বাজেট ৫ হাজার টাকারও কম, কিন্তু কিনতে চাইছেন ১ গিগাবাইট র‍্যামের ফোন - তাহলে আপনার জন্যই ওয়ালটনের নতুন ফোন Primo E6; কমদামের ফোন বলে এর কনফিগারেশন যে একেবারে খারাপ তা কিন্তু নয়। মাত্র ৪,৭৯০ টাকা দামের এই ফোনে কোয়াডকোর প্রসেসরের পাশাপাশি যেমন পাবেন অ্যান্ড্রয়েড ৫.১ ললিপপ অপারেটিং সিস্টেম, ৫ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরা, ইউনিফাইড স্টোরেজ সুবিধা; তেমনি পাবেন ৮ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ ও ৪.৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে।

ওয়ালটনের নতুন বাজেট ফোন Primo E6 এর ডিজাইন, ব্যাটারি ব্যাকআপ, গেমিং পারফরম্যান্স, বেঞ্চমার্ক স্কোর, ক্যামেরা পারফরম্যান্স ইত্যাদি নানা তথ্য নিয়ে আমাদের আজকের টিউন Walton Primo E6 এর Hands-on Review

বিস্তারিত রিভিউ শুরু করার আগে একনজরে Primo E6 এর উল্লেখযোগ্য স্পেসিফিকেশন দেখে নেওয়া যাক -

• অ্যান্ড্রয়েড ৫.১ ললিপপ অপারেটিং সিস্টেম
• ৪.৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে
• ৫ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরা
• ভিজিএ ফ্রন্ট ক্যামেরা
• ৮ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ
• ১.৩ গিগাহার্টজ কোয়াডকোর প্রসেসর
• ১ গিগাবাইট র‍্যাম
• মালি ৪০০ জিপিউ
• ডুয়েল সিম
• ১,৬৫০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি

যেসব কারণে ভালো লেগেছে Primo E6:

• স্বল্পমূল্য
• ১ গিগাবাইট র‍্যাম
• এলইডি ফ্ল্যাশযুক্ত রিয়ার ক্যামেরা
• ইউনিফাইড স্টোরেজ
• OTA আপডেট

Primo E6 এর সীমাবদ্ধতাঃ
এন্ট্রিলেভেলের এই বাজেট ফোনে বলার মতো কোন সীমাবদ্ধতা চোখে পড়েনি।

বিস্তারিত রিভিউ শুরু করছি ফোনটির আনবক্সিং দিয়ে-
প্রিমো ই৬ এর বক্সে ফোনের সাথে আরও যা আছে –

• ওয়ারেন্টি কার্ড
• ব্যাটারি
• ইউজার ম্যানুয়াল
• ইয়ারফোন
• চার্জার অ্যাডাপ্টার
• ডাটা ক্যাবল

বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিজাইনঃ
Primo E6 বাজেট ফোন হলেও এর ডিজাইন চমৎকার। ফোনটির ভলিউম কী ও পাওয়ার কী একইপার্শ্বে, আর উপরের অংশে আছে ৩.৫ মিলিমিটার অডিও পোর্ট ও ইউএসবি ২.০ পোর্ট। এর পেছনের দিকে উপরের অংশে আছে রিয়ার ক্যামেরার লেন্স ও ফ্ল্যাশলাইট আর নিচের দিকে রয়েছে স্পীকার।

১৩২.৫ মিলিমিটার উচ্চতার এই ফোনটি প্রস্থে ৬৬ মিলিমিটার আর এর পুরুত্ব ৯.৯ মিলিমিটার। মাত্র ১২৬ গ্রাম ওজনের এই ফোনের সামনের দিকে আছে ফ্রন্ট ক্যামেরা, সেন্সর ইত্যাদি।

Primo E6 ফোনটিতে ব্যাক, হোম আর অপশন - এই তিনটি বাটন আছে।

ডিসপ্লেঃ
৪.৫ ইঞ্চি ডিসপ্লের এই ফোনের রেজ্যুলেশন ৪৮০x৮৫৪ পিক্সেল।

অপারেটিং সিস্টেম ও ইউজার ইন্টারফেসঃ
এই ফোনে অ্যান্ড্রয়েডের আপডেটেড সংস্করণ অ্যান্ড্রয়েড ৫.১ ললিপপ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয়েছে।

দেখে নিন Primo E6 ইউজার ইন্টারফেস-
নোটিফিকেশন বারঃ

হোমস্ক্রীনঃ

অ্যাপ ড্রয়ারঃ

মেমোরী ও র‍্যামঃ
এই ফোনের ৮ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমোরীর মধ্যে প্রায় ৫.৪০ গিগাবাইট ব্যবহারযোগ্য। আর এতে ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত এক্সটারনাল মাইক্রো-এসডি কার্ড ব্যবহার করে এর ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে নেওয়া যায়।

১ গিগাবাইট র‍্যামবিশিষ্ট এই ফোনের ৯৬১ মেগাবাইট র‍্যাম ব্যবহারযোগ্য।

সিপিউ ও জিপিউঃ
সিপিউ হিসেবে এই ফোনে রয়েছে ১.৩ গিগাহার্টজ গতির কোয়াডকোর প্রসেসর আর জিপিউ হিসেবে মালি-৪০০; উল্লেখ্য, স্বল্পমূল্যের এই ফোনে মাল্টিটাস্কিং, গেমিং প্রভৃতি বেশ স্মুথলি করা যায়।

গেমিং পারফরম্যান্সঃ
১ গিগাবাইট র‍্যাম ও কোয়াডকোর প্রসেসরসমৃদ্ধ এই ফোনে মাইনক্র্যাফট, টেম্পল রান ২, ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যানস প্রভৃতি জনপ্রিয় গেম বেশ স্মুথলি খেলা যায়।

বেঞ্চমার্ক:
কোন ডিভাইসের সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য সাধারণত বেঞ্চমার্ক স্কোর যাচাই করা হয়ে থাকে। Primo E6 এর বেঞ্চমার্ক স্কোর যাচাইয়ের জন্য বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের জনপ্রিয় অ্যাপ AnTuTu বেছে নেওয়া হয়েছিলো। AnTuTu তে এর স্কোর এসেছে ২১,৪৮৭; এন্ট্রি লেভেলের স্বল্পমূল্যের ফোন হিসেবে যা অনেক বেশি !

দেখুন স্কোর যাচাইয়ের অন্যতম অ্যাপ Geekbench Primo E6 এর স্কোর-

বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের আরেক অ্যাপ Nenamark এ Primo E6 এর স্কোর এসেছে ৬১.৯

ক্যামেরাঃ
ওয়ালটন Primo E6 এ আছে এলইডি ফ্ল্যাশযুক্ত ৫ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরা।
দেখে নিন এই ফোনের ক্যামেরা ইন্টারফেস ও সেটিংস-

এই ফোনের ক্যামেরায় তোলা ছবিঃ

এছাড়া এই ফোনে থাকা ভিজিএ ফ্রন্ট ক্যামেরার সাহায্যে সেলফিও তুলতে পারবেন-

মাল্টিমিডিয়াঃ
৩.৫ মিলিমিটারের অডিও জ্যাকবিশিষ্ট Primo E6 এর সাথে যে হেডফোনটি দেওয়া হয় তার সাউন্ড কোয়ালিটি মোটামুটি। আর এই ফোনে ১০৮০ পি ফুল এইচডি ভিডিও কোন ধরণের ল্যাগিং ছাড়াই চলেছে।

সেন্সর:
ওয়ালটনের নতুন এই ফোনে সেন্সর হিসেবে রয়েছে অ্যাক্সিলেরোমিটার, প্রক্সিমিটি ও লাইট সেন্সর।

কানেক্টিভিটিঃ
ওয়ালটনের অধিকাংশ স্মার্টফোনের ন্যায় প্রিমো E6 এ-ও ডুয়েল সিম সাপোর্টেড, এর উভয় সিমেই থ্রিজি সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। আর এই ফোনে ব্লুটুথ ৪.০, ওয়াইফাই, ওয়্যারলেস হটস্পট, জিপিএস নেভিগেশন প্রভৃতি কানেক্টিভিটি সুবিধা রয়েছে।

ব্যাটারি:
৪.৫ ইঞ্চি ডিসপ্লের ফোন Primo E6 এ ১,৬৫০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। এই ফোনে একবার ফুল চার্জ দিলে টানা ৫.৫ ঘন্টা থেকে ৬ ঘন্টা ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে পারবেন। আর সাধারণ ব্যবহারে অনায়াসে একদিন চালিয়ে নিতে পারবেন।

OTA আপডেট সুবিধাঃ
এই ফোনে OTA বা Over The Air আপডেট সুবিধা থাকায় আপনি ভবিষ্যতেও সফটওয়্যার আপডেট পাবেন।

মূল্যঃ
ক্রেতাদের সাধ্যের কথা বিবেচনা করে আকর্ষণীয় ডিজাইন ও প্রয়োজনীয় নানা ফিচারসংবলিত Primo E6 স্মার্টফোনটির মূল্য মাত্র ৪,৭৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ! প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, এটি বাজারের সবথেকে কমদামের ১ গিগাবাইট র‍্যামের ফোন।

শেষকথাঃ
সাশ্রয়ী বাজেটে ১ গিগাবাইট র‍্যাম ও আপডেটেড অপারেটিং সিস্টেমের ফোন কিনতে চাইলে বর্তমান বাজারে Walton Primo E6 অনায়াসেই আপনার শীর্ষপছন্দের জায়গা দখল করে নিবে- একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

আজ তাহলে এপর্যন্তই। টিউমেন্টে আপনাদের মূল্যবান টিউমেন্ট জানাতে ভুলবেননা। সবাই ভালো থাকুন।