আজকে সকালে উঠেই নিত্যদিনের মতো পত্রিকা নিয়ে বসলাম। পত্রিকার আদ্যোপান্ত পড়াটা আমার বহুদিনের অভ্যাস । অনেক আজেবাজে খবর এর মধ্য চোখ আটকে গেল কালের কণ্ঠ পত্রিকার শেষ পাতায়। শিরোনামে লেখাঃ “হ্যাকিংয়ে জড়িত ৭০০ কিশোর”
চমকায় গেলাম। কি কই ।এইটা কি বাংলাদেশের কথা নাকি অন্য দেশের সংবাদ । ভালমত পড়ার জন্য ঝাপিয়ে পড়লাম । পড়ার মাঝে মাঝে চিন্তা হল , তথ্য পড়ে বার বার চমকায়লাম , দুঃখিত হইলাম , এক চিমটি আফসোস আর অনেকখানি রাগ নিয়া পড়া শেষ করলাম।
বার বার কিছু প্রশ্ন উঁকি দেই । কাকে বলবো চিন্তা করতে করতে মনে হল আমি আমার টেঁকি ভাই দের সাথেই শেয়ার করি না কেন ? তাই এই লেখাটা লিখতে বসা।
পত্রিকার প্রতিবেদনের কিছু চৌম্বক অংশ আপনাদের জন্য ( তাহলেই বুঝবেন আমি কেন চিন্তাই পরছি )
“ওরা দুই কিশোর হ্যাকার। একে অপরকে কেউ কখনো দেখেনি। ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের পরিচয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের র্যাব সদর দপ্তরে নেওয়া হয়। সেখানেই প্রথম দুজন একে অপরের মুখোমুখি হয়। রাসেল ভুঁইয়া ও শাহ মিজানুর রহমান ওরফে রায়হান নামের দুই কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হ্যাকিংয়ের সঙ্গে বর্তমানে ৭০০ কিশোর জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে র্যাব।“”
“”এরা কেউই কম্পিউটারের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেনি। কিন্তু কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রোগ্রামের ওপর তাদের পুরো দখল রয়েছে। এরা যেকোনো ওয়েবসাইটে ঢুকে আধা ঘণ্টার মধ্যে তা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে। এরপর তাদের ইচ্ছামতো ওই ওয়েবসাইটটি হ্যাকিং করে যে কাউকে বিপদে ফেলতে পারে। বিষয়টি আইনের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ। এই আইনে অপরাধীদের কমপক্ষে ১০ বছরের সাজা হতে পারে।“”
“এ অবস্থায় হ্যাকিংয়ে জড়িত থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তারা কালের কণ্ঠকে বলে, "আমরা হ্যাকার এটা কখনো জানতাম না। আমরা কম্পিউটারের ওপর দক্ষতা নিতে গিয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করতাম। দীর্ঘদিন একই বিষয় নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেশের সব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক করে ঢুকেছি। দেশের ওয়েবসাইট সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার পর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ঢুকি। আমাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট সুরক্ষা করা। কোনো হ্যাকার যেন বাংলাদেশের ওয়েবসাইটগুলোতে ঢুকে অপরাধ করতে না পারে সে বিষয়টি আমরা সব সময় ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নজরে রাখতাম। 'সাইবার আর্মি গ্রুপ' নামে আমাদের একটি ওয়েবসাইট আছে। এই গ্রুপের পাঁচজন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর রয়েছে। এরা সৌদি আরব, আমেরিকা ও কুয়েত থেকে আমাদের সঙ্গে নিয়মিত ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। আমরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলার সময় ছদ্মনাম ব্যবহার করি। বর্তমানে আমাদের গ্রুপে দেশ-বিদেশের প্রায় ৭০০ কিশোর রয়েছে। এরা কোনো ওয়েবসাইট হ্যাকিং হলে অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেয়। তবে 'আমরা এটাকে হ্যাক হিসেবে নিইনি। এটা যে অবৈধ বা ক্রাইম আমরা কখনো তা অনুধাবন করিনি।"
“প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুই কিশোর র্যাবকে জানায়, তারা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সু-উদ্দেশ্যে কম্পিউটার ও ইন্টানেটের ওপর কাজ শিখে এবং ওয়েবসাইট সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান লাভ করে। মূলত ইন্টারনেট শিখতে গিয়ে ওয়েবসাইট বেইজ ত্রুটি শনাক্ত করার প্রতি তাদের গভীর আগ্রহ জন্মায়। একপর্যায়ে তারা দেখতে পায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটটি হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই তারা সাইটটির ত্রুটি খুঁজতে চেষ্টা করে। পরবর্তী সময়ে সাইটির ত্রুটি খুঁজে পায় এবং সফলভাবে সম্পূর্ণ সাইটটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সমর্থ হয় এবং ওয়েবসাইটটি হ্যাক করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরো জানায়, তাদের দুজনের বন্ধুত্ব ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়েছে। তারা ঘনিষ্ঠ ওয়েব-বন্ধু, তবে র্যাবের হাতে আটকের পরই তারা একে অপরকে দেখেছে।“
“দুই কিশোরের বক্তব্যের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব কর্মকর্তা এম সোহায়েল আরো জানায়, যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট রক্ষা করার দায়িত্ব কেউ তাদের দেয়নি। আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ জেনেও ওই দুই কিশোর এমন ঝুঁকি নিয়েছে। অভিভাবকদের কারণে এসস কিশোর অল্প বয়সে সাইবার ক্রাইম করছে। বর্তমানে সমাজের ভয়ংকর অপরাধের সঙ্গে কিশোরদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলছে।“
“১১ নভেম্বর ওয়েবসাইটটিতে (যঃঃঢ়://িি.িংঁঢ়ৎবসবপড়ঁৎঃ.মড়া.নফ) গেলে ইংরেজিতে 'ওপস...ইউ গট হ্যাকড' লেখা দেখা যায়। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে কালো জমিনে লাল-সবুজ রঙে লেখা পাতাটির শেষে ইংরেজিতে 'অল রাইট রিজার্ভ বাই থ্রি এঙ্পি আই আর থ্রি সাইবার আর্মি' লেখা দেখা যায়।
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে ওই পাতায় বলা হয়, 'একজন সাংবাদিক, লেখক ও একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্বের প্রতি আমাদের বার্তা হচ্ছে, দেশের প্রতি তোমাদের আরো অনেক দায়িত্ব রয়েছে। জনগণ তোমাদের বিশ্বাস করে, আস্থা রাখে এবং অনুসরণ করে। তোমরা যা-ই লেখো না কেন, যা কিছুই উপস্থাপন করো না কেন, তাকে সত্য হিসেবে মেনে নেয়। কলম ও ক্যামেরার সাহায্যে তোমরা এমন কিছু করো, যা সাধারণ বাংলাদেশিরা করতে পারে না। সুতরাং আমরা তোমাদের অনুরোধ করছি, অপশক্তি নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগেই তোমরা বাংলাদেশকে রক্ষা করো। সৎ হও, জনগণকে বিপথে পরিচালিত কোরো না। টাকা এবং খ্যাতি জীবনে ক্ষণস্থায়ী। অসৎ রাজনীতিকদের সমর্থন দেওয়া বন্ধ করো। ইতিমধ্যে তাঁরা অনেক ক্ষতি করেছেন।'”
এখন আমার কথা
ইন্টারনেট এর সুবাদে আমরা হ্যাকিং সম্পরকে এখন অনেকেই জানি । জানি সায়বার আর্মি সম্পরকে । টেকটিউনস এর মাখন ভাই এই ব্যাপারে আমাদের তথ্য দিয়েছেন অনেক ।
এতসব জানার পরো আমরা অন্ধ হইয়েই থাকি । আপনি কি চিন্তা করতে পারেন একটি দেশের সুপ্রিম কোর্ট এর ওয়েবসাইট এর কোন নিরাপত্তা নাই। যে সাইট টি তে দেশের সব পর্যায়ের তথ্য জমা থাকবে সেই সাইট টি নিরাপদ কারও হাতে নেই । এইবার আপনি বলুন আপনার অবস্থান তাহলে কোন জাইগায় ? এমন আরও অনেক সরকারি সাইট এবং তথ্য কেন্দ্র আছে যা অনেক গুলু বাগ নিয়ে তৈরি। দুইজন কিশোর যেখানে এই সাইট গুলুর নিয়ন্ত্রন নিতে সময় নেই মাত্র আধাঘণ্টা সেখানে একজন তুখর হ্যাকার তো ৫ মিনিট এর বেশি সময় নিবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। পশ্চিমা দেশে একটি ব্লগ লিখে পুরা সমাজ বেবস্থা পালটে ফেলে সেইখানে আমাদের দেশে একজন কেও সমাজ পরিবর্তনের কথা বললে হাজত বাস করে। হায়রে সোনার বাংলাদেশ ।
বুঝলাম সরকার হ্যাকার রাখতে পারবেন না টাকা দিয়ে ( হ্যাকার শুধু ওয়েবসাইট হ্যাক করে না ওয়েবসাইট এর নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে ভুমিকা পালন করে। বহি বিশ্বে এইটি একটি সাধারন ব্যাপার ) । কিন্তু সাইবার আর্মি তো তা বিনা পইসায় করে দিতে চেয়েছে । তারা তো চেয়েছে শুধু নিরাপদে থাকুক আমাদের তথ্য গুলু। এই ব্যাপারে তারা বার বার বলে গেছে । অনেক হ্যাক হইয়ে যাওয়া সাইট তারা উদ্ধার করে দিয়েছে । আমরা ফ্রী তে এই সার্ভিস পাচ্ছি। যেখানে প্রচুর টাকা খরচ করার কথা সেইখানে আমার সেবা পাচ্ছি কোন রকম দান ছাড়া । সেই সেবা সরকার নিতে পারে খুব সহজেই । বরং সরকারের জন্য এইটি আরও অনেক সোজা । সরকাররে সাহায্য হইত আরও ভালো ভাবে এই সেবা দিতে পারবে সায়বার আর্মি । কিছু অসম্ভব মেধাবী কিশোর, তরুন দের ব্যাবহার করুন আমাদের জাতিয় স্বার্থে । দয়া করে তাদের মেধার বিকাশ হতে বাঁধা হইয়ে দাঁড়াবেন না । আমাদের অনেক গুলু ভুলের মতো আর কোন ভুল করবেন না । ভাববেন না আমি তাদের তরফদারি করতেসি আমি শুধু আমার মতমত লিখলাম । আমি যা বুঝেছি তাই বললাম । কিছু ভুল হইত তারা করতে পারে সেই ভুল গুলু শুধরানোর সুযগ দিলে আমার মনে হই আখেরে আমাদের দেশেরই লাভ ।
কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়ঃ
১) সরকার কি আগে কখনো বুঝেছিল দেশের নিরাপত্তা , তাহলে এইবার কি বুঝবে ?
২) আমাদের আন্দোলন গুলু ছিল দেশের রাজনৈতিক পটভূমিকা বদলানোর ক্ষেত্রে ( সেই ৫২ থেকে আজকে পর্যন্ত ) সমাজ বদলে আমরা কি করেছি ?
৩) সবসময় কি অন্যর উপরেই নির্ভর থাকতে হবে ?
৪) মেধার সম্মান এই জাতি কবে দিতে পেরেছিল ?
পাদটীকাঃ কেন জানি মনে হচ্ছে লেখাটা লিখা ঠিক হয় নাই। “কি দরকার ?” কথাটা বারবার মনে হচ্ছে । তবু মনটাকে বুঝাইতে পারলাম না ।
আমি মাহমুদ শরফুদ্দিন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 203 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
''সহজতার মনোভাব আমরা প্রকৃতি থেকে শিখে নেই। তবে এমনই কপাল খারাপ যে আমরা সবসময় তা এড়িয়ে চলি...!!!!
অনেক কিছুই বলার ছিল। “কি দরকার ?” কথাটা বারবার মনে হচ্ছে ।