। এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে সমঝোতা করতে গিয়ে ১৯৯৪ সালে হুতুদের প্রেসিডেন্ট নিহত হওয়ার পটভূমিতে নির্মিত হয়েছে হোটেল রুয়ান্ডা মুভির কাহিনী। মুভির কেন্দ্রীয় চরিত্র পল জাতিতে হুতু, তার স্ত্রী তাতিয়ানা তুতসী। পল হোটেল মিলা কলিন্স নামের একটি হোটেলের ম্যানেজার। হুতু প্রেসিডেন্ট নিহত হওয়ার পর তুতসীদের নিধনে হুতু আর্মি ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেয়া অপারেশন " cut the tall trees" শুরু হওয়ার পর নিজের আত্নীয়, প্রতিবেশী, বন্ধু সহ প্রায় ১২০০ তুতসী লোককে নিজের হোটেলে আশ্রয় দেয় পল। জীবনের কেনাবেচা চলতে থাকে ডলারে, স্বর্ণে, ঘুষ আর নারী মাংসে। সরকারী হিসেবে ১০০ দিনে প্রায় ৫ লাখ তুতসীকে সেসময় হত্যা করা হয়। হত্যা কান্ডে বন্ধুকের পরিবর্তে দা, ছুরি, বল্লম ব্যবহার করা হত বেশী। তুতসীদের টাকা পয়সার বিনিময়ে অপশন দেয়া হত জবাই এর পরিবর্তে গুলি করে মারার। সম্পদের আধার আফ্রিকার অন্য সব দেশের মত রুয়ান্ডার এই গণহত্যাকেও প্রথমে অস্বীকার করতে চেয়েছিল আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও জাতিসংঘ। পরবর্তীতে অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে গেলে জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় বন্ধ হয় গণহত্যা। ঐতিহাসিক পটভূমিতে নির্মিত এই মুভি একটি মাস্টারপিস এবং মাস্টওয়াচ।
অনলাইন থেকে দেখে নিতে চাইলে এখানে থকে দেখে নিতে পারেন wtach movie
লেখকঃRajib Debnath
আমি সিয়াম সিয়াম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 10 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।