কেমন আছেন আপনারা? বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ এ কথা আমি আগে অনেকবারই বলেছি। আর তথ্য প্রযুক্তির বিকাশে বড় বড় টেক কোম্পানিগুলো অবদান কত গুরুত্বপূর্ণ সেটা আর নতুন করে বলার অবকাশ নেই। আর আজ আমি আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম এই টেক কোম্পানিগুলোর ৪০টি দূলর্ভ ছবি যা হয়তো আগে আপনি আগে কোথায় দেখেননি। তো রিল্যাক্স করে বসুন আর ছবিগুলো উপভোগ করুন।
প্রথম ছবিটি Apple I এর সাথে Steve Wozniak এবং Steve Jobs এর। ছবিটি ১৯৭৬ সালে তোলা। Wozniak প্রথমে সার্কিট বোর্ড দিয়ে অ্যাপল ওয়ান তৈরি করেন আর স্টিভ জবস ডিভাইসটির ডিজাইন করেন। পরবর্তীতে তারা ডিভাইসটিকে ৬৬৬.৬৬ ডলার প্রতি পিসে বিক্রি করা শুরু করেন।
এই ছবিটি ১৯৭৮ সালের অ্যাপল ২ টিমের। ছবিতে স্টিভ জবসকে পেছনে মাইকেল স্কটের সাথে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে মাইকেল স্কট হচ্ছেন অ্যাপলের প্রথম প্রেসিডেন্ট। আর ছবিটির পেছনে অ্যাপল ২ ডিভাইসগুলো আপনারা দেখতে পাচ্ছেন।
ওজ একটি অ্যাপল ২ কম্পিউটারে কাজ করছেন এবং জবস তাকিয়ে আছেন। অ্যাপল ২ কম্পিউটারটি Woz তার শখের বশে বানিয়েছিলেন। উল্লেখ্য যে অ্যাপল ২ হচ্ছে বিশ্বের প্রথম ব্যবসা সফট ৮ বিটের হোম কম্পিউটার। কালার গ্রাফিক্স, হিট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং মাত্র ৪ কিলোবাইট র্যাম দিয়ে অ্যাপল ২ ডিভাইসটির দাম রাখা হয়েছিলো ১২৯৮ মার্কিন ডলার বা প্রায় দেড় লাখ টাকা।
এই ছবিটি Cupertino শহরের অ্যাপল হেডকোয়াটারের সামনে থেকে ১৯৮১ সালে তোলা। উল্লেখ্য যে অ্যাপলের লোগোতে রংধনুর ব্যবহার ১৯৭৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত হয়।
বিশ্বের প্রথম গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসযুক্ত পিসি ছিলো অ্যাপল লিসা। লিসা নামটি স্টিভ জবসের মেয়ের নামে নামকরণ করা হয়েছিলো। কম্পিউটারটি বানাতে ৫০ জনের টিম ছিলো আর কোম্পানিটির ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয় এর পেছনে।
অ্যাপল IIc কম্পিউটারকে দেখাচ্ছেন স্টিভ জবস, জন স্কুলি এবং স্টিভ ওজনিয়াক। অ্যাপলের ৪র্থ এবং প্রথম পোর্টেবল কম্পিউটার এটি। এর ওজন ছিলো ৩.৪ কেজি। কিন্তু এতে বিল্ট ইন ব্যাটারি এবং ডিসপ্লে ছিলো না।
আমেরিকার সেন্ট্রাল পার্কে Steve Jobs এবং John Sculley। উল্লেখ্য যে John Sculley ছিলেন সর্বকালের সবথেকে তরুণ Pepsi প্রেসিডেন্ট।
স্টিভ জবসের বাসায় বিল গেটস কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছেন।
ছবিটি Apple QuickTake ক্যামেরা দিয়ে তোলা হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো স্টিভ জবসের কালো জ্যাকেটটি ক্যামেরায় বেগুনী রংয়ের হয়ে গিয়েছিলো।
১৯৭৫ সালে হার্ভাড থেকে ড্রপ আউট হবার পর বিল গেটস Micro-Soft শুরু করেন। আর এক বছর পরেই নাম থেকে হাইফেনটি তুলে নেওয়া হয়। ছবিতে বিল গেটসের সাথে Paul Allen কে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন।
বিল গেটস সহ মাইক্রোসফটের প্রথম ১১ জন কর্মকর্তাকে দেখতে পাচ্ছেন।
স্ট্যান্ডফোর্ড গ্রাজুয়েট স্কুল অফ বিজনেস থেকে ড্রপ আউট হয়ে যাবার পর মাইক্রোসফটে যোগদান করেন Steve Ballmer। যেখানে তিনি ২০১৪ পর্যন্ত ৩৩ বছর কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০০০ সালে মাইক্রোসফটের সিইও হন।
মাইক্রোসফটের অপারেটিং সিস্টেম MS DOS ১৯৮১ সাল থেকে কমারশিয়াল ভাবে IBM PC এর সাথে ডিস্ট্রিবিউট হতে থাকে। পরবর্তীতে যেটা টেক দুনিয়া ঝড় ফেলেছিল। যেহেতু বিল গেটসের কাছে অপারেটিং সিস্টেমের লাইসেন্স ছিলো, তিনি যেকোনো IBM PC তেই তার অপারেটিং সিস্টেমকে প্রবেশ করানোর সুযোগ পেতেন।
উইন্ডোজের সর্বপ্রথম সংষ্করণটির নাম রাখা হয়েছিলো Interface Manager কিন্তু রিলিজের আগেই সেটা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়।
তরুণ বিল গেটস রিল্যাক্স মুডে রয়েছেন। কিন্তু উইন্ডোজ ১.০ মুক্তির পর তার বিরদ্ধে অ্যাপল প্যাটেন্ট চুরির অভিযোগ এনে মামলা করে। পরবতর্ীতে অবশ্য বিল গেটস মামলাটি সামলে নিতে সক্ষম হন।
এই ফ্লপি ডিক্সগুলোর কথা মনে আছে? এতে আপনি তখনকার সময়ে সম্পূর্ণ একটি অপারেটিং সিস্টেম ঢুকাতে পারতেন। এখানে ১৯২ কিলোবাইটের ফ্লপি ডিক্সগুলো হাতে নিয়ে বিল গেটসকে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। এদের ভিতর রয়েছে ১৬ বিট গ্রাফিক্যাল অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ১.০।
উইন্ডোজ ৩.০ হাতে বিল গেটস, যেখানে নতুন ফিচার হিসেবে রয়েছে Windows Software Development Kit (SDK)। যার মাধ্যমে নিমার্তারা উইন্ডোজের জন্য থার্ড পাটিং প্রোগ্রাম বানানোর সুযোগ পাবেন। মুক্তি প্রথম বছরে এটির ৩ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয় এবং উইন্ডোজ জনপ্রিয়তা লাভ করে।
জেনে অবাক হবেন যে উইন্ডোজ ৯৫ মুক্তির মাত্র ৪ দিনে ১ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়ে যায় আর বিল গেটস বিশ্বের সবথেকে ধনী মানুষ হয়ে যান এবং প্রতি বছরেই ধনী মানুষ হিসেবে থাকেন।
Adobe System এর ফাউন্ডারস Charles Geschke এবং John Warnock। তাদের লক্ষ্য চিলো সঠিক ভাবে অনস্ক্রিণ থেকে টেক্স এবং ইমেজ কাগজে প্রিন্ট করা।
স্টিফ জবসের সাথে এডোবি ফাউন্ডারস যেখাবে জবস তাদের সাথে PostScript নিয়ে কথা বলছেন। পোস্টস্ক্রিপ্ট প্রযুক্তি দিয়ে Apple LaserWriter ছিলো বিশ্বের প্রথম লেজার প্রিন্টারগুলো মধ্যে অন্যতম
বামে ইন্টেল এর প্রথম কর্মকর্তা Andy Grove, আর ডানে ইন্টেলের ফাউন্ডারস Robert Noyce এবং Gordon Moore
ইন্টেলের Santa Clara অফিসের সামনে ইন্টেলের কর্মীরা। ১৯৭০ সালে এই অফিসে ৪বিট সিপিইউ Intel 4004 নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ক্যালকুলেটরের জন্য ৮ বিটের মাইক্রোপ্রসেসর ইন্টেল ৮০০৮ ও এই ফ্যাক্টরিতেই নির্মাণ করা হয়েছিলো।
চাঁদে মানুষ পাঠানোর কাজে টেকনিক্যালভাবে নাসাকে সাহায্য করেছিলো আইবিএম।
আইবিএম ৭০৯০ কম্পিউটারটি ছিলো একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটার যেটা তখনকার সময়ে ২.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি হতো। কম্পিউটারটি ১৯৬৯ সালের Apollo চাঁদের মিশনে ব্যবহৃত হয়েছিলো।
ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাক্টরিতে এইচপি কোফাউন্ডারস Bill Hewlett এবং Dave Packard
স্যামসং কোম্পানিকে ১৯৩৮ সালে Lee Byung Chull Samsung Sanghoe নামে প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম দিকে গ্লসারিস এবং নুডলস বিক্রি করতো কোম্পানিটি। ১৯৬০ সালের পর থেকে স্যামসং ইলেক্ট্রনিকস, সেমি কনডাক্টর, এলসিডি স্ক্রিণ এবং মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রির দিকে চলে আসে
স্যামসং গ্রুপের ফাউন্ডার Lee Byung Chull (মাঝে) কে একজন কর্মকর্তা কম্পিউটার সিস্টেম এর ব্যাপারে বুঝাচ্ছেন।
পুরো পৃথিবী জুড়ে স্যামসংয়ের ৮০টি ক্ষুদ্র কোম্পানি রয়েছে এবং স্যামসংয়ের বিশ্বব্যাপী মোট কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৪, ২৭, ০০০ জন। কোম্পানিটির আয় সাউথ কোরিয়ার ১৭% GDP এর সমান
এই ছবিতে ওরাকল এর প্রথম বর্ষ পুর্তিতে দেখতে পাচ্ছেন Ed Oates, Bob Miner এবং Larry Ellison কে।
ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস এর হোস্টেল রুম থেকেই মাইকেল ডেল IMB PC-compatible কম্পিউটারগুলোকে এসেম্বল এবং বিক্রি করা শুরু করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপ আউট হন এবং কম্পিউটার বানানোর কাজে পুরোদমে লেগে যান। ১৯৮৫ সালে আবিস্কার করেন "Turbo PC" যা পরবর্তী বছরে তার কোম্পানিকে ৭৩ মিলিয়ন ডলার লাভ এনে দেয়। ১৯৮৮ সালে তার কোম্পানির নাম হয় Dell
Austin Circa শহরে ১৯৮৯ সালে ডেল প্রোডাক্টশন ফ্যাক্টরির ভেতর মাইকেল ডেল।
গুগল এর কো ফাউন্ডারসদের কে একই চিত্রে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন।
এই হলো অরিজনাল গুগল প্লাটফর্ম যেখান থেকে গুগলের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এটি স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষ।
একই ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন গুগলের সর্বপ্রথম টিমের সকল সদস্যকে।
ইয়াহুতে যোগদানের আগে Marissa Mayer গুগলে প্রায় ১৩ বছর ধরে কর্মরত ছিলেন। তিনি বর্তমানে Yahoo! এর সিইওএ এবং প্রেসিডেন্ট। তিনি বিশ্বের প্রভাবশালী মহিলাদের মধ্যে একজন। তিনি এখন ৪২ বছর বয়সী।
শুরু দিকে সার্চ ইঞ্জিনের চাইতে yahoo! কে একটি ওয়েব ডাইরেক্টরি হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিলো। কিন্তু ধীরে ধীরে এটাকে সবাই সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে। ২০০৮ সালে ৪৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে ইয়াহুকে কিনে নেওয়ার প্রস্তাব করে মাইক্রোসফট, তবে সেটা প্রত্যাখ্যান করা হয়।
১৯৯৪ সালে Wall Street Firm থেকে Jeff Bezos তার ভাইস প্রেসিডেন্ট এর পদটি ছেড়ে দিয়ে অনলাইনে জিনিসপত্র বিক্রির উদ্যোগ শুরু করেন। যার ফলে আমাজন ওয়েবসাইটের যাত্রা শুরু। কিন্তু ২০১১ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটি তেমন কোনো লাভের মুখ দেখতে পারেনি। কিন্তু বর্তমানে কোম্পানির গড় আয় প্রায় ১৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
eBay প্রথম দিকে Pierre Omidyar এর একটি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে হাই ট্রাফিকের জন্য তার সাইটের শুধুমাত্র ইনকামিং চেকগুলো দেখাশোনার জন্য তিনি একজন CEO কে নিয়োগ দেন। ১৯৯৮ সালে কোম্পানি পাবলিকে চলে আসে।
ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন Dustin Moskovitz, Chris Hughes এবং Mark Zuckerberg তাদের হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমে বসে আছেন। প্রথম দিকে সাইটটি শুধুমাত্র হার্ভাড স্টুডেন্টসদের জন্য বানানো হলেও ২০০৬ সালে তা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আর ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে ফেসবুকে ১ বিলিয়ন একটিভ ব্যবহারকারী হয়ে যায়। Dustin Moskovitz ফেসবুকে ছেড়ে Asana কে কো ফাউন্ড করেন এবং বর্তমানে Chris Hughes দ্যা নিউ রিপাবলিক সংস্থায় Publisher & Editor-in-Chief হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন Chad Hurley, Steve Chen এবং Jawed Karim কে। তারা ইউটিউব প্রতিষ্ঠার আগে পেপালে কর্মরত ছিলেন।
তো এই ছিলো বর্তমান যুগের টেক জায়ান্ট কোম্পনিগুলো কিছু ঐতিহাসিক দুলর্ভ ছবি। আশা করি আজকের এই ব্যতিক্রমধমী টিউনটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। টিউনটি ভালো লাগলে উপরের জোস বাটনে ক্লিক করতে ভূলবেন না যেন। আজ এ পর্যন্তই। আগামীতে অন্য কোনো টপিক নিয়ে আমি টিউনার গেমওয়ালা চলে আসবো আপনাদেরই প্রিয় বাংলা টেকনোলজি ব্লগ টেকটিউনসে।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!