আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহ্র রহমতে সবাই ভাল এবং সুস্থ আছেন। সম্প্রতি সিম্ফোনীর বাজার জাত কৃত স্মার্ট ফোন সিম্ফোনী এক্সপ্লোরার ডাব্লিউ ৩৫ স্বল্প মূল্যের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। আসুন আজ দেখে নেই আসলে এই হ্যান্ডসেট থেকে আপনি কি কি আশা করতে পারেন। আসলেই কি আপনি এই হ্যান্ডসেট সম্পর্কে যা ভাবছেন তা ঠিক কিনা? কিংবা এই হ্যান্ডসেট আপনার চাহিদার ঠিক কতটুকু মেটাতে সক্ষম। এই হ্যান্ডসেটটি বেশ সস্তা মাত্র ৬২৯০/- টাকায় পাবেন ৩জি ভিডিও কল করতে সক্ষম এই হ্যান্ডসেটটি।
ওএসঃ এন্ড্রয়েড জেলিবিন ৪.১.১
প্রসেসর ও চিপসেটঃ মিডিয়া টেক এমটি৬৫৭৫ এআরএম৭ ১ গিগা হার্টজ্
জিপিইউঃ PowerVR SGX531
স্ক্রীন রেজ্যুলেশনঃ HVGA (480*320)
টাচঃ ক্যাপাসিটিভ
র্যামঃ ৫১২ মেগা বাইট (ব্যবহার যোগ্য ৪৭৫ মেগা বাইট)
রমঃ ৭৮৬ মেগা বাইট ব্যবহার যোগ্য
ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজঃ ১.৭৮ গিগা বাইট
সেন্সরঃ প্রক্সিমিটি, এক্সিলারোমিটার, কম্পাস।
ক্যামেরাঃ ২.০ মেগা পিক্সেল রিয়ার এবং ভিজিএ মানের ভিডিও কলিং।
কানেক্টিভিটিঃ থ্রি জি, ইডিজিই, জিপিআরএস, ওয়াই ফাই, ব্লুটুথ, জিপিএস।
ব্যাটারীঃ ২০০০ মিলি এম্পিয়ার।
আসুন এবার দেখে নেই সেটের কোন টি কেমনঃ
১. টাচঃ এর এইচভিজিএ স্ক্রীন এর কোয়ালিটি খুব একটা ভাল না হলেও এর টাচ সেন্সিটিভিটি মূল্য বিবেচনায় অসাধারণ। আশা করছি যারা এই হ্যান্ডসেট দিয়ে প্রথম এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহার শুরু করবেন তারা মোটেও হতাশ হবেননা।
২. সেন্সরঃ এর প্রক্সিমিটি এবং এক্সিলারোমিটার সেন্সর এই মূল্যের যে কোন হ্যান্ডসেটের থেকে ভাল। মোশন বেজড্ গেম খুব সাচ্ছন্দেই খেলতে পারবেন।
৩. সেটের গতিঃ জেলিবিন ওএস এ চলার কারণে ১৫-২০ টি এপ্লিকেশন ইন্সটল করলে এর র্যাম প্রায় ৩০০ মেগা বাইটের বেশি খরচ হয়ে যায়। তারপরেও সেটটি বেশ দ্রুত গতির। এর গতি একজন সাধারন ব্যবহারকারীকে সন্তুষ্ট করতে যথেষ্ঠ।
৪. মেমরিঃ আপনি এই সেটের বিল্ট ইন মেমরি হিসেবে পাচ্ছেন ১.৭৮ গিগা বাইটের স্টোরেজ। সেই সাথে ৭৮৬ মেগা বাইটের রম অনায়াসেই ৫০-৬০ টি এপ্লিকেশন ইন্সটলের জন্য যথেষ্ট হবে। কিন্তু ৪৭৫ মেগা বাইটের র্যামের অধিকাংশ জায়গা এপ্লিকেশন ইন্সটলে ব্যবহার হয়ে যাবে বলে, ধারণা করছি ৭৮৬ মেগা বাইট এর অর্ধেক ফুরোনোও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, যদি না এর রুট করে র্যাম এক্সপান্ডারের সাহায্যে র্যাম কিছুটা বাড়িয়ে নেওয়া হয়। আর তাতেও কেমন কাজ হবে তা ঠিক এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না যেহেতু এর রুটিং প্রসেস এখোনও কোথাও পাইনি।
৫. ইন্টারনেটঃ এন্ড্রয়েড ইন্টারনেট ছাড়া একেবারেই মুল্যহীন। ইন্টারনেট ব্রাউজের জন্য এতে ওয়ান ব্রাউজার, গুগোল ক্রোম দেওয়াই আছে, তবে আমার কাছে ডলফিন ব্রাউজার ভাল লাগে, তাই আমি ডলফিন ব্রাউজারে বেশ ভাল গতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছি। তবে মিনিট বিশেক ইন্টারনেট ব্যবহার করলেই সেট বেশ গরম হয়ে ওঠে। এছাড়া থ্রি জি সুবিধা থাকায় উচ্চ গতির ইন্টারনেট, মোবাইল টিভি এবং ভিডিও কল করার ভাল ব্যবস্থা আছে।
৬. ক্যামেরাঃ সাধারন চায়নিজ মোবাইলের গতানুগতিক ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে ফ্রন্ট ক্যামেরা কম আলোতে ছবি দেখাতে পারে না। তার মানে যদি আপনি অল্প আলোর মধ্যে ভিডিও কল করেন তবে অন্য প্রান্তের কলারের আপনাকে দেখতে বেশ বেগ পেতে হবে। তবে এত অল্প মূল্যে এর চেয়ে ভাল ক্যামেরা আশা করা যায় না।
৭. কল কোয়ালিটিঃ আমার কাছে কল কোয়ালিটি খুব একটা ভাল মনে হয়নি। জোরালো ও স্পষ্ট নয়। সেই সাথে ফোনের লাউড স্পিকারটিও অন্যান্য চাইনিজ ফোনের মত অনেকটা বাজখাই আওয়াজ দেয়।
৮. গেমিংঃ এই ফোনটিতে গেমিং এর জন্য বেশ ভাল একটি জিপিইউ থাকলেও অনেক গেম খেলা সম্ভব হয়নি (এখানে তুলনা করছি ওয়ালটন প্রিমো হ্যান্ডসেটের সাথে যার মূল্য ৭৪৯০/- টাকা)। তবে Riptide GP, Temple Run এর সব গুলো সংস্করণ, Highway Rider এর মত হাই রেজ্যুলেশন থ্রিডী গেম সুন্দর ভাবে এবং কোন ধরণের ল্যাগ ছাড়াই চলছে। এছাড়াও আমি আরও কিছু গেম খেলে দেখেছি।
৯. ব্যাটারীঃ এতে বেশ শক্তিশালী ২০০০ মিলি এম্পিয়ারের ব্যাটারী দেওয়া হয়েছে। অন্যদের ক্ষেত্রে একই ধরনের ফলাফল নাও আসতে পারে, তবে আমার ক্ষেত্রে ৪০+ ঘন্টার ব্যাকআপ পেয়েছি, ফোন কল, ঘন্টা ২-৩ গেম, আর প্রায় ১ঘন্টা করে ইন্টারনেট ও হেড ফোনে গান শুনে। তবে এখনই এত খুশি হওয়ার কিছু নেই। এই ব্যাটারী পূর্ণ চার্জ করতে প্রায় ৫-৬ ঘন্টা চার্জার লাগিয়ে রাখতে হচ্ছে। অতএব রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় নির্দ্বিধায় চার্জার লাগিয়ে ঘুম থেকে উঠে চার্জার খুলতে পারেন 🙂 ।
এই বেঞ্চমার্কিং থেকে দেখা যাচ্ছে এর স্কোর ৬৬৪৬ যা সত্যিই আশাব্যঞ্জক।
Quadrant Professional এর বেঞ্চমার্কিং থেকে দেখা যাচ্ছে এর কার্যক্ষমতা বেঞ্চমার্ক অনুযায়ী Motorola ATRIX 4G এর চেয়েও বেশি!!!
Nenamark 2 এর বেঞ্চমার্ক অনুযায়ী এটি LG Optimus 2X এর চেয়েও এর গ্রাফিক্স প্রসেসিং উন্নত মানের!!!
অনেক লেখা লেখি হল। আপনাদের সামনে উঠিয়ে ধরেছি যতটুকু সম্ভব, উল্লেখ করতেই হচ্ছে মিডিয়াটেকের এমটি৬৫৭৫ চিপসেটের কল্যাণেই এই উচ্চ স্কোর করতে সক্ষম হয়েছে এই ফোন সেটটি। এর মানে এই নয় যে, এই হ্যান্ডসেট উল্লিখিত হ্যান্ডসেটের চেয়ে গুনগত ভাবে উন্নত। তবে এর পারফর্ম্যান্স আপনাকে হতাশ করবেনা এটা অন্তত এই বেঞ্চমার্ক স্কোর গুলো থেকে স্পষ্ট হচ্ছে। এর ডিসপ্লে, ক্যামেরা ভালমানের নয় সেটি আগেই উল্লেখ করেছি। সেই সাথে এই সেটের সবচেয়ে বড় দূর্বলতা ব্যাটারী খুব দ্রুত গরম হওয়া। অনেকেই বলতে পারেন স্মার্টফোনের ব্যাটারী গরম হওয়া খুবই স্বাভাবিক, দামী সেটে হয়ত গরম কিছুটা কম হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে ব্যাটারী অতি দ্রুত গরম হলেও তা এখন পর্যন্ত হ্যান্ডসেটের উপর কোন দৃষ্টি গ্রাহ্য প্রভাব ফেলেনি। তারপরেও খুবই দ্রুত গরম হওয়াটা কারই আকাঙ্খিত হতে পারে না। এর থ্রিডি পারফর্ম্যান্স খুব ভাল হলেও অনেক বেশির ভাগ ভাল মানের গেম খেলা সম্ভব হয়নি।এই হ্যান্ডসেটের সাথে বিনামূল্যে প্রদানকৃত হেডফোন খুবই নিম্ন মানের। তবে ভাল মানের হেডসেট এবং থার্ডপার্টি অডিও ভিডিও প্লেয়ার ব্যবহারের মাধ্যমে বেশ ভাল আউটপুট পাবেন। এই ক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত পছন্দ PowerAMP Music player এবং ভিডিওর জন্য BSplayer।
শেষ কথায় এটাই বলতে পারি যে, ৬২৯০/- টাকায় আপনার সাধ আর সাধ্যের মধ্যে বেশ একটা সামঞ্জস্য আনতে সক্ষম এই হ্যান্ডসেট। এন্ট্রি লেভেলের ইউজারদের জন্য আদর্শ মনে হয়েছে এই হ্যান্ডসেটটিকে। বিশেষ করে সম্প্রতি স্যামসাং এর বাজারজাতকৃত ৭৯৯০/- মূল্যের জেলিবিন সম্বলিত হ্যান্ডসেটের চেয়ে এটি বেশ ভাল পারফর্ম করতে সক্ষম। আমি মনে করি যারা কম টাকায় হ্যান্ডসেট কিনছেন তাদের জন্য এই হ্যান্ডসেটটি সেরা হবে। সেই সাথে বলতে হচ্ছে দুর্বলতা থাকার পরেও এই হ্যান্ডসেটটি আমার নজরে এন্ট্রিলেভেল ফোন হিসেবে ৯/১০। এখন ভেবে দেখুন এটা কি আপনার চাওয়া পাওয়ার সাথে যায়। যদি আপনি উপরিউক্ত সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা মেনে নেওয়ার মানসিকতা রাখেন তবেই হ্যান্ডসেটটি কিনুন। অন্যথায় এটি আপনাকে মানসিক অতৃপ্তিতে ভোগাতেই পারে।
আজ এ পর্যন্তই। সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। এই কামনায় আজকের মত..... আল্লাহ্ হাফেজ। 🙂
আমি রহস্যময় অভিযাত্রী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 74 টি টিউন ও 451 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
vhai review ta onek sundor hoyeche.