বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি সকলেই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। বরাবরের মতো আজও নিয়ে এসেছেন নতুন একটি টিউন।
দৈনন্দিন কাছে যাতায়াত কিংবা ভ্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয় গাড়ি। একটা সময় ছিল যখন মানুষের গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি কিংবা নৌকায় করে যাতায়াত করতো। তবে বর্তমানে সেই ধারণা একেবারেই পাল্টে গেছে। দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তার ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে। তবে আপনি এটি কি কখনো ভেবে দেখেছেন যদি রাস্তায় পেট্রোল কিংবা ডিজেল চালিত কোন গাড়ি না চলত তবে কি হতো?
প্রতিদিনই বাসা থেকে বের হলেই গাড়ির হর্ন, মোটরসাইকেলের হর্ন, কিংবা বাসের হাইড্রোলিক হর্ন অথবা কালো ধোঁয়ায় আপনার যখন মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার অবস্থা তখন আপনার কি কখনো মনে হয়েছে রাস্তায় এসব যানবাহনের কিছুই যদি না থাকতো তাহলে হয়তো অনেক ভালো হতো। এবার আপনি হয়তোবা ভাববেন যে তবে রাস্তায় চলবেন কিভাবে?
গরু আর ঘোড়ার গাড়িতে নাকি পায়ে হেঁটে? কেন সাইকেল আছে না। সাইকেল তো আর ইঞ্জিনচালিত কোন বাহন নয়। তবে এবার ভাবুন এমন এক পৃথিবীর কথা যেখানে সাইকেল ছাড়া আর কোন যানবাহন থাকবে না। তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে?
গাড়িতে যে জ্বালানি পোড়া হয় তাতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে এটি আমরা সকলেই জানি। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন একটি গাড়ি সড়কের কতটা জায়গা দখল করে। একটি সড়কের দুইটি গাড়ি দাঁড় করালে যে পরিমান জায়গা দখল করে সে পরিমান জায়গাতে মোট আটটি সাইকেল দাঁড় করানো সম্ভব। এতে দেখা যাচ্ছে পার্থক্যটা ও কিন্তু অনেক বিশাল। তবে গাড়ির সঙ্গে সাইকেল এর জায়গা দখলের বিষয় নয়। বিষয়টি হচ্ছে আমরা যদি এসব তেল কিংবা গ্যাস চালিত যানবাহনগুলোর ব্যবহার বাদ দেই তবে আমাদের জীবনে এর কি প্রভাব পড়বে?
ধরা যাক সড়কে বাস আর ট্রাক থাকবে। আর ব্যক্তিগত গাড়িগুলো ও সরিয়ে নেওয়া হবে। তাহলে কেমন হবে? যদি আমরা তাই করতে পারি তবে এটি আমাদের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের কল্যাণ বয়ে আনবে। একটি সাধারণ গাড়ি থেকে প্রতিবছর 4.6 মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়। যে কারণে দিন দিন গ্রীন হাউজ গ্যাস বেড়েই চলেছে। তাই সড়কে গাড়ি না থাকলে খুব দ্রুতই গ্রীন হাউজ গ্যাস এবং তারপরিমাণ কমে যাবে।
যানবাহনের কালো ধোঁয়া পরিবেশের সঙ্গে মিশে গিয়ে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রভাবে দিনদিন পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। হিমালয় কিংবা অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। যেটি নিচু দেশগুলোর জন্য ভবিষ্যতে ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনবে। বিশেষ করে দ্বীপ দেশ মালদ্বীপ এ ক্ষতি সবার আগে উপলব্ধি করতে পারবে। ধারণা করা হচ্ছে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে মালদ্বীপ সম্পূর্ণ সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যাবে। যদি ব্যাপারটি তাই হয় তবে আমরা যদি কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমিয়ে দিতে পারি তবে বেঁচে যাবে আমাদের পরিবেশ।
বর্তমানে আমরা একেবারেই এসব ইঞ্জিন চালিত গাড়ি এর ব্যবহার বাদ দিতে পারবো না। তবে আমরা এর ব্যবহার কিছুটাও কমিয়ে তো দিতে পারি। এজন্য ইঞ্জিন চালিত গাড়ির পরিবর্তে সাইকেল ব্যবহার করলে কেমন হয়?
যদিও সাইকেলের চাইতে গাড়িতে বেশি মানুষ যাতায়াত করা যায়। তবে বাস্তব জীবনে খুব কম মানুষই এটি মেনে চলে। প্রায় ৭০ ভাগ গাড়িতেই একজন আরোহী অর্থাৎ শুধু ড্রাইভার থাকে। এক্ষেত্রে সাইকেলের তুলনায় গাড়ি অনেক জায়গা নষ্ট করে। আমরা যদি ব্যক্তিগত গাড়ি চালানো কমিয়ে দিতে পারি কিংবা গাড়ি না চালাই গাড়িতে গ্যাসের পেছনে খরচ হওয়া পুরো টাকাটাই বেঁচে যাবে।
বিশ্বে হাজার হাজার মানুষ মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। প্রতি বছর, সারা বিশ্বের সড়কপথে ১.৩৫ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। প্রতিদিন, গাড়ি, বাস, মোটরসাইকেল, সাইকেল, ট্রাক দুর্ঘটনায় বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩, ৭০০ মানুষ মারা যায়। নিহতদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি পথচারী, মোটরসাইকেল চালক বা সাইক্লিস্ট। আপনি কখনো কি শুনেছেন যে গরুর গাড়ি কিংবা ঘোড়ার গাড়ির নিচে পড়ে কোন লোক মারা গিয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন সংবাদের শিরোনাম দেখছেন যে মাইক্রোবাস কিংবা বাস দুর্ঘটনায় এত জনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা যদি সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি এর ব্যবহার কমিয়ে দিতে পারি, তবে কমে যাবে সড়ক দুর্ঘটনার হারও।
গড়ে এক ঘন্টা গাড়ি চালালে যেখানে ১২৪ ক্যালোরি খরচ হয়, সেখানে ১ ঘন্টা সাইকেল চালালে শরীর থেকে ঝরে পড়ে ৪৮০ ক্যালোরি। যেটি কিন্তু স্বাস্থ্যকে ফিট রাখতে অনেক জরুরি। ২০১৫ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে গাড়ি তুলনায় সাইকেল আরোহীদের মৃত্যুর হার ৪০ শতাংশ কম থাকে।
কিন্তু এইবার অনেকেরই প্রশ্ন হতে পারে যে, যারা সাইকেল চালাতে পারেনা অথবা যাদের অনেক দূরে যেতে হবে তারা কি করবে? তাদের ক্ষেত্রে তো সাইকেল চালিয়ে অনেক দূরে যাওয়া সম্ভব নয়। এসব ক্ষেত্রে তারা গণপরিবহন ব্যবহার করতে পারে। কেননা ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে যে পরিমাণ জায়গা আর পরিবেশের দূষণ হয় তার তুলনায় গণপরিবহনে অনেক কম হবে। কারণ একটি বাসে বা গণপরিবহনে গড়ে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন মানুষ যাতায়াত করতে পারে, যেখানে একটি গাড়িতে থাকে মাত্র একজন অথবা চার-পাঁচজন।
আপনাকে ব্যক্তিগত গাড়ি চালানো বাদ দিয়ে যে সাইকেল চালানোর কথা বলা হচ্ছে, তবে সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করার এতো সুবিধার পাশাপাশি অনেক অসুবিধাও রয়েছে। যেমন তীব্র গরম, শীত কিংবা বৃষ্টিতে সাইকেল চালানো কষ্টকর। আবার কেউ ক্লান্ত থাকলে ইচ্ছা করবেনা সাইকেল চালিয়ে অনেক দূরে যেতে। এ ক্ষেত্রে অতি প্রয়োজন না হলে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করাই ভালো।
তবে যুক্তি যাই হোক, বিশ্বে যদি পেট্রোল ডিজেল কিংবা গ্যাসচালিত গাড়ি চালানো বাদ দেওয়া যায় বা এর ব্যবহার কমিয়ে দেওয়া যায় তবে সুস্থ ও সুন্দর থাকবে আমাদের এই পৃথিবী। তবে বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই, দেখা হবে পরবর্তী টিউনে আরো নতুন কিছু নিয়ে ইনশাআল্লাহ।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)