আমরাতো অনেকেই ব্লগে লিখি কিন্তু জানি কি এর তৈরীর পূর্ব ইতিহাস? তাহলে আসুন এবার জেনে নেই ব্লগ আবিষ্কারের পূর্ব ইতিকথা। সংক্ষেপে যতটুকো সম্ভব ততটুকো প্রকাশের চেষ্টা করলাম। আর ধারাবাহিকভাবে বিস্তারিত লিখবো আগামীতে কোন এক প্রকাশনায়।
ব্লগ শব্দটি ইংরেজ "Blog" এর বাংলা প্রতিশব্দ, যাকে বলা হয় অনলাইন জার্নাল । ইংরেজি ব্লগ শব্দটি আবার ওয়েভব্লগ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। যিনি ব্লগে পোস্ট করেন তাকে ব্লগার হয় বলার। ব্লগাররা প্রতিনিয়ত তাদের ওয়েবসাইটে কনটেন্ট যুক্ত করেন আর ব্যবহারকারীরা সেখানে তাদের মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও সাম্প্রতিক কালে ব্লগ ফ্রিলান্স সাংবাদিকতার একটা মাধ্যম হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহ নিয়ে এক বা একাধিক ব্লগাররা তাদের নিজস্ব কিংবা প্রকাশিত বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন করে থাকেন কিংবা আপডেট করে থাকেন।
বেশিরভাগ ব্লগই কোন একটা নির্দিষ্ট বিষয়সর্ম্পকে আমাদের ধারাবিবরণী কিংবা খবর জানায়; আবার ব্যক্তিগত ব্লগও রয়েছে যাদেরকে বলা হয় অনলাইন দিনলিপি বা দিনপত্রী। সাধারণত ব্লগ প্রকাশিত হয় নিয়মিত লেখা, ছবি, অন্য ব্লগ,ওয়েব পেজ আর এ বিষয়ে অন্য মাধ্যমের লিংকের সমাহার কিংবা সমষ্টি দিয়ে। পাশাপাশি পাঠকদের মিথষ্ক্রিয়াময় ও উন্মুক্ত মন্তব্য করার সুবিধা রাখা হয় যা বেশিরভাগ ব্লগের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। আবার প্রায় ব্লগই মূলত হয় প্রবন্ধ নির্ভর, কিছু কিছু আবার প্রাধান্য দেয় শিল্প, ছবি ,ভিডিও, সঙ্গীত আর অডিওর ওপর। মাইক্রোব্লগিং হচ্ছে আরেকধরনের ব্লগিং যেখানে খুব ছোট ছোট পোস্ট থাকে।
উল্লেখ্যযোগ্য ও মজাদার বিষয় হচ্ছে এই যে, ডিসেম্বর ২০০৭ সালের এক সার্ভেতে ব্লগ খোঁজা ইঞ্জিন প্রায় এগারো কোটি বার লাখেরও বেশি ব্লগের সন্ধান পেয়েছে।
"ওয়েবলগ" শব্দটা জোম বার্গার,১৭ ডিসেম্বর ১৯৯৭ প্রথম ব্যবহার করেন। শব্দটার ছোট্ট সংস্করণ হিসেবে ১৯৯৯ এর এপ্রিল কিংবা মে-এর দিকে "ব্লগ" নামটি চালু করেন পিটার মেরহোলজ। যিনি ওয়েবলগ শব্দটা ভেঙে মজা করে "PeterMelcom" এর সাইডবারে "WE blog" লেখেন। তার ঠিক পরপরই পাইরা ল্যাবস-এ ইভান উইলিয়ামস "ব্লগ" শব্দটা বিশেষ্য এবং ক্রিয়া দুটো হিসেবেই ব্যবহার শুরু করেন যার মানে দাড়ায় "ব্লগ করা এবং পাইরা ল্যাবের ব্লগার পণ্যের সাথে সম্পর্ক রেখে "ব্লগার" শব্দটা ব্যবহার শুরু হয় এবং জনপ্রিয় হয়ে ওঠে পরিভাষাটি।
ব্লগিং জনপ্রিয় হওয়ার আগে, ডিজিটাল গোষ্ঠীগুলোর নানান ধরন ছিলো। যেমন; ইউজনেট, ছিলো জিনি, বিক্স এর মতো বাণিজ্যিক অনলাইন সার্ভিস। আরো ছিলো পুরনো আমলের কম্পুসার্ভ, ই - মেল লিস্টস আর বুলেটিন বোর্ড সিস্টেমস। ১৯৯০এর দিকে, ইন্টারনেট ফোরাম সফটওয়্যার "থ্রেড" এর মাধ্যমে কথোপকথন চালানোর ব্যবস্থা শুরু করে। থ্রেড হচ্ছে একটা ভার্চুয়াল "কর্কবোর্ড" যা বার্তাগুলোর মাঝখানের সাময়িক সংযোগের সমষ্টি।
আধুনিক ব্লগের উৎপত্তি ঘটে অনলাইন দিনপঞ্জী বা রোজনামচা থেকে, যেখানে লোকেরা তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের প্রাত্যাহিক বিবরণ রাখতেন। এধরনের বেশিরভাগ লোকেরাই নিজেদের বলতেন ডায়েরিস্টস, জার্নালিস্টস কিংবা জুমালারস। সোয়ার্থমোর কলেজ-এ ছাত্র জাস্টিন হল ১৯৯৪ সালের দিকে ব্যক্তিগত ব্লগিং কর অন্যতম ব্লগার হিসেবে স্বীকৃত পান, যেমনটা ধরা হয় জেরি পুমেল কে'ও। ডেভ উইনার'এর স্ক্রিপ্টিং নিউজকে ধরা হয় সবচাইতে পুরনো আর সবচাইতে বেশি দিন ধরে চালু থাকা খ্যাতিসম্পন্ন ওয়েবলগ।
প্রথম দিককার ব্লগগুলো ছিলো স্রেফ সাধারণ ওয়েবসাইটের বানানো। তবে, সময়ের সাথে সাথে পোস্ট করা প্রবন্ধগুলো লেখা এবং সম্পাদন করা সহজ করার জন্যে প্রবর্তিত হয় বিশেষ টুলস্ ও সফটওয়্যার। যারা তেমন প্রযুক্তিদক্ষ নয় তারাও এখন কাজ করতে পারেন তাদের ব্লগকে পরিবর্ধন কিংবা সম্পাদনা করতে। এতে করেই শেষমেষ আলাদা ধরনের একটা অনলাইন প্রকাশনা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে যেটা আজকাল আমাদের চেনা চেহারার যেরকম ব্লগ সেরকমটা। উদাহরণস্বরূপ, কিছু কিছু ব্রাউজার নির্ভর সফটওয়্যারের ব্যবহার এখন ব্লগের একটা নিতান্তুই সাধারণ ব্যাপার। ব্লগ হোস্ট করার জন্যে আছে নির্ধারিত ব্লগ হোস্টিং সার্ভিসও।
“দ্য মিস্যানথ্রোপিক বিচ” নামের একটি পুরনো ব্লগ যা ১৯৯৭ দিকে ব্লগিং শুরু করে, তখন তারা নিজেদের অনলাইন উপস্থিতির নাম দিয়েছিলো জাইন। তখনো “ব্লগ” নামের পারিভাষিক শব্দটা আজকালকার সাধারণ ব্যবহারের পর্যায়ে আসে নি।
শুরুটা ধীরগতির হলেও ব্লগিং দ্রুতই জনপ্রিয়তা পায়।
১৯৯৯ সাল এবং তার পর থেকেই ব্লগ ব্যবহার বাড়তেই থাকে। ১৯৯৮ সালে ব্রুস আবেলসন ওপেন ডায়রি নামান, এতে করে হাজারো অনলাইন দিনপঞ্জীকার নেয় জন্ম। ওপেন ডায়রির আবিষ্কারের ফলে পাঠক মন্তব্য করতে পারতেন এবং এটাই ছিলো প্রথম ব্লগ কমিউনিটি যেখানে পাঠকেরা অন্য লেখকের ব্লগ অন্তর্ভুক্তিতে মন্তব্য করতে পারতেন।
১৯৯৯ সালের মার্চে ব্র্যাড ফিটজপ্যাট্রিক শুরু করেন জার্নাল লাইভ।
১৯৯৯ সালের জুলাই-এ এন্ড্রু স্মেলস কোন ওয়েবসাইটে একটা "খবর পাতা" রাখার বিকল্প হিসেবে জন্ম দেন পিটাস ডটকম-এর
এর পরপরই সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ এ আসে ডায়েরিল্যান্ড, যেখানে ব্যক্তিগত দিনপঞ্জীকামূলক কমিউনিটির ওপর জোর দেওয়া হয়।
ইভান উইলিয়ামস এবং মেগ হুরিহান ( পাইরা ল্যাবস ) ব্লগার ডটকম চালু করেন আগস্ট ১৯৯৯ এ যা পরবর্তিতে গুগল কিনে নেয় ২০০৩-এর ফেব্রুয়ারিতে।
সামাজিক ব্লগ
সামাজিক ব্লগ হচ্ছে যেখানে বহু সংখ্যক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তাদের সুচিন্তিত মতামত ও লেখনীর মাধ্যমে একটি প্লাটফর্ম গড়ে তোলেন। বাংলা ভাষায় এই পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশটি সামাজিক ব্লগের সুচনা হয়েছে কিন্তু তাদের অধিকাংশই জনপ্রিয়তা হারিয়েছে, কিছু বন্ধ হয়ে গেছে আর মুষ্টিমেয় কিছু ব্লগ আছে যেখানে ব্লগারদের নিয়মিত পদচারনা ঘটে। তারই মধ্যে
১. টেকটিউনসঃ https://www.techtunes.io/
২. সচলায়তনঃ http://wwwlsachalayatanlcom
৩. সামহোয়্যারইন ব্লগঃ http://wwwlsomewhereinbloglnet
৪.আমার ব্লগঃ http://amarbloglcom
৫. প্রথম আলো ব্লগঃ http://wwwlprothom-alobloglcom
ব্যক্তিগত ব্লগঃ
এখানে ব্যক্তি কোন একটি বিষয়ের উপর তার মতামত পোষ্ট আকারে তুলে ধরেন এবং পাঠকদের সাথে এর উপর মতামত আদান প্রদান করেন।
কোম্পানী/প্রাতিষ্ঠানিক ব্লগঃ
কোম্পানী/ প্রতিষ্ঠান তাদের কোন পণ্য বা সেবার উপর নতুন নতুন তথ্য প্রদান করেন এবং পাঠক তাদের মতামত প্রদান করতে পারেন।
এ ছাড়াও আরো অন্যান্য ব্লগ রয়েছে। যেমনঃ রাজনৈতিক, ভ্রমণসষ্ক্রান্তীয়, শিক্ষাসষ্ক্রান্ত, ফ্যাশন; রয়েছে মিডিয়া সষ্ক্রান্তীয় কিংবা চলমান ঘটনাবলীসষ্ক্রান্তীয় বিভিন্ন ব্লগ। যেখানে রয়েছে প্রচুর তথ্য ও উপাত্ত পাশাপাশি মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা।
বছরের অন্যান্য বিশেষ দিনগুলোর মতো ব্লগেরও রয়েছে বিশেষ একটি দিন আর তা হলো ৩১ আগষ্ট। ব্লগের এই বিশেষ দিনটির তাৎপর্য হচ্ছে এই যে, যাতে করে অন্যান্য ভাষা-ভাষীরাও কিংবা ব্লগাররা যেন পারস্পরিক একে অন্যের ব্লগ সম্পর্কে অবগত হন এবং নতুন নতুন ব্লগ আবিষ্কার করতে পারেন।
আবার ব্লগ সাইটগুলোকে খুঁজে পাওয়ার জন্যও রয়েছে বিশেষ বিশেষ সার্চ ইঞ্জিন। যেমনঃ ব্লগলাইন, ব্লগস্কোপ, টেকনোরাতি। এগুলোর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় হচ্ছে টেকনোরাতি।
আমি ঘুম কাতুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 8 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Ask my friend
valo legese.