মানুষ রহস্যপ্রিয় জাতি। সেই আদিকাল থেকেই যেকোন রহস্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ অসীম। রহস্যের দিকে আগ্রহ থাকলেও রহস্য সমাধানের আগ্রহ নেই বললেই চলে।
তবুও মানুষ রহস্যপ্রিয় । রহস্যের সন্ধান পেলেই সেখানে ছুটে যায়, তা যেভাবেই হোক না কেন!! আজ আমি আপনাকে কয়েকটি রহস্যময় হোটেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো। যেগুলোতে ঘটে নানা রকম অতিপ্রাকৃত ঘটনা। কোনটির বয়স শতাধিক, আবার কোনটা বহু পুরোনো!!
অমীমাংসিত রহস্যময় ঘটনা গুলো চিরকালই মানুষকে আকর্ষন করে। আর তাই ভূত-প্রেত ভয় পেলেও মানুষ বারবারই জানতে যায় ভূতপ্রেত সম্পর্কে। অশরীরী কোনো কিছুর অস্তিত্ব অনেকেই বিশ্বাস করতে না চাইলেও প্রতিনিয়তই পুরো বিশ্বে ঘটছে নানান রকমের রহস্যময় ঘটনা যার কোনো ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব হয়না কখনই। আধুনিক যুগের প্রযুক্তিও হার মেনে যায় এসব রহস্যময় ঘটনার কাছে।
বেড়াতে গিয়েছেন যখন তখন নিশ্চয়ই ভালো কোনো হোটেলে থেকেছেন রাত কাটানোর জন্য। আর তা যদি হয় দেশের বাইরের কোনো বিলাসবহুল হোটেল তাহলে তো কথাই নেই। বিশ্বের তেমনই কিছু বিলাসবহুল হোটেলে হরহামেশাই ঘটছে ভূতুড়ে কান্ডকীর্তি। তেমনই ৬টি হোটেলের কিছু রহস্যময় ঘটনা জেনে নিন এই ফিচারে।
ল্যাংহাম হোটেল, লন্ডন
ফিচারের কভারে যেই ছবিটি দেখছেন সেটা লন্ডনের ল্যাংহাম হোটেলের। ১৮৮৫ সালে তৈরী হওয়া এই হোটেলে বহু নামীদামী লোকজন বসবাস করেছেন বিভিন্ন সময়ে। আর তার পাশাপাশি বেশ কিছু ভূতেরও বসবাস আছে এই হোটেলে? অবাক হচ্ছেন? এই হোটেলের রুম নাম্বার ৩৩৩ এ ভিক্টোরিয়ান ইভনিং পোশাক পরা একটি পুরুষের ছায়া দেখা যায়। তবে এই ছায়া শুধুমাত্র অক্টোবর মাসেই দেখা যায়। অন্যসময়ে কোনো সমস্যা হয় না। অনেকেই এই হোটেলের ৪ তলার জানালায় মিলিটারি পোশাক পরা একজনকে প্রায়ই দেখতে পান। ধারনা করা হয় এটা জার্মান প্রিন্সের আত্মা যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে জানালা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছিলেন।
হোটেল বার্চিয়ান্তি, ইতালি
ইতালির ফ্লোরেন্সে অবস্থিত এই হোটেলটিকে ভূতের হোটেলই বলা চলে। কারণ এই হোটেলে যারাই অবস্থান করেছে তাদের অনেকেই নানান রকম ভৌতিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে। ছোট শিশুর ছায়া, নারীর চেয়ারে বসে উল বোনার দৃশ্য, ভোর বেলা ভৌতিক ক্লিনার সহ আরো নানান রকমের অদ্ভুত অশরীরী দেখতে পেয়েছেন অনেকেই। এমনকি অনেকে হোটেলের যে রুমটিতে মুসোলিনি থেকেছিলেন সেখানে তার আত্মাও দেখতে পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
রাসেল হোটেল, অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অবস্থিত এই হোটেলের ৮ নম্বর রুমটিকে সবাই এড়িয়ে চলেন। আর তার কারণ হলো এখানেও ভৌতিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন অনেকেই। বলা হয়ে থাকে এই রুমে আটকে আছে এক নাবিকের আত্মা। হোটেলের কর্মচারীরা গভীর রাতে এই রুম থেকে জোরে জোরে পা ফেলে হাটার শব্দও পেয়ে থাকেন নিয়মিত। যদিও রুমটিতে কখনই কেউ থাকে না!
ক্যাসেল স্টুয়ার্ট, স্কটল্যান্ড
১৬২৫ সালে স্থাপিত এই ক্যাসেলটি তৈরী করেছিলেন জেমস স্টুয়ার্ট। তিনি ছিলেন তৎকালীন স্কটল্যান্ডের রানীর দূর সম্পর্কের ভাই। ক্যাসেলটি তৈরীর পর থেকেই নানান রকমের ভৌতিক কান্ড ঘটতে থাকে সেখানে। ফলে এক পর্যায়ে সেটা বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায় মানুষের জন্য। অনেকেই ব্যাপারটা বিশ্বাস করেন নাই। আর তাই স্টুয়ার্ট একপর্যায়ে ঘোষণা দেন যে কেউ যদি এক রাত ক্যাসেলে থেকে প্রমাণ করতে পারে যে সেখানে ভুত নেই, তাকে পুরস্কৃত করা হবে। এই প্রস্তাবে এলাকার ধর্ম যাজক পেট্টি চার্চ সেখানে রাত্রিযাপন করার প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন। পরদিন সকালে ক্যাসেলটিতে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। মৃতদেহের চেহারাটি ছিলো প্রচন্ড ভয়ার্ত!
কোম্ব অ্যাবি হোটেল, ইংল্যান্ড
১৩৪৫ সালে এই হোটেলে খুন হয়েছিলেন জিওফ্রে নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু তার খুনিকে কখনই খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে জিওফ্রে এর আত্মা ছেড়ে যায়নি হোটেলটি থেকে। আর তাই অনেকেই মাঝ রাতে হোটেলের রান্নাঘর থেকে হাড়িপাতিল ছুড়ে ফেলার শব্দ পান। শব্দ শুনে মনে হয় কেউ যেন তীব্র আক্রোশে জিনিসপত্র ছুড়ছে এদিক ওদিকে।
দ্যা হাওথ্রন হোটেল, আমেরিকা
আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসে অবস্থিত হোটেল দ্যা হাওথ্রনে অনেক বিখ্যাত মানুষ থেকেছেন অনেক সময়। এমনকি আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও তার স্ত্রীও থেকে গিয়েছেন এখানে। কিন্তু এই হোটেলেরও আছে ভৌতিক ঘটনা ঘটার বদনাম। চোখের সামনে থেকে চাবি গায়েব হয়ে যাওয়া, সুইচ অন ছাড়াই লাইট অন এবং অফ হয়ে যাওয়া, হঠাৎ পানির কল চালু হয়ে যাওয়া সহ আরো নানান রকম সমস্যা হয় এই হোটেলের অনেক গুলো রুমেই। হোটেলের ৬১২ নম্বর রুমের ঠিক সামনে অনেকেই একটি নারীর অবয়ব দেখতে পেয়েছেন অনেকবারই। কিন্তু পিছু নিতে গেলেই বার বার মিলিয়ে গিয়েছে সেটা।
ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন সবাই। আর হোটেলগুলো থেকে ঘুরে আসতে ভুলবেন না কিন্তু!!
চালিয়ে জান ভাই