বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভালো। আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরবো এইচ টি সি ইউ১১ এর সার্বিক দিক সম্পর্কে। অর্থাৎ ফোন রিভিউ। তো চলুন শুরু করা যাক।
এইচ টি সি তাদের নতুন ফোনে ঠিক কোন্ দিকটা আকর্ষণীয় করে তুলেছে আসলে তা বোঝা মুশকিল। যেখানে স্যামসাং তাদের সহজাত বৈশিষ্টগুলো ধরে রেখেছে, সেখানে এইচ টি সি ইউ১১ একদম পুরোপুরিভাবে এইচ টি সি ইউ১০ এর চেয়ে আলাদা। এই এইচ টি সি ইউ১০ তাদের আগের এইচ টি সি ওয়ান এম৯ এর চেয়ে বেশ ভালভাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। যাইহোক, কোনোটারই সুনাম বা দুর্নাম করতে চাচ্ছি না।
চলুন এক নজরে সব দেখে নেয়া যাক ভিডিও’র মাধ্যমে।
সামনে থেকে এই টি সি ইউ১১ দেখলে একদম স্যান্ডার্ড লুকটাই পাবেন। এতে আছে ৫.৫ ইঞ্চি কোয়াড হাই ডেফিনেশন ডিসপ্লে যেটাতে একদম ঝকঝকে ফটো ও ভিডিও দেখতে পারবেন। আর সূর্যালোকে দেখতে গেলে এটি আরো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আর এতে রয়েছে টেকসই কর্নিং গরিলা গ্লাস ৫।
সামনের দিকে আরো রয়েছে বাঁকানো প্রান্ত যাতে করে স্ক্রিনে হাত দিলে বেশ মসৃণ ভাব চলে আসে। স্ক্রিনটি স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৮ এর মতো প্রান্তের দিকে মোড়ানো নয় তবে বেজেল বা আবরণটি ফোনের বাকী অংশ পর্যন্ত ভাঁজ করা যায়।
সামনের অংশের নিচের দিকেই রয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার যেটা দ্বিতীয় হোম বাটন হিসেবে ও ব্যাক করা ও রিসেন্ট তালিকার সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ফোনটি ৭.৯ মিমি পুরু যেটা গড়ে আজকালকার অন্যান্য স্মার্টফোনের মতোই। আর পেছনের দিকে রয়েছে সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম ক্যামেরা বাম্প। ডান পাশে রয়েছে পাওয়ার বাটন ও ভলিউম বাটন। আর উপরের দিকে রয়েছে ন্যানো সিমকার্ড স্লট ও মাইক্রো এস ডি কার্ড স্লট।
বাম পাশটা ফাঁকা। তবে নিচের দিকে আছে ইউ এস বি টাইপ-সি পোর্ট এবং স্পিকারের জন্য একটি ছিদ্র। এই স্পিকার স্মার্টফোনের জন্য বেশ ভাল মানের অডিও কোয়ালিটি দিয়ে থাকে। তবে অন্যান্য যন্ত্রের চেয়ে এটি কম সাউন্ড বিশিষ্ট।
একটা ব্যাপার লক্ষ করেছেন কিনা জানি না। এই ফোনে কিন্তু হেডফোন জ্যাক নেই। এইচ টি সি একদম পুরোপুরিভাবে অ্যাপল ও মটোরোলাকে অনুসরণ করে বিধায় হেডফোন জ্যাক রাখেনি। তবে এইচ টি সি’র ইউসনিক হেডফোনের সাহায্যে এবং ইউ এস বি টাইপ-সি হেডফোন অ্যাডাপ্টার ব্যবহার করার ব্যবস্থা রয়েছে।
ইউসনিক হেডফোনগুলো বেশ ভাল মানের। এতে রাডারের মতো একটা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যাতে করে বোঝা যায় আপনার কানের মধ্যে কীভাবে অডিও বাজছে। এটা বেশ আরামদায়ক আর সাউন্ড কোয়ালিটিও বেশ ভাল। তাই আপনি যদি দামী হেডফোন ব্যবহার না করতে চান তাহলে আপনার জন্য এটাই যথেষ্ট।
এবার ফোনের পেছনের অংশে আসা যাক যেটা হলো ফোনটার বিশেষ আকর্ষণ। এইচ টি সি’র ভাষায় পেছনের সারফেসকে বলা হচ্ছে ‘লিকুইড গ্লাস’ (তরল কাঁচ)। এর কারণ হলো এর প্রতিফলন ক্ষমতা এবং কাঁচের মতো স্বচ্ছতা। এ কারণে ফোনটাকে বেশি দামী মনে হয় না। তবে ফিঙ্গারপ্রিন্টটা তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করে। সর্বোপরি, এটাকে অন্যান্য প্রিমিয়াম ফোনগুলোর মতো মনে হয় না।
যদিও এটা আমার নিজস্ব অভিমত। অনেকের কাছে লিকুইড গ্লাসটাই ভাল লাগতে পারে। তবে কেনো জানি মেটাল লুকটাই আমার কাছে বেশি পছন্দের। তাই প্লিজ, কেউ কিছু মনে করবেন না।
পেছনের দিকে পাবেন এফ/১.৭ অ্যাপার্চার বিশিষ্ট ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা যার সাহায্যে আপনি মৃদু আলোতেও বেশ ভালমানের ফটো তুলতে পারবেন। এমনকি এর সাথে অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজার যুক্ত করা আছে। এই ফিচারগুলো আপনাকে ভাল মানের ফটোগ্রাফিতে সাহায্য করবে।
সামনের দিকে পাবেন এফ/২.০ অ্যাপার্চার ক্ষমতা সম্পন্ন ১৬ মেগাপিক্সেল ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ক্যামেরা যা কিনা আপনাকে বেশ ভালো মানের সেলফি তুলতে সহায়তা করবে। এক কথায় এই দুই ক্যামেরাই আপনাকে বেশ ভাল মানের ফটো তোলার অভিজ্ঞতা দেবে।
তবে নিম্নমানের স্বচ্ছ পাস্টিক কেইসটা অনেকের জন্যই অনাকর্ষণীয় হতে পারে। তবুও স্কুইজ ফিচার থাকায় আপনি মসৃণ রাউন্ডেড প্রান্তগুলো বেশ ভালোভাবেই অনুভব করতে পারবেন যেটি আপনার ফোনকে অনাবশ্যক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করবে। যদিও এটি বেশ দৃষ্টিকটু। আপনাকে অনলাইনে ভালমানের কোনো কেইস খুঁজে নিতে হবে।
এইচ টি সি ইউ১১ চলবে অ্যান্ড্রয়েড ৭.১ ন্যুগাট-এ, এটিতে বেশ ভাল কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। ডিফল্ট লঞ্চার হিসেবে বামপাশে থাকছে ‘ব্লিঙ্কফিড’ যেখানে আপনি পাবেন খবর, সোশাল মিডিয়া আপডেট ও ক্যালেন্ডার তথ্যাদি। একদম গুগল লঞ্চার-এর মতোই।
এইচ টি সি’র থিম স্টোর এর মাধ্যমে হোমস্ক্রিন কাস্টমাইজ করা যাবে। তবে অ্যাপ ড্রয়ারটা দেখতে বেশ পুরাতন স্টাইলের। সেক্ষেত্রে আপনাকে নিজের পছন্দ মতো থিম ব্যবহার করতে হবে।
এছাড়াও পাবেন বুস্টিং অ্যাপ যেগুলো দিয়ে আপনি স্টোরেজ, র্যাম ও অ্যাপ্স ক্লিয়ার করতে পারবেন। এছাড়াও সাহায্যকারী ট্রাবোলশ্যুটিং অ্যাপ রয়েছে, টাচপ্যাড কিবোর্ড অ্যাপ রয়েছে, আবহাওয়ার অ্যাপও রয়েছে।
এইচ টি সি সেন্স কম্প্যানিয়ন আপনার অভ্যাসগুলো লক্ষ করবে আর সে অনুযায়ী আপনাকে তথ্য দেবে। অনেকটা অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েড এর গুগল অ্যাসিস্টেন্ট এর মতো। সবকিছু প্রায় এক। এমনকি অ্যালেক্সা পর্যন্ত রয়েছে। যে কারণে আপনি ভয়েস সার্চ দিতেও পারবেন। তবে আপনি যদি গুগল অ্যাসিস্টেন্ট-য়েই অভ্যস্ত হয়ে থাকেন তাহলে আর এই সেন্স কম্প্যানিয়ন বা অ্যালেক্সা ব্যবহার করার প্রয়োজন দেখি না।
এজ সেন্সটা (Edge Sense) অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণের কারণ হতে পারে। আপনি ফোনটিকে চারপাশ থেকে চেপে ধরে যেকোন অ্যাপ চালু করতে পারবেন। এটা বেশ ভালোভাবেই কাজ করে। তবে ফোনের সাথে যুদ্ধে যাবার কোনো প্রয়োজন আমার আপনার কারোরই দেখি না।
এজ সেন্সকে চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি কত হবে তা আপনি অ্যাডজাস্ট করতে পারবেন। যদি একদম হাই করে দেন তাহলে আপনার যথেষ্ট শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। আর যদি লো করে দেন তার মানে একটু শক্তিতেই এজ সেন্স চালু হয়ে যাবে।
তবে আরো বেশ কিছু সুবিধা আছে এতে। এর মধ্যে ডাবল ট্যাপিং এর মাধ্যমে ফোন চালু করা ও স্লিপ মোডে নিয়ে যাবার পদ্ধতি আছে। তবে হাত দিয়ে সুইপ করে ফোন খোলার ব্যাপারটি কোনো কাজেই আসবে না যদি আপনার ফোনটি পিন বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে লক করা থাকে। আপনি এইচ টি সি’র থিমগুলো দিয়ে আপনার ফোনকে যেকোনভাবে কাস্টমাইজ করতে পারেন যেটা অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েডে পাবেন না।
কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৩৫ বর্তমান কালের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রসেসরের মধ্যে একটা। এটা দ্রুত। একই সাথে একাধিক টাস্কে কাজ করা যায় আর সব ধরনের গেইমই খেলা যায়।
নতুন মডেলে সাধারণত ৪ জিবি র্যাম ও ৬৪ জিবি স্টোরেজ পাবেন যেটা আজকালকার যেকোন ফোনের জন্যই স্ট্যান্ডার্ড। তবে আপনি যদি আরো বেশি খরচ করতে চান তাহলে ৬ জিবি র্যাম ও ১২৮ জিবি স্টোরেজ পাবেন। তবে এটা সবাই চাইবে না।
৩০০০ এম এ এইচ ব্যাটারিটা গড়ে এইচ টি সি’র জন্য ঠিকই আছে বলা যায়। আপনি যদি প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য নিয়ে থাকেন তাহলে ঠিকই আছে। কারণ, এর ব্যাটারি দুইদিন কখনই যাবে না। যেটা আপনি অন্যান্য অনেক ফোন থেকেই পেতে পারতেন।
তবে এর এইস টি সি ইউ১১ তে রয়েছে কুইক চার্চ ৩.০ যার মাধ্যমে আপনি দ্রুত ফোনটা চার্জ করতে পারবেন। আর ইউ এস বি টাইপ-সি পোর্টটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বলা হচ্ছে এটা স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো ভবিষ্যৎ পছন্দগুলোর মধ্যে একটা। কারণ, প্রচুর লোকজন আছেন যারা মাইক্রো ইউ এস বি ক্যাবল ব্যবহার করতে করতে ক্লান্ত।
এইচ টি সি ইউ১১ অনেকটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে মানুষের মনে। এর ক্যামেরাগুলো অসাধারণ, ডিসপ্লে, সামনের দিক সব মিলিয়ে বেশ ভাল, ভিতরের সবকিছুই প্রায় শক্তিশালী, হেডফোনে গানও শুনতে পারবেন ভাল, পানি প্রতিরোধক; কিন্ত অন্যান্য দিকগুলোতে কিছুটা পিছিয়ে।
এর পেছদের দিকটা দেখতে অতোটাও দামী নয়, ক্যাপাসিটিভ কি দ্বারা চালিত হয়। সেন্স ইন্টারফেসও দেখতে সেকেলে, স্পিকার মুটামুটি, স্কুইজ ফিচারটার তেমন কাজের না আর মূল ব্যাপারটা হলো কোনো হেডফোন জ্যাক নেই।
পরিশেষে, টেকটিউনস হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার এক সুবিশাল প্ল্যাটফর্ম। শুধু জেনেই বসে থাকবেন না। এই জ্ঞানগুলো ছড়িয়ে দিন তাদের নিকট যাদের কাছে এই টিউনগুলো পৌঁছানো সম্ভব হয় না। প্রযুক্তিকে ভালবাসুন, প্রযুক্তির সাথে থাকুন। টেকটিউনসের সাথে থাকুন।
আজকের মতো এ পর্যন্তই। সামনে আবারও হাজির হবো নতুন কোনো তথ্য নিয়ে। আর টিউনটি কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না। টিউন বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে টিউমেন্ট বক্সে প্রশ্নটি করুন। এছাড়াও ফেইসবুকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
ফেইসবুকে আমি: Mamun Mehedee
আমি মামুন মেহেদী। Civil Engineer, The Builders, Bogra। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 92 টি টিউন ও 360 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি আপনার অবহেলিত ও অপ্রকাশিত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।