আমি ও হিমেল ২৭-০১-২০১৫: এটা কোনো গল্প না। এই দিন আমাদের জীবনের কাল দিন। এইদিনেই আমি হিমেলকে হারিয়ে ফেলেছি, সাথে হারিয়ে ফেলেছি আমারও অর্ধেক জীবন। ২৫-১-২০১৫ আমি সকালে বাজারে গেলাম। হিমেল বললো আমাকে একটু বগুড়া রেখে আয়। আমি বললাম ঠিক আছে। গোসাইবাড়িতে আমি ওর পিছনে বসে আমার ফেজার ওকে ড্রাইভ করতে দিলাম। তারপর বগুড়াতে একটু ঘুরে ওর মেস এর সামনে আমরা চলে আসলাম। তারপর ও জোর করে আমাকে পুরি খাওয়ালো। তারপর আমি বাইক নিজেই ড্রাইভ করে একাই আবার গোসাইবাড়িতে ফিরে আসলাম। ২৬-১-২০১৫ বিকালে/সন্ধায় হিমেল আবার গোসাইবাড়িতে চলে আসে। ২৬ তারিখের কোনো কিছুই মনে নেই। ওর সাথে দেখা হয়েছিল কিনা।
তারপর ২৭-১-২০১৫, ভোরে ফ্রেশ হয়ে বাইকে উঠলাম। লাইজু বললো ভাত খেয়ে যাও। আমি বললাম বাজায়ে গিয়ে চা খেয়ে আসতেছি। তারপর বাসায় এসে ভাত খাব। বাজারে গেলাম তারপর হিমেল এর সাথে দেখা। ও বললো বগুড়া যেতে হবে। আমি একটু ভেবে দেখলাম বগুড়া গেলে শেরপুরের উপর দিয়েই যাব। সেয়েতু ফিলিপস ভাই এর টাকাটা দেয়া হবে (ফিলিপস ভাই এর থেকে টাকা ধার নিয়েছিলাম)।
ভাবলাম বগুড়াতে গেলে আমারও ধারটা শোধ হবে। তাই ওকে বললাম ঠিক আছে চল। ওহ, হিমেল এর বগুড়া যাওয়ার কারণ ছিল সুন্দরবন কুরিয়ার থেকে কিছু একটা রিসিভ করা। আমাদের সাথে সেলিম নামে এক বন্ধুরও যাবার কথা ছিল। সেলিমকে আমি ফোন দিলাম, সেলিম বললো আমি জাস্ট ঘুম থেকে উঠলাম। একটু অপেক্ষা কর, আমি বাজারে আসতেছি, তারপর একসাথে যাচ্ছি। হিমেল কে বললাম সেলিম জাস্ট ঘুম থেকে উঠলো। হিমেল বললো তাহলে তো অনেক দেরী হয়ে যাবে, চল আমরা দুই জনই যাই।
আমি সেলিম কে একটা মেসেজ দিলাম, যে আমরা চলে গেলাম। ও সাথে সাথে “একটা রেগে মেসেজ দিল”। মেসেজটা মনে নাই। আমি মেসেজ টা পরে বাইকে উঠলাম। তারপর আমি বাইক ড্রাইভ করলাম। হিমেল আমার পিছনে বসলো। কিছু দূর যাবার পর হিমেল এর ফোনে সরণ ফোন দিল। বললো আমিও বগুড়া যাব। আমরা দুইজন ভাবলাম! আমরা দুইজনই ভালো আছি। তিন জনে অনেক চিপাচিপি হবে ফেজারে। তাই আমরা দুই জনই যাই। তারপর সরনকে না নিয়ে আবার আমি বাইক টান দিলাম।
তারপর শেরপুরে নামলাম এবং ডাচ বাংলা বাংক থেকে টাকা উঠালাম। হিমেলও শেরপুরের সুন্দরবন কুরিয়ারে ঢুকে বের হয়ে এলো এবং বললো এখানে আসে নাই। সেয়েতু বগুড়াতেই যেতে হবে। আমি বললাম দারা, টাকাটা জমা করে দিয়ে আসি। তারপর ওর কাছে বাইক রেখে, সিটি বাংকে গেলাম এবং ফিলিপস ভাইকে টাকা সেন্ড করে দিলাম। কাজ শেষ করে নিচে আসলাম এবং ২ টা স্প্রিড কিনে ওকে একটা দিলাম এবং আমি একটা খেলাম। তারপর, শুধু এতটুকু মনে আছে, আমি পিছনে বসলাম এবং ও বাইক টান দিল। তারপর কি হয়েছে জানিনা।
আমি ঘুম থেকে উঠালাম। চারপাশে তাকিয়ে দেখি হিন্দি মুভি এর মত সবার সাথে হাসপাতালের মেশিন, রক্ত, সেলাইন লাগলো। বুঝলাম আমি আই.সি.ইউ তে। ফ্ল্যাশবাকে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করতেছি। খুঁজে বের করার জন্য আমি এখানে কেন? কতদিন আই.সি.ইউ তে আমার বর্তমান সেন্স ছিলনা, জানিনা। তারপর আমাকে বেড়ে দিল।
শুনলাম আমি নাকি বাইক দিয়ে বাজারে এসেছিলাম। তারপর বাজারে বাইক ঘুরানোর সময় পরে গেছি। এইজন্য নাকি আমার পুরো মাথা অপরেসন করা হয়েছে। ডান পা বেঙ্গে গেছে। আমি বললাম ওহ! তারপর মনে হলো, আমি মনে হয় কম দেখতেছি। বাম চোখ বন্ধ করে দেখলাম সব তো দেখতে দেখতেছি। তারপর ডান চোখ বন্ধ দেখি, কালো কুচকুচে অন্ধকার। আজও সেই অন্ধকারেই আছি!
একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠতেছি কিন্তু মনে খটকা লাগতেছে। সামান্য বাইক ঘুরানোর সময় পরে গেলাম আর সেইজন্য আমার চোখ একটি হারালাম? পুরা মাথা অপরেসন করা লাগলো? পা একটা ভেঙ্গে গেল? নাহ! মানতে পারতেছিনা। তারপর বন্ধুরা বললো, আমি শেরপুরে যাবার সময় গাছে মেরে দেই। এতে আমার মাথা গাছে লাগে। এই জন্য আমার মাথার খুলি ভেঙ্গে যায়। তারপর বাইক আমার পায়ের উপরে পরে, তাই পা ভেঙ্গে যায়। এটা বিশ্বাস হলো। কিন্তু তারপরও মানতে পাচ্ছিনা। ভাবতেছি আমি অনেক ভালো বাইক চালাতে পারি। এবং ফেজারেও অনেক ভালো কন্ট্রোল সেয়েতু আমি কেন গাছে মেরে দিব? মনকে বোঝাতে পারতেছিলাম না। তারপর ৪-৫ মাস পর বাবা ঢাকায় গেল এবং আমার চারে পাশে বন্ধুরা বসলো এবং আমাকে এক্সিডেন্ট এর কথা জানালো।
শেরপুর থেকে যখন হিমেল বাইক টান দেয় বগুড়ার উদ্দেশে। তারপর বাবলু ফিলিং স্টেসনে (গাড়িদহ বাজার) একটি ট্রাকের সাথে আমাদের এক্সিডেন্ট হয়। হিমেল সাথে সাথে মারা যায় (স্পট ডেড)। বন্ধুরা ওর ছবি দেখালো। দেখলাম হিমেল রাস্তায় পরে আছে। দেখলাম হিমেল এর রক্তাক্ত চেহারা। ওর মাথার কাছে অনেক টুকু রক্ত রাস্তায় পরে আছে৷ আর আমাকে প্রথমে বগুড়া মেডিকেল কলেজ এবং অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নিয়ে যায়।
আর লিখতে পারতেছিনা। আজ সেই ২৭ এ জানুয়ারী। আল্লহর রহমতে আমি আজও আছি পৃথিবীর বুকে সেটা, সুস্থ্য বা অসুস্থ হয়ে। কিন্তু হিমেল নেই! খুব মিস করি বন্ধু তোকে। মনে হয় কতদিন তোকে দেখিনা। একবার আয় না! ১ মিনিট সময় দিলেই হবে। জাস্ট একটু দেখব আর একটু বুকে জড়িয়ে ধরবো। এর বিনিমনে আমি আমার জীবন দিতে পস্তুত এখনি।
তোমাদের কি একটু সময় হবে? আজ নামাজ পরে আমার বন্ধুর জন্য একটু দোয়া করতে? আল্লাহকে একটু বলবে আমার বন্ধুকে যেন ভালো রাখে? তোমাদের একটু খানি দোয়া হয়তবা আমার বন্ধুকে বেহেস্ত এর দরজা পর্যন্ত নিয়ে যাবে। এটা আমার বিশ্বাস।
পূর্ব প্রকাশিত: আমার ফেইসবুকে
আমার ব্লগ: bestfreelancehelp.blogspot.com
আমার ওয়েবসাইট: bestsocialplan.com
বি:দ্র: আমার এই টিউনটি টেকনোলজি এর সাথে কোনো মিল নেই। কিন্তু আমি একজন প্রফেসনাল ফ্রীলান্সার এবং আমি টেকটিউনস এ সমসময় টেকনোলজি সম্পর্কিত টিউন করি। তাই আমার কথা ভেবে এই টিউনটি পেন্ডিং রিভিউ অথবা রিমোভ করে দিবেন না প্লিস!
আমি নেট সাগর। CEO, Best Social Plan, Bogra। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 58 টি টিউন ও 696 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি একজন অজানা পথের পথিক। সারাদিন ইন্টারনেটের মধ্যেই ডুবে থাকি। আমার ওয়েবসাইট: https://bestsocialplan.com/
আল্লাহ তাকে বেহেশত নসীব করুন