প্রিয় টেক কমিউনিটি, আশা করছি আপনারা সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আমার আগের কয়েকটি লেখার মান অনেক কমে গিয়েছে। অনেকের কাছেই এ খবর শুনে লেখার মান বাড়াতে আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি লিখতে শুরু করলাম। যতটুকু পারি অনেক ভালো মানের লেখা আপনাদের উপহার দিতে পারবো আশা করছি। এবারের লেখাটি আমার শ্রদ্ধেয় সানিম মাহবীর ফাহাদ ভাইকে উৎসর্গ করলাম। কারণ ভালো মানের লেখা এবং সকলের সাথে ভালো কমিউনিকেশন আমি তার কাছ থেকেই শিখেছি।
আজকে আমি কথা বলবো প্রযুক্তির এক অনন্য অবদান ক্লাউড কম্পিউটিং এবং ক্লাউড হোস্টিং নিয়ে। সম্প্রতিকালে কম্পিউটারের জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রযুক্তির নাম ক্লাউড কম্পিউটিং। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির সবকিছুই চলে এই ক্লাউডের উপর নির্ভর করে। কম্পিউটার জগতে ক্লাউড কম্পিউটিং নতুন এক বিপ্লবের সূচনা করেছে। ক্লাউড কম্পিউটিং বুঝতে পারলেই ক্লাউড হোস্টিং সম্পর্কে বুঝতে আপনাদের অনেক সুবিধা হবে। তথ্যগুলো উইকিপিড়িয়া এবং গুগলে সার্চ করে প্রাপ্ত। এবার আসল কথায় চলে যাই।
ক্লাউড শব্দের অর্থ হচ্ছে মেঘ। আকাশে সর্বত্র যেভাবে মেঘ ছড়িয়ে আছে, ইন্টারনেটও ঠিক তেমনিভাবে সর্বত্র জালের মতো ছড়িয়ে আছে। ইন্টারনেটের এই মেঘ থেকে সর্বনিম্ন খরচে সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার এক উপায় বের করতে গিয়েই জন্ম হয় ক্লাউড কম্পিউটিং এর।
ক্লাউড কম্পিউটিং হচ্ছে একটি ইন্টারনেট সেবা যা কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা খুব দ্রুত ও নিরাপদে দিয়ে থাকে। এটি এমন একটি প্রযুক্তি যা খুব দ্রত কোন প্রকার সার্ভারের সমস্যা ছাড়াই আমাদের দিয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের " ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং" এর মতে ক্লাউড কম্পিউটিং হলো কারো তথ্য ও বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনকে কোন সেবাদাতার সিস্টেমে আউটসোর্স করার একটি মডেল। এককথায় বলা যায় " কম্পিউটার ও ডাটা স্টোরেজ সহজে ক্রেতার সুবিধামতো চাহিবামাত্র এবং ব্যবহার অনুযায়ী ভাড়া দেওয়ার সিস্টেম।
ক্লাউড হোস্টিং এর জন্য কয়েক শত থেকে কয়েক হাজার সার্ভার সবসময় ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকে। ফলে এই ক্লাউড সেবার আপটাইম হয় ১০০%। আমরা মূলত কোন হোস্টিং কোম্পানি থেকে হোস্টিং নিলে তারা আমাদের সিপ্যানেল সিস্টেম দিয়ে থাকে। তবে তাদের আপটাইম কখনোও ১০০% থাকে না। আবার দেখা যায় যে সিপিইউ বেশি ব্যবহার হতে থাকলে সার্ভার ডাউন হয়ে যায়। ফলে আমাদের সেবা নিতে অনেক সমস্যা হয়ে থাকে। আবার দেখা যায় যে ওয়েব সাইটে হঠ্যাৎ করে প্রচুর ভিজিটর আসলে সাইটের সার্ভার প্রচুর লোড নিতে পারে না। এর কারণ হোস্টিং কোম্পানি একটি মাত্র সার্ভার ভাড়া নিয়ে আমাদের হোস্টিং সেবা দিয়ে থাকে। আমাদের পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্টের সময় সার্ভারে লোডের কারণে সাইটে ঢোকাটাই আকাশের চাদ হাতে পাবার মতো। হয়তো এখন ক্লাউড হোস্টিং ব্যবহার করার কারণে এই অসুবিধা আর হয় না। ক্লাউড হোস্টিং এর জন্য কোন সাইটের ভিজিটর হঠ্যাৎ করে বেড়ে গেলে সিপিইউ বেশি ব্যবহার হতে থাকে। আর ঠিক তখনই অন্যান্য আরো সার্ভার এর সাথে যুক্ত হয়ে ভিজিটরকে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিতে থাকে। আবার কোন সার্ভার কোন কারণে ডাউন হয়ে গেলে সাইটের সাথে আরেকটি সার্ভার যুক্ত হয়ে যায়। ফলে কোন সাইট এর আপটাইম হয় ১০০%। এই ক্লাউড হোস্টিং নিলে ভিজিটরকে ২৪ ঘন্টাই সেবা দেওয়া যায়। কোন প্রকার ডিডস বা সার্ভার ডাউন করার মতো হ্যাকিং পদ্ধতি থেকে সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত থাকা যায়। কারণ ডিডস দিয়ে একটি সার্ভার ডাউন করতেই অনেক সময় লাগবে। আর এখানে তো হাজার হাজার সার্ভার যুক্ত আছে। ভাবতেই অবাক লাগে। আর যদি সিপ্যানেল হোস্টিং নিয়ে থাকি তবে দেখা যায় যে সার্ভার অ্যাটাক করলে একবারেই ডাউন হয়ে যায়। কারণ হোস্টিং প্রভাইডার একটিমাত্র সার্ভার ভাড়া নিয়ে এই হোস্টিং আমাদের দিয়ে থাকে।
আরেকটি কথা, ক্লাউড কম্পিউটিং এ অপারেটিং সিস্টেম নির্দিষ্ট থাকে না। যেমন সিপ্যানেলে অপারেটিং সিস্টেম থাকে লিনাক্স। আর ক্লাউডে আপনি চাইলেই লিনাক্স, উইন্ডোস ব্যবহার করতে পারবেন। আপনার সাইটের স্ক্রিপ্ট যদি asp তে হয় তবে আপনি ক্লাউড হোস্টিং এ উইন্ডোস অপারেটিং সিস্টেম সিলেক্ট করে নিতে পারবেন। আবার html, php হলে আপনি চাইলেই লিনাক্স নিতে পারবেন। আবার একসাথে দুইটি অপারেটিং সিস্টেমই চালাতে পারবেন। দুইটি অপারেটিং সিস্টেম হোস্টিংয়ে একসাথে চালানোকে বলা হয় হাইব্রিড হোস্টিং। এটা আরেক সুবিধা যোগ করেছে হোস্টিং জগতে।
ক্লাউড কম্পিউটিং এর ইতিহাস শুরু হয় ১৯৬০ এর দশক থেকে। ২০০৬ সালে বিশ্ব বিখ্যাত আম্যাজন ওয়েব সার্ভিস বাণিজ্যিকভাবে ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের ব্যবহার শুরু করে। ২০১০ সালে The Reckspace Cloud এবং NASA মুক্ত অ্যাপ্লিকেশন পোগ্রামিং ইন্টারফেস শুরু করে। এভাবেই ক্লাউড কম্পিউটিং জন সাধারণের মুঠোয় আসতে শুরু করে।
আরো বিস্তারিত বলতে একটি উদাহারণ সহ দিয়ে দিচ্ছি। আমার ওয়েব সাইট (www.rocktim.com) একটি ব্লগ সাইট। ব্লগের অধিকাংশ ব্লগার এবং ভিজিটর বাংলাদেশের। বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা হতে রাত ১২টা পর্যন্ত আমার ব্লগে ব্যবহারকারী বেশি থাকে। এর মধ্যে রাত ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ব্যবহারকারীর সংখ্যা খুব বেশি থাকে, ফলে এই সময় সার্ভারে খুব চাপ পড়ে। এই লোড কমানোর জন্য ৩/৪ টি সার্ভার ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু অন্য সময়ে সার্ভারে লোড কম থাকার কারণে একটি সার্ভারেই কাজ হয়। তাহলে ওয়েব সাইট চালানোর জন্য ২৪ ঘন্টাই ৩/৪ টি সার্ভার ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র যে সময়ে লোড বেশি থাকে সে সময়ের জন্যই অতিরিক্ত সার্ভারযুগুলো যুক্ত হয়। এতে ২৪ ঘন্টাই সেবা পাওয়া যায় এবং কোন প্রকার ডাউনটাইম ছাড়াই। আর আমার কাছে অতিরিক্ত সার্ভার ব্যবহার শেষ হলে এই সার্ভারগুলো অন্য আরেকটি সাইটের সাথে যুক্ত হয় যায়, যেই সাইটে অতিরিক্ত লোড হচ্ছে।
আমরা অনেক আগে থেকেই ক্লাউডের সাথে যুক্ত আছি। কিন্তু আমরা অনেকেই এ তথ্য জানি না। যেমন : আমরা প্রায় সবাই ইমেইল ব্যবহারের জন্য ইয়াহু, জিমেইল বা হটমেইল ব্যবহার করে থাকি। ইন্টারনেট আর ইমেইল একাউন্ট থাকলেই আমরা যেকোন জায়গায়, যেকোন সময়, যেকোন ডিভাইস থেকে ইমেইল ব্যবহার করতে পারি। এই ইমেইলগুলো কোথায় কিভাবে সংরক্ষণ হচ্ছে তা সাধারণ ব্যবহারকারীদের জানার প্রয়োজন হয় না। ক্লাউড ডাটা সেন্টারে থাকে হাজার হাজার সার্ভার। যেগুলি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে। আর এইসব সার্ভারেই চলে ২৪ ঘন্টা ইমেইল সেবা। প্রতি মিনিটে লক্ষ লক্ষ ফাইল আপলোড হচ্ছে। এর এইসব ফাইল ঘুরে বেড়েচ্ছে এক সার্ভার থেকে আরেক সার্ভারে। ব্যবহারকারীরা শুধু তাদের ফাইল দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু এখন সেই ফাইল কোন সার্ভারে আছে তা কিন্তু অজানা আর সেটা জানবেও না কখনোও।
১। সর্বোক্ষণিক ব্যবহার করা যায়। মানে ২৪ ঘন্টা ১০০% আপটাইম।
২। যেকোন স্থান থেকে তথ্য আপলোড, ডাউনলোড ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৩। নিজস্ব কোন হার্ডওয়্যার লাগে না।
৪। তথ্য কিভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে তা জানার কোন দরকার পড়ে না।
৫। যেকোন অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা যায়।
৬। সেবার চেয়ে খরচ তুলনামূলক অনেক কম।
৭। সার্ভারের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হয় না।
৮। হঠ্যাৎ করে প্রচুর লোড হলেও সার্ভারে সামান্য সমস্যাও মনে হয় না।
আমি নিজে ১ মাস যাবৎ ক্লাউড হোস্টিং ব্যবহার করছি। এতে এখন পর্যন্ত কোনও অসুবিধা দেখি নি। তবে আগে Cpanel ব্যবহার করাতে প্রথম ২-৩ দিন একটু সমস্যা হতো। এর ব্যবহারবিধি অনেক সহজ। তবে সমস্যা একটাই যে, ফাইলগুলো এখন কোথায় কোন সার্ভারে আছে তা জানি না। এছাড়া আমি ইন্টারনেটে সার্চ করে এর আলাদা আর কোন অসুবিধা দেখি নি।
আমাদের দেশেও এখন অনেক হোস্টিং কোম্পানিই ক্লাউড হোস্টিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আমি এখানে কাউকে নির্দিষ্ট করে কিছুই বলছি না। আপনারা সাইটের হোস্টিং এর জন্য ক্লাউড নিতে চাইলে অবশ্যই আগে হোস্টিং প্রোভাইডারের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে নিবেন।
লেখায় কোন প্রকার ভুল থাকলে ক্ষমা সুন্দর দুষ্টিতে দেখবেন। আর লেখা সম্পর্কে যদি আপনাদের কিছু বুঝতে কোন অসুবিধা হয় তবে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। আপনাদের একটি মতামত আমাকে সামনে আরও সুন্দর কিছু উপহার দিতে উৎসাহ প্রদান করবে। আর যে কথা না বললেই নয়, তা হলো লেখা কপি পেস্ট বর্জন করা। ৩-৪ ঘন্টা একটানা লিখার পর কপি পেস্ট করলে পুরো পরিশ্রমটাই বৃথা যায়। সবাই ভালো থাকবেন। সকলের শুভ কামনা করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
আমি আতিকুর রহমান সোহেল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 31 টি টিউন ও 289 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
খুব সাধারণ একজন । প্রযুক্তিকে ভালবাসি, এর জন্য সব কিছুই করতে পারি । জীবনের লক্ষ্য হিসেবে প্রযুক্তিকেই বেছে নিয়েছি । জানি না কতটুকু সফল হবো । তবুও সারা দিন রাত চলে আমার লক্ষ্য অর্জনের অবিরন্ত প্রচেষ্ঠা । হয়তো একদিন হবে সফল , নয়তো বিফল । তবুও যতদিন থাকবো, প্রযুক্তিকে ভালোবাসবো...
একটা ক্লাউড এর নাম বলুন