মাস দু’য়েক ধরে দেশের ভিজ্যুয়াল আর প্রিন্ট মিডিয়ায় গ্রামীণ ফোনের একটি নতুন বিজ্ঞাপন প্রচার করে যাচ্ছে। বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে ‘বন্ধু, আড্ডা ও গান এখানেই, হারিয়ে যাও’, কখনওবা প্রিন্ট মিডিয়ার বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে ‘মাত্র ৩০ টাকায় হারিয়ে যাও’। গ্রামীণ ফোন তাদের বিজ্ঞাপনে বৈচিত্র আনতে গিয়ে নানাভাবে নতুন নতুন মেসেজ দিয়েছে। সেগুলোর সবগুলোই যে খুব সফল ছিল তা নয়। এর আগেও তাদের বিভিন্ন বিজ্ঞাপণ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তবে এবারের ‘ডিজুস’ এর এ বিজ্ঞাপণটি সরাসরি দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রজন্ম ‘তরুণ' দেরকে সঠিক দিক নির্দেশনার পরিবর্তে ভ্রান্তিমূলক পথে পরিচালিত করছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। দেশের বিশিষ্ট জনেরা প্রশ্ন রেখেছেন এভাবে কোন বিজ্ঞাপণের মাধ্যমে আমাদের মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো তরুণ প্রজন্মকে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ঠেলে দিতে পারে কি না?
যেকোন দেশের জন্য তার তরুণ প্রজন্ম অসম্ভব এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তরুণরাই যে দেশের ভবিষ্যত এ ব্যাপারে আজ পর্যন্ত কেউই দ্বিমত পোষণ করেনি। আমরা জানি, আজ যে তরুণ তাকেই তৈরি হতে হবে ভবিষ্যতে হাল ধরার জন্য। নতুবা পুরোনোদের দায়িত্ব শেষ হবার পর তৈরি হবে ভয়াবহ এক শুন্যতার। আর সে শুন্যতা পুরণে প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য তরুণদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজ শিখতে হবে। আর এ জন্য তরুণদের বেশিরভাগ সময়ই ব্যয় করতে হবে শিক্ষা মূলক ও প্রশিক্ষণের কাজে। অথচ আমাদের তরুণদের বোঝানো হচ্ছে যে, বন্ধু,আড্ডা আর গানের মাঝেই তোমাদের মুক্তি। আর সে কারণেই হারিয়ে যাও এসবের মাঝেই। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বোঝানো হচ্ছে আড্ডা, গান আর বন্ধুর মাঝেই সকল আনন্দ। জীবন একটিই আর তাই যেভাবেই হোক উপভোগ করে নাও তোমার এই জীবন!
বাস্তবতার নিরিখে, বিশ্বায়নের এ সময়ে, প্রতিটি মুহূর্ত তরণদের জন্য যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। পৃথিবী প্রতি নিয়ত এগিয়ে চলেছে। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের নাগরিক হিসাবে আমাদের টিকে থাকার লড়াইটা অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই। আর সেকারণেই আমাদের তরুণদের প্রস্তুতিটা হওয়া দরকার আরো মজবুতভাবে। প্রযুক্তিগত কারণে প্রতিনিয়ত ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ বেড়ে চলেছে। প্রযুক্তি বিশ্বে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর তালিকায় অন্তত প্রথম দশটির ভেতরেই বাংলাদেশের নাম খুঁজে পাওয়া যায়। অথচ প্রযুক্তি ছাড়া আমাদের মুক্তির ভিন্ন কোন পথ আছে কি না এখন পর্যন্ত কেউ জানাতে পারেনি। এসব বিষয় মাথায় রেখেই আমাদের তরুণদের হতে হবে আরো প্রযুক্তিমুখী। অথচ সেখানে আমাদের তরুণদেরকে শেখানো হচ্ছে তোমার জন্য ভোগের দরজা খোলা হয়েছে। এখনই ঝাঁপিয়ে পড় ভোগের সমুদ্রে। কারণ তুমি তো জানো না আর কত দিনই বা তুমি বাঁচবে।
দেশের বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, শিক্ষক এবং প্রথিতযশা কথা সাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবালও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এ বিষয়ে। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের কলামে লিখেছেন তার উদ্বেগের কথা। মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতে তরুণ প্রজন্মকে বোঝানো হচ্ছে ভোগেই প্রকৃত সুখ। আর সেই ভোগেই জীবনকে ভাসিয়ে দাও এখনই। কিন্তু তার মতে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষাই একমাত্র উপযুক্ত হাতিয়ার। সত্যিকারের শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি কোন দিন উন্নতি করতে পারেনি। উপযুক্ত শিক্ষার পাশাপাশি হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নেয়াটাও জরুরী।
মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো মিডিয়া দখলের প্রতিযোগিতায় প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে বাহারীসব বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গ্রাহক আকৃষ্ট করাই যেন এসব ফোন কোম্পানিগুলোর প্রধান কাজ হয়ে দাড়িয়েছে। আপনাদের হয়তো মনে আছে এক সময় দেশের আরেক শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফোন অপারেটর ‘বাংলালিংক’ এক সময় বিজ্ঞাপনে বলতো ‘রাত ভোর হয়ে যায় কথায় কথায়’। অর্থাৎ তরুণ প্রজন্মকে ইঙ্গিত করা হয়েছিল সারারাত জেগে জেগে কথা বলে সময় পার করার জন্য। সবারই হয়তো মনে আছে তখন দেশের প্রতিটি মোবাইল ফোন কোম্পানিই রাতে কথা বলার জন্য বাহারী বিজ্ঞাপণ দিয়ে তরুণদের আহবান করতো। আর তরুণরাও রাতে নির্ঘুম থেকে মোবাইলে কথা বলে সারাদিন ঝিমুতো। দিনের বেলা মোবাইল বিল বেশি রাখা হত। আর এভাবেই রাতে কথা বলার জন্য এক প্রকার বাধ্য করতো আমাদের এই সব মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো।
সময় এসেছে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর এসব ভ্রান্তিমূলক বিষয়গুলো জাতির কাছে তুলে ধরার। মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো তাদের প্রকৃত সার্ভিসের পাশাপাশি কর্মসংস্থানসহ দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে একথা অনস্বীকার্য। কিন্তু তাই বলে এসব মোবাইল কোম্পানিগুলোর বল্গাহীন আহবান এবং বিভ্রান্তিমূলক দিক নিদের্শনা নিশ্চয় নিরবে মেনে নেয়া নিশ্চয় কোন শুভবুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়। একটি প্রজন্ম কে নিঃশেষিত করার অধিকার বোধহয় আমাদের কারোরই নেই! এ নির্মম সত্যটি আমাদের আরো একবার মনে রাখা দরকার!
আমি দুরন্ত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 16 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 7 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
প্রযুক্তিতেই মুক্তি
প্রসঙ্গটি সমসাময়িক, বেশ ভাল লেগেছে লেখাটি
যদিও আমি এখনও মোবাইল ফোন ব্যবহার করিনি, সে ক্ষেত্রে এ ব্যপারগুলো আমাকে কোনভাবেই প্রভাবিত করেনা, কিন্তু সমাজের একটি অংশ ঠিকই প্রভাবিত হচ্ছে
যার যার ভিউপয়েন্টে সে সে ঠিক অবস্থানে আছে। সবি ঠিক তারপরেও মোবাইল ফোন কোম্পনিগোলো এখন অনেকটা ক্ষমতাবান হয়ে গেছে, যারা কিনা একটা দেশের কালচার কন্ট্রল করার ক্ষমতা রাখে। যা মোটোও কাম্য নয়।
Grameen Phone Call Rate SuX