অনেকের মতে স্মার্টফোন এক বিরক্তিকর জিনিস। আপনিও যদি তাই মনে করেন, তাহলে বলতে হয় আপনার মনোযোগের বেশ ঘাটতি আছে।
জীবনে সর্বপ্রথম যে প্রযুক্তির সাথে আমার পরিচয় ঘটে সেটা হলো ক্যালকুলেটর। ছোটবেলায় একদিন দেখি আমার বাবা ক্যালকুলেটর নামক একটি যন্ত্র দিয়ে হিসাব করছেন। আমি গিয়ে জানতে চাইলাম যন্ত্রটি সম্পর্কে। তিনি আমাকে জানালেন যন্ত্রটি দিয়ে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ এগুলো করে। আমিও ১০+১০ চেপে সমান চিহ্নে চাপলাম। দেখি ২০! আরেহ! সেই তো। একটু পরে মনে হলো, সহজ যোগ দিয়েছি তাই হয়তো পেরেছে। কঠিন দিলে পারবে না। কঠিন একটা চাপলাম। ৮৯+১৮৪ চেপে সমান চিহ্ন চাপলাম। ২৭৩! আরে বাহ! দারুণ যন্ত্র তো! তাহলে তো আর স্কুলে যাবার দরকার নাই!
যে যাই বলুন। আজ থেকে চার-পাঁচ বছর আগেও আমরা একরকম মৃত ছিলাম। সে সময় থেকেই শুরু হয় প্লাস্টিক, গ্লাস ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি স্মার্টফোনগুলোর অগ্রযাত্রা। আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড-এর সাথে সাথে উইন্ডোজ ফোন ও ব্ল্যাকবেরি ফোনও বাজারে চলতে থাকে। ফিচারগুলো তখন জনপ্রিয় হয় মূলত ফোনের ক্যামেরার উপর নির্ভর করে। যে ফোনের ক্যামেরা যত ভাল, সে ফোনও তত ভাল।
আর আজ! আমরা আজ স্মার্টফোনের যে বাস্তুসংস্থান, তার মধ্যে অনবরত ঘুরপাক খাচ্ছি। তার মানে হলো, একটা স্মার্টফোন আমরা পছন্দ করছি অন্য আরেকটির সুবিধা বা অসুবিধা চিন্তা করে। হোম বাটন থেকে শুরু করে ক্যামেরা প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এসবকিছু মিলিয়ে আজকালকার স্মার্টফোন আগের চেয়ে একদমই আলাদাভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
তাই এই ২০১৭-তে দাঁড়িয়ে একটা বিতর্ক পৃথিবীতে চালিয়ে দেয়া দেয়া যায়, 'সব স্মার্টফোন একই রকম'। শুনতে গেলে একটু কেমন কেমন লাগতে পারে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় আইফোন এক্স এবং গুগল পিক্সেল ২ দুটোই দেখতে প্রায় একইরকম। এমনকি পকেটে রাখার সুবিধার্থে দুটোর পর্দাই ছোট করা হয়েছে। সর্বোপরি, এটা একটা অর্থই বোঝায়। আর সেটা হলো, এখনকার প্রায় সব ফোনেই একইরকম সুবিধা পাওয়া যায়।
হোম বাটন থাকছে না। অ্যান্ড্রয়েডের কাছে এটা কোনো বিষয় না। কারণ, অনেকদিন যাবতই এটি চলে আসছে। তাই নতুন কিছু সবাই করতে চাইবে। যেমনটা করতে যাচ্ছে স্যামসাং। তারা ভার্চুয়াল হোম বাটন তৈরি করছে যেটা স্ক্রিনের কিছু অংশকে আরো সংবেদী করে তুলবে। আর আইফোনের কথাটা না বললেই নয়। আইফোন এক্স-য়ে বাটন না থাকা মানে হলো এ পর্যন্ত বাজারে আসা সকল আইফোনের চেয়ে আলাদা রকম ফোন তৈরি করা।
এখানে আরো অনেক ব্যাপার রয়েছে। আইফোন ৮-এর নচের কথাই চিন্তা করুন। এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে সামনে সেলফি ক্যামেরার মতো সেন্সরগুলো বসানোর তেমন জায়গাই নেই। আর বর্তমানকালে এটা দেখতে খুবই বেমানান। এদিক থেকে অনেকে পিক্সেল এবং এল জি-জি৬ সবাই পছন্দ করতে পারেন।
আবার ফোনের স্ক্রিন যেহেতু বড় হচ্ছে। স্ক্রিনের অ্যাসপেক্ট রেশিও'রও উন্নতি ঘটছে। স্যামসাং-এর নতুন ফোনগুলোতে এই রেশিও ১৮.৫ : ৯। আইফোন এক্স-এর ১৯.৫ : ৯। এছাড়াও এলজি-জি৬ এর ১৮:৯। আর অন্যান্য ফোনগুলোতে সাধারণত এটা ১৬:৯।
তার মানে যখনই স্মার্টফোনের ফিচার বা বডিতে কোনো পরিবর্তন আসে, আলোচনা ও সমালোচনার পর সেটা নতুন একটা রুপ পায়। আর এভাবেই স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো এগিয়ে যায়। আর আমরও ভাগ্যবান যে আমরা সেই জিনিসগুলো চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।
স্মার্টফোনের আরেকটি দিক হলো সফটওয়্যার। আরো ভাল ভাষায় বলতে গেল অভ্যন্তরীণ বাস্তুসংস্থান। অ্যান্ড্রয়েড এবং আই ও এস নিয়ে একটা বিতর্ক বহু আগে থেকেই চলে আসছে যে হার্ডওয়্যারের পর সব ফোনেই শুধুমাত্র একটি জিনিসেরই উন্নতি বাকী থাকে। আর সেটা হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কারণ, বাকী সব সুবিধাগুলো সব ফোনেই একইরকম।
প্রযুক্তির সেরাটা দিতে স্মার্টফোনগুলো ল্যাপটপের জায়গাটা দখল করছে। যাতে করে স্মার্টফোনেই যাবতীয় কাজ করা যায়। আপনার বাড়ির সাথে, আপনার গাড়ির সাথে, আপনার সবকিছুর সাথে কানেকশান তৈরি হচ্ছে স্মার্টফোনের মাধ্যমে। গুগল, অ্যাপল, স্যামসাং একই ট্র্যাকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে যাচ্ছে। কে জিতবে তা বলা কঠিন। কারণ, এই জায়গাটায় কেউই বেশিদিন স্থির থাকতে পারে না। তবে আপনি কোন্ ফোনটা বাছাই করছেন, তা অবশ্যই আপনার জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে।
আবার ডুয়েল ক্যামেরার ফোনগুলো আরো বেশি আলাদা। এতে যুক্ত হচ্ছে থ্রি-ডি ইফেক্ট, টেলিফটো অ্যাবিলিটিসহ আরো অনেক কিছু। আর এতকিছু শুধুমাত্র আপনার ফোনের পিকচার কোয়ালিটিকে সুন্দর করতে। বাঁকানো প্রান্তের সাথে সমান প্রান্তের যেমন প্রতিযোগীতা চলছে, তেমনি এল সি ডি এবং এল ই ডি'রও প্রতিযোগীতা চলছে। শুধু তাই নয়। হেডফোন জ্যাক এবং নন-হেডফোন জ্যাকের মধ্যেও সুবিশাল প্রতিযোগীতা লক্ষণীয়।
এত কিছুর ভীড়ে আজকাল একটি সার্থক স্মার্টফোন কেনা বেশ কঠিনই বটে। একটা কিনলেন। তো অমনি ফিচার নিয়ে অন্য ফোনের সাথে গবেষণা শুরু হয়ে যায়। তবে মজার ব্যাপার হলো, বর্তমান যুগের স্মার্টফোনগুলো আগের চেয়ে আরো মজার। একই সাথে সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে। পকেটের এই ছোট্ট জিনিসটির সাহায্যেই আমরা কথা বলতে পারছি, হেঁটে শরীরের ঝরা ক্যালরি'র হিসাব করতে পারছি, পড়াশোনা করতে পারছি, গতি ও দিক সম্পর্কিত তথ্য পাচ্ছি, নতুন নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিচিত হচ্ছি, এই ফোনটা দিয়েই বিল পরিশোধ করতে পারছি, ব্যাংকের হিসাব রাখতে পারছি। একশো বছর আগের কোনো একটি দিনের কথা চিন্তা করলেই বোঝা যায় আজ আমরা কতোটা উন্নত। আর তাতে বেশ ভালভাবেই সাহায্য করেছে এই স্মার্টফোন।
পরিশেষে, টেকটিউনস হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার এক সুবিশাল প্ল্যাটফর্ম। প্রতিনিয়তই থাকবেন নতুন নতুন জ্ঞানের মধ্যে। জানবেন অজানাকে। তবে হ্যাঁ। শুধু জেনেই বসে থাকবেন না। এই জ্ঞানগুলো ছড়িয়ে দিন তাদের নিকট যাদের কাছে এই টিউনগুলো পৌঁছানো সম্ভব হয় না। জ্ঞান নিজের কাছে রাখার জিনিস না। ছড়িয়ে দিন আশেপাশে যারা আছে সবার মাঝে। প্রযুক্তিকে ভালবাসুন, প্রযুক্তির সাথে থাকুন। টেকটিউনসের সাথে থাকুন।
আজকের মতো এ পর্যন্তই। সামনে আবারও হাজির হবো নতুন কোনো তথ্য নিয়ে। আর টিউনটি কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না। টিউন বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে টিউমেন্ট বক্সে প্রশ্নটি করুন। এছাড়াও ফেইসবুকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
ফেইসবুকে আমি: Mamun Mehedee
আমি মামুন মেহেদী। Civil Engineer, The Builders, Bogra। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 92 টি টিউন ও 360 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি আপনার অবহেলিত ও অপ্রকাশিত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।
গ্রেট পোস্ট