একটি কোম্পানি অন্য একটি কোম্পানিকে কেন কিনে নেয়? মাঝে মধ্যে অন্য কোম্পানির যে দক্ষ জনশক্তি থাকে তাদেরকে নিজের টিমে অর্ন্তভুক্ত করে নেওয়ার জন্য আবার কখনো কখনো উঠতি কোনো প্রতিযোগী কোম্পানিতে টাকার বিনিময়ে কিনে নেওয়া হয়, আবার কোনো সময় অন্য কোম্পানির প্যাটেন্স এবং অধিকার সত্বকেও কিনে নেওয়া হয়। আর এই সমস্ত একুইজিশনগুলো সম্পন্ন করা বহুল অর্থের বিনিময়ে কিন্তু কখনো কখনো কোনো কোম্পানি ভবিষ্যৎতের কথা চিন্তা করে নিজের কোম্পানিকে এককালিন টাকার জন্য বিক্রি করে দেয় না। যেমন মাইক্রোসফট এবং গুগল ফেসবুকের শুরুর দিকে মার্ক জুকারবার্কে অনেক অর্থের বিনিময়ে ফেসবুক কিনে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু পারেনি। অন্যদিকে গুগলের দুইজন প্রতিষ্ঠাতা নিজ থেকে গুগলকে অনেকের কাছে বিক্রি করতে গিয়েও বিক্রি করতে পারেন নি।
আর আজকের টিউনে আমি এইরকমই টেক বিষায়ক ১০টি শীর্ষ একুইজিশন নিয়ে কথা বলতে চলে এলাম। তো চলুন দেখে নেই কি কি করেছে আজকে:
প্রায় ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে জনপ্রিয় মেসেজিং সার্ভিস WhatsApp কে কিনে নিয়েছে ফেসবুক। এটা কি আগে জানতেন? এখানে ফেসবুক শুধু একটি মোবাইল এপপকেই কিনে নেয়নি, বরং ফেসবুক এপপ এর সাথে সাথে এর প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ব্যবহারকারীদেরও একসেস পাওয়ার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে। বর্তমানে মেসেজিংয়ের অন্যতম জনপ্রিয় এপপ হলো WhatsApp। আর প্রতিটি ব্যবহারকারীর জন্য প্রায় ৪০ মার্কিন ডলার হিসেবে WhatsApp এখন ফেসবুক নিয়ন্ত্রিত একটি কোম্পানি। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে মাত্র ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মূলধন নিয়ে গড়ে তোলা WhatsApp কোম্পানিকে প্রায় ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ফেসবুক কিনে নেয়। ২০০৯ সালের জানুয়ারী মাসে মুক্তি দেওয়া এই ফ্রিওয়্যার ক্রস প্লাটফর্ম মেসেজিং এবং VoIP সার্ভিস WhatsApp ২০১৪ পর্যন্ত নিজে নিজেই কোম্পানি পরিচালনা করে আসছিলো।
ব্রায়ান একটন এবং জান কউম ২০০৯ সালে WhatsApp প্রতিষ্ঠা করেন। এরা দুজনই সাবেক Yahoo এর কর্মকর্তা। মজার ব্যাপার হলো তারা প্রথমে ফেসবুকে চাকরীর জন্য আবেদন করলেও সেটা হয় নি। তাই একদিন তারা একটি আইফোন ঘাটতে ঘাটতে একটি সুন্দর মেসেঞ্জারের অভার অনুভব করলেন আর আজ আমরা পেয়ে গেলাম WhatsApp মেসেঞ্জার। তবে আপনি দুনিয়ার সর্বত্র WhatsApp ব্যবহার করতে পারবেন না। কারণ WhatsApp চীন, ইরান এবং টুর্কি দেশে সম্পূর্ণভাবে ব্যান করে দেওয়া হয়েছে।
২০১১ সাল থেকে প্রসেসিং শুরু করে প্রায় ১ বছর ধরে চলা আলোচনা এবং আইনি প্রক্রিয়া সম্পাদনের পর গুগল মোবাইল কোম্পানি মটোরোলাকে প্রায় ১২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয়। এর মাধ্যমে গুগল অ্যাপলের একটি শক্ত প্রতিযোগী হিসেবে টোটাল ১৭ হাজার প্যাটেন্ট সহ এখন বাজারে অবস্থান করছে। এছাড়াও ২০১১ সালের মাঝামাঝিতে গুগল IBM এর কাছ থেকে ১০০০টি হার্ডওয়্যার প্যাটেন্ট কিনে নেয়। পরবর্তীতে Lenovo এর কাছে মটোরোলা হোম কে ২.৩৫ বিলিয়নে এবং মটোরোলা স্মার্টফোন ডিভিশনকে ২.৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে গুগল বিক্রি করে দেয়।
২০০২ সালে Compaq কোম্পানিকে প্রায় ১৭.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে কিনে নেবার পর HP পরবর্তীতে একটি এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার কোম্পানি Autonomy কে ২০১১ সালে প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে কিনে নেয়। কিন্তু এখান কিছু ঘাপলা রয়েছে। কারণ ২০১২ সালে HP একটি রিপোর্টে বলেছে যে তারা প্রায় অনেক বেশি অর্থ খরচ করে ফেলেছে Autonomy কোম্পানিকে কিনতে গিয়ে। অন্যদিকে Autonomy কোম্পানির ভরাডুবির কারণে প্রায় ১০ বছর ধরে কোম্পানির CEO কে কোম্পানি থেকে বহিস্কার করে পরবর্তীতে কোম্পানিকে HP এর কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
২০১১ সালে মাইক্রোসফট স্কাইপকে কিনে নেয় প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে। এর আগে স্কাইপ Ebay এর অধীনে ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে প্রায় ৪০% লস দিয়ে EBay স্কাইপকে একটি প্রাইভেট ইনভেস্টরের কাছে বিক্রি করে দেয়। এরপর থেকেই গুগল এবং ফেসবুক স্কাইপকে কিনে নেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়। কিন্তু হঠাৎ মাইক্রোসফট মাঝখানে এসে আরো বেশি অর্থের বিনিময়ে স্কাইপকে কিনে নেয়। মজার ব্যাপার হলো কেনার সময় মাইক্রোসফটের নিজস্ব মেসেঞ্জারের থেকে কম গ্রাহক ছিলো স্কাইপের। তবে কিনে নেবার পর স্কাইপ প্রতিটি উইন্ডোজ ডিভাইসে প্রিইন্সটলডকৃত অবস্থা রয়েছে এবং বর্তমানে পৃথিবীর ভিডিও কলের প্রায় ১/৩ ভাগ স্কাইপের মাধ্যমেই করা হয়ে থাকে।
প্রায় ৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে Oracle কিনে নেয় Sun Microsystems কে। এর মাধ্যমে ওরাকল পেয়ে যায় Java, Solaris Operating System এবং MySQL এর অধিসত্ত্ব। এছাড়াও ২০১০ সালে গুগলের বিরুদ্ধে ওরাকল তাদের জাভাকে অ্যান্ড্রয়েড প্লাটফর্মে ব্যবহারের জন্য একটি আইনী মামলা করে। কিন্তু পরবর্তীতে আইনী বিশ্লেষণে জানা যায় যে গুগল জাভা কোডকে চুরি করেনি শুধুমাত্র ছোটখাট Literal কোড কপি করেছে। পরবর্তীতে ওরাকলও এটি মেনে নেয়।
অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোন আসার পূর্বে দুনিয়ার ১নং স্মার্টফোন ব্রান্ড ছিলো নোকিয়া। কিন্তু ২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে প্রায় ৭ বিলিয়নের বেশি মার্কিন ডলারের বিনিময়ে নোকিয়া মাইক্রোসফটের কাছে নিজেকে বিক্রি করে দেয়। এর মধ্যে নোকিয়ার patent portfolio, ম্যাপিং সার্ভিস এবং ৩২ হাজার কর্মীও ছিলো। এর মাধ্যমে মাইক্রোসফট তার নিজস্ব লুমিয়া ও আশা ব্রান্ডের ডিভাইসের মাধ্যমে মোবাইল ডিভাইস মার্কেটে নিজেদের জায়গা করে নিতে চেয়েছিলো মাইক্রোসফট।
আপনা হয়তো ভাবতেই পারেন গুগলের এতো সার্ভিস থাকতে তারা কেন ৩.২ বিলিয়ম মার্কিন ডলার দিয়ে thermostats এবং smoke detectors কিনে নেয়? যেখানে গুগলের রয়েছে দুনিয়ার সর্ববৃহৎ সার্চ ইঞ্জিন, রয়েছে ক্রোমক্যাস্ট, ক্রোমবুক, অ্যান্ড্রয়েড ওএস, গুগল নেক্সাস, গুগল গ্লাস এমনকি বর্তমানে নিজস্ব স্মার্টফোন গুগল পিক্সেল ও রয়েছে।
নেস্ট ল্যাবসকে কিনে নেওয়ার একমাত্র কারণ হলো নেস্ট ল্যাবস এর ফাউন্ডার হলেন টনি ফ্যাডেল যিদিন আইপডকে ডিজাইন ও তৈরি করেছিলেন। তাকে গুগলের টিমে নিয়ে আসার জন্যেই গুগলকে পুরো একটি কোম্পানিকে কিনে নিতে হয়েছিলো।
ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট, ডাটা প্রটেক্টশন, উইন্ডোজ সার্ভার ম্যানেজমেন্ট এবং আইডেন্টিটি ও একসেস ম্যানেজমেন্ট এর সেক্টরে কোয়েস্ট সফটওয়্যার হলো একটি লিডার এন্টার প্রাইজ। আর এই কোম্পানিকে DELL প্রায় ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয়। কোয়েস্ট সফটওয়্যারের ৩৮৫০ জন কর্মী রয়েছে, রয়েছে ২৩ টি দেশে প্রায় ৬০টির মতো অফিস। আর এগুলোর সাহায্যেই DELL তাদের নিজস্ব সফটওয়্যার বিজনেসকে চাঙ্গা করতে চেয়েছিলো। এছাড়াও পরবর্তীতে Credant Technologies এবং SonicWall কোম্পানিকেও স্টোরেজ প্রক্টেশন এবং নেটওর্য়াক এন্ড ডাটা সিকুরিটি প্রভাইডার হিসেবে কিনে নেয় DELL
প্রায় ১৭৩.৪ মিলিয়ন ব্লগস এবং প্রায় ৭৮ বিলিয়ন টিউনের অধিকারী Tumblr কে ইয়াহু ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে ২০১৪ সালে কিনে নেয়। এর মাধ্যমে ইয়াহু তাদের সার্ভিসকে যুবক যুবতীদের কাছে পৌছে দেওয়ার একটি মাধ্যম পেয়ে যায়। এছাড়াও এই ক্রয়ের মাধ্যমে ইয়াহু Tumblr কে ব্যবহার করে এখন অনলাইন এডভারটাইজিং বিজনেসে করছে।
আজকের লিস্টে শুরুতেই ফেসবুক ছিলো আর শেষেও ফেসবুক রয়েছে। ফটো শেয়ারিং সোশাল প্লাটফর্ম ইন্সট্রগ্রামকে ফেসবকু ১ বিলিয়ম মার্কিন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয়। টাকায় কম হলেও ফেসবুক বিশ্বাস করে যে নতুন ট্যালেন্ট দিয়ে অনেক কিছুই সম্ভব। যেখানে গুগল Snapchat কে কিনে নিয়ে সেটাকে বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো। নতুন ডেভেলপার এর জন্যই নামে মাত্র মূল্যে আরেকটি সোশাল প্লাটফর্মের মালিক হয়ে গেল ফেসবুক। ২০১২ সালে ফেসবুকের আওতায় আসার পর ২০১৩ সালে ২৩% মার্কেট গ্রোথ নিয়ে ইন্সট্রাগ্রাম তাদের সার্ভিসে এডভারটাইজ সিস্টেম যুক্ত করে ফেলে।
তো কেমন লাগলো আজকের পোষ্টটি? মতামত জানাতে পারেন নিচের টিউমেন্ট বক্সে। আর আপনার টেকনোলজি বিষায়ক কোনো সমস্যা থাকলে সেটা নির্দ্বিধায় জানাতে পারেন টেকটিউনস জ্যাকেটে। আর হ্যাঁ টিউনটি ভালো লাগলে জোস বাটনে ক্লিক করতে ভূলবেন না যেন।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!
অসাধারণ। আপনার পোস্টগুলো বরাবরই ভাল হয় তবে এটা আরো ভাল লাগলো। ধন্যবাদ