আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। সম্প্রতি আমার এক বন্ধু নতুন ল্যাপটপ কিনেছে। বাজেট খুব বেশি না থাকায় সে ইন্টেল কোর আই থ্রী প্রসেসর বিশিষ্ট ল্যাপটপ কিনতে আগ্রহী থাকলেও কম টাকায় পেয়ে যাওয়ায় আরেকটু শক্তিশালী প্রসেসরের ল্যাপটপ নিয়েছে। ল্যাপটপটি আমার কাছে কয়েক দিন থাকায় আমি এটা ব্যাবহার করে যে পার্ফরম্যান্স উপলব্ধি করেছি তাই এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। সবচেয়ে বড় কথা এই ল্যাপটপটি এই মূহুর্তে বাজারের সবচেয়ে কম মূল্যের Intel Core I5 3rd generation প্রসেসর বিশিষ্ট ল্যাপটপ। আচ্ছা কম মূল্য কম মূল্য করছি। দাম টাই আগে বলে নিচ্ছি। "রায়ান্স কম্পিউটারর্স" থেকে কেনা এই ল্যাপটপের মূল্য মাত্রঃ ৪৫,৭০০/- । আসুন তাহলে জেনে নেই এই ল্যাপটপের কনফিগারেশন কি?
কনফিগারেশনঃ
ক্লক স্পিডঃ ২.৫ গি হা যা ৩.১ গি.হা. পর্যন্ত বুস্ট করার ক্ষমতা রাখে। ৩ মেগা বাইটের ক্যাশ মেমরি যুক্ত।
কোরঃ ২টি সেই সাথে ৪টি থ্রেডের প্রসেসর
উইন্ডোজ ৮ এ এর এক্সপেরিয়েন্স ইন্ডেক্স স্কোর ৪.৫। সাধারন মানের দু একটা গেমস চালিয়ে দেখেছি যা ভাল ভাবে চলেছে। টাচ প্যাড লক, স্ক্রল, মাল্টিটাচ সাপোর্ট করে। টাইপিং এর সময় টাচ প্যাড লক খুব ভাল ভাবে কাজ করে। ফুল এইচ ডি ভিডিও খুবই স্মুথলি চলে। আমি সুপার এইচ ডি চালাতেও কোন সমস্যার সম্মুখীন হইনি (২১৬০পি)। ডেস্কটপ টু ল্যাপটপ ল্যান করে সর্বোচ্চ ৪০ মেগা বাইট প্রতি সেকেন্ড হারে ডাটা ট্রান্সফার করা গিয়েছে। ওয়াই ফাই হটস্পট করে খুব ভাল ভাবে মানে স্ট্রং নেটওয়ার্ক তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। মোজিলা ফায়ার ফক্স স্টার্ট আপ টাইম ১ সেকেন্ডের মত (এটা আন্দাজ করা আসলে সময় স্টপওয়াচে মেপে দেখিনি 🙂 ) মাল্টি টাস্কিং খুব ভাল ভাবেই করা যায়।উইন্ডোজ ৮ এ সিস্টেম বুটিং টাইম ১১ সেকেন্ডের মত। আর উইন্ডোজ ৭ এ এ সময় প্রায় ২৮-৩২ সেকেন্ড।
দাম যেহেতু কম সেহেতু কিছু মন্দ দিক না থাকলেই নয় আর কি... এর স্পিকার এর সাউন্ড হতাশা জনক যদিও Altech Lancing এর সাউন্ড সিস্টেম , তবে এর আওয়াজ একেবারে বাজখাই টাইপের। এর ওয়েব ক্যামেরা ১.৩ মেগা পিক্সেলের হলেও তা চাইনিজ মোবাইলের CIF ক্যামেরার মত। অর্থাৎ এক কথায় খুবই খারাপ মানের ওয়েব ক্যামেরা। এর সাথে দেওয়া ড্রাইভার ৬৪ বিটের এবং ড্রাইভার ইন্সটল করার সময় exe ফাইল সরাসরি ইন্সটল না হয়ে উইন্ডোজ ড্রাইভে একটি ফোল্ডার তৈরি করে এক্সটাক্ট হয় পর বর্তীতে সেখান থেকে ইন্সটল করতে হয়। দেখতে খারাপ না হলেও এর বডির কোন প্রটেকশন ব্যবহার করা হয়নি আর মেটালিক বডি না হওয়ায় এর প্লাস্টিকের বডির রং কত দিন টিকবে তা বলা যাচ্ছে না। এর সাথে জেনুইন উইন্ডোজ দেওয়া নেই। কী-বোর্ড এর ফাংশন কী (F1....F12) সর্ট কী হিসেবে কাজ করে এবং ফাংশন কী এর কাজ করার জন্য Fn বাটন চাপতে হয় (উদাহরণঃ রিফ্রেশ করার জন্য Fn+F5). কী বোর্ডটিও খুব একটা সুবিধার মনে হয়নি। যেহেতু ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড নেই তাই উচ্চমানের প্রসেসর থাকার পরেও নতুন গেম গুলো খেলা যাবে না। আর ভিডিও এডিটিং এর কাজ খুব একটা সুবিধাজনক ভাবে করা যাবে না।
সবাই আবার ভাল দিকের থেকে মন্দ দিকের প্যারা বড় হওয়ায় ভয় পাবেননা। আমি সপ্তাহ খানেক ব্যবহার করে মোটেই অসন্তুষ্ট হই নি। আশা করি আপনারাও যদি আমার মত ছোট খাট ধরনের কাজ করে থাকেন তবে এই ল্যাপটপেই চলে যাবে। আর ১ বছরের ওয়ারেন্টিতো থাকছেই। (অফটপিকঃ সাধারণত ত্রুটি পূর্ণ ইলেকট্রনিক যন্ত্র ছাড়া অন্য যন্ত্র সহজে নস্ট হয় না, অর্থাৎ সমস্যা যুক্ত ল্যাপটপ হলে তা ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মাঝেই সমস্যা দেখাবে।)
পরিশেষেঃ একথা বলতে হচ্ছে গতানুগতিক অন্যান্য ল্যাপটপের মত ডিজাইন বা বাড়তি সুবিধা না থাকলেও দাম অনুযায়ী খারাপ না। আর এই ল্যাপটপের পার্ফরম্যান্স ইন্টেল কোর টু ডুও ডেক্সটপ প্রসেসর এর মত (২.৮ গি. হা. ই৭৪০০ মডেলের সাথে তুল্য)। যদি ডিজাইনের দিকে মনোযোগী হন বা সৌন্দর্যের সাথে সাথে হাই পার্ফরম্যান্স চান তবে ৫৬ *হাজারের নিচের মূল্যের ল্যাপটপ না কেনাই ভাল। শুধু ডিজাইন বা সৌন্দর্য আর মাঝারি মানের কাজ যদি হয় আপনার পছন্দ তবে এইচ পি এর প্রো-বুক সিরিজ কিংবা ডেল এর ভস্ট্রো সিরিজ হবে বেস্ট চয়েস। তবে এই দামে এই কনফিগারেশনের ল্যাপটপ হওয়ায় সামান্য বাড়তি সুবিধা অবশ্যই পাবেন।
আজ এ পর্যন্তই। এরপরের রিভিউ থাকবে এইচপি প্রোবুক ৪৪৩০এস মডেলের উপর।
আমি রহস্যময় অভিযাত্রী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 74 টি টিউন ও 451 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ভালো লাগলো। HD 4000, তাই গ্রাফিক্স কার্ড না হলেও চলে যাবে।
কোন সিরিজের ল্যান কেবল ভাইজান? আমার কেনা দরকার।