অটিস্টিকেরা অনেক জ্ঞানী হয়। এ জন্য অটিস্টিকদের নিয়ে কৌতুহল সৃষ্ট হয়। সে থেকেই তাদের সম্পর্কে জানা এবং তাদের নিয়ে এ লেখাটি লেখা।
অটিজম কোন রোগ, বংশগত বা মানসিক সমস্যা নয়, এটা স্নায়ুগত বা মানসিক সমস্যা। এ সমস্যাকে ইংরেজীতে নিউরো ডেভেলপমেণ্টাল ডিজঅর্ডার বলে। অটিজমকে সাধারণভাবে শিশুর মনোবিকাশগত জটিলতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অটিজমের লক্ষণগুলো একদম শৈশব থেকেই, সাধারনত তিন বছর থেকে প্রকাশ পেতে থাকে। অটিজমে আক্রান্তরা সামাজিক আচরণে দূর্বল হয়, পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কম সক্ষম হয়। মানসিক সীমাবদ্ধতা ও একই কাজ বারবার করার প্রবণতা দেখা যায় যায়। এই রোগে আক্রান্ত শিশু কারো সাথেই, সে সমবয়সী হোক কিংবা অন্য যে কোনো বয়সী কারো সাথে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে না। নাম ধরে ডাকলেও সাড়া দেয় না। এরা অনেকেই আকার ইঙ্গিতে কথা বলতে পছন্দ করে। এ ধরণের শিশু আপন মনে থাকতে পছন্দ করে। নিজের ইচ্ছের মত চলে। যখন যা করতে ইচ্ছে হয় তা করতে না পারলে এদের খিচুনি ভাব হয়। এরা কারো চোখের দিকে তাকায় না। কারো সাথে নিজের ব্যবহারের জিনিস পত্র শেয়ার করতে চায় না। কারো দিকে তাকিয়ে হাসে না কিংবা আদর করলেও ততটা সাড়া দেয় না। অনেকে আবার আদর ও পছন্দ করে না। সাধারণভাবে অটিষ্টিক শিশুরা একই কথা বারবার বলে এবং একই কাজ বার বার করতে পছন্দ করে। অটিজম বিশ্বে এতই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে যে জাতিসংঘ প্রতিবছর ২ এপ্রিলকে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে পালন করছে।
অটিজমে আক্রান্তদেরকে অটিস্টিক বলা হয়। অটিষ্টিক শিশুদেরকে কেউ কেউ মানসিক প্রতিবন্ধী বলে থাকেন। অটিজমে আক্রান্ত কোনো কোনো শিশু বা অটিষ্টিক শিশু কখনো কখনো বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অত্যন্ত পারদর্শীতা প্রদর্শন করতে পারে। অটিস্টিক শিশুরা অনেক জ্ঞনী হয়। তবে আট দশটা শিশুর মত এদের জ্ঞান সব দিকে সমান থাকে না। এদের কারো থাকে গণিতের উপর অসাধারন জ্ঞান, কারো বিজ্ঞান, কেউ বা অসাধারন সব ছবি আকতে পারে, কারো আবার মুখস্ত বিদ্যা প্রচুর হয়। আর এ জন্য কোন অটিস্টিক শিশুকে ঠিক মত পরিচর্চা করলে হয়ে উঠতে পারে একজন মহা বিজ্ঞানী। অনেক বিশেষজ্ঞের ধারনা মহা বিজ্ঞানি আইনস্টাইনের অটিজম ছিল।
তাছাড়া অনেকেই মনে করেন মহাকালের আরেক সেরা বিজ্ঞানী আইজেক নিউটন ও অটিস্টিক ছিলেন। আর বিজ্ঞানের এমন কোন শাখা নেই যেখানে নিউটনের পদাচরনা নেই। আরো অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানি, কবি, সাহিত্যিক ও প্রেসিডেন্ট ছিলেন অটিস্টিক। তাদের লিস্ট দিয়ে লেখা বড় করতে চাই না। কারো ইচ্ছে হলে এখানে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন।
এদের কথা বলার কারন হচ্ছে, হয়তো আপনার পাশের অস্বাভাবিক ছোট বাচ্ছাটি অটিজমে আক্রান্ত। তাকে সাহায্য করুন বেড়ে উঠায়। সে ও হতে পারে একজন বিখ্যাত ব্যাক্তিত্ব। এমনকি আপনি ও হয়তো একজন অটিস্টিক। কারন প্রতি হাজারে ২-৪ জন অটিজমে আক্রান্ত। এলাকা ভেদে এটা আরো বেশি বা কম হতে পারে।
জন্ম থেকেই শিশুরা অটিজমে আক্রান্ত থাকে। তাদের লক্ষন গুলো প্রকাশ পায় তিন বছর পর থেকে। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে শুধু শিশুরাই কি অটিস্টিক হয়, অটিস্টিক শিশুরা বড় হলে কিভাবে চলে বা কি হয়?
শিশু অবস্থাতেই অটিজমের লক্ষন প্রকাশ পায়। বড় হতে হতে অটিজম ভালো হয়ে যায়। অটিজমের কারনে শিশুরা পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে না পারার কারনে অনেকেরই অকাল মৃত্যু হয় বা অনেকেই বড় হলে ও অস্বাভাবিকতা নিয়ে বড় হয়। কিন্তু শিশু অবস্থাতেই এদের অটিজম ব্যাপক আকার ধারন করে। বেশির ভাগ অটিস্টিকের খিচুনি ভাব থাকে। এদের স্বাভাবিক কাজে বাঁধা পড়লে এদের খিচুনি ভাব হয় এবং অনেকে এ খিচুনির ফলেই মারা যায়। এ জন্য সতর্কতার স্বরুপ অটিস্টিক শিশুদেরকে বাসার চাদ, আগুনের পাশ পুকুর পাড় থেকে দূরে রাখা উচিত। রাস্তা পারাপার বা যাতায়তে সময় তাদের একজন সঙ্গী থাকা উচিত।
আমার এক প্রতিবেশির এ রোগ ছিল। প্রায় সময়ই খিচুনি ভাব উঠত। ছোট অবস্থায় রক্ষা পেলে ও বড় হয়ে বিয়ে করার পর একদিন পুকুরে গোছল করার সময় মারা যায়। যা সত্যি দুঃক্ষজনক।
অটিজম কেন হয় তার সঠিক কারণ আজ পর্যন্ত উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। বিজ্ঞানি এবং ডাক্তারদের ধারনা ক্রোমোজম নম্বর ৭য়-এর অস্বাভাবিকতার সঙ্গে অটিজমের সম্পর্ক আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনেবিকাশের প্রতিবন্ধকতার কারণ, মস্তিস্কের অস্বাভাবিক জৈব রাসায়নিক কার্যকলাপ, মস্তিস্কের অস্বাভাবিক গঠন, বংশগতির অস্বাভাবিকতা প্রভৃতির কথা বলে থাকেন। গর্ভকালীন সময়ে মায়ের সুষ্ঠ পরিচর্চার অভাবেও অটিজম হতে পারে।
অতি চাঞ্চল্য, জেদী ও আক্রমণাত্মক আচরণ, অহেতুক ভয়ভীতি, খিচুনী ইত্যাদি বৈশিষ্ট একজন অটিস্টিকের থাকতে পারে। অটিজমে আক্রান্তদের আচার-ব্যবহার এবং সংবেদন পদ্ধতি অন্যদের চেয়ে অনেক আলাদা হয় এবং আক্রান্তদের মধ্যেও থাকে অনেক পার্থক্য। শব্দ, আলো, স্পর্শ ইত্যাদির প্রতি অটিস্টিকদের আচরণ সাধারণদের থেকে বেশ পৃথক ও অদ্ভুত। শারীরিক দিক দিয়ে অটিস্টিক সাথে সাধারণদের কোন পার্থক্য করা যায় না। অবশ্য মাঝে মাঝে শারীরিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সাথে অটিজম একসাথে আসে। অটিস্টিকদের মস্তিষ্কের আকৃতি সাধারণের চেয়ে বড় হয়ে থাকে, তবে এর প্রভাব সম্বন্ধে এখনও সঠিক কিছু জানা যায় নি।
এক এক জন অটিস্টিকের এক একধরনের বৈশিষ্ট থাকে। নিচের প্রধান কয়েকটি বৈশিষ্ট দেওয়া হলঃ
আরো অনেক সমস্যা নিয়ে অটিজম রোগীরা জীবন যাপন করে। অনেকেই মনে করে এসব বৈশিষ্ট গুলো শিশুদের ইচ্ছে বা মনের খেয়াল। তাই অনেকে শিশুদের সাথে খারাপ আচরন করে। তাই যারা এমন অস্বাভাবিক আচরন করে তাদের দ্রুত কোন স্নায়ু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। কারন অটিজম কোন রোগ প্রতিবন্ধকতা নয়। একটু সচেতনতা আর ভালোবাসা পারে একজন অটিস্টিকের সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে।
অটিজমে আক্রান্ত শিশুকে প্রথম চিকিৎসাই হলো তার রোগকে শনাক্ত করা। কোনো রকম ওষুধ দিয়ে অটিজমের শিশুকে সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়। বরং তাকে বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এই শিক্ষা ছাড়া তার চিকিৎসার আর কোনো বিকল্প নেই। এই শিক্ষার মাধ্যমে তাকে স্বাধীনভাবে চলার উপযোগী করা সম্ভব। তাই অটিজম আক্রান্ত শিশুদের শিক্ষার সুযোগ করে দেয়া গেলে দেখা যাবে তারা সমাজের জন্য দায় হবে না বরং সম্পদ হয়ে উঠতে পারে। কারন অটিজম শিশুদের প্রতিভা, তারা অনেক প্রতিভাবান হয়ে থাকে। তাদের প্রতিভা কাজে লাগাতে পারলে দেশে ও মানুষের অনেক কল্যান হবে। তাদের প্রতিভা কাজে লাগানোর জন্য অটিস্টিক শিশুদের বিশেষ ধরণের শিক্ষার একান্ত প্রয়োজন । আর এ কারণে অটিজমে আক্রান্ত শিশুকে বিশেষ প্রয়োজন সম্পন্ন শিশু বা বুদ্ধিবৃত্তিক চাহিদাসম্পন্ন বলা হয়। এ সব শিশুকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে তাদের অনেকেই স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারে।
অটিস্টিক শিশুরা ও বাংলাদেশঃ
বাংলাদেশে অটিস্টিক শিশুদের যেমন সঠিক কোন পরিসংখ্যান এখনো পর্যন্ত নেই, তেমনি নেই শিশুদের শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত প্রতিষ্ঠানও। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অটিস্টিক শিশুদের উন্নয়নের আরো উদ্যোগ নেয়া হবে। কিন্তু অটিস্টিক শিশুদের জন্য কাজ করছেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, সবার আগে প্রয়োজন অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা।
তবে এই পারদর্শীতা প্রদর্শনের জন্য এই ধরনের শিশুদের বিশেষ ধরণের শিক্ষার একান্ত প্রয়োজন । আর এ কারণে অটিজমে আক্রান্ত শিশুকে বিশেষ প্রয়োজন সম্পন্ন শিশু বা বুদ্ধিবৃত্তিক চাহিদাসম্পন্ন বলা হয়। এ সব শিশুকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে তাদের অনেকেই স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারে।
সোনার বাংলাদেশ ব্লগে ভানু ভাস্করের সুন্দর একটি লেখা আছে অটিজমের উপর।
লিঙ্কঃ অটিজম প্রসঙ্গে সাধারণ কিছু কথা
প্রথম আলো ব্লগে ডা. শাহরিয়ারের আছে আরেকটি লেখা।
লিঙ্কঃ অটিজম বিস্তারিত।
চতুর্মাত্রিক ব্লগে নুশেরা লিখছেন আরেকটি সুন্দর পোস্ট।
লিঙ্কঃ শিশুর অটিজম: কিছু তথ্য।
http://health.evergreenbangla.com সাইটে আছে কিছু বিস্তারিত তথ্য। এগুলো সব বাংলায়। এর পর ও আরো জানতে চাইলে গুগল আছে। সার্চ করলে হাজার তথ্য পাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
http://en.wikipedia.org/wiki/Autism
http://bn.wikipedia.org/wiki/Autism
http://health.evergreenbangla.com
http://www.nlm.nih.gov/medlineplus/ency/article/001526.htm এবং আরো অনেক গুলো ওয়েব সাইট।
আমি জাকির হোসাইন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 224 টি টিউন ও 1487 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
পৃথিবীতে অল্পকয়েক দিনের জন্য অনেকেই আসে, হেঁটে খেলে চলে যায়। এর মধ্যে অল্প কয়েক জনই পায়ের চাপ রেখে যায়।ওদের একজন হতে ইচ্ছে করে। প্রযুক্তির আরেকটি সেরা ব্লগ টেকটুইটস। আপনাদের স্বাগতম, যেখানে প্রতিটি বন্ধুর অংশ গ্রহনে গড়ে উঠেছে একটি পরিবার। আপনাদের পছন্দ হবে আশা করি। ফেসবুকে আমি - ?জাকির!
khub shundor totthoshomriddho tune, dhonnobad apnake