- بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ -
সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি সবাইকে আমার সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের টিউন।
অতীত বা বর্তমান সময়ের সেরা দশটি ভাইরাসের বিধ্বংসী কার্যক্রম নিয়ে করা টিউনের এটা দ্বিতীয় বা শেষ পর্ব। আগের পর্বটিতে প্রথম ৫টি ভাইরাস এবং তাদের বিধ্বংসী কাজের কথা বর্ণনা করেছিলাম। সেই টিউনে আপনাদের আশানুরূপ সাড়া পেয়ে দ্বিতীয় টিউনটি করার প্রয়াস পেয়েছি। আমার মনে হয় ভাইরাস বিষয়ে আপনাদের যতোটুকু ধারনা ছিল তার অনেকটা পরিবর্তন করতে পেরেছি। অনেকেই হয়তো ভাইরাস বলতে শুধু এতোদিন কম্পিউটারের শর্টকাট ভাইরাস বা কম্পিউটার স্লো হয়ে যাওয়া বুঝতেন। কিন্তু আমার আগের টিউনে আমি দেখিয়েছি কিভাবে একটি ভাইরাস আপনার ব্যক্তিগত তথ্য থেকে শুরু করে কম্পিউটারের বারোটা বাজাতে পারে। একটি ভাইরাসের বিধ্বংসী ক্ষমতার কাছে আপনার সকল গোপনীয়তা জিম্মি হয়ে থাকে। আমার কাছে অনেকেই প্রশ্ন করেছিলেন যে এসব ভাইরাস হতে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার উপায় কি? আসলে আপনি খেয়াল করেছেন কিনা জানিনা, সবগুলো ভাইরাস প্রযুক্তির বিকাশের মাধ্যমিক স্টেজে আবির্ভূত হয়েছে। তখন সুরক্ষা ব্যবস্থাও এতোটা শক্তিশালী ছিলো না। কিন্তু বর্তমানে কম্পিউটার ফায়ারওয়াল বা এন্টিভাইরাস আপনাকে এ সমস্ত সমস্যা থেকে অনেকটাই অতিরিক্ত নিরাপত্তা দিতে পারবে। তবে টিউনের বাকী অংশ শুরু করার আগে আপনারা যারা আমার প্রথম টিউনটি দেখেননি তারা নিচের লিংক থেকে টিউনটি দেখে নিন।
আজকের পর্বের বিধ্বংসী ভাইরাসগুলোর মধ্যে Conficker ভাইরাসটি অন্যতম। এই ভাইরাসটি Conficker নাম ছাড়াও Downup বা Downcup নামেও পরিচিত যা ২০০৮ সালে প্রথম আত্বপ্রকাশ করে। এই ভাইরাসটি কে বা কারা তৈরী করেছে সে ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে এই ভাইরাসটির নামকরন করা হয় দুইটি ভিন্ন দেশের ভিন্ন দুটি ভাষার সংমিশ্রনে। আমি যতোটুকু জানি Conficker শব্দটি এসেছে ইংরেজি শব্দ Configure এবং জার্মান শব্দ pejorative থেকে। এটা যখন কোন অপারেটিং সিস্টেমকে আক্রমন করে তখন একটি বুটনেট (একই ধরনের প্রোগ্রামের সাথে যোগাযোগের জন্য সমন্বিত কানেকশন) তৈরী করে। যা আপনার তথ্য পাচারের কাজে ব্যবহৃত হয়। এটা সৃষ্টির সময়কালে প্রায় ৯মিলিয়ন কম্পিউটারকে আক্রান্ত করতে সমর্থ্য হয় যা প্রায় ৯বিলিয়ন ইউএস ডলার ক্ষতির কারন হয়। বলা হয় এটাই নাকি সব চেয়ে বড় আক্রান্তকারী ভাইরাস।
এই ভাইরাসটির অবস্থা হলো এরকম যে, কেউ আপনার বাড়িতে লুকিয়ে প্রবেশ করলো এবং তারপর দাবী করলো যে সেই আপনার বাড়ির মালিক। এই ভাইরাসটি দ্বারা কম্পিউটার আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে সাথে এটা নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থাপনায় ক্রুটি সৃষ্টি করে। আপনার একাউন্টকে রিসেট করে ফেলে, উইন্ডোজ আপডেট ব্লক করে, উইন্ডোজের বিভিন্ন সার্ভিস বন্ধ করে করে দেয়। তাছাড়া এটা আক্রান্ত কম্পিউটারকে বুটনেট বানাতে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার নিজে নিজেই ইনস্টল করে নেয়। মাইক্রোসফট কর্পোরেশন এই ভাইরাসটি শনাক্ত করার পর এর তাদের পরবর্তি উইন্ডোজ সংস্করনে এটার বিরোধী ব্যবস্থাপনা যোগ করে দেয়। এ কারনে আমরা আপাততো নিরাপদ।
এ পর্যন্ত যতোগুলো ভাইরাসের কথা বলেছি তারমধ্যে এটাই মনে হয় প্রথম ভাইরাস যেটা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কোন বিশেষ শ্রেণীর জন্য সামরিক বাহিনী দিয়ে তৈরী করা হয়েছিলো। এই ভাইরাসটি ইজরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং অ্যামেরিকান সরকার মিলে তৈরী করেছিলো। এই ভাইরাস তৈরীর মূল উদ্দেশ্য ছিলো ইরানের সাথে সাইবার যুদ্ধ এবং টার্গেটছিলো ইরানের পারমানবিক শক্তিবৃদ্ধির প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করা। ভাইরাস প্রস্তুতকারকগণ মনে করেছিলো এটা ইরানের এক পঞ্চমাংশ পারমানবিক শক্তিকে ধ্বংস করে দিতে পারবে। এবং তাদের ধারনার প্রায় ৬০% কাজ এই ভাইরাসটি ইরানে করতে সক্ষম হয়েছিলো।
এই কম্পিউটার ভাইরাসটি ডিজাইন করা হয়েছিলো ইনডাস্ট্রিয়াল Programmable Logic Controllers (PLC) কে আক্রমন করার জন্য যার কাজ হলো মেশিনারিগুলোগুলোকে অটোমেটিক রাখা। এটা সেই সমস্ত মেশিনারি গুলোর উপর বেশি কাজ করতো যেগুলোতে সিমেন্স এর সফটওয়্যার থাকতো। এবং এই সমস্ত মেশিনারীগুলোকে আক্রান্ত করার জন্য ইউএসবি ড্রাইভের মাধ্যমে ভাইরাস সরবরাহ করা হতো। যদি মেশিনারীগুলোতে সিমেন্সের সফটওয়্যার না থাকতো তাহলে এটি সুপ্ত অবস্থায় থেকে অন্যন্য সফটওয়্যারগুলো অকেজো করার চেষ্টা করতো এবং সমস্ত মেশিনে ছড়িয়ে পড়তো এবং আস্তে আস্তে যেগুলোর কর্মক্ষমতা হ্রাস করে বিকল করে দিতো। পরবর্তিতে সিমেন্স তাদের সফটওয়্যারগুলো থেকে এই ভাইরাস দূর করার পদ্ধতি বের করেন।
গত টিউনে প্রকাশিত হওয়া I LOVE YOU ভাইরাসের পরে এটাই সবচেয়ে বিধ্বংসী উইন্ডোজ ভাইরাস যা ইমেইলের মাধ্যমে সংক্রামিত হতো। সর্বপ্রথম ২০০৪ সালে এই ভাইরাসটি আবির্ভুত হলেও এখনো জানা যায়নি কে এটা তৈরী করেছে। কিন্তু ধারনা করা হয় এই ভাইরাসটি যে তৈরী করেছে তাকে এর জন্য ভাড়া করা হয়েছিলো কারন এই ভাইরাসটির সাথে যে টেক্সট মেসেজ আসতো তার ভাবার্থ মোটামুটি এরকম, “এন্ডি; আমি শুধু আমার কাজ করেছি, তবে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে নয়, দুঃখিত (“Andy; I’m just doing my job, nothing personal, sorry, ”)। ভাইরাসটির নামকরন করা হয় McAfee কর্মকর্তা Craig Schmugar এর ইচ্ছে অনুসারে যিনি ছিলেন ভাইরাসটি শনাক্তকারীদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু ভাইরাসটির নাম mydom রাখা হয়েছে ভাইরাসের কোডগুলোর মধ্যে থেকে একটি লেখা my domain থেকে এই আসঙ্কা করে যে এই ভাইরাসটি খুব বিধ্বংসী (Doom) কাজ করবে।
এটা নিজে নিজেই ছড়িয়ে পড়তে পারতো এবং যখন কেউ একটি ফ্রেস ইমেইল সেন্ড করতে যেতো তখন এটা ইমেইল ট্রান্সমিশন এরর দেখিয়ে নিজে নিজেই ভাইরাসটিকে এটাচমেন্ট হিসাবে যোগ করে নিতো। তারপর ইমেইল এড্রেসবুকে থাকা সকল মেইলে নিজে নিজেই সেন্ড হয়ে যেত। এটা যখন পিসিতে লোড নিতে তখন এটা কথিত পেছনের দরজা খুলে দিতো। মানে হলো এটি রিমোট কোন সার্ভারকে উক্ত পিসির নিয়ন্ত্রন তুলে দিতো। এই ভাইরাসটি দ্বারা ক্ষতির পরিমান প্রায় ৩৮.৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার। তবে আপনাদের জন্য দুঃসংবাদ যে এই ভাইরাসটি এখনো কার্যকর অবস্থায়। যে কোন সময় আপনিও আক্রান্ত হতে পারেন, নিশ্চিত করুন আপনার পিসির নিরাপত্তা কতোটুকু।
এটাকে আপনি কিডন্যাপিং টাইপ কিছু বলতে পারেন। এই ভাইরাসটি যদি আপনার কম্পিউটারকে আক্রমন করে তাহলে এটা যা করে তাহলো, আপনার পিসির ডাটাগুলোকে ইনক্রিপ্ট করে ফেলে। তারপর আপনার কাছ থেকে এগুলোকে ডিক্রিপ্ট করার জন্য নগদ অর্থ দাবী করে। আপনি যদি তাদেরকে উপযুক্ত পরিমান পে করতে না পারেন তাহলে তারা ডাটাগুলোকে ডিলেট করে দেওয়া শুরু করে। ডাটা ডিক্রিপ্ট করতে হ্যকাররা প্রায় ৪০০ ডলার দাবী করতো, কি মহা বিপদ বুঝতেই পারছেন। আজকাল ফেসবুক একাউন্ট নিয়েও এরকম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকদিন আগে আমার এক বন্ধুর ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হয়ে যায়, হ্যাকার তার একাউন্ট ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ৩০০ টাকা দাবী করে। যাহোক, এই ভাইরাসটি ইমেইলের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়ে তার কুকীর্তি সম্পন্ন করতো।
পরে অবশ্য কিছু সিকিউরিটি কোম্পানি এই ভাইরাসটিকে রুখে দিতে সক্ষম হয় কিন্তু এর মাঝেই হ্যাকাররা হাতিয়ে নেই ৩ মিলিয়ন ইউএস ডলার। নিজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না করলে ভোগান্তির অন্ত নেই কোনখানেই।
এটা খুবই ধ্বংসাত্বক একটি ভাইরাস যা ঝড়ের মতো কাজ করে। এটা মূলত নিজে নিজে কোন কম্পিউটারকে আক্রমন করেনা কিন্তু ব্যবহারকারী নিজে এটাকে নিজের পিসির জন্য ডাউনলোড করে নেয়, খাল কেটে কুমির আনা যাকে বলে। সাধারনত বিভিন্ন লোভনীয় অফারের মাধ্যমে এটাকে ডাউনলোড করতে উৎসাহিত করা হয়। যারা এই ভাইরাসটিকে ডাউনলোড করে তাদেরকেই পরে মাশুল দিতে হয়। এই ভাইরাসটি দ্বারা কম্পিউটার আক্রান্ত হলে ভাইরাসটি রিমোট কম্পিউটারের সাথে আপনার পিসির সংযোগ স্থাপন করে। যা আপনার যাবতীয় তথ্য হ্যাকারের কম্পিউটারে স্থানান্তর করে এবং আপনার পিসির পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রন হ্যাকারের হাতে তুলে দেয়।
বর্তমান সময়ে অ্যান্ড্রোয়েড বা কম্পিউটারে এরকম লোভনীয় অনেক বিজ্ঞাপণ চোখে পড়ে। যারা আগ্রহ বসে সেগুলো ডাউনলোড করে তারায় পরবর্তিতে ঝামেলায় পড়ে। বিশেষ করে নগ্ন চলচিত্র কিংবা যৌন-আকর্ষী বিজ্ঞাপণের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে ভাইরাসটি ডাউনলোডের প্রতি উৎসাহিত করা হয়। আশা করি পরবর্তি সময়ে আপনারা এ ব্যাপারে সচেতন থাকবেন। কারন নিজে কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুধু যে আপনার নিজের ক্ষতি হবে এমনটা ভাবার উপায় নেই। কারন এটা শুধু আপনাকে নয় আপনার পিসির সাথে যাদের যোগাযোগ আছে তাদের সবাইকে আক্রান্ত করবে।
টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো সেটা হলো, আশাকরি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের সাহায্যার্থে আমি আছি.
ফেসবুক | টুইটার | গুগল-প্লাস
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
সেই লেভেলের টিউন….ধন্যবাদ আবারও একবার চমক দেয়ার জন্য