একদিন কাজের অবসরে ক্লান্ত হয়ে যখন টেলিভিশনের সামনে গিয়ে বসি এবং কেন জানি দেশের কথা খুব মনে পড়লো। হাতে থাকা টিভির রিমোট চেপে দেশীয় চ্যানেলে খবর দেখতে শুরু করি। শত চ্যানেলের ভিড়েও আমার দেশের চ্যানেলগুলোকে খুব সতেজ মনে হয়। দেশের প্রতি হঠাৎ করেই কেন জানি একটু বেশী মায়া অনুভব করতে শুরু করলাম। প্রবাসে বসে দেশের প্রতি কেমন যেন একটা অস্পর্শ মায়া প্রায় সবারই জন্মে। এটা তারাই বুঝবেন যারা প্রবাস জীবন যাপন করছেন কিংবা করেছেন। তবে সবার অনুভূতি যে এক হবে তাও নয়। আবার সবাই যে দেশকে নিয়ে এভাবে ভাবতে হবে তাও নয়। যাহোক আসল কথাতে আসি। অনেকক্ষণ রিমোট টিপাটিপি করে দুইএকটা চ্যানেল দেখার সৌভাগ্য আমার হলো অবশেষে। কিন্তু দেখতে দেখতে একটা কথা মনে হলো খুব করে তাহলো সাম্প্রতিক আমাদের দেশে কিছু বিশেষ জনপ্রিয় সেলিব্রেটিদের আনাগোনা এবং আমাদের দেশের জনপ্রিয় একটি পত্রিকার বিজ্ঞাপনের একটি অংশ দেখে। আমাদের দেশে ভারতীয় চলচ্চিত্রের অভিনেতা অভিনেত্রীদের অনেক কদর জনপ্রিয়তা। আমরা প্রতিনিয়ত তাদেরকে অনুকরণ করি, অনুসরণ নয়। এ বিষয়ে একটি কথা ঠিক তখন থেকেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তারা আমাদেরকে বাংলাদেশে এসে নিঃসন্দেহে নির্ভেজাল বিনোদন দিয়ে গেছেন কিন্তু যে অশানি বীজ বুন গেছেন তা কি আমরা জানি?
এবার আসি একটু অন্যপ্রসঙ্গে; অবচেতন মনে কেন জানি একটা প্রশ্ন আমার খুব জাগে ক্ষণে ক্ষণে তাহলো,আমরা আমাদের দেশে ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখার সুযোগ পাই; কিন্তু ভারত তথা কলকাতার বাঙ্গালীরা কি আমাদের দেশের স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখার সুযোগ পায়। পায় না। কিন্তু কেন? কিছুক্ষণ পরপর এই একই প্রশ্ন শুধু ঘুরছে আমার মাথায়। আমাদের দেশের বিজ্ঞজনেরা খুব মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা কিংবা মুক্ত আকাশসংষ্কৃতির কথা বলে ধূয়া উড়িয়ে দেন আর সেই ধোঁয়ায় আমাদের দেশের নিরীহ মানুষ আচ্ছন্ন হয়ে থাকে আর বলে ঠিক ঠিক। কিন্তু বাস্তবটা কিন্তু খুব মর্মাহত ও বেদনাদায়ক। বিজ্ঞদের মতে, “চ্যানলে বন্ধ করে শুধু শুধু আমরা মুক্ত আকাশসংষ্কৃতিতে বাধাগ্রস্থ করবো”। আর তার পথ ধরেই আমাদের দেশের প্রশাসনও ঢাক ঢোল পিটিয়ে গেছেন তখন। এতে করে কি আমরা কি খুব উপকৃত হয়েছি? হলেও তা কতটুকো কেউ কি একবার ভাবেন?
আমরা উদার হয়ে যদি আমাদের দেশের আকাশ সংস্কৃতি পথ বা দুয়ার খোলা রাখতে পারি তবে একই পন্থা অবলম্বন করে কেন ভারত তার মুক্ত আকাশ সংস্কৃতি পথ বা দুয়ার উন্মুক্ত রাখতে পারবে না? যদি না পারে তাহলে নিশ্চয়ই কিছু কারণ আছে এর মধ্যে...
এক. তারা চায় না আমাদের দেশের সংষ্কৃতির সাথে তাদের দেশের সংষ্কৃতির আদান-প্রদান করতে;
দুই. আমাদের দেশের অনুষ্ঠানগুলির মান ভাল তুলনামুলকভাবে তাদের দেশের তুলনায়;
তিন. তারা আমাদের দেশে আগ্রাসন সৃষ্টি করতে চায় ও অন্যান্য আরও কিছু গভীর কারণ.....
আমরা জানি,ভারত আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি উল্লেখ্যযোগ্য একটি দেশ। অর্থনীতিতে, রাজনৈতিকভাবে, ভৌগলিকভাবে, ঐতিহাসিকভাবেও। ফলে আমাদের দেশের মানুষের ভারত সর্ম্পকে উচ্চতর ধারণা স্বভাবতই জন্ম হয়। এদিকে আমাদের দেশের দারিদ্রতা, অশিক্ষা, কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামী, অসচেতনতা, দেশপ্রেমের অভাব, সামাজিক মূল্যবোধের অভাব, পারিবারিক শিক্ষার অভাব এবং সর্বপরি রাজনৈতিক প্রভাবও আমাদেরকে অনেকাংশে ভারতমুখী করেছে ক্রমান্নয়ে। আমরা আজ ভারত জ্বরে আক্রান্ত। আমাদের দেশের গ্রামে-গঞ্জে থেকে শুরু করে শহরগুলোর দিকে নজর দিই তাহলে ভারত সংস্কৃতির ব্যাপক আগ্রাসণ আমরা চাইলেই লক্ষ্য করতে পারি। আজকাল কোন বিশেষ সামাজিক-রাষ্ট্রীয় কিংবা পারিবারিক অনুষ্ঠানে আমরা পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে অনুষ্ঠানে বিনোদনের বিশেষ অংশেও হিন্দীগানকে বাজিয়ে কিংবা শুনে আমরা প্রীত হই। আর আমাদেরই কেউ কেউ তখন ভাবে তারা আজ খুব স্মার্ট কিংবা আধুনিক। আসলে নিজস্ব সংষ্কৃতিকে ভুলে গিয়ে বাইরের সংষ্কৃতিকে ধারণ করার নামই কি আধুনিকতা। আবার শপিংয়ে কেনা কাটাও আমরা পছন্দ করি ভারতীয় কোন শাড়ি কিংবা কসমেটিকস্। তা হয়তো সদ্য কোন চলচিত্রে দেখানো কোন নায়ক কিংবা নায়িকার অনুকরণ মাত্র। আমরা যদি ভারত তথা বাইরের সংষ্কৃতিকে এতটাই অনুসরণ করি তাহলে আমাদের নিজস্বতা কি আছে?
আমরা সুক্ষ্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে যদি পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখেতে পাই যে, পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে আমাদের উপরে ভারতের বিশেষ কিছু প্রভার রয়েছে যেমন; রাজনৈতি, অর্থনৈতিক, সামাজিক অনেক ক্ষেত্রে ভৌগলিক। দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকটি দেশের মধ্যে ভারত একটি। তার চারপাশের দেশগুলি কিছুটা পররাষ্ট্রনীতিতে দূর্বলও ব্যর্থ। আর সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চতুর ভারত একচেটিয়া ব্যবসা যেমন করে যাচ্ছে তেমন আবার নিজেদের কৃষ্ট-সংষ্কৃতিকে অত্যন্ত সুকৌশলে রপ্তানীও করছে। আমাদের দেশের পত্র-পত্রিকায় অনেক বিজ্ঞজনেরা এনিয়ে প্রচুর লেখালেখিও করেছেন। কিন্তু তাদেরকে হয় স্বাধীনতা বিরোধী কিংবা দেশদ্রোহী বলে বিভিন্ন সময়ে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আর আমার দেশের নিরীহ জনগনও অসহায়ের মত তা মেনে নিয়েছেন। এদিকে আমাদের দেশেরই কিছু স্বার্থান্বেষী ভারতপ্রেমী লোক অর্থের বিনিময়ে দেশকে অন্যের কাছে বিক্রি করেছেন এবং এখনও করছেন। যদিও একসময় তাদেরই পরবর্তী প্রজন্মই এর বিরুপ প্রতিক্রিয়ার স্বীকার হবে আগে।
আমরা জানি যে,কোন জাতিকে যদি দূর্বল কিংবা নিঃশেষ করতে হয় তাহলে তার শিক্ষা-সংষ্কৃতির উপর আঘাত আনতে হয়। যেমন দেখেছি স্বাধীনতা যুদ্ধের বিভিন্ন সময়; ২৫শে মার্চ এবং ১৪ই ডিসেম্বরে। জাতিকে চির পঙ্গু করে দেওয়ার যে খেলা তখন শুরু হয়েছিল তা আজও বহাল আছে। আর সে নিপুণ কাজটিই এখন ভারতে প্রকাশ্যে করে যাচ্ছে সবার চোখের সামনে দিয়ে। আমাদের দেশের রাজনৈতিক কোলহ-দন্দ্বের সূত্রপাত করে, না হয় অর্থনৈতিক কোন কুটচাল চেলে তারা আমাদেরকে সর্বদা দূর্বল করে রাখতে চায় এবং চাচ্ছে। এটা শুধুমাত্র আমাদের দেশের চিত্র নয়। ভারতের পার্শ্ববর্তী প্রায়সংখ্যক দেশগুলোতেই তার প্রভাব বজায় রয়েছে যেমন নেপাল,পাকিস্তান,শ্রীলংকা।
তাদের প্রভাববিস্তারের মধ্যে রয়েছে কতগুলি উল্লেখ্যযোগ্য দিক। যেমন, তারা হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে সুক্ষ্ম কিছু বিষয়। তারই একটি হচ্ছে চলচ্চিত্র। যেখানে দেখানো হয় অবাস্তব, কুরুচিপূর্ণ সব চরিত্র কিংবা দৃশ্য। যার বিরাট প্রভাব পড়ে আমাদের মুসলিম অধ্যুষিত এই বাংলাদেশে। যদিও এতে আমাদের নিজেদেও দোষ কম নয়। আমরা মুখে মুসলিম বলি ঠিকই কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এসে আমরা আধুনিকতার দোহাই দিয়ে অমুসলিম কৃষ্টিকালচারকেই বিশেষ অনুসরণ করছি। আর এরই প্রভাবে দেখা যায় গ্রামে-গঞ্জে থেকে শুরু করে শহরে পর্যন্ত আমরা আজ নিজেদের মূল্যবোধকে হারাতে বসেছি, নিজেদের অস্তিত্ব ভুলতে বসেছি। আমরা অন্ধের মতো অনুসরণ করছি তাদেরকে যদিও আমাদের দেশের সংষ্কৃতি তাদের চেয়ে কম উন্নত নয়। উপরন্ত, তারা নিজেরাই ধার করা শিল্প-সংষ্কৃতি দিয়ে চলচ্চিত্র বানিয়ে থাকে যা তাদের বর্তমান সামাজিক চিত্রের ঠিক উল্টো। আমরা যারা ভারত সর্ম্পকে জানি তারা অবশ্যই এটা বুঝি যে এগুলো লোকদেখানো ছাড়া আর কিছু না। আমরাও তা প্রতিনিয়ত অনুসরণ করছি আর গলর্ধকরণ করছি নির্ধিদায়। কিন্তু কেন আমরা আজকে ভারত তথা তাদের চলচ্চিত্র বলতে অজ্ঞান?
একটু পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, শত্তরের দশ থেকে নব্বইয়ের দশ পর্যন্ত আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের যে রমরমা অবস্থা ছিল তখন মানুষ আমাদের দেশের চলচ্চিত্র নির্ভর ছিল। একারণও সবাই আমরা জানি। আজ বিংশ্ব শতাব্দি পেরিয়ে একবিংশ্ব শতাব্দিতে এসেও আমরা পুরনো সেই বাংলা চলচ্চিত্রের গানই বার বার শুনি রিমিক্স করে, তারপরও ভাল লাগে। কিন্তু আমরা কি কেউ এই গ্যারান্টি দিতে পারবো যে, আমাদের আগামী প্রজন্ম আমাদের সোনালি দিনের সে গানগুলিকে বাচিয়ে রাখবে, ভালবাসবে, চর্চা করবে? বাংলা চলচ্চিত্রের আজ যে বেহাল অবস্থা সবাই আমরা ঘৃণা করি এবং অনেক সমালোচনা করি কিন্তু কেউ কি এটা ভাবি কিংবা জানি কেন আজকে এই অবস্থা?
পুরো ব্যাপারটা আরেকটু বিশ্লেষণ করা যাক। ভারত তার চলচ্চিত্রের জগতকে একটা প্রোডাক্ট হিসেবে বেছে নিয়ে তা বিক্রি করে আয় করছে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। তারই পথ ধরে কলকাতার চলচ্চিত্রের যে উত্থান হচ্ছে তাও বিশেষ লক্ষ্যণীয়। ভারত খুব সুকৌশলে তাদের দেশের কৃষ্টি-কালচারকে বাইরের বিশ্বে রপ্তানি করছে। এই ফাঁদের অংশ হিসেবে আমাদেরই দেশের নিরীহ মানুষগুলোও বোকা বনে কিছু চোখরোচক,শ্রুতিরোচক নাচ-গান শুনে,যদিও তা আমাদের সংস্কৃতির সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। আমরাও তা নিচ্ছি খুব সহজে। কারণ যে পরিবার আমাদের ভাল-মন্দের শিক্ষা দেবে সেই পরিবারের কর্তা কিংবা গৃহিণীই হয়তোবা সারাদিন হিন্দী চ্যানেল নিয়ে ব্যস্ত। ফলে পরিবার থেকেই প্রথমে এ ভাইরাসে আমরা আক্রান্ত হচ্ছি। আবার কিছুটা শুনতে বা দেখতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ আমাদের দেশের বিনোদনের মাধ্যম কিছুটা বেড়ে গেলেও পাশাপাশি প্রচার মাধ্যমে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নতমানের অনুষ্ঠান প্রচারে ব্যর্থ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বাইরের চ্যানেল কিংবা চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ তৈরী হওয়া এবং দেশীয় চ্যানেল ও চলচ্চিত্রের প্রতি আস্থা হারানো। কিন্তু আবার এও বলছি না যে দেশে দেশে শিল্প-সংষ্কৃতির ভাবের আদান প্রদান করা চলবে না। অবশ্যই করতে হবে তবে নিজেদেরটা ঠিক রেখে অন্যদের যদি ভাল কোন দিক থাকে তাহলে অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হবে। পাশাপাশি নিজেদের শিল্প-সংষ্কৃতিকেও দেশের বাইরে প্রচারও প্রসার ঘটাতে হবে।
কিন্তু বর্তমানে কি আসলে তা হচ্ছে?
আমরা আমাদের নিজস্বতা থেকে অনেকদূর সরে এসেছি,ধর্মীয়মূল্যবোধকে হারিয়েছি,হারাচ্ছি। অথচ এই ধর্মীয় বিষয়গুলোকে অনেক প্রাধান্য দিয়েই অনেক সময় ভারতই তাদের চলচ্চিত্র তৈরী করে থাকে। আর আমাদের দেশের বিনোদনের যে প্রধান মাধ্যম চলচ্চিত্র,তাকেও করা হয়েছে অবহেলিত। যেখানে ভারতের চলচ্চিত্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাহায্য আসছে তাদের দেশের সরকার তথা রাষ্টীয় পলিসির থেকে। সেখানে আমাদের দেশের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন।
মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হিসেবে পরিচিত এবং ধর্মীয়গত কারণেও কিছুটা বাধানিষেধ রয়েছে অবাধ নারী-পুরুষ মেলামেশার। এসব বাধা-নিষেধের চেয়েও বড় যে বাধা আমাদের সামনে তা হলো আমরা নিজেরাই। আমরা প্রতিনিয়ত হিন্দি ছবি দেখে কিংবা প্রকাশিত অ্যালবামের পিছনে টাকা খরচ করে এক রকম ভারতকে পৃষ্ঠপোশকতা দিচ্ছি, তাই নই কি? আর প্রত্যক্ষভাবে আমাদের দেশের যেকোন সরকারই নিজেদের চলচ্চিত্রকে পৃষ্ঠপোশকতা না দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের চলচ্চিত্রকে এদেশের বাজার পাইয়ে দিতে নিরবে কাজ করে যাচ্ছে যা আমরা কেউই লক্ষ্য করছি না। আরও অন্যদেশের কৃষ্টি কালচারকে এদেশে প্রতিষ্ঠা করতে সুকৌশলে কিছু লোক আমদানী করে শিল্পী এনে মানুষের মনোরঞ্জন করছে বৈকি কিন্তু পাশাপাশি আমাদের দেশের শিল্পীদেরও কদম কমাচ্ছেন। এটা কি আমাদের দেশের শিল্পীসমাজের তথা দেশের অবমাননা নয়?
কোন সরকার প্রধানরা কখনও এ শিল্পের প্রতি বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দেননি, যত্ন নেননি। স্বাধীনতার আগেও পরে যাও কিছু যৌথ প্রযোজনার ছবি তৈরী হতো তারও পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অত্যন্ত সুকৌশলে যা আমরা সবাই জানি। স্পষ্টতই ভারতই এটা করেছে কারণ তাতে তাদের শিল্প-সংষ্কৃতি অনায়াসে আমাদের দেশে রপ্তানি করতে পারবে। আর এজন্যই ভারতপ্রেমী কিছু বাংলাদেশী নাগরিক আমাদের দেশের চলচ্চিত্রকে ক্রমে ক্রমে করেছেন কলংকিত, এফ.ডি.সি-কে পরিণত করছেন অসংষ্কৃতিও বেশ্যাদের আড্ডাখানায়। আর দোহাই দিয়েছেন দর্শকদের। বিজ্ঞ জ্ঞানীগুণীরা সবাইতো একথা জানেন তাহলে কেন এর উন্নতি সাধনে এগিয়ে আসেন না? আজকে আমাদেরকে বসে থাকতে হয় কখন ভারতে নতুন ছবি মুক্তি পাবে আর তা দেখে আমাদের প্রাণ জুড়াবে ও অবসর কাটবে। আমরাও যদি আজকে ভারতের চলচ্চিত্রের নির্মাতা কিংবা অভিনেতাদের মত পৃষ্ঠপোষক পেতাম তাহলে আমরাও অষ্কার পুরষ্কার পাওয়ার মত ছবি বানাতে পারতাম বৈকি যা সম্প্রতি কিছু চলচ্চিত্রই বড় প্রমাণ।
আমাদের দেশের যারা গুণী চলচ্চিত্র শিল্পী বা নির্মাতা ছিলেন তাদের একে একে প্রকৃতিগত স্বাভাবিক প্রস্থানের পর আর নতুন কোন বিজ্ঞ গুণী শিল্পীকে সেভাবে বাড়তে দেওয়া হয়নি। নানা কৌশলে তাদেরকে বিমুখ করে রাখা হয়েছে এ শিল্প থেকে। চলচ্চিত্র হয়ে ওঠেছে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে নয় বিপথে যাবার মাধ্যম হিসেবে। ফলে ভালমানের শিল্পীরা কিংবা গুণী নির্মাতারা ছিলেন এ শিল্প থেকে বহু দূরে। এভাবে এ শিল্পের আর চর্চা হয়নি কদর ধরেনি ফলে জন্মায়নি রাজ্জাক-কবরী, সালমানশাহ্-মৌসুমী মত শিল্পী বা এহতেশাম, খান আতা, সুভাষ দত্তদের মতো গুণী নির্মাতারাও। এটাকি ১৪ই ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবি হত্যার সামীল না? এ হত্যার জন্য দায়ী কে? এ নিরব হত্যার সাহায্য কি আমরাই প্রতিনিয়ত দিচ্ছি না? একটু ভেবে দেখবেন.........
আমরা খুব সুক্ষ্মভাবে সময়ে সাথে সাথে পিছিয়ে যাচ্ছি। আর এগিয়ে যাচ্ছি ভয়াবহ এক নিরব নির্মম দাসত্বের দিকে। একটু লক্ষ্য করলেই তা আমারা পর্যবেক্ষণ করতে পারি। আমাদের দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালতে পশ্চিমা দেশের আগ্রাসন আমাদের দিকে ক্রমান্নয়ে ধেয়ে আসছে এবং এসেছে। মানুষের যে মৌলিক পাঁচটি চাহিদা রয়েছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা তার প্রতিটি ক্ষেত্রেই আজ আমরা পশ্চিমা তথা ভারত আগ্রাসনের শিকার। আজ আমাদের সমাজের চারদিকে তাকালে শুধু সামাজিক-ব্যক্তিগত অবক্ষয়। কেন এই অবক্ষয় কেউ কি একবার ভাবেন? স্যাটেলাইট জগতের এই অবাধ আসা যাওয়াটাই কি মূল কারণ নাকি অন্য কিছু? আবার প্রযুক্তির সহজলভ্যতাও কি অনেকাংশে দায়ী নয়? তাই বলে কি আমরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করবো না? অবশ্যই ব্যবহার করবো। কিন্তু সেটা কিভাবে করলে আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে তার ব্যাপারেও আমাদের যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। কথায় বলে “অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী”
আমরা প্রযুক্তি অত্যন্ত সহজলভ্যে পাওয়ায় এবং তার পর্যাপ্ত ব্যবহার কিংবা অসচেতনতার ফলে মোবাইলের মত উপকারী বস্তুটিও এখন আমাদের যন্ত্রনার এমনকি মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়ায় কখনো কখনো। আবার প্রযুক্তির কল্যাণে পশ্চিমা সংষ্কৃতির অনুকরণে বর্ষবরণ উৎসব থেকে শুরু করে ঈদ-পূজা উর্যাপনও করছি তাদের ঢ়ংগে। ভুলে যাচ্ছি আমাদের সংষ্কৃতি। আবার অন্যকে দোষ দিতে গিয়ে আমরা যেন আমাদের সংকৃন্নতাকে ভুলে না যাই। আমরা যদি পর্যাপ্ত শিক্ষিত হই কিংবা যোগ্যতা তৈরী করতে পারি স্ব-স্ব ক্ষেত্রে তাহলে অবশ্যই আমরাই সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যেতাম এবং যাবো এই প্রতিযোগিতার বর্তমান বির্শ্বে।
এসব থেকে আশু পরিত্রানের জন্য আমাদের সবার মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হবে এবং সমাজ রাষ্ট্র সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। শিক্ষার আলোয় নিজেদেরকে দীপ্ত করতে হবে পাশাপাশি দেশপ্রেমও। নতুবা হয়তো ইংরেজ শাসনামলের মতো নিরবে সহ্য করতে হবে আরো একটি উপনিবেশ। বেচে দিতে হবে আমাদের মেধাকে অত্যন্ত সস্তা দামে পশ্চিমা দেশগুলোতে। আর আগামী প্রজন্ম হবে নিশ্চিত দাসত্বের শিকার। আমাদের হেরে গেলে চলবে না, কারণ আমরা বীরের জাতি। আমরা পরাজয় কি জানি না। আজ আমাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছেন সালাম, রফিক, বরকতেরা। উপহাস করছেন যারা নির্ভীঘ্নে প্রাণ দিয়ে এনে দিয়েছেন কাঙ্খিত স্বাধীনতা, মায়ের মধুর ভাষা। আসুন সবাই মিলে জেগে উঠি যেমন করে জেগে উঠেছে ভারতীয় কিছু নাগরিক যারা নাসা’য় একসময় কাজ করতো, এখন উচ্চশিক্ষায় দীক্ষিত হয়ে ফিরে গিয়েছে তাদের নিজ দেশে। শুধুমাত্র কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতা ও রাষ্ট্রের সর্বপরি অবহেলিত মানবসমাজের উন্নতির লক্ষ্যে তারা একতাবদ্ধ হয়ে আজ কাজ করে যাচ্ছে। তাদের বিবেকের কানে সে মধুর সুরটি সর্বদা বাজে “মানুষ মানুষের জন্য,জীবন জীবনের জন্য”
আমার এই ক্ষুদ্র পরিসরে জ্ঞান গর্ভে যতটুকো ধরে, তার থেকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। হয়তো তার বিন্দুমাত্রও পারেনি তবে আমি যে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এ লেখাটি লিখেছি তা পড়ে যদি একজনও সচেতন হয় তাতেই আমার লেখার সার্থকতা। পরবর্তীতে আশা করি আবারও লিখবো বিস্তারিত এ সর্ম্পকে। ধন্যবাদ।
আমি ঘুম কাতুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 8 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Ask my friend
ভাই কি আর বলবো এইসব কথা আমাদের ডিশ প্রজন্ম মানতে চায়না আসলে মানার কথা না।এগুলো ১০ বছর আগেই আমাদের বুঝা উচিত ছিল। আমি এখন চিৎকার করে বলতে চাই আমার বড়দের যে “তোমাদের কথা আমি আর শুনবোনা কারন তোমরা আমাদের ভুল পথে পরিচালিত করেছো..”