দ্রষ্টব্য: প্রতিবেদনটি সাপ্তাহিক ২০০০ এর ১৬ ফেব্রম্নয়ারী ২০০৭ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।
গত জোট সরকারের পাঁচ বছর (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল) ভিওআইপি নামক সহজ বিষয়টিকে জোর করে অবৈধ করে রাখা হয়েছিলো। তখন সরকারের ছত্রছায়ায় একদল ব্যবসায়ী ভিওআইপির মাধ্যমে অবৈধভাবে আনত্দর্জাতিক কল ট্রান্সফার করে কামিয়ে নিয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। পোড়া কপাল আমাদের। এই অবৈধ হাজার হাজার কোটি টাকার বৃহত্তর অংশ পেয়েছে দেশী নামের বিদেশী মোবাইল অপারেটররা। আর ছিটেফোঁটা অংশ পেয়েই খুশি থেকেছে দেশের দুর্নীতিবাজরা। যেসব খাতে রাষ্ট্রের কোষাগার বন্ধ রেখে নিজেদের পকেট ভারী করেছে জোট সরকার, তার একটি এই ভিওআইপি। পরিস্থিতি বদলে গেছে এখন। ২০০৭ সালে গঠিত নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাল্টে দিয়েছে পুরো দৃশ্য। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করেছে অনেক অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীকে। জব্দ করা হয়েছে ভিওআইপির জন্য প্রয়োজনীয় অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি। ফলে বিপাকে পড়েছে মোবাইল অপারেটররা। থমকে গেছে অবৈধ এই ব্যবসা। তবে 'কিন্তু' আছে এখানেও। চুনোপুঁটি অবৈধ ব্যবসায়ীরা ধরা পড়লেও রাঘববোয়াল মোবাইল অপারেটররা এখনো আছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ভিওআইপি কেন?বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ থাকে দেশের বাইরে। ধারণা করা হয়, ৫৫ লাখ বাংলাদেশী নাগরিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছে। ভিওআইপি হচ্ছে এমন একটি প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে এসব প্রবাসী বাঙালি খুব কম খরচে দেশের সঙ্গে ভয়েসনির্ভর যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে। ভিওআইপির মাধ্যমে আনত্দর্জাতিক কল সেন্টারসহ ভয়েসনির্ভর যেকোনো সেবা দেয়া সম্ভব। ভিওআইপি সংশিস্নষ্ট সেবা দিয়েই পাশের দেশ ভারত আয় করছে হাজার হাজার কোটি ডলার, যা বদলে দিচ্ছে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা। শুধু ভারত নয়, বিশ্বের অনেক দেশই ভিওআইপি প্রযুক্তিনির্ভ,সেবা দিয়ে হাজার হাজার কোটি ডলার আয় করছে। অবৈধ ভিওআইপি বাণিজ্যবিগত সরকারের আমলে ভিওআইপি প্রযুক্তি অবৈধ করে রাখা হয়েছিলো গুটিকয়েক ব্যবসায়ী এবং মোবাইল অপারেটরদের স্বার্থে। সে সময় ভিওআইপি বৈধ করার নামে নানা টালবাহানা করা হয়েছে এবং অনত্দরালে বসে এই ব্যবসাকে সমর্থন করেছে সরকারের দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী, আমলা ও রাজনীতিবিদ। দেশের নানা স্থানে ছোট ছোট অফিস তৈরি করে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে টেলিফোন বা মোবাইল ফোন সংযোগ নিয়ে এই ব্যবসা করেছে অনেকে। এসব ব্যবসায়ীকে অবৈধভাবে সর্বাত্মক কারিগরি সহায়তা দিয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটর ও টিএন্ডটির কিছু অসাধু কর্মকর্তা। পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে জোট সরকার। ফলে গত ৫ বছরে জমজমাট হয়েছে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা। সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছরে প্রতি মাসে গড়ে ১১০ মিলিয়ন মিনিট আনত্দর্জাতিক কল হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান টিএন্ডটির মাধ্যমে এই কল আদান-প্রদান হলে টিএন্ডটি প্রতি মাসে রাজস্ব আয় করতো প্রায় ৬১ কোটি টাকা। বছরে এই আয় দাড়াতো ৭৩২ কোটি টাকা। এই হিসাবে গত ৫ বছরে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। জানা যায়, আনত্দর্জাতিক কল ট্রান্সফারের ৰেত্রে বিটিটিবি বিশ্বের ১৫টি দেশের ২০টি টেলিফোন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। এগুলোর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে আমেরিকার এটিটি, স্পেনের এমসিআই, কানাডার টেলিগেস্নাব, সিঙ্গাপুরের সিংটেল ইত্যাদি। ২০০১ সালে বাংলাদেশে অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসা বাড়তে থাকলে এসব কোম্পানি বেশি লাভের আশায় বিটিটিবির কাছ থেকে আনত্দর্জাতিক কল আদান-প্রদান কমিয়ে দেয়। এর বদলে ছোট ছোট ভিওআইপি অপারেটরদের মাধ্যমে এবং অনেক ৰেত্রে মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে সরাসরি অবৈধভাবে আনত্দর্জাতিক কল আদান-প্রদান শুরম্ন করে। ফলে বিপাকে পড়ে যায় বিটিটিবি। সরকার ব্যাপক আকারে রাজস্ব হারাতে থাকে। বিচার হোক রম্নই কাতলাদেরসাপ্তাহিক ২০০০-এর অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের সব মোবাইল ফোন অপারেটরের প্রতৰ্য ও পরোৰ কারিগরি সহযোগিতায় অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালিত হয়েছে। যে কারণে মোবাইল টু মোবাইল ফোন নম্বরগুলোতেও আনত্দর্জাতিক কল আসতো। এবং মোবাইল ফোনে আনত্দর্জাতিক কল এলেও স্ক্রিনে ভেসে উঠতো বাংলাদেশী কোনো ফোন নম্বর।এই দুর্নীতিতে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে গ্রামীণফোন। তারা টিএন্ডটির গেটওয়ে দিয়ে আনত্দর্জাতিক কল ট্রান্সফার না করার সিদ্ধানত্দ হিসেবে ০১৭১৭, ০১৭১৮ এবং ০১৭১৯ সিরিজের নম্বরগুলোকে দরখাসত্দের মাধ্যমে বস্নক করে রেখেছে। ফলে আনত্দর্জাতিক কল মনিটরিং প্রতিষ্ঠান আইটিএক্স এসব নম্বরে বাইরে থেকে ফোন এলে তা বাংলাদেশী নম্বরে ট্রান্সফার করে না। প্রশ্ন হচ্ছে, তারপরও ০১৭১৭, ০১৭১৮ এবং ০১৭১৯ সিরিজের নম্বরে আনত্দর্জাতিক কল কীভাবে আসে? বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব নম্বরে অবৈধ ভিওআইপির মাধ্যমে আনত্দর্জাতিক কল ট্রান্সফার করা হয়। আইটিএক্সের একাধিক সূত্র জানায়, গ্রামীণফোনের ডিজু্যস প্যাকেজের নম্বরগুলোতে আনত্দর্জাতিক কল প্রবেশের অনুমতি নেই। গ্রামীণফোন আবেদনের মাধ্যমে তা বন্ধ করে রেখেছে। কিন্তু তারপরও এই প্যাকেজের ৩ মিলিয়নেরও বেশি নম্বরে আনত্দর্জাতিক কল আসে। এটি অবৈধ ভিওআইপির সবচেয়ে বড় উদাহরণ।আইটিএক্স সূত্র আরো জানায়, দেশের সব মোবাইল অপারেটরই ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে সংযুক্ত। তারা খুব কম ৰেত্রেই আইটিএক্স তথা টিএন্ডটির মাধ্যমে আনত্দর্জাতিক কল ট্রান্সফার করে থাকে। বার্তাসংস্থা বিডিনিউজ গত ৫ ফেব্রম্নয়ারি এক প্রতিবেদনে জানায়, মোবাইল সংযোগ পরিবেশকদের সঙ্গে বিদেশে অবৈধভাবে ফোন কল ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে সন্দেহ টেলিফোন বোর্ডের। আর এর ভিত্তিতেই গত সপ্তাহে ব্যাপারটি তদন্ত করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে তারা আবেদন জানায় টেলিযোগাযোগ খাতের নজরদারির দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস রেগুলেটরি কমিশনের কাছে। বিডিনিউজ জানায়, ঢাকায় সামপ্রতিক সময়ে বিপুলসংখ্যক অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জাম আটক করেছে র্যাব। সেই সঙ্গে 'অস্বাভাবিক অঙ্কের' কিছু মোবাইল ফোন বিলও পেয়েছে তারা। লিখিত এক অভিযোগপত্রে বোর্ড উদাহরণ মেনেছে এসব বিলকেই। র্যাবের অভিযানে আজিমপুরে বাংলালিংকের একটি নম্বরে ৫৬ পাতার একটি বিল জব্দ করা হয়। বোর্ডের অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, সেনা কর্মকর্তাদের আবাসিক প্রকল্প ডিওএইচএস এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া ৫০০ সিটিসেল এবং ২৯১টি গ্রামীণফোনের সংযোগের অস্বাভাবিক অঙ্কের টেলিফোন বিলের।বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানা যায়, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা কারার জন্য গ্রামীণফোন হেভি ইউজার গ্রম্নপ (হগ), একটেল হাসান কোং এবং বাংলালিংক ই১ সংযোগ দিয়ে থাকে। এসব সংযোগ দিয়েই চলেছে বেশির ভাগ অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা। সূত্র জানায়, সরকার দুর্নীতিবাজদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরম্ন করেছে। এটা ভালো দিক। কিন্তু দুর্নীতিবাজ মোবাইল অপারেটরদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন? ছোট ছোট যেসব ভিওআইপি অপারেটরকে ধরা হচ্ছে, তারা তো চুনোপুঁটি। রাঘববোয়াল মোবাইল অপারেটরদের ধরা হোক এবং বিচার করা হোক। গত পাঁচ বছরে সরকার যে রাজস্ব হারিয়েছে তা আদায় করা হোক তাদের কাছ থেকে। দৃষ্টানত্দমূলক শাসত্দি হলে এসব নব্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভবিষ্যতে দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের পয়সা বিদেশে পাচারের সাহস পাবে না। মোবাইল অপারেটরদের এসব দুর্নীতির বিষয়ে তাদের মনত্দব্যের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছিলো সংশিস্নষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এ প্রসঙ্গে সিটিসেলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (মার্কেটিং) ইনত্দেখাব মাহমুদ বলেন, আমরা সংযোগ বিক্রি করি। এটি সন্ত্রাসীরাও ব্যবহার করে আবার সুফি মানুষেরাও ব্যবহার করছে। এখন সংযোগ কারা ব্যবহার করছে তা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। এটা আইনশৃঙ্খলা রৰাবাহিনীর কাজ। তারা ভিওআইপি অপারেটরদের ধরছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। তবে কোনো অবৈধ ভিওআইপি অপারেটরের সঙ্গে সিটিসেল প্রতৰ্য বা পরোৰ কোনোভাবেই জড়িত নয়।একই প্রসঙ্গে একটেলের হেড অব আইটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার এন্ড অপারেশন সুফি ফারম্নক ইবনে আবু বকর বলেন, আমরা সিম বিক্রি করছি, কেউ একজন তা কিনছে এবং ভিওআইপি করছে- আমরা আমাদের ট্যাক্স নিয়মিত পরিশোধ করছি। আমাদের সিম নিয়ে কেউ ভিওআইপি করছে আবার কেউ লোকাল কল করছে, এতে আমরা বাধা দিতে পারি না। তবে আমরা দু-একটা কেস ধরেছি যে তারা ভিওআইপি করছে এবং সে ৰেত্রে তাদেরকে আমরা বস্নক করেছি। তিনি আরো বলেন, অনেকে কর্পোরেট প্যাকেজ নামে ভিওআইপি করার জন্য সিম নেয়। ফলে যেটা হয়, ভিওআইপি অপারেটররা ইন্টারনেটের মাধ্যমে আনত্দর্জাতিক কল নামিয়ে মোবাইল সিমের মাধ্যমে তা ট্রান্সফার করে। তখন আমরা দেখি যে সিমটি দিয়ে একটি কল করা হয়েছে। এখন এই কল কোথা থেকে এল সেটা তো আমরা দেখি না। তাছাড়া প্রত্যেক কাস্টমার কী করছে তা মনিটর করাও বেশ দুষ্কর।এ প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনে র একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মনত্দব্য পাওয়া যায়নি। সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা যায়, মোবাইল অপারেটরদের সিম মনিটরিং সিস্টেম খুবই অত্যাধুনিক। যে কারণে তারা চাইলেই কয়েক মিনিটের মধ্যেই জানতে পারে কোন সিম দিয়ে কী ধরনের কাজ হচ্ছে এবং তাদের সিম দিয়ে ভিওআইপি হচ্ছে কি না তাও খুব সহজে নির্ণয় করা সম্ভব। সদিচ্ছা না থাকায় এবং নিজেদের স্বার্থেই তারা ভিওআইপি বন্ধে কিছু করছে না। লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় ঘাপলাজোট সরকার ৰমতা ত্যাগের কিছুদিন আগে শুরম্ন করে ভিওআইপি লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া। ৬ নবেম্বর ডেফোডিল অনলাইন লিমিটেড ও যুগ্মভাবে গ্লোবাল একসেস লিমিটেড এবং সিরিয়াস ব্রডব্যান্ড বিডি লিমিটেডের দায়ের করা দুটি পৃথক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ভিওআইপি লাইসেন্সের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়। ফলে স্থগিত থাকে ভিওআইপি লাইসেন্স প্রক্রিয়া। সর্বশেষ গত ৮ ফেব্রম্নয়ারি ভিওআইপি লাইসেন্সের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নিয়েছে হাইকোর্ট। বর্তমান লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় মোবাইল অপারেটর, পিএসটিএন এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের লাইসেন্স দেবার কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী আবেদনও করেছে সংশিস্নষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, একসঙ্গে এই তিন শ্রেণীকে লাইসেন্স দেয়া হলে তা দেশ ও জনস্বার্থবিরোধী হবে। নব্বই দশকে মোবাইল অপারেটদের যেমন এক রকম বিনা পয়সায় দেশের টাকা বাইরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিলো, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। কারণ বাংলাদেশের টেলিকম খাত প্রায় পুরোটাই রয়েছে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের হাতে। ফলে গ্রামীণফোন, একটেল, সিটিসেল বা বাংলালিংক লাইসেন্স পেলে বৈদেশিক কলের জন্য তারা বিগত পাঁচ বছরের মতো ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে জমজমাট ভিওআইপি চালিয়ে যাবে। সরকার বঞ্চিত হবে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে। সূত্র জানায়, গ্রামীণফোন যুক্ত রয়েছে আনত্দর্জাতিক প্রতিষ্ঠান টেলিনরের সঙ্গে, একটেল যুক্ত রয়েছে টেলিকম মালয়েশিয়ার সঙ্গে, সিটিসেল যুক্ত সিংটেলের সঙ্গে এবং বাংলালিংক যুক্ত ওরাসকমের সঙ্গে। এসব প্রতিষ্ঠান যদি ভিওআইপি লাইসেন্স পায় তাহলে নিজস্ব আনত্দর্জাতিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আনত্দর্জাতিক কল আদান-প্রদান করবে তারা। সে ৰেত্রে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো ধরনের ব্যবসা করার সুযোগ পাবে না। তৈরি হবে না স্থানীয় তরম্নণ উদ্যোক্তা। প্রবাসী বাঙালিরা ফোন কলের মাধ্যমে যে অর্থ ব্যয় করে, তার ছিটেফোঁটাও বাংলাদেশ পাবে না। পুরোটাই চলে যাবে উলিস্নখিত আনত্দর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পকেটে। আর তাই এসব প্রতিষ্ঠানকে ভিওআইপি লাইসেন্স না দেবার দাবি করেছে দেশের একাধিক তথ্য প্রযুুক্তিবিদ। সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, বিগত সরকারের হাওয়া ভবন সংশিস্নষ্ট দুর্নীতিবাজ এমপি-মন্ত্রীরা এবং একাত্তরের রাজাকার ও জামায়াতপন্থী বিটিআরসির চেয়ারম্যান ওমর ফারম্নক মোবাইল অপারেটরদের স্বার্থ ঠিক রেখে এই লাইসেন্স প্রক্রিয়া ঠিক করেছিলো। ফলে তাদের জন্য লাইসেন্স ফি ধরা হয়েছে মাত্র ১০ কোটি টাকা। যেখানে এসব কোম্পানি প্রতিদিন আনত্দর্জাতিক কল ট্রান্সফার করে আয় করবে ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা। দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে যদি তাদেরকে লাইসেন্স দেয়াও হয়, তাহলে লাইসেন্স ফি হওয়া উচিত কমপৰে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা। আর সরকারের রাজস্ব আয় নিশ্চিত করতে আনত্দর্জাতিক কলের ওপর ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। সে ৰেত্রে সরকার কিছু টাকা বিদেশীদের কাছ থেকে রৰা করতে পারে। যাদের পাওয়া উচিত ভিওআইপি লাইসেন্সগত কয়েক বছরে দেশের নানা স্থানে ছোট ছোট ভিওআইপি অপারেটর তৈরি হয়েছে। বর্তমানে তাদের অনেককেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে এবং ভিওআইপি সংশিস্নষ্ট মালামাল জব্দ করা হয়েছে। দেশের স্বার্থে এবং ছোট ছোট উদ্যোক্তা তৈরি করতে চাইলে এরাই হতে পারে লাইসেন্সের আসল দাবিদার। নামমাত্র মূল্যে তাদেরকে লাইসেন্স দেয়া শুরম্ন হলে দেশের অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হবে। এ প্রসঙ্গে র্যাংকসটেলের চিফ অপারেটিং অফিসার জাকারিয়া স্বপন বলেন, আমেরিকার মতো বাংলাদেশেও তরম্নণ উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। এজন্য এসব ছোট ছোট ভিওআইপি অপারেটরকে লাইসেন্স দিয়ে বৈধ করে দেয়া যেতে পারে। সরকার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে তাদের লাইসেন্স দিলে রাজস্ব আয়ও বাড়বে। পাশাপাশি দেশের বেকারেরা নতুন নতুন কাজের সন্ধান পাবে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অনেকের জ্ঞান না থাকলেও অবৈধভাবে ভিওআইপি করতে গিয়েও তারা অনেক প্রযুক্তি জ্ঞান পেয়েছে। এই জ্ঞান নষ্ট না করে কাজে লাগানোর সুযোগ দেয়া উচিত। মোবাইল অপারেটর, পিএসটিএন কিংবা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের লাইসেন্স দেয়ার ঘোর বিরোধিতা করেছেন জাকারিয়া স্বপন। তার মতে, এসব প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়া হলে দেশের স্বার্থে তেমন একটা কাজে লাগবে না। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন হবে না বরং তরম্নণ উদ্যোক্তাদের নামমাত্র মূল্যে লাইসেন্স দেয়া হলে তা অনেক বেশি কাজে আসবে। ১০-১২ বছর ধরে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা দেশে ইন্টারনেট সেবা দিয়ে আসছে। দেশের অধিকাংশ আইএসপি দেশী অর্থায়নে তৈরি। বিদেশী মোবাইল অপারেটরদের ক্রমাগত চাপে আইএসপিগুলো এক রকম ধ্বংসের মুখে এখন। সর্বশেষ ২০০৫ সালে বিটিআরসি মোবাইল অপারেটদের ইন্টারনেট সেবা দেয়ার অনুমতি দেয়ায় আরো বিপাকে পড়েছে তারা। দেশী এসব প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে ভিওআইপি লাইসেন্স শুধু তাদেরকে এবং তরম্নণ উদ্যোক্তাদের দেয়ার দাবি করেছে একাধিক আইএসপির কর্ণধার। সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, দেশে মোবাইল অপারেটদের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। এখন তারা যদি ভিওআইপি লাইসেন্স পায় তাহলে এই দেড় কোটি গ্রাহককে নিজেরাই আনত্দর্জাতিক কলের সেবা দিতে পারবে। তার বদলে সরকার যদি আইএসপিদের মাধ্যমে আনত্দর্জাতিক কল ট্রান্সফারের সুযোগ দেয়, তাহলে এই খাতে কিছু অর্থ উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর ফলে এই খাত থেকে মোবাইল অপারেটরদের আয় কিছুটা কমবে। যেটা আয় করবে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকারের ভিওআইপি মনিটরিংও সহজ হবে। রাজস্ব আয় নিশ্চিত করা যাবে। সংস্কার প্রয়োজন সরকারি প্রতিষ্ঠানেঅবৈধ ভিওআইপিকে মদদ যুগিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি ও বিটিটিবি। বিটিটিবির চেয়ারম্যান আলীবর্দি খান তা স্বীকারও করেন। তিনি এর সঙ্গে জড়িতদের শাসত্দি দিয়েছেন বলে দাবি করলেও এর কোন নমুনা পাওয়া যায়নি। ফলে দাবি উঠেছে, নির্বাচন কমিশন বা দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো বিটিটিবি ও বিটিআরসিরও সংস্কার প্রয়োজন। সূত্র জানায়, একাত্তরের রাজাকার ও জামায়াতপন্থী সরকারি আমলা ওমর ফারম্নক এখনো বিটিআরসির চেয়ারম্যান। অভিযোগ রয়েছে, বিটিআরসি ভিওআইপি লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় সুনির্দিষ্টভাবে তিনি মোবাইল অপারেটরদের স্বার্থ সংরৰণ করছেন। সেখানে দেশের স্বার্থকে কোনোভাবেই গুরম্নত্ব দেয়া হয়নি। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসা করার লেভেল পেস্নয়িং ফিল্ড তৈরি করে না দিয়ে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় ফেলার একটি উদ্যোগ এই লাইসেন্স প্রক্রিয়া। এই লাইসেন্স প্রক্রিয়া বন্ধ করার পাশাপাশি বিটিআরসিরও পুনর্গঠন প্রয়োজন।ভিওআইপি বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের জ্ঞানের অভাব রয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অভ সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) পরিচালক শোয়েব চৌধুরী। তিনি বলেন, ভিওআইপির বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জ্ঞান খুবই সীমিত। আমার মনে হয় এ বিষয়ে তাদের ওরিয়েন্টেশন কোর্স করানো উচিত। গেটওয়ে উন্মুক্ত হতে হবেবর্তমানে বিটিটিবি কমন পস্নাটফর্ম তৈরির পরে ভিওআইপি উন্মুক্ত করার কথা বলছে। এ জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট চারটি ভিওআইপি গেটওয়ে তৈরির কথা দীর্ঘদিন থেকে বলে আসছে বিটিটিবি। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিওআইপি গেটওয়ে হওয়া উচিত উন্মুক্ত। কারণ বিটিটিবির গেটওয়ে দিয়ে ভিওআইপি হলেই যে সরকার ব্যাপক লাভবান হবে আর অন্য গেটওয়ে দিয়ে কল ট্রান্সফার হলে সরকারের ৰতি হবে- এই ধারণা ভুল। বর্তমানে বিটিটিবির গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। অন্যদিকে মোবাইল অপারেটরদের গ্রাহক সংখ্যা দেড় কোটিরও বেশি। ফলে দেড় কোটি গ্রাহকের কাছে আনত্দর্জাতিক কল পেঁৗছে দিতে গেলে মোবাইল অপারেটরদের সাহায্য লাগবেই। আর তাই সরকার ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (আইএসপি) ভিওআইপি লাইসেন্স দিয়ে এবং কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে রাজস্ব আয় নিশ্চিত করলেই বরং লাভ হবে। সে ৰেত্রে গেটওয়ে উন্মুক্ত হলেও সরকারের রাজস্ব আয় হবে এবং পাশাপাশি দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও বাঁচবে। দেশের স্বার্থে দ্রম্নত ভিওআইপি বৈধ হওয়া জরম্নরি। কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে দেশ ও জনগণের স্বার্থকে যেন বিসর্জন দেয়া না হয়। মোবাইল অপারেটরদের স্বার্থ রৰা না করে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে লাভবান করতে এবং ৰুদ্র উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজে লাগানো যেতে পারে এই ভিওআইপি। দেশের জন্য অমিত সম্ভাবনার এই খাতটা যেন নব্য ইস্ট ইন্ডিয়ান কোম্পানিগুলোর হাতে গিয়ে নষ্ট না হয়- এই প্রত্যাশা সবার।
দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনের তথ্য অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে। তবে অবশ্যই সুত্র হিসেবে সাপ্তাহিক ২০০০ ও লেখকের নাম উলেস্নখ করতে হবে। না হলে তার কোন দায়ভার সাপ্তাহিক ২০০০ নেবে না।
সূত্র: http://biggani.com/content/view/347/118/
সকলকে ধন্যবাদ
আমি Bill Gates। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 14 টি টিউন ও 118 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
বিশাল প্রবন্ধ