বরাবর
সি. ই. ও/ এইচ. আর ডিপার্টমেন্ট
সার্ভিস সলিউশন লিমিটেড
বি. এন. এস সেন্টার, প্লট-৮৭, (৬ষ্ঠ তলা)
ঢাকা ময়মনসিংহ রোড (এয়ারপোর্ট রোড)
সেক্টর-৭, উত্তরা, ঢাকা।
বিষয় - অন্যায় আচরনের প্রতিবাদে পদত্যাগপত্র
জনাব,
গত অক্টোবর ২০১১ এর মাঝামাঝি সময়ে bdjobs.com এর মাধ্যমে, যেহেতু বেকার ছিলাম, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর আবেদন করছিলাম। হঠাৎ করেই সার্ভিস সলিউশন লিমিটেড (সংক্ষেপে SSL) হতে ফোন আসলো এবং জানানো হলো SSL একটি কল সেন্টার, যা দিনরাত ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে, তিন শিফটে ডিউটি অদল-বদল হয়। সপ্তাহে ১ দিন ছুটি, তবে নির্দিষ্ট কোন দিন নয়। ঈদেও বন্ধ নেই। বেতন ৮,০০০ টাকা এবং ওয়ান ওয়ে ট্রান্সপোর্ট। শর্তে রাজী হওয়ায় ইন্টারভিউতে আমন্ত্রন জানানো হলো।
নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হয়ে জানলাম, এটা টেলিকম সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সিটিসেল এর আউটসোর্সড কলসেন্টার। সিটিসেল মোবাইল ফোন হতে ১২১ এ বা অন্য অপারেটর হতে ০১১৯৯-১২১১২১ এ ডায়াল করলে তা এখানেই আসে। আমার ও আমার মত অন্যান্যদের দায়িত্ব হলো ফোন রিসিভ করা ও প্রয়োজনীয় সমাধান দেয়া।
প্রশ্ন হলো, সিটিসেল নিজস্ব কর্মী দিয়ে কলসেন্টার পরিচালনা না করে ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কেন করছে ? উত্তর হলো সরাসরি নিজস্ব কর্মী হিসেবে এই কয়েকশ ছেলেমেয়েকে নিয়োগ প্রদান করলে তাদের জন্য নিয়োগ -প্রমোশন -বরখাস্তের সুস্পষ্ট নীতিমালা, পেনশন, গ্রাচুইটি, বীমা, একক বেতন স্কেল ইত্যাদি বিষয় জড়িত হয়। কিন্তু থার্ড পার্টির মাধ্যমে কণ্ট্রাক্টে কাজ করিয়ে নিলে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।
সিটিসেলের এই কাজ শ্রমশোষনের এক নতুন কৌশল। বাংলাদেশের জনগন সিটিসেল মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমান মুনাফা উপার্জন করছে এবং সেই প্রতিষ্ঠানেই বাংলাদেশের জনগনকে সরাসরি নিয়োগ দিতে এত আপত্তি !!! বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ লাইসেন্সে বাড়তি একটি শর্ত আরোপ করা, যার আওতায় প্রত্যেক টেলিকম কোম্পানি তার কার্যাবলীর নুন্যতম ৯৯ শতাংশ নিজস্ব ফুলটাইম, পার্মানেন্ট, FIXED বেতনভিত্তিক কর্মীর মাধ্যমে সম্পাদন করবে। একই সাথে প্রত্যেকের জন্য একক বেতন স্কেল, নিয়োগ -প্রমোশন -বরখাস্তের সুস্পষ্ট নীতিমালা, পেনশন, গ্রাচুইটি, বীমা ইত্যাদি নিশ্চিত করবে। এতদিন থার্ড পার্টির মাধ্যমে যেসব কর্মীরা টেলিকম কোম্পানিতে নিয়োজিত ছিলো, তাদের সরাসরি মূল প্রতিষ্ঠানে একীভূত করা হবে। (শুধুমাত্র মোবাইলের দোকানদার ভাইয়েরা, যারা সব মোবাইল কোম্পানির কার্ড রিচার্জ, পাবলিক ফোন, বা সিম রিচার্জ করেন, তারা যেহেতু ব্যবসায়ী, তারা এর আওতার বাইরে থাকবেন) টেলিকম কোম্পানিগুলো নিজেই যেহেতু কল সেন্টার পরিচালনায় পূর্ণ মাত্রায় সক্ষম, তাদেরতো থার্ড পার্টির কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। থার্ড পার্টির মাধ্যমে নিয়োজিত কর্মীদের বয়স পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাদেও কাজ-ও পার্মানেন্ট নয় বরং কন্ট্রাক্ট ভিত্তিক। এখনি এই সমস্যার সমাধান না হলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার উদ্ভব হবে।
মূল প্রসঙ্গ ইন্টারভিউতে ফেরৎ আসা যাক। ঐ মূহুর্তে চাকুরীর প্রচন্ড প্রয়োজন, এত কিছু চিন্তাভাবনা করার সময় ছিলো না। ইন্টারভিউতে সফল হলাম, ট্রেনিং-এ আমন্ত্রণ জানানো হলো। বাংলাদেশের আর সব প্রতিষ্ঠানে ট্রেনিং হয় চাকুরী হওয়ার পর, এখানে হয় চাকুরী হওয়ার আগে। যারা দুই সপ্তাহের ট্রেনিং এ সফল হবে, তারা চাকুরী পাবে। ট্রেনিং এ অংশ নেয়ার জন্য কোন টিএ, ডিএ, দুপুরের লাঞ্চ দেয়া হয় না। আমি এই ট্রেনিং এ অংশ নিয়ে চুড়ান্তভাবে সফল হলাম এবং ১৩ নভেম্বর ২০১১-তে SSL এর CEO কর্তৃক স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্র দেয়া হল যা চার মাসের কণ্ট্রাক্ট।
চাকুরীতে ঢুকার পরই এক ধরনের প্রতারনার সম্মুখীন হলাম। ডিউটি দেখা গেলো মর্নিং শিফটে সকাল ৬টা ৪৫ হতে দুপুর ৩টা ৩০ এবং ইভিনিং এ দুপুর ২টা ১০ হতে রাত ১১টা পর্যন্ত। যদিও ইন্টারভিউতে বলা হয়েছিল ডিউটি হবে মর্নিং এ ৭-৩, ইভিনিং এ ৩-১১ ও রাতে ১১-৭ পর্যন্ত। ব্যক্তিগতভাবে ৯ ঘন্টা ডিউটিতে আমার আপত্তি নেই কিন্তু বিষয়টি খুলে বলা উচিৎ ছিল। বাড়তি পরিশ্রমের এই টাকাও বেতনে সংযুক্ত হচ্ছে না। যাই হোক, সব কিছু মেনে নিয়ে ডিউটি শুরু করলাম কিন্তু ২৭ নভেম্বর ২০১১ ও ২৮ নভেম্বর ২০১১ -তে আমার ডিউটি যেভাবে বরাদ্দ করা হয়েছে তা আমার সহ্যসীমার যে লেভেল, তার অনেক উপর দিয়ে চলে গেল। ২৭ তারিখে ডিউটি ইভিনিং-এ এবং ২৮ তারিখে মর্নিং-এ । ২৭ তারিখ-এ রাত ১১টায় ডিউটি শেষ করার পর উত্তরা হতে মাইক্রোবাস পল্লবী বাসস্ট্যান্ডে ড্রপ করবে রাত ১২টা ৩০ এর একটু আগে। দীর্ঘ পথ হেটে রূপনগরে বাসায় পৌছে রান্না-খাওয়া, পোশাক বদল, মশারী টানানো ইত্যাদি শেষ করে ঘুম শুরু হতে বাজবে রাত ২টা ৩০। আবার পরের দিন সকালে ডিউটিতে যোগদানের জন্য ঘুম হতে উঠতে হবে রাত ৩টা ৩০ এ । ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুম, বিছানা ঠিক করা, কাপড় ইস্ত্রি, জুতা পালিশ, খাওয়া, পরবর্তী দিনের দুপুরের খাবার যেহেতু সাথে নিতে হবে তা প্রস্তুত করা ইত্যাদিতে ২ ঘন্টা সময় ব্যয় করে ৫টা ৩০ এ গাড়িতে উঠার জন্য বের হতে হবে। আমার প্রশ্ন হল, মানুষ এক ঘন্টা ঘুমিয়ে ডিউটি করে কিভাবে ? দৈনিক আট ঘন্টা কাজের দাবিতে শিকাগোতে কয়েকজন শ্রমিক শাহাদাৎ বরণ করেছিলেন, যার জন্য মে দিবস পালিত হয়। জাতিসংঘ ও আই.এল.ও ঘোষিত বিধান অনুযায়ী কাজের স্ট্যান্ডার্ড টাইম হল দৈনিক ৮ ঘন্টা। ২৪ ঘন্টায় ৮ ঘন্টা ডিউটি হলে অবশিস্ট সময় থাকে ১৬ ঘন্টা। শিফট বদল হলেও সেক্ষেত্রে ১৬ ঘন্টার গ্যাপ থাকবে, সেটা কোথায় ? গ্রামে এখন-ও কৃষকরা প্রাচীন পদ্ধতিতে গরু দিয়ে হালচাষ করে। সেই কৃষকরা পর্যন্ত গরুকে দিয়ে সারাদিন পরিশ্রম করিয়ে সারারাত্রি বিশ্রামের সুযোগ দেয়। আপনারা সিটিসেলের কর্মকর্তারা যেভাবে শিফট সাজান, তাতে মনে হল আমরা মানুষ নই, পশু-র অধম।
শিফটের আপডেট তথ্য সম্পর্কে আমরা সবাই অবহিত হই ২৫ তারিখে, যেদিন শিফট (রোস্টার) ম্যানেজম্যান্টের সবাই ছুটিতে ছিলেন। তার পরের দিন ২৬ তারিখ অফিসে এসেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের খুজলাম, সেদিন-ও সবাই ছুটিতে। ফোনে জনাব মিনহাজের সাথে যোগাযোগ করলাম। শিফট সংশোধন অনায়াসে করা যেত, যেহেতু তিনি পরেরদিন সকালে ডিউটিতে আসবেন এবং আমার ডিউটি শুরু হবে দুপুর ২টা ১০ এ। কিন্তু তিনি বললেন, যা হয়ে গেছে তা সঠিক এবং সংশোধন-অযোগ্য। কলসেন্টারে সেই সময় সিটিসেলের পক্ষ হতে সর্বোচ্চ পদমর্যাদার যে কর্মকর্তা ছিলেন, তার সাথে যোগাযোগ করলাম। উনি একজন ডেপুটি ম্যানেজার । (উনার নাম জানি না, তবে তিনি একজন নারী। উল্লেখ্য, ডেপুটি ম্যানেজারদের একজনই নারী)। তিনি বিষয়টিতো আমলে নিলেনই না বরং কল্পনার অতীত দুর্ব্যবহার করলেন। পুরো অফিস জুড়ে ক্যামেরা ফিট করা, উনি কি ধরনের কথা বলেছেন তা শুনলেও কেউ হতভম্ব হবে। ট্রেনিং এর সময় বলা হয়েছিল ১২১ এ যে সকল কাস্টমার কল করবেন, তাদের কাউকে না জেনে ভুল তথ্য দিলে সমস্যা হবে না কিন্তু দুর্ব্যবহার করলে তাৎক্ষনিক বরখাস্ত। উক্ত ডেপুটি ম্যানেজার আমার সাথে যা করেছেন তার দশ ভাগের এক ভাগ ব্যবহার যদি আমরা কাস্টমারদের সাথে করতাম তবে চাকুরিচ্যুতি অবধারিত ছিল। কলসেন্টারে আগত প্রতিটি কল রেকর্ড করা হয়, অমি যত কল রিসিভ করেছি তার প্রতিটিতে কাস্টমার ছিল সন্তুষ্ট উপরন্তু অনেক ক্ষেত্রে কাস্টমাররা তাদের বাসায় আমন্ত্রণ, ব্যক্তিগত মোবইল নম্বর চাওয়া, তারা নামাজের পরে আমার জন্য দোআ করবেন এই জাতীয় কথাও বলেছেন।
আমি পদত্যাগ করছি মূলত দুটি কারনে। প্রথমত, আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসরন না করে খেয়ালখুশি মত শিফট নির্ধারনের প্রতিবাদে। দ্বিতীয়ত, উক্ত ডেপুটি ম্যানেজারের সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ও অবিবেচক দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে।
আভ্যন্তরীন বিষয় তিনটি বিষয় সংশোধনের সুপারিশ-ও করছি। প্রথমত, জাতিসংঘ ও আই.এল.ও ঘোষিত বিধান অনুযায়ী শিফটে সবসময় ১৬ ঘন্টার গ্যাপ থাকবে, তা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, কর্মীদের কার কি পরামর্শ/সমস্যা আছে তা সরাসরি আলেচনা করে নতুন নতুন আইডিয়া/পরামর্শ গ্রহণ করা। তৃতীয়ত, কর্মীবান্ধব অফিস নিশ্চিত করা হোক। যেখানে কাস্টমারদের সাথে যে ব্যবহার করা হয়, তা যেন আভ্যন্তরীন ক্ষেত্রে কলিগ-সিনিয়র-জুনিয়র সবার সাথে সেই ব্যবহার করা হয়- তা নিশ্চিত হবে। মানুষ মানুষের মর্যাদা পাবে, ক্রীতদাসের না।
বর্ণিত পরিস্থিতিতে প্রেক্ষিতে আমি পদত্যাগ করছি, যা কার্যকর হবে ২৬ নভেম্বর ২০১১ দুপুর ৩ টা হতে। উক্ত সময় অফিসে থাকা অবস্থায় আমি অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত একটি হাতে লেখা পদত্যাগপত্র দিয়েছিলাম, যার কোন রিসিভ কপি দেয়া হয়নি। এই অবস্থায় রিলিজ অর্ডার বা জব সার্টিফিকেটের প্রশ্ন অবান্তর। তাই আজ ৩০ নভেম্বর ২০১১ ই-মেইলের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে তা রি-কনফার্ম করছি। মেইল সার্ভারে তারিখ ও সময় সংযুক্ত হওয়ায় পদত্যাগের বিষয়টি সুস্পষ্ট হচ্ছে। অ্যাপয়েন্ট লেটারের প্যাডে যে ই-মেইল ঠিকানা উল্লেখ ছিল, সেই বরাবর আমার জমা দেয়া সি.ভি-তে আমার যে ই-মেইল ঠিকানা উল্লেখ ছিল, তা হতেই ই-মেইল পাঠাচ্ছি।
আপনারা ভাল থাকুন
তাওহীদুর রহমান ডিয়ার
কলসেন্টার এজেন্ট (পি.আর) ৫০৪১
সার্ভিস সলিউশন লিমিটেড
স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিবেচিত হওয়ায় অবগতির জন্য যাদের কাছে অনুলিপি প্রেরিত হল :
আমি তাওহীদুর রহমান ডিয়ার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 35 টি টিউন ও 26 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
বাংলাদেশের জনগন সিটিসেল মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমান মুনাফা উপার্জন করছে এবং সেই প্রতিষ্ঠানেই বাংলাদেশের জনগনকে সরাসরি নিয়োগ দিতে এ আপত্তি !!!
এই অনিয়ম মেনে নেয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন কামন করছি।