TESLA সম্পর্কে ১৫টি তথ্য যা হয়তো আপনি জানেন না!

টিউন বিভাগ প্রতিবেদন
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

গত টিউনে আমি ইলন মাস্ক এর সম্পর্কে এই জাতীয় তথ্যভিক্তিক টিউন করেছিলাম। আর আজ আমি তারই একটি গাড়ির কোম্পানি TESLA কে নিয়ে কিছু তথ্য দিতে এসেছি। TESLA বিশ্বের অন্যতম একটি ইলেক্ট্রিক গাড়ির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য হলো এভারেজ কাস্টমারদের হাতের নাগালের মধ্যে দাম সীমাবদ্ধ রেখে সবার জন্য ইলেক্ট্রনিক গাড়ির ব্যবস্থা করে পরিবেশ দূষণ রোধ করা। TESLA কোম্পানি তাদের নামকরণটি সারবেরিয়ান ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং ফিজিক্সটিক “নিকোলা টেসলা“ এর নাম থেকে অনুকরণ করা হয়েছে। কোম্পানির Model S গাড়িটি ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের বিশ্বের বেস্ট-সেলিং প্লাগ-ইন ইলেক্ট্রিক গাড়ি হিসেবে রেকর্ড বুকে স্থান করে নিয়েছে। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত কোম্পানিটি তাদের ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি ইলেক্ট্রিক গাড়ি বিক্রি করতে সক্ষম হয়। এবং এর পরেই কোম্পানির নতুন গাড়ি TESLA Model 3 জুলাই, ২০১৭ সালে বাজারে আনার পর সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সালের মধ্যেই কোম্পানিটি প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি ইলেক্ট্রিক গাড়ি বিক্রির মাইলফলক অর্জন করে ফেলে।

ইলেক্ট্রনিক গাড়ি ছাড়াও টেসলা কোম্পানি Tesla Powerwall, Powerpack Batteries, sonal panels এবং solar roof tiles উৎপাদন এবং বিক্রি করে থাকে।

এবার আসুন মূল টিউন বিষয়বস্তুতে চলে যাই। টেসলা সম্পর্কে নিচে ১৫টি তথ্য আমি আপনাদের সামনে পেশ করছি যেগুলো হয়তো আপনি আগে জানতেন না! চোখ বুলিয়ে নিন:

১) টেসলা ফাউন্ডার:

TESLA কোম্পানির ফাউন্ডার ইলন মাস্ক নন, তবে তিনি কোম্পানিতে নিজের অবস্থান পাকা করে নেন তার উচ্চ মানের আইডিয়ার কারণে! ইলন মাস্কের আইডিয়া অনুসরণ করেই টেসলা কোম্পানি আজ মাল্টিবিলিয়নিয়ার কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। ইলন মাস্ক যখন টেসলা কোম্পানিতে আসেন তখন কোম্পানি ভরাডুবি অবস্থায় ছিলো, তিনি কোম্পানির বাজে প্ল্যান থেকে তখনকার CEO কে বহিস্কার করে দেন এবং নিজেই CEO পদে চলে আসেন। তার আইডিয়া অনুসরণ করেই টেসলা কোম্পানিটি হাজারপতি কোম্পানি থেকে কোটিপতি কোম্পানিতে আজ এসে দাঁড়িয়েছে।

২) সিলিকন ভ্যালির ১ম গাড়ি মেনুফেকচার কোম্পানি

আমেরিকার কার্লিফোর্নিয়ার নর্থ দিকের অঞ্চল সিলিকন ভ্যালি থেকে TESLA ই সর্বপ্রথম গাড়ি মেনুফেকচার কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এর মাধ্যমে উক্ত অঞ্চলের জন্য গাড়ি তৈরির সুনাম বয়ে এনেছে TESLA কোম্পানি।

৩) বিশ্বের সর্বপ্রথম ইলেক্ট্রিক গাড়ি:

TESLA MODEL S গাড়িটি বিশ্বের সর্বপ্রথম ইলেক্ট্রিক গাড়ি হিসেবে ২০১২ সালে আত্মপ্রকাশ করে। গাড়িতে প্রায় ৭ জন যাত্রী বসতে পারবে এবং গাড়িটি ১০০% ইলেক্ট্রিক গাড়ি। গাড়িটি ০ থেকে ৬০ মাইলস গতিতে মাত্র ৫ সেকেন্ডের মধ্যে যেতে পারে, এছাড়াও গাড়িতে রয়েছে ছো্ট্র একটি AI সিস্টেম যেটি গাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সর্বদা মনিটরিং করে থাকে।

৪) ওপেন সোর্স কোম্পানি!

২০১৪ সাল থেকে TESLA কোম্পানির সকল প্রযুক্তিগত পণ্যসমূহকে ওপেন সোর্স হিসেবে মুক্তি দিয়ে দেয়। তাই এবার ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে যে কেউ TESLA কোম্পানির টেকনোলজিগুলো ব্যবহার করতে পারবে।

৫) ব্যয়বহুল গাড়ি:

বর্তমানে TESLA কোম্পানির সুপার কার হিসেবে TESLA MODEL X রয়েছে। গাড়িটির বর্তমান মূল্য রাখা হয়েছে ১, ৪০, ০০০ ডলার। SUV টাইপের বডিতে এটিতে স্পোর্টস কার হিসেবে বানানো হয়েছে। গাড়িটি ০ থেকে ৬০ মাইল গতিতে মাত্র ৩ দশমিক ২ সেকেন্ডে যেতে পারে আর গাড়ির সর্বোচ্চ গতি হচ্ছে ঘন্টায় ১৫৫ মাইল। গাড়িতে বায়োওয়েপন মাইন্ড সিস্টেম রয়েছে এবং সম্পূর্ণ গাড়িটি কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে! এই ফিচারগুলো আপনি সাধারণত অন্য কোথাও দেখতে পাবেন না! তার উপর এটি একটি ইলেক্ট্রিক গাড়ি!

৬) সবচেয়ে দামী গাড়ি:

এ পর্যন্ত TESLA কোম্পানির সবথেকে দামী গাড়িটি হচ্ছে তাদের Model S এর একটি আপগ্রেডেড সংস্করণ। Model S গাড়িটির মূল ১, ২৩, ০০০ ডলার এবং গাড়িটির এই আপগ্রেডেড সংস্করণে প্রায় ৮২ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যে আপগ্রেডিং করেছে T Sport Line. গাড়িটি মূল্য রাখা হয়েছে ২০৫, ৮২০ ডলার। গাড়িতে রয়েছে ২৫ হাজার ডলারের ইন্টেরিওর আপগ্রেড, কার্বন ফাইবার বডি কিট এবং দামী হুইলসেট।

৭) সেলফ ড্রাইভিং টেকনোলজি:

২০১৬ সাল থেকে টেলসা কোম্পানির সকল গাড়িগুলো সেলফ ড্রাইভিং টেকনোলজি সমৃদ্ধ হিসেবে অন্তুর্ভক্ত রয়েছে। গাড়িগুলোর চারিপাশে ৮টি হাই কোয়ালিটির ক্যামেরা ফিট করা রয়েছে, রয়েছে ১২টি আপগ্রেডেড আল্ট্রা সনিক ডিটেক্টিভ মোশন সেন্সর, এছাড়াও অন্ধকারে, বৃস্টিতে, ধোঁয়া, বালু এবং কুয়াশার মধ্যে দেখবার জন্য গাড়িতে রয়েছে একটি ফ্রন্ট ফেসিং রাডার সিস্টেম। গাড়িটির সেলফ ড্রাইভিং টেকনোলজি মানুষের থেকে বেশি একুরেট ডিসিশন নিতে পারে।

৮) স্মার্ট আপগ্রেড!

আপনার যদি কোনো TESLA গাড়ি থাকে এবং ভবিষৎতে গাড়ির সিস্টেমের জন্য কোনো আপগ্রেড আসলে সেটা স্মার্ট আপগ্রেডের মাধ্যমে ঘরে বসেই সেটা আপগ্রেড করা যাবে, যেমনটা আমরা মোবাইল আপগ্রেড করে থাকি। ইলেক্ট্রিক গাড়ির দুনিয়ায় এই ফিচারটি সর্বপ্রথম TESLA কোম্পানিই চালু এবং ব্যবহার করা শুরু করেছে।

৯) অটোমোশন গাড়ি!

গাড়িটির এই Summon ফিচারটি বর্তমানে বেটা সংস্করণে রয়েছে। এই ফিচারটির মাধ্যমে গাড়ি নিজে নিজেই আপনার কার্যকলাপের উপর নিজেই নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে! ধরুন অফিসে যাবেন, গাড়িটি আপনাকে অফিসে পৌঁছে দিয়ে নিজে নিজেই ড্রাইভ করে আপনার বাসায় ফিরে আসবে, আবার অফিস টাইম শেষ হলে নিজে নিজেই আপনাকে অফিস থেকে পিকআপ করে নেবে। এছাড়াও গাড়িটির এই ফিচারের মাধ্যমে TESLA গাড়িগুলোকে আপনি পার্টটাইম টেক্সি হিসেবেও ব্যবহার করে টাকা উপাজর্ন করতে পারেন!

১০) ব্যর্থতায় সূচনা!

TESLA কোম্পানির সর্বপ্রথম মডেল The Roadster কে ইলন মাস্ক একটি সম্পুর্ণ ব্যর্থ প্রজেক্ট হিসেবে দেখে থাকেন। ২০০৮ সালে TESLA Roadster গাড়িটি বাজারে মুক্তি পেলেও এটা বাজার মাতাতে পারেনি।

১১) বিশ্বের উচ্চগতির গাড়ি:

TESLA কোম্পানির সর্বশেষ গাড়ি মডেল TESLA MODEL S P100D হচ্ছে দুনিয়ার সবথেকে উচ্চগতির Accelerating গাড়ি! গাড়িটি ০ থেকে ৬০ মাইল গতিতে মাত্র ২ দশমিক ২৮ সেকেন্ডে যেতে পারে। যা বিশ্বের দামী দামী মডেলের গাড়ি যেমন ল্যাম্বরগিনি, বুগাটির থেকে উচ্চগতির Accelerating সম্পন্ন! আর গাড়িটি মাত্র ১, ৫০০০০ ডলারে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে!

১২) সুপারচার্জারের শক্তিশালি নেটওর্য়াক!

TESLA কোম্পানির সুপারচার্জার স্টেশন এখন দুনিয়ার অনেক জায়গায়তেই স্থাপন করা হচ্ছে। TESLA এর ইলেক্ট্রনিক গাড়িগুলো সাধারণ বাসাতে বসেই আপনি চার্জিং করতে পারবেন, কিন্তু লং ড্রাইভ বা দূরে কোথাও ভ্রমণে গেলে মাঝ পথে গাড়ির চার্জের সমস্যা সমাধানের জন্যই কোম্পানিটি বিশ্বব্যাপী তাদের সুপারচার্জর স্টেশনের পরিধি বৃদ্ধি করা শুরু করেছে। কোম্পানির বর্তমান লক্ষ্য হচ্ছে ২০১৭ সালের মধ্যে তাদের সুপারচার্জার স্টেশনের পরিমাণ দ্বিগুণ করা।

১৩) বিশ্বের সবথেকে নিরাপদ গাড়ি!

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ গাড়ি হিসেবে TESLA Model X রেকর্ডে রয়েছে। ৫ নম্বরের মধ্যে রেকর্ডমুলক ৫.৪ পয়েন্ট নিয়ে কোম্পানির এই মডেলটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ গাড়ি! গাড়িটি ইলেক্ট্রনিক হওয়ায় যেকোনো দুঘর্টনায় গাড়িটি বিস্ফোরিত হবে না এই জন্য গাড়িটি ৫ এর মধ্যে ৫.৪ পয়েন্ট পেয়েছে।

১৪) গিগাফ্যাক্টরী!

TESLA কোম্পানির CEO ইলন মাস্ক বর্তমানে বিশ্বের ২য় বৃহৎ ফ্যাক্টরি “Gigafactory“ নির্মাণ করছেন। কারণ তার স্বপ্ন হচ্ছে তিনি সম্পূর্ণ বিশ্বকে ব্যাটারি এনার্জির আওতায় বা Sustainable energy production & consumption এর আওতায় নিয়ে আসতে চান। তার এই স্বপ্নকে পূরণ করতে হলে তার প্রচুর পরিমানের ব্যাটারির দরকার, যে পরিমাণ ব্যাটরি পুরো বিশ্ব বছরে উৎপাদন করতে পারবে না, তাই তিনি নিজেই নিজস্ব ফ্যাক্টরি নির্মাণ করা শুরু করে দিয়েছেন। এই ফ্যাক্টরির নির্মাণ কাজ শেষে প্রতি বছর এমন পরিমাণ ব্যাটারী উৎপাদন করতে সক্ষম হবে যা পুরো বিশ্বের সকল ফ্যাক্টরির ব্যাটারী উৎপাদন ক্ষমতার থেকে বেশি হবে। থিউরি অনুযায়ী পৃথিবীতে এই রকম আরো ৯৯টি ফ্যাক্টরি থাকলে পুরো দুনিয়া একেবারেই ব্যাটারি এনার্জির উপর নির্ভরশীল হতে পারবে! আর ইলেক্ট্রনিক গাড়ির মূল পাওয়ার সোর্স হলো ব্যাটারি!

১৫) গুগলের কাছে বিক্রি হয়েই গিয়েছিল!

২০১৩ সালের শুরু দিকে TESLA কোম্পানিটি প্রায় Bankrupt হয়ে গিয়েছিল। তখন কোম্পানির ইলন মাস্ক গুগলের কাছে প্রায় অল্পের জন্য বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি কোম্পানিতে সর্বশেষ প্রচেষ্ঠা চালিয়ে প্রায় চমকপ্রদক লাভজনক অবস্থায় নিয়ে আসেন!

টেসলা কোম্পানি সম্পর্কে এই ১৫টি তথ্যা আজ আমি আপনাদের জন্য হাজির করলাম। আশা করছি এই তথ্যগুলো আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে! আগামীতে অন্য কোনো টপিক নিয়ে আমি টিউনার গেমওয়ালা চলে আসবো আপনাদের প্রিয় বাংলা টেকনোলজি ব্লক টেকটিউনসে! টিউন টি পড়ার জন্য ধন্যবাদ!

 

Level 10

আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস