পৃথিবীর সুন্দরতম দেশ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি।আমরা বাঙ্গালী।আমাদের গর্ব আমাদের দেশ মাটি ও মানুষকে নিয়ে।কিন্তু দূর্ভাগ্য হলেও সত্য আমরা আমাদের দেশ সম্পর্কে আজ ও অনেক অন্ধকারে রয়ে গেছি।বাংলাদেশে এমন অনেক কিছুই আছে যা শুধু আমাদের দেশে নয় সারা বিশ্বের মধ্যে অনন্য।"সুন্দরবন" তার মধ্যে একটি।পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হলো সুন্দরবন। সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।কিন্তু কতটুকুই বা জানি আমরা তার সম্পর্কে।আজ আমি আপনাদেরকে এই অপরূপ সুন্দরবন নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো।আশা করি সবাই ধৈর্য্য সহকারে টিউনটি পড়বেন।
সবাই সুন্দরবনকে আমরা ম্যানগ্রোভ বন হিসাবে জানি কিন্তু অনেকেই জানি না ম্যানগ্রোভ বন কাকে বলে।ঠিক আছে আমিই বলে দিচ্ছি
সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের নোনা পানিতে এক ধরনের বিশেষ উদ্ভিদ জন্মায় ।এসকল উদ্ভিদ তাদের শ্বসন (শ্বাস-প্রশ্বাস) আদান প্রদানের জন্য বিশেষ ধরনের মূল থাকে।এই মূল গুলোকে বলা হয় "শ্বাসমূল" ।
শ্বাসমূলের সাহায্যে তারা জোয়ারের সময় নোনা পানি থেকে শ্বাস কার্য চালায়।আর এই ধরনের উদ্ভিদকেই বলা হয় ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ।ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে সুন্দরী, গরান,গেঁওয়া,কেওড়া ইত্যাদি।
এই উদ্ভিদের অন্যন বৈশিষ্ট হল এর একটি বাস্তুতন্ত্রে (শেকড়) থেকে ১০০টির ও বেশি গাছ জন্মায়।আর এই ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ দিয়ে যে বন তৈরী হয়েছে তাকে ম্যানগ্রোভ বন বলে।সুন্দরবনে ১০০টির ও বেশী প্রজাতীর গাছ রয়েছে তার মধ্যে ২৮টিই হলো ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ!!! বিশ্বের অন্য কোন বনে একসাথে এত গুলো খাটি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ পাওয়া যায় না।আর এই কারনেই সুন্দরবনকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বলা হয়।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত এই ম্যানগ্রোভ বন।যার দক্ষিণে রয়েছে সুবিশাল বঙ্গোপসাগর,উত্তরে বাগেরহাট,পূর্বে বালেশ্বর নদী এবং পশ্চিম এ প্রতিবেশি দেশ ভারত অবস্থিত।এই বনের বৃহত্তর অংশটি ( ৬২% ) বাংলাদেরশে এবং বাকি ৩৮% অংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে অবস্থিত।
বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলা মিলে সুন্দরবনের আয়তন যতোদূর জানা যায় ১০ হাজার ৮শ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।বাংলাদেশ অংশে এই বনের পরিমাণ ৫ হাজার ৮শ বর্গকিলোমিটার । বাংলাদেশের সাতক্ষীরা , খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা জেলা আর পশ্চিম বাংলা, ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার দক্ষিণাঞ্চল ঘিরে বৃহত্তর সুন্দবনের অস্তিত্ব । সুন্দরবনের বন এলাকা ৪ লক্ষ ১ হাজার ৬শ বর্গকিলোমিটার ও খাল ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬৮৫হেক্টর। ১৯৯৭ সালে ইউ এন ডিপি’র তথ্যমতে সুন্দরবনের বাংলাদেশী আয়তন ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার যা বাংলাদেশের মোট বনভূমির ৪৪ শতাংশ । সমুদ্র থেকে স্থান ভেদে এর উচ্চতা ০.৯ মিটার থেকে ২.১১ মিটার।
সুন্দরবনে জালের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হাজার হাজার খাল বিল নদী নালা।মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ,মানে ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়েই রয়েছে এই জলের এলাকা।যা সুন্দরবনকে করে তুলেছে আরো সুন্দরমন্ডিত।
প্রশ্নটা মাথায় আসা স্বাবাভিক।আমার সবাই জানি কোন কোন স্থান বা বিশেষ কোন বস্তু নাম দেয়া হয় ঐ স্থান বা বস্তুর কোন একট আকর্ষণীয় বা প্রচলিত জনপ্রিয় কিছুর নাম অনুসারে।সেই নিয়মের প্রর্বতন হয়নি সুন্দরবন এর ক্ষেত্রেও।আমরা যদি বাংলা ভাষায় এর আভিধানিক অর্থ খুজতে যাই তাহলে "'সুন্দরবন" এর অর্থ দাড়ায় "সুন্দর জঙ্গল" বা "সুন্দর বনভূমি"।তবে প্রায় ৯০% মানুষই বিশ্বাস করেন "সুন্দরী" গাছের নাম অনুসারেই এই বনের নাম দাড়ায় সুন্দরবন।
এই ব্যাখ্যা নিয়েও তেমন কোন মত পার্থক্য নেই।তবে অনেকে আদিবাসীদের রাখা নাম "সমুদ্র বন" বা "চন্দ্র-বান্ধে (বাঁধে)" নামেও ডাকে
তার আগে বলুন যে অপার সৌন্দর্য কি খুজে পাবেন না আপনি এই সুন্দরবনে।নদী,ফুল,পাখি,গাছ-পালা,সুন্দর সুন্দর পশুপাখি সবই রয়েছে এই বনে।এক কথায় সৌন্দর্যের কানায় কানায় ঠাসা রয়েছে এই বন।আসুন এর সৌন্দর্যের কিছু বর্নণা দেয়ার চেষ্টা করি।
১৯০৩ সালে প্রকাশিত প্রেইন এর হিসেব মতে সর্বমোট ২৪৫টি শ্রেণী এবং ৩৩৪টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে সেখান।
এসব গুলোর মধ্যে অন্যতম হিসাবে রয়েছে সুন্দরী,গেওয়া ,গরান,কেওড়া ইত্যাদি।ঘাস ও গুল্মের মধ্যে আছে শন,নল খাগড়া,গোলপাতা,ফার্ণ জাতীয় উদ্ভিদ।নিচে কিছু কিছু গাছের বর্নণা দেওয়া হলো
এর বৈজ্ঞানিক নাম Heritiera fomes। সুন্দরবনের প্রায় ৭০% জুড়েই এ জাতীয় গাছের আধিপত্য। গাছটি সমুদ্র-উপকূলীয় বৃক্ষ হিসেবে সুপরিচিত।
বাংলাদেশ ও ভারত উপকূলে এর স্থানীয় নাম সুন্দরী।এই গাছ থেকে উন্নতমানে কাঠ পাওয়া যায়।এবং এই ধরনের কাঠের প্রয়োজনীয়তাও বেশ ব্যাপক।
সুন্দরবনে আর যেসব গাছ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় তার মধ্যে গেওয়া অন্যতাম।সুন্দর বনের ১৬% অংশ জুড়েই রয়েছে গেওয়া।
এর বৈজ্ঞানিক নাম Excoecaria agallocha
মাঝারি ধরনের এই গাছটিও সুন্দরবনে বেশ দেখা যায়।এটি সর্বোচ্চ ২০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো Sonneratia apetala ।
এই গাছের ফল ধরতে দেখা যায়।সাধারণত এই গাছটি নোনা পানির খুব কাছেই জন্মেল।
তাছাড়া অন্যান গাছের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য গাছের নাম হলো
গোলপাতা
গরান
হেতাল গাছ,বাইন,কাকড়া,ধুন্দল,ইত্যাদি উল্লেখ্য
প্রাণীবৈচিত্র্যের জন্য সুন্দরবনকে একটি তীর্থস্থান হিসাবে ধরা যায়।এতো এতো প্রাণীর সমারহে সত্যিই সুন্দরবন হয়ে উঠে আরো প্রানবন্ত।আপনি যেমন গহিন অরণ্যে গেলে শুনতে পাবেন ক্ষুদার্থ বাঘের হিংস্র গর্জন ঠিক তেমনি ভাবে এর পাশের তৃণভূমিতে গেলে দেখা মিলবে আলপনা আকা ছবির মত চিত্রা হরিণের।
সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যায় সুন্দরবনে ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাজাতির আবাসস্থল।তবে গত ১০ বছর আগেও এর সংখ্যা ছিলো ৪৩০ এর ও অধিক।যেখানে এখন আছে মাত্র ৩৫৭ টি।তো চলুন একটু ঘুরে আসি এই প্রাণীবৈচিত্র্যদের আবাস্থল থেকে
রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর নাম শুনেন নি এমন লোক বাংলাদেশে তো দুরে থাক অনেক দেশেই খুজে পাওয়া যাবে না।আর যাবেই বা কি করে কারণ এই রয়েল বেঙ্গল টাইগার তো কেবল সুন্দরবনে একসাথে এতগুলো বাঘের সন্ধান মেলে।যা বিশ্বের আর অন্য কোথাও মেলে না।আর সুন্দরবন বিখ্যাতও হয়েছে এই বিখ্যাত প্রাণীটির জন্য।টাইগার শব্দটা এসেছে গ্রীক শব্দ টাইগ্রিস থেকে। টাইগ্রিস নদীর ওপারে পারস্য রাজত্ব থেকে এশিয়াকে কল্পনা করতো গ্রীকরা।
ডোরাকাটা দাগের সমাহার তার সারা গায়ে।
সবসবময় ঔত পেতে থাকে শিকারের জন্য।এমন ও হয় শিকার না পেয়ে চলে আসে লোকালয়ে।উপকূলের মানুষের অনেক জীবন চলে যায় তাদের নির্মম থাবায়।তবুও সে বনের রাজা হিসাবেই বিচরণ করে বেড়ায় সারা সুন্দরবন।
রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো Panthera tigris।হলুদ থেকে হালকা কমলা রঙের এই প্রানীটি অনেক হিংস্র হয়ে থাকে।সাধারণত লেজ সহকারে এর দৈর্ঘ্য লম্বায় পুরুষ বাঘ ২১০-৩১০ সেঃমিঃ, যেখানে মাদিদের দৈর্ঘ্য ২৪০-২৬৫ সেঃমিঃ।
তাদের চোখদুটি উজ্জ্বল, ভয়ংকর এবং দীর্ঘ। রাজকীয় এই বাঘ স্বাভাবে অত্যন্ত হিংস্র।
শিকারের সময় তাই সংহার রূপ ধারণ কররে। একটি অবাক করা বিষয় হলো একটি পূর্ণ বয়স্ক বাঘ আস্ত গরু বা মহিষকে অতি সহজেই কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে যেতে পারে!!তাহলে বুঝেন এর কত শক্তি।
এই বাঘ গুলোর ওজন হয়ে থাকে ২৫০-৩০০ কেজি পর্যন্ত
২০০৪ সালের হিসেব মতে, সুন্দরবন প্রায় ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঘের আবাসস্থল যা বাঘের একক বৃহত্তম অংশ।যা আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে।সর্বশেষ বাঘশুমারিতে মোট বাঘ ছিল ৪৫২টি।তাছাড়া প্রায়ই খাদ্যাভাব,দূর্যোগ ও মানুষের নির্যাতনে শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে এই রাজকীয় বাঘ।
সুন্দরবনের অন্যতম সৌন্দর্য্য এর মধ্যে চিত্রা হরিণ সবার মন কেড়ে নেয়।ক্ষিপ্র গতি,মায়াবী চোখ, উচ্ছল এবং প্রিয় দর্শনের অধিকারী এই হরিণ।
শান্ত স্বাভাবের এর প্রাণী কাদা মাটি পছন্দ করে না বলে তারা সবসময় বনভূমির মধ্যে ঘুরে বেড়া।এরা দলবেধে একসাথে চলাফেরা করতে অনেক ভালোবাসে।চিত্রা হরিণের গায়ে ফোটা ফোটা কালো দাগ থকে।
সুন্দরবনে উপকূল থেকে শুরু করে লোকালয় পর্যন্ত এদের বিস্তর প্রভাব।একডাল থেকে অন্য ডালে ঘোরাঘুরে করেই ঘুরে বেড়ানো মনে হয় তাদের কাজ।এদের শরীর প্রায় দুই ফুট দীর্ঘ ।
হরিণের মত কেওড়া ফল তাদের খুবই প্রিয় একটা রেসিপি।মাঝে মাঝে হরিণের পিঠে চড়ে বসে আনন্দ উপভোগ করতে এরা বাদ দেয় না।সবমিলিয়ে এই প্রাণীটি না থাকলে হয়তো সুন্দরবনের সৌন্দর্য্য অনেক অংশেই কমে যেত।
সরীসৃপ শ্রেনীর মধ্যে অত্যন্ত ভয়ংকর হলো সাপ যা অভয় অরণ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে সুন্দরবনকে।সুন্দরবনের পানি থেকে শুরু করে গাছের মগডাল সবই যেন চেনা এদের।কখন যে কোনদিক থেকে আক্রমন করে বসে বাওয়ালিদের তা বোঝার কোন উপায় নেই।
অজগর
গোখরা
সবুজ বোড়া
এই সরীসৃপ শ্রেনীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সাপের নাম হলো কেউটে, গোখরা, পীতরাজ, দুধরাজ , অজগর,পদ্ম কেউটে,বাঁশ বুনে কেউটে, ইত্যাদি
নদী নালায় ছড়ানো ছিটানো রয়েছে সুন্দরবন।আর এইসব নদী নালায় আবাস গড়ে তুলেছে কুমির।অসংখ্য বড় ছোট কুমিরের দেখা মেলে এর খাল নদ ও নদীতে।
জলজ প্রাণীর মধ্যে কুমীর অত্যন্ত হিংস্র এবং শক্তিশালী প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত ।একটি প্রাপ্ত বয়স্ক কুমীরের দৈর্ঘ প্রায় ২০ ফুটের মত । এক সময় বাংলাদেশের মিষ্টি পানি ও নোনা উভয় পানির কুমীর পাওয়া যেত । বর্তমানে মিঠা পানির কুমির প্রায় বিলুপ্তির পথে ।
তবে নোনা পানির কুমীর এখনও প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় ।
সুন্দরবনকে পাখির রাজ্য বললে মোটেও ভুল হবে না।পাখিগুলোকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়।একটি স্থায়ী পাখি ও অন্যটি অথিতি পাখি।যে পাখি গুলো শীতকালে আমাদের দেশে অথিতি হয়ে আসে সেগুলোই অথিতি পাখি।
যাদের অধিকাংশরই আবাস হয় এর গাছপালা ও পানিতে।হাজার হাজার নাম জানা ও অজানা পাখির মধ্যে কিছু নাম হলো গাড়াপোলা,মদনটাক, শালিক ,টিয়া,হড়েল ,ঘুঘু,শ্বেতকাক ,দোয়েল, ফিঙে ইত্যাদি।
টিয়া
মদনটাক
আমি এতখন আপনাদেরকে সুন্দরবনের কিছু সৌন্দর্য্যের কথা তুলে ধরলাম।কিন্তু এই টিউনটি করার পিছোনে আমার একটা মহৎ উদ্দেশ্য আছে।সেটা হলো সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা "প্রাকৃতিক সপ্তম আশ্চার্য্য" প্রতিযোগীতায় সুন্দরবনকে ভোট দিয়ে এগিয়ে নেয়া।আমরা বাংলাদেশে নাগরিক।আমাদের দেশের তরে অনেক কিছু করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।আজ আমাদের সামনে অনেক বড় একটা সুযোগ এসেছে নিজের দেশকে নতুন করে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে চেনাবার।আমদের এই সুযোগ অবশ্যই কাজে লাগানো উচিত।
আচ্ছা আপনি একটিবার ভাবুন তো যদি যদি আপনার একটি ভোটের কারনে আমাদের দেশ ৭টি প্রাকৃতিক সপ্তম আশ্চার্য্য স্থানের মধ্যে চলে আসে তাহলে কি হবে।নতুন করে বাংলাদেশকে চিনবে বিশ্ব দরবার।আমাদের দেশের অর্থনীতির দরজা খুলে যাবে।দেশ হয়ে উঠবে সমৃদ্ধ,আমরা হয়ে উঠবো পরিচিত।এককথায় পুরো দেশ পালটে যাবে।বদলে যাবে আমাদের জীবনের মান।আপনি কি তা চান না????
যদি চান আর যদি নিজেকে একজন বাংলাদেশী হিসাবে পরিচয় দিতে চান তাহলে দয়া করে সুন্দরবনকে এই প্রতিযোগীতায় এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য আপনার মূল্যবান ভোটটি প্রদান করুন।আপনদের একটি একটি ভোটেই বাংলায় জয় হবে।জয় হবে সুন্দরবনের।জয় হবে সারা বাংলায় মানুষের।আমার মতে জাতি হিসাবে এটা এখন আমাদের সকলের জন্য আবশ্যক একটি দায়িত্ব হয়ে গিয়েছে।আশা করি সবাই নিজের দেশে ভালোর জন্য ,দেশের ভালোবাসার জন্য দৈনিক মাত্র ১টি করে ভোট দিবেন।আর যারা জানেন না কিভাবে ভোট প্রদান করবেন তারা নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করুন
"নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স" নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এর প্রধান আয়োজক।ভোট প্রদান প্রক্রিয়াও তাদের মাধ্যমেই করতে হবে অনলাইনে।আর এর জন্য প্রথমে আপনাকে যেতে হবে এই লিংকে।
এবার আপনি দেখতে পাবেন যে ২৮টি চূড়ান্ত স্থানের তালিকা দেয়া আছে।সেখান থেকে আপনি সুন্দরবন সহ মোট ৭ টি স্থান নির্বাচন করবেন আপনার পছন্দ অনুযায়ী।
তবে ৭টি কম নির্বাচন করলে আপনি ভোট দিতে পারবেন না।তাই অবশ্যই সুন্দরবন সহ ৭টি পছন্দের স্থান ক্লিকের মাধ্যেম নির্বাচন করুন।
এবার "Continue to step 2" বাটনে ক্লিক করে ২য় ধাপে প্রবেশ করুন।
২য় ধাপে ভোট দেয়ার জন্য আপনাকে একটি একাউন্ট খুলতে বলবে।এর জন্য ঐ ধাপে আপনার প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিয়ে যেমন username,Email Address ,Password,First Name ,Last Name,Gender,Brith Day ও Country নাম পূরণ করতে হবে।তারপর সঠিক ক্যাপচা টাইপ করে আপনি Register বাটনে ক্লিক করুন।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনার ইমেইল এড্রেসে একটি কনফার্মেশন মেইল চলে আসবে।এবার সেই ইমেল এড্রেসে লগইন করে আপনি তাদের কনফার্মেশন লিংক এ ক্লিক করুন।
ব্যাস হয়ে গেল আপনার মূলবান ভোট প্রদান সুন্দরবনের জন্য।,
আমরা কি শুধুমাত্র ১টি ভোট দিয়েই ক্ষান্ত হয়ে থাকবো।আশা করি না কারণ আমাদের সামনে এখন অনেক বড় চ্যালেন্জ।আর এই চ্যালেন্জে জয়ী হতে হলে আমাদের লাগবে অনেক অনেক ভোট।আর আপনি কিভাবে খুব সহজ ও দ্রুত একটি ভোট দিতে পারেন তার জন্য রয়েছে একটা টিপস
আমাদের ভোট দেওয়ার জন্য প্রধান প্রতিবন্ধকতা মনে হয় নতুন করে ইমেইল এডড্রেস খোলা,জিমেইল বা ইয়াহূ সেটাই হোক না কেন মেইল একাউন্ট খোলা বেশ সময় সাপেক্ষ।আর এই সময় সাপেক্ষ কাজটিকে আপনি ৩০ সেকেন্ডের সেরে ফেলতে পারেন।আর এই জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন YopMail সার্ভিস।ওয়েব সাইটের লিংক এখানে।এটি হলো এমন একটি ইমেইল সার্ভিস যেখানে আপনকে কোন রেজিষ্টেশন করতে হবে না বা কোন লগইন করতে হবে।শুধুমাত্র আপনি যে নামে একটি ফেক ইমেইল এডড্রেস খুলতে চান তা "Type the Email name of your choice" এই বক্সে দিয়ে "Check Inbox" এ ক্লিক করুন।
ব্যাস আপনি আপনার পছন্দের ইমেইল এডড্রেস খুব সহজেই পেয়ে গেলেন।এভাবে আপনি যত খুশি ইমেইল একাউন্ট খুলতে পারেন আর ভোট দিতে পারেন সুন্দরবনকে।
তাছাড়া বার বার ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে দেশ হিসাবে অন্য দেশের নাম ও ব্যবহার করুন।কারণ বর্তমানে "নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স" অন্য দেশ থেকে আগত ভোটকেও পয়েন্ট হিসাবে ধরে বাছাই করছে।আর এই জায়গাতেই সুন্দরবন সবচেয়ে পিছিয়ে পড়েছে।তাই যথা সম্ভব চেষ্টা করুন অন্য দেশের নাম দিয়ে ভোট প্রদান করতে।
আমরা জানি টেকটিউন্স এখন অনলাইন জগতে এক নামে পরিচিত একটি নাম।এখন বর্তমানে এর নিয়মিত পাঠক সংখ্যা অনেক।অনেকে আবার নতুন করে আসতে শুরু করেছে এই আমাদের প্রিয় প্লাটফর্মে।আর তাই আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি টেকটিউন্সের এখন দেশে জন্য অনেক দায়-বদ্ধতা তৈরী হয়ে উঠেছে।আজ আমাদের তরূণ দের একটি অংশ অনেকটা সময় ব্যায় করছে টেকটিউন্সে।তার মানে বোঝা যায় টেকটিউন্সে এখন কতটা জনপ্রিয়তা।আর এই জন্যই এই সাইটটি এলেক্সা রেংকিং এ ১৬ নম্বরে।তাই আমার মনে হয় সুন্দরবনকে নিয়ে টেকটিউন্সের কিছু একটা করা উচিত।
খুব বড় করে কিছু করা না হোক অনন্তত আমরা একটা ছোট খাটো ক্যাম্পেন করতে পারে ভোটিং এর জন্য।কিছু না হোক অনন্তত ঢাকা শহরের যেসকল স্কুল কলেজ এ গিয়ে ক্যাম্পেইন করা সম্ভব সেখানে গিয়ে ভোটিং করার জন্য আব হান করতে পারে।
সুন্দরবন জয়ী হবার পর আমরা যেন গর্ব করে বলতে পারি আমরাও ছিলাম সুন্দরবনের সাথে।
সব কথার শেষ কথা হলো আমাদেশ দেশের সাথে অন্য দেশের তুলনা হয়না।আর এই কথাটি যেন সারা বিশ্ব জানতে পারে সুন্দরবনের মাধ্যমে সেই জন্য আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে।কিছুই করতে না পারি শুধুমাত্র দিনে ১টি করে ভোট দেই সুন্দরবনকে।এটা কি খুবই কষ্টসাধ্য কাজ?আমরা কত সময়ই তো ফেসবুকে ,গান শুনে সিনেমা দেখে পার করে দেই।এই সময় গুলো থেকে প্রতিদিন ৫ মিনিট সময় ব্যায় করতে পারিনা সুন্দরবনের জন্য?আপনাদের একটো একটি ভোটই পারে সুন্দরবনকে লক্ষ্যের চূড়ান্ত শেখরে উঠতে।আমরা টেকটিউন্সের ৫০ হাজার ভিজিটররা যদি প্রতিদিন ১টি করেও ভোট প্রদান করি তাহলে মাস শেষে ভোটের সংখ্যা দাড়ায় ১৫ লক্ষ্য ভোট।আর এই ভোট প্রদান ঢেষ হবে ১১-১১-২০১১ পর্যন্ত।এভাবে চলতে থাকলে ভোট সংখ্যা দাড়াবে ১ কোটি ৫ লক্ষ্য !!! এই টার্গেট কি পূরণ করা খুবই কষ্টকর?আমার মনে হয় মোটেও না।
তাই আসুন আমরা প্রতিদিনের রুটিনে সুন্দরবনের জন্য ৫মিনিট সময় বরাদ্দ করে দেশ প্রেমের বহি প্রকাশ করি।
আমার টিউনটি তখনিই সার্থক হবে যখন আপনারা সবাই সুন্দরবনকে ভোট প্রদান করেন।আর এই টিউনকে যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমা-সুন্দর ভাবে নিবেন।সবাই ভালো থাকুন।ধন্যবাদ সবাইকে টিউনটি ধৈর্য্য সহকারে পড়ার জন্য
আমি সজীব রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 69 টি টিউন ও 819 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ধন্যবাদ সজীব ভাই আপনার তথ্য ও ছবি সমৃদ্ধ টিউনটির জন্য ।