প্রিয় পাঠক, কেমন আছেন সবাই? আপনাদের জন্য বিভিন্ন ফোনের রিভিউ নিয়ে টিউন করার ধারাবাহিকতায় আমার আজকের টিউন Walton Primo NX3 এর হ্যান্ডস-অন রিভিউ। ওয়ালটনের Primo NX3 মডেলটি ডিজাইন, ডিসপ্লে ও আকর্ষণীয় ফিচারের কারণে সহজেই নজর কাড়তে সক্ষম। বর্তমান সময়ে স্মার্টফোনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ২টি দিক হলো ডিসপ্লে আর ক্যামেরা। আর তাইতো ৬৪ বিট অক্টাকোর প্রসেসরসমৃদ্ধ এই ফোনে Super AMOLED ডিসপ্লের সাথে ১৩ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরায় পাচ্ছেন প্রফেশনাল ক্যামেরা মুড। অন্যান্য ফিচারের মধ্যে USB Type-C, ২ গিগাবাইট র্যাম, ৫ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা, DTS সাউন্ড সিস্টেম উল্লেখযোগ্য। ৩১৫০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম-পলিমার ব্যাটারিযুক্ত এই ফোনের আরেকটি আকর্ষণীয় ও উপকারী ফিচার হচ্ছে Extreme Power Saving Mode, যা ব্যবহার করে আপনি মাত্র ১০% চার্জ নিয়েও কয়েক ঘন্টা ফোনটি চালাতে পারবেন। এতোসব ফিচার থাকলেও ফোনটির দাম কিন্তু ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যেই রেখেছে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ - মাত্র ১৬,৪৯০ টাকা।
চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে বিস্তারিত রিভিউয়ের দিকে এগিয়ে যাই, শুরুতেই দেখে নিই Walton Primo NX3 এর স্পেসিফিকেশন হাইলাইটস-
আনবক্সিং:
Primo NX3 কিনলে আপনি যে শুধু ফোন পাচ্ছেন এমনটা নয়, এর সাথে আরও আছে -
অপারেটিং সিস্টেম:
এখনকার উন্নত ফোনগুলোর মতো Primo NX3 তে-ও অ্যান্ড্রয়েডের আপডেটেড সংস্করণ অ্যান্ড্রয়েড ৫.১ ললিপপ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয়েছে। তবে এতে স্টক অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার না করে কিছুটা কাস্টোমাইজড করে ব্যবহৃত হয়েছে।
ডিজাইন, বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিসপ্লেঃ
আকর্ষণীয় ও নজরকাড়া ডিজাইনের এই ফোন দেখলেই ‘Love at first sight’ এর মতো অবস্থা হয়ে যাবে ! এবার আসি বিল্ড কোয়ালিটিতে, এর উপর আর নিচের অংশে যথাক্রমে ৩.৫ মিলিমিটার অডিও পোর্ট ও ইউএসবি Type-C পোর্ট থাকলেও ভলিউম কী ও পাওয়ার কী দুটোই একপার্শ্বে।
ফোনটির সামনের দিকে আছে ফ্রন্ট ক্যামেরা, সেন্সর আর পেছনের দিকে উপরের অংশে আছে রিয়ার ক্যামেরার লেন্স ও ফ্ল্যাশলাইট আর নিচের দিকে স্পীকার। ১৫৫ মিলিমিটার উচ্চতার এই ফোনটি প্রস্থে ৭৬.৪ মিলিমিটার আর এর পুরুত্ব মাত্র ৭.৪ মিলিমিটার ও ওজন ১৫৫ গ্রাম (ব্যাটারিসহ)
এবার আসি ডিসপ্লেতে, এই ফোনে ৫.৫ ইঞ্চির সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে, আর এর ডিসপ্লের রেজ্যুলেশন ১২৮০x৭২০ পিক্সেল। সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লের কারণে এর ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল মনোমুগ্ধকর।
ইউজার ইন্টারফেস:
ওয়ালটনের Primo NX3 ফোনটিতে কাস্টোমাইজড ওএস ব্যবহৃত হওয়ায় এতে আলাদা কোন অ্যাপ ড্রয়ার নেই-
এই ফোনে বিভিন্ন ধরণের থিম ব্যবহারের সুবিধাও আছে:
প্রসেসর, জিপিউ ও অন্যান্য:
১.৩ গিগাহার্টজ গতির অক্টাকোর প্রসেসরের এই ফোনে মিডিয়াটেকের ৬৪ বিট চিপসেট MT6753 ও মালি T720 জিপিউ ব্যবহৃত হয়েছে।
গেমিং পারফরম্যান্স:
৬৪বিট চিপসেট, অক্টাকোর প্রসেসর ও মালি টি৭২০জিপিউসমৃদ্ধ Primo NX3 এর গেমিং পারফরম্যান্স চমৎকার, আর এতে ২ গিগাবাইট র্যাম থাকায় এইচডি গেম বেশ স্মুথলি খেলা যায়। এই ফোনে অ্যাসফাল্ট ৮, দ্য রুম থ্রি, গ্র্যান্ড থেফট অটো, হিরোস অব ৭১ প্রভৃতি জনপ্রিয় গেম কোন ধরণের ল্যাগিং ছাড়াই খেলা গেছে।
স্টোরেজ ও র্যাম:
১৬ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমোরীর Primo NX3 এ ৬৪ গিগাবাইট পর্যন্ত এক্সটারনাল মাইক্রো-এসডি কার্ড ব্যবহার করা যায়। এছাড়া এতে OTG সুবিধা থাকায় এতে পেনড্রাইভ, এক্সটারনাল হার্ডডিস্কসহ বিভিন্ন ধরণের ইউএসবি ড্রাইভ ব্যবহার করেও স্টোরেজ বৃদ্ধি করতে পারবেন। অন্যদিকে এই ফোনের ২ গিগাবাইট র্যামের মধ্যে প্রায় ১৯২৮ মেগাবাইট ব্যবহারযোগ্য, যেখানে বুট আপের পর র্যামের প্রায় অর্ধেক ফাঁকা থাকে।
মাল্টিমিডিয়া:
DTS মিউজিক সিস্টেম থাকার কারণে Primo NX3 এর অডিও সাউন্ড কোয়ালিটি দারুণ, সেইসাথে এর হেডফোনটির সাউন্ড কোয়ালিটিও চমৎকার লেগেছে। এই ফোনে আরো আছে এফএম রেডিও, সেইসাথে এফএম রেডিও রেকর্ডার থাকায় পছন্দের রেডিও প্রোগ্রাম অনায়াসে রেকর্ড করতে পারবেন।
অন্যদিকে এর ডিসপ্লে সুপার অ্যামোলেড হওয়ায় ভিডিও এক্সপেরিয়েন্স চমৎকার, এই ফোনে ১০৮০ পি ফুল এইচডি ভিডিও কোন ধরণের ল্যাগ ছাড়াই চলে।
ক্যামেরা:
Primo NX3 এর ১৩ মেগাপিক্সেল রিয়ার ক্যামেরায় প্রফেশনাল ক্যামেরা মুড থাকায় আপনি অনায়াসেই বেশ ভালো ছবি তুলতে পারবেন। আর সেইসাথে BSI সেন্সর, ওটোফোকাস, টাচ ফোকাস, ডিজিটাল জুম, সেলফ-টাইমার প্রভৃতি ফিচার তো থাকছেই। এই ফোনের ক্যামেরার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এতে আলট্রা-পিক্সেল ফাংশন থাকায় আপনি ৬৪ মেগাপিক্সেল রেজোল্যুশনে ছবি ক্যাপচার করতে পারবেন।
Primo NX3 এর ক্যামেরা সেটিংস এর স্ক্রীনশট –
Primo NX3 এর ক্যামেরায় তোলা ছবিঃ
BSI সেন্সরযুক্ত ৫ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরায় তুলতে পারেন পছন্দসই সেলফি-
কানেক্টিভিটি:
ডুয়েল সিম সুবিধার Primo NX3 এর উভয় স্লটেই মাইক্রো-সিম ব্যবহার করতে হয়। এই ফোনে ফোরজি সুবিধার পাশাপাশি ব্লুটুথ ৪.০, ওয়াইফাই, ওয়্যারলেস হটস্পট, হটনট প্রভৃতি কানেক্টিভিটি সুবিধা রয়েছে। আরও আছে জিপিএস, এ-জিপিএস, ডিজিটাল কম্পাস প্রভৃতি সুবিধা। এছাড়া এই ফোনে অ্যাক্সিলেরোমিটার, লাইট, প্রক্সিমিটি সেন্সরের পাশাপাশি আরও আছে হল সেন্সর।
OTA আপডেট সুবিধা:
ওয়ালটনের সমসাময়িক অন্যান্য ফোনের মতো এই ফোনেও OTA বা Over The Air আপডেট সুবিধা রয়েছে, যার ফলে পিসির সাথে সংযুক্ত করা ছাড়াই এর সফটওয়্যার আপডেট করা যাবে।
ওটিজি:
ওয়ালটনের নতুন এই ফোনে রয়েছে OTG (USB On The Go) সুবিধা। ফলে ব্যবহারকারী এতে মাউস, কীবোর্ড, পেনড্রাইভ, এক্সটারনাল হার্ডডিস্কসহ বিভিন্ন ধরণের ইউএসবি ড্রাইভ ব্যবহার করতে পারবেন।
ব্যাটারি:
৫.৫ ইঞ্চি সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লের এই ফোনে ৩,১৫০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম-পলিমার ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়েছে। ফুল চার্জ দিয়ে টানা সাড়ে তিন ঘন্টা ইন্টারনেট ব্রাউজ ও এইচডি ভিডিও উপভোগ করার পর এর চার্জ ৬০% এ নেমে এসেছিলো। তবে স্বাভাবিক ব্যবহারে অনায়াসেই একদিন চালিয়ে নিতে পারবেন। আর এই ফোনে থাকা Extreme Power Saving Mode ব্যবহার করে আপনি মাত্র ১০% চার্জ নিয়েও কয়েকঘন্টা চালাতে পারবেন।
রং:
সাদা, সোনালী ও নীল - এই তিন রংয়ে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে Primo NX3
বেঞ্চমার্ক:
Primo NX3 এর বেঞ্চমার্ক স্কোর যাচাইয়ের জন্য বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের জনপ্রিয় অ্যাপ AnTuTu বেছে নেওয়া হয়েছিলো, যেখানে এর স্কোর এসেছে ৩৬,৫৭১ আর NenaMark এ Primo NX3 এর স্কোর এসেছে ৫৭.৭; এর সাথে দেখুন Primo NX3 এর GeekBenchস্কোর
স্পেশাল ফিচার:
Primo NX3 এর বিভিন্ন স্পেশাল ফিচারের মধ্যে প্রফেশনাল ক্যামেরা মুড, এক্সট্রিম পাওয়ার সেভিং মুড, ক্যামেরার আলট্রা পিক্সেল ফাংশন, ইউএসবি টাইপ সি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
দাম:
চমৎকার ডিজাইন ও আকর্ষণীয় ফিচারসম্পন্ন Walton Primo NX3 এর দাম কিন্তু খুব একটা বেশি নয় - মাত্র ১৬,৪৯০ টাকা।
যেসব কারণে পছন্দ হয়েছে Walton Primo NX3:
Primo NX3 এর সীমাবদ্ধতা:
Primo NX3 এ চমৎকার ডিজাইন ও দারুণ সব ফিচারের সমন্বয় ঘটলেও মাত্র ১.৩ গিগাহার্টজ গতির প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে, এর প্রসেসরের ক্লকস্পিড আরেকটু বেশি হলে আরও স্মুথ পারফরম্যান্স পাওয়া যেতো।
শেষ কথা:
যারা মধ্যম বাজেটে চমৎকার ডিসপ্লে, দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি ব্যাকআপ, ফোরজি সুবিধা ও ভালো ক্যামেরা পারফরম্যান্সযুক্ত ফোন কিনতে চান তাদের জন্যই Primo NX3 ! সেইসাথে প্রফেশনাল ও আলট্রা পিক্সেল ক্যামেরা মুড, USB Type-C প্রভৃতি ফিচারের কারণে Primo NX3 এই রেঞ্জের অন্যান্য ফোন থেকে এগিয়ে রয়েছে।
আজ তাহলে এপর্যন্তই, কোন জিজ্ঞাসা থাকলে টিউমেন্টে জানান, আর আপনাদের মূল্যবান টিউমেন্ট নিয়মিত টিউন করতে উৎসাহ প্রদান করবে। সবাই ভালো থাকুন।
আমি আরিফিন সৈকত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 76 টি টিউন ও 24 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে।
nice