Image Source: Google |
ইন্টারনেট সৃষ্টির লগ্ন থেকেই এটা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। আর বর্তমান সময়ে এর ব্যবহার ছাড়া এক মূহুর্তও বেচে থাকা সম্ভব নয়। কারন, আপনি কোনো না কোনা ভাবে সবসময় ইন্টারনেটের সুফল ভোগ করছেন। ঘুম থেকে উঠা থেকে শুরু করে ঘুমুতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করছি। আর এখনতো, রেজাল্ট দেখা থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজে ভর্তি হতেও ইন্টারনেট প্রয়োজন। এমনকি, অনলাইনে শপিং, টিকেট কেনাসহ প্রায় সবধরনের কাজ অনলাইনে করা যাচ্ছে।
এই যে এতো এতো সুফল পাচ্ছি আমরা ইন্টারনেট থেকে, এর মাঝে একটা সমস্যাও রয়েছে। আজকে আমি আপনাদের সামনে সেই বিষয়টাই তুলে চেস্টা করবো।
কিভাবে শুরু করি বলুনতো?
আচ্ছা চলুন একটা গল্পের মাধ্যমে আজকের লেখা শুরু করি..
রোমিও (এটা একটি কাল্পনিক নাম) সবেমাত্র মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছে। সে মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন ছেলে। একদিন তার এক বন্দু তার কাছে এসে বলে আজ সে ইন্টারনেট থেকে তাহসানের লেটেস্ট গান ডাউনলোড করেছে। রোমিওর খুব কৌতুহল জাগে ইন্টারনেট আর ডাউনলোড এর ব্যাপার নিয়ে, কারন এর আগে রোমিও ইন্টারনেটের নাম শুনে নাই। তার বন্দুর কাছে জানতে চাইলে সে বলে, ইন্টারনেট থেকে নতুন সব গান, সিনেমা ডাউনলোড করা যায়। এর পর থেকেই ইন্টারনেটের প্রতি কৌতুহল বেড়ে যায় রোমিওর।
কয়েকবছর পর, রোমিওর বাবা একটা ফোন কিনে, তখন রোমিও ৮ম শ্রেণীতে পড়ে। রোমিও অনেক খুশি হয়, কারন সে এখন ইন্টারনেট চালাতে পারবে। তার বন্দুদের কাছ থেকে কিছুটা শিখে সে ইন্টারনেট চালানো শুরু করে। এখন চাইলেই সে নতুন নতুন গান, সিনেমা ডাউনলোড দিতে পারে। এখন সে জানে, ইন্টারনেট মানে নতুন গান ডাউনলোড করা।
একদিন সে ফেসবুক সম্বন্ধে জানতে পারে। তারপর সে ফেসবুক চালানো শুরু করে। ধীরে ধীরে তার ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড বাড়তে থাকে। একসময় সে ফেসবুকের প্রতি অনেক বেশি ঝুকে পরে। এখন, সময়ে-অসময়ে তাকে ফেসবুকে পাওয়া যায়। তার বন্দুরা তাকে ফেসবুক সেলিব্রেটি বলে ডাকে। এখন সে জানে, ইন্টারনেট মানে গান ডাউনলোড আর ফেসবুক।
অনেকদিন হলো রোমিও ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত। এতোদিনে সে টুক-টাক গুগল সম্বন্ধেও জেনেছে। এখন সে কলেজ স্টুডেন্ট। একদিন ফেসবুকের মাধ্যমে সে জানতে পারে, অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করা যায়। বিষয়টা নিয়ে বিস্তারিত জানার জন্য সে তার বন্দুদের সাথে বিষয়টা শেয়ার করে। একজন বলে, তার কোনো এক বড় ভাই আছে সে নাকি অনলাইন থেকে অনেক টাকা ইনকাম করে। আরেকজন বলে, ওয়েভসাইট বানিয়ে টাকা ইনকাম করা যায়, আরেকজন বলে পিটিসি সাইট থেকে টাকা ইনকাম করা যায়। এভাবে নানান জনে নানান পন্থা বলে দেয়। অবশেষে রোমিও ভেবে পায়না কোনটা দিয়ে শুরু করবে??
ফাইনালি, রোমিও ঠিক করে পিটিসি দিয়ে শুরু করবে এবং তার পাশাপাশি ওয়েভ সাইট চালাবে। শুরু করার কয়েকমাস পর কোনোমতে কিছু টাকা ইনকাম করে। এইবার রোমিওতো মহাখুশি (যদিওবা এক সপ্তাহের নেট খরচও উঠে নাই)
এইবার রোমিও পুরোদোমে কাজ শুরু করে দেয় (পড়া-লেখা প্রায় বাদ)। কয়েকদিন ধরে একটা নতুন সাইটে কাজ করে আসছিলো, যারা ক্যাপচা পূরন করার জন্য টাকা প্রধান করে থাকে। প্রায় ৩ দিন মাস কাজ করার পর একাউন্টে 50$ জমা হইছে। আগামিকাল টাকা পেআউট করবে বলে ঠিক করে। যথারীতি সে পরেরদিন পেআউট নেওয়ার জন্য তার একাউন্টে লগিন করলো। কিন্তু, সে দেখতে পেলো তার একাউন্ট বাতিল হয়েছে। কারন হিসেবে বলা হয়েছে যে, তার আইপি দিয়ে আরেকটা একাউন্ট পাওয়া গেছে।
এইবার রোমিও মহাশয় খুবই ব্যাথিত হয়ে গেলো। সে বুঝতে পারলো যে ইন্টারনেটে ইনকাম বলে কিছু নেই এখানে পুরোটাই ভাউতাবাজি।অপরদিকে তার ওয়েভসাইটটা থেকেও তেমন কোনো প্রফিট পাচ্ছেনা। কারন, পুরোটাই কপি-পেস্ট এ ভরপুর। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় আর ইন্টারনেট এর জগতে থাকবেনা। কিন্তু, ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছে, কারন তার রেজাল্টও খারাপ হয়েছে।
বর্তমানে রোমিও মহাশয় বাংলাদেশের ৩০ লাখ শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে একজন।
এখন আপনারাই বলেন, রোমিওর এই অবস্থার জন্য কে দায়ী?
* রোমিও নিজে
* তার অজ্ঞতা
* আমাদের সমাজ
উত্তরটা আপনাদের জন্যই রেখে দিলা।
এবার আসি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইন্টারনেট কতটা প্রভাব ফেলছে যুবসমাজের উপর-
আপনারা সবাই জানেনে, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এদেশে বেকারত্ব একটি অন্যতম সমস্যা। রোমিও একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ছিল। সে যখন কলেজে ভর্তি হয়, স্বাভাবিকভাবেই তার উপর একটা চিন্তা কাজ করে কিভাবে কিছু টাকা আয় করে তার পরিবারকে সাপোর্ট দেওয়া যায়। আর ঠিক সেই মূহুর্তে সে পিটিসি সহ বিভিন্ন ধরনের অনলাইন কাজের খোঁজ পায়। সে ওই কাজগুলো করা শুরু করে দেয়। কোনোমতে কিছু টাকা সে আয় করলেও কাজ শুরুর কয়েকমাস পরেই বুঝতে পারে এই নিম্নমানের কাজ দিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়।
বর্তমানে অনলাইনে আয় একটি জনপ্রিয় পেশা হলেও বাংলাদেশে এটা নিয়ে অনেক ভুল ধারনা রয়ে গেছে। যদিও এর অন্যতম কারন, সঠিক গাইডলাইনের অভাব আর বাংলিদের কম পরিশ্রমেই অধিক টাকা আয় করতে চাওয়ার মানষিকতা। যার কারনে তারা ঝুকে পরছে পিটিসি সহ বিভিন্ন নিম্নমানের কাজের পিছনে।
এজন্য কাকে দায়ী বলবেন আপনি?
যে ছেলেটার জীবন একটু গাইডলাইনের অভাবে নস্ট হয়ে গেলো, সে হয়তো ভালো কিছু করতে পারতো যদি একটু গাইডলাইন পেতো।
বর্তমানে ভাইরালের মতো ছড়িয়ে গেছে পিটিসি সহ নিম্নমানের বিভিন্ন অনলাইন কাজগুলো। এই কাজটা কারা করছে? হয়তো যে এই কাজটা সেও গাইডলাইনের অভাবে ভুগছে, তারও টাকার প্রয়োজন।
আমি আমার এই আর্টিকেলটি আর দীর্ঘ করবোনা। তবে যাওয়ার আগে কয়েকশ্রেনীর লোকদের কাছে কয়েকটি আবেদন রেখে যাবো।
* আপনি যদি অনলাইনে ভালো কোনো কাজ করে সফল হয়ে থাকেন, তবে আপনার পাশে থাকা লোকটাকে যে কিনা অনলাইনে কাজ করে সফল হতে চায় তাকে যতটা সম্ভব সাহায্য করুন।
* আর আপনি যদি পিটিসি সহ নিম্নমানের কাজগুলো করে থাকেন তবে কাজগুলো করার আগে একবার ভাবুন, এই কাজগুলো দ্বারা সত্যিই আপনার ভবিষ্যৎ ঘরে তোলা যাবে কিনা??
* ইন্টারনেট থেকে আয় করার আগে অবশ্যই অভিজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে নিবেন।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের এটা বুঝানোর চেষ্টা করেছি যে, অনলাইনে আয় করতে গিয়ে ভুল-পথে চলে গেলে কতটা ক্ষতি হতে পারে। জানিনা কতটা বুঝাতে পেরেছি। তবে চেষ্টা করেছি সহজভাবে বোঝানোর।
আগামি আর্টিকেলে দেখাবো সোশ্যাল মিডিয়ার নামে কি করছে তরুনেরা 🙁
Source: Here
আমি আমি সোহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 11 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Onek valo likhcen vai….Thnk u so much