নিজের একটা হাই কনফিগারেশন ল্যাপটপ নেয়ার আমার বহুদিনের শখ ছিল ! সে শখ অনেক কষ্ট হলেও পূরণ করতে পেরেছি (আলহামদুল্লিাহ) । ইচ্ছা থাকলেও কাজের ব্যস্ততায় সময়ের অভাবে আগের মত টিউন করা হয়ে উঠেনা। ল্যাপটপটা কিনেছি প্রায় ২ মাস হল অথচ রিভিউ লেখছি আজ !
হাই কনফিগারেশন ল্যাপটপ নেয়ার অনেকজনই শখ আছে। তাই মূলত আমার আজকের এই রিভিউটি লিখছি।
(ছবিগুলি বড় করে দেখতে ছবিগুলির উপরে ক্লিক করুন)
১) প্রসেসরঃ মাইক্রোপ্রসেসরের যুগে এই ল্যাপটপটিতে ব্যবহার করা হয়েছে Turbo Boost Technology সমৃদ্ধ 3rd Generation এর Intel Core i7-3610QM প্রসেসর। যার স্পীড 2.3-3.3 GHz এবং ক্যাশিং ক্ষমতা 6 MB L3 Cache ।
এটি Intel এর তৈরী সর্বশেষ প্রসেসর তাই বুঝতেই পারছেন এর অসাধারণ ক্ষমতা।
২) মেমোরীঃ মেমোরী হিসেবে ল্যাপটপটিতে রয়েছে 4GB DDR3 র্যাম। রয়েছে সর্বমোট দুইটি র্যাম স্লোট তাই আপনার প্রয়োজনে 8GB পর্যন্ত আপগ্রেড করতে পারবেন।
৩) গ্রাফিক্সঃ জনপ্রিয় গ্রাফিক্স কার্ড নির্মাতা প্রতিষ্ঠান nVidia এর GeForce GT 630M মডেল যেটিতে রয়েছে 2GB DDR3 Dedicated গ্রাফিক্স মেমোরী। অর্থাৎ হাই কনফিগারেশন গেমিং এবং গ্রাফিক্সের সকল বড় ধরণের কাজ করতে পারবেন এটি দিয়ে। এছাড়াও ল্যাপটপটির নিজস্ব Intel HD 4000 মডেলের গ্রাফিক্স রয়েছে।
৪) হার্ডড্রাইভঃ এটিতে রয়েছে Toshiba কোম্পানীর তৈরী 750GB স্পেস সমৃদ্ধ হার্ডড্রাইভ। যার স্পীড 5400 RPM ।
৫) মাল্টিমিডিয়া ড্রাইভঃ এটিতে রয়েছে SuperMulti DVD Burner ! যেটি দিয়ে আপনি DVD এবং CD রিড ও রাইট করতে পারবেন।
৬) ডিসপ্লেঃ মনিটরের জনপ্রিয় প্রযুক্তি LED সমৃদ্ধ এটিতে ব্যবহার করা হয়েছে 15.6" (ইঞ্চি) Diagonal হাই ডিফিনেশন (HD) BrightView LED-backlit Display যার রেজুলেশন 1366 x 768 ।
৭) নেটওয়ার্ক কার্ডঃ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ কিংবা নেটওয়ার্কিং এর জন্য রয়েছে Integrated 10/100/1000 Gigabit Ethernet LAN (RJ-45 connector) ।
৮) ওয়ারলেস কানেক্টেভিটিঃ এটিতে রয়েছে 802.11b/g/n WiFi সুবিধা এবং ব্যাবহার করা হয়েছে ব্লুটুথের সর্বশেষ সংস্করণ Bluetooth 4.0 । যার ফলে আপনি আপনার স্মার্টফোনকে মডেম হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও আগের চেয়ে অত্যান্ত দ্রুত গতিতে ফাইল ট্রান্সফার করতে পারবেন।
এই ব্লুটুথ 4.0 থাকায় আমার দারুন সুবিধা হয়েছে। এই ব্লুটুথটিতে আবার Proximity সুবিধা আছে। এই সুবিধার জন্য আপনি আপনার ফোনকে ল্যাপটপের রিমোট লকিং ডিভাইস হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
অর্থাৎ কম্পিউটারের সাথে আপনার ব্লুটুথ সমৃদ্ধ ফোনটি কানেক্ট করা আছে। এখন আপনি যদি আপনার ফোনটি পকেটে করে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে যান তাহলে আপনার কম্পিউটার অটোমেটিক লক হয়ে যাবে। ব্লুটুথগুলির ফ্রিকোয়েন্সীর সীমানা সাধারণত ১০ মিটার হয়। অর্থাৎ আপনি আপনার ফোনকে সঙ্গে করে ১০ মিটার দুরুত্বে চলে গেলেই কম্পিউটার আপনা থেকেই লক হয়ে যাবে যাতে কেউ আপনার কম্পিউটার ব্যবহার না করতে পারেন। এটি অবশ্যই একটি অপশনাল সুবিধা মানে আপনার পছন্দ না হলে বা প্রয়োজন নাহলে অফ করে রাখতে পারবেন।
৯) সাউন্ডঃ ল্যাপটপটিতে HP কোম্পানীর দারুন একটি অডিও সিস্টেম Beats Audio প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হয়েছে। এতে রয়েছে মোট ৪টি ইন্টারনাল অডিও স্পীকার। সাথে Beats Audio প্লেব্যাক।
এমনিতেই ল্যাপটপ এর সাউন্ড দারুন। তারউপর আপনার যদি বড় স্পীকার বা সাউন্ডবক্সে গান শোনার অভ্যাস থাকে তাহলে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন এর সাউন্ড কোয়ালিটিতে। আমি অবশ্যি হেডসেট এ শুনি 😉
HP Beats Audio প্রযুক্তি সমন্ধে জানতে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।
এছাড়াও এটিতে রয়েছে HP Triple Bass Reflex Subwoofer সাউন্ড সিস্টেম।
১০) পয়েন্টিং ডিভাইসঃ ল্যাপটপটির টাচপ্যাডটি দারুন লেগেছে আমার কাছে। অন্য ল্যাপটপে টাচপ্যাড ঝামেলা আর উল্টাপাল্টা কাজ করে মনেহত। তাই ব্যবহার করতাম না কিন্তু এটিতে দারুন লেগেছে। দুইটা আঙ্গুল দিয়ে টাচ করলে স্ক্রোল হবে (পোর্টরেইট এবং ল্যান্ডস্কেপ দুই রকমেরই স্ক্রোলিং হবে) এবং দুইটা আঙ্গুল দিয়ে আবার জুমও করতে পারবেন (আইফোনের নেট ব্রাউজারে দেখেছিলাম এরকম)। আর হ্যা আপনি যদি মাউস ব্যবহারে অভ্যস্ত হন তাহলে নিশ্চই টাচপ্যাড আপনার কাছে ঝামেলার মনে হবে তাই আপনি চাইলেই এই টাচপ্যাড সুইচ অফ করে রাখতে পারবেন। ফলে কিবোর্ডে টাইপ করার সময় টাচপ্যাড ঝামেলা করবে না।
১১) কিবোর্ডঃ এটিতে ব্যবহার করা হয়েছে Full-sized island-style keyboard সাথে integrated numeric keypad ! ফলে যারা হিসেবি তাদের দারুন সুবিধা হবে।
১২) পিসি কার্ড স্লোডঃ ল্যাপটপটিতে রয়েছে বিল্ট ইন কার্ড রিয়েডার ! ফলে আপনার ফোনের কিংবা ক্যামেরার মেমোরীকার্ড কম্পিউটারের সাথে সংযোগের জন্য আলাদা কোন কার্ড রিয়েডারের প্রয়োজন নেই। সরাসরি এই ল্যাপটপে মোমোরীকার্ড রিড-রাইট করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে মাইক্রো মোমোরী কার্ডগুলির জন্য চিপ ব্যবহার করতে হতে পারে।
১৩) এক্সট্রানাল পোর্টঃ
১৪) সিকিউরিটিঃ ল্যাপটপটিতে আমার সবচেয়ে দারুন লেগেছে এর সিকিউরিটি সিস্টেমগুলি। দামী ল্যাপটপ হওয়ায় স্বাভাভিকভাবেই ভয় থাকে চুরি হওয়া, হারিয়ে যাওয়া এবং সবচেয়ে বেশি ভয় থাকে নিজের ব্যাক্তিগত তথ্যের। নিজের ল্যাপটপে ব্যাংক, ক্রেডিটকার্ড এবং আপনার ও আপনার ক্লায়েন্টদের সাইটের এ্যাডমিন এক্সেস এর গুরুত্বপূর্ণ পাসওয়ার্ড প্রায় সবারই আছে। ল্যাপটপ চুরি হলে যে ক্ষতিটা হবে তার থেকে বেশি ক্ষতি হবে যদি চোররা আপনার পাসওয়ার্ডগুলি জেনে যায়।
আর তাই এই ল্যাপটপটিতে রয়েছে দারুন কয়েকটি সিকিউরিটি সিস্টেম
ক) HP SimplePass Fingerprint Reader ঃ ল্যাপটপটিতে রয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডার। হ্যা ! আপনি ঠিকই ভাবছেন ! আপনার আঙ্গুলের ছোয়া ছাড়া ল্যাপটপ কেউ আনলক করতে পারবে না। ফলে বন্ধুদের কিংবা বাসার বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে একদম টেনশন করার দরকার নেই।
খ) Power-on password ঃ চুরি হওয়া কোন ল্যাপটপ বা আপনি বাইরে গেলে আপনার বন্ধুরা সহজেই নতুন OS সেটাপ দিয়ে আপনার ল্যাপটপ ইচ্ছামত ব্যবহার করতে পারে কিন্তু এই ল্যাপটপটিতে Power-on password সুবিধা থাকায় আপনি BIOS থেকে আপনার কম্পিউটারে পাসওয়ার্ড দিতে পারবেন। ফলে কেউ কম্পিউটার চালু করলে প্রথমেই তারকাছে Power-on password চাওয়া হবে। ফলে কম্পিউটার চালু করাতো দূরের কথা, নতুন OS (Operating System) সেটাপই দিতে পারবেন না।
গ) Kensington MicroSaver lock slot : এটিও দারুন একটি সিকিউরিটি সুবিধা। আপনি Kensington এর MicroSaver Lock বাজার থেকে কিনে নিয়ে ল্যাপটপ আপনার টেবিল কিংবা শক্ত কিছুর সাথে তালাবদ্ধ করতে রাখতে পারবেন। এর জন্যই রয়েছে এই স্লোটটি। এভাবে তালা দিয়ে রাখলে চোর হাতের কাছে ল্যাপটপ পেয়েও হাতিয়ে নিতে পারবে না সহজেই। আহ ! আমারতো ভাবতেই চোরের জন্য আফসুস হচ্ছে ! 😛
ঘ) এছাড়াও ল্যাপটপটি 3rd party security lock ডিভাইসগুলি সাপোর্ট করবে।
১৫) ওয়েবক্যামঃ এটিতে ব্যবহার করা হয়েছে HP TrueVision HD Webcam । এবং ওয়েবক্যামরাটি লো-লাইট এ অটোমেটিক এ্যাডযাস্ট হয়ে যায়। ফলে এখন হাই ডিফিনেশন ভিডিও চ্যাটিং কোন ব্যাপারই নয়।
১৬) বোনাস সুবিধাঃ ল্যাপটপটিতে বিল্ট-ইন ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে HP Coolsense প্রযুক্তি। অর্থাৎ ল্যাপটপ তার তাপমাত্রা বজায় রাখতে মারাত্বকভাবে পারদর্শী। আমার কাছে এটির সবচেয়ে যে ব্যাপারটি ভাল লেগেছে সেটি হল ল্যাপটপ যদি আপনি বাইরে বসে আপনার পায়ের উপর ব্যবহার করেন তাহলে ল্যাপটপের এই কুলিং সিস্টেম দারুনভাবে আপনাকে কমফোর্ট রাখবে !
১৭) ব্যাটারীঃ এটিতে ব্যবহার করা হয়েছে 6-cell Lithium-Ion (Li-Ion) এবং সাথে আছে 120W slim AC Power Adapter চার্জার। ল্যাপটপটির চার্জ বেশ ভালই থাকে। আমি ৪ থেকে ৪.৩০ ঘন্টার মত ব্যকআপ পেয়েছি। এখন অবশ্যি দাম বেশি হলেও বিদ্যুৎ বেশ ভালই থাকে তাই ব্যাকআপ নিয়ে কোন আপত্তি নেই।
HP থেকে দেয়া অনেকগুলি দারুন সফটওয়্যার এর সাথে থাকার পাশাপাশি আপনি পাবেন Windows 7 Home Premium এর লাইসেন্সড ভার্সন ! ল্যাপটপটির পিছনে সিরিয়াল-কী সহ জিনুইন উইনডোজ এর সীল দেয়া আছে। তাই আপনার জিনুইন উইনডোজ থাকায় অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে আর ভাবতে হবে না। অন্য কিছু পাইরেটেড ব্যবহার করলেও এখন থেকে বলতে পারবেন আমি কিনে উইনডোজ ব্যবহার করি।
আমি মনে করি একটি ভাল রিভিউ ফুটিয়ে তুলতে হলে খারাপ দিকটাও আলোচনা করা উচিত ! তবে নিচে যে খারাপ দিকগুলো লিখব সেগুলি নিয়ে একদম হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। আমি যে খারাপ দিকগুলি লিখব সেগুলি খারাপ নয় বরং নিচের সুবিধাগুলি থাকলে আরও দারুন হত ল্যাপটপটি।
১) হার্ডড্রাইভঃ এটির হার্ডড্রাইভ ৭৫০ জিবি কিন্তু তাতে কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হল হার্ডড্রাইভটির স্পীড সাধারণ ল্যাপটপ বা কম্পিউটারগুলির হার্ডড্রাইভ এর মত। অর্থাৎ 5400 rpm । স্পীডটি যদি 7200 rpm হত তাহলে আরো দারুন হত।
২) মোমোরীঃ এটির র্যাম মাত্র 4GB দেয়া হয়েছে। যদি 8GB দেয়া হত তাহলে মারাত্বক ভাবে দারুন হত।
৩) মাল্টিমিডিয়া ড্রাইভঃ এটিতে CD ও DVD রিড রাইট করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে SuperMulti DVD Burner । এটিতে যদি ব্লুরে এর সাপোর্ট থাকত তাহলে আরো দারুন হত।
***********************************
ল্যাপটপটির বর্তমান বাজার মূল্য ৮০ হাজার টাকা
***********************************
ল্যাপটপ নিয়ে এতক্ষণ যে রিভিউটি দিলাম তাতে আমি নিশ্চিত আপনার বড়ই আফসোস হচ্ছে এরকম একটি ল্যাপটপ নেয়ার। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই। আমি নিশ্চিত আপনিও একদিন এরকম একটি ল্যাপটপ বা এরথেকেও বেশি কনফিগারেশন সমৃদ্ধ ল্যাপটপের গর্বিত মালিক হবেন। ইনশাআল্লাহ !
কনফিগারেশনগুলির সূত্রঃ এক, দুই
আমি সাইফুল ইসলাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 185 টি টিউন ও 3440 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
টপটিউনার হতে চাই !
জটিল একখান ল্যাপটপ কিনছেন