এটাকে রীতিমত বলা যেতে পারে এক ধরনের অবিশ্বাস্য ঘটনা। গত মাত্র বিশ বছর আগে একজন বিজ্ঞানীর তথ্য বিনিময়ের প্রত্যাশার ভাসাভাসা ধারণার ওপরে ভিত্তি করে যে ওয়েব চালু হয়েছিল, এখন তা পরিণত হয়েছে দুনিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষমতাধর যোগায়োগ মাধ্যমে।ওয়েবের এই প্রসার ঘটেছে কোন বাধাধরা নিয়ম কানুন ছাড়াই। সরকার কিংবা বিভিন্ন কমিটি আর কম্পানীর সামান্যই নির্দেশনা ছিল এর পেছনে।এখন অবশ্য বিজ্ঞানীরা এই প্রবাদপ্রতীম যোগাযোগের মাধ্যম, ওয়েবের খুঁটিনাটি এবং ভবিষ্যতে কোন পথে ওয়েবের প্রসার ঘটবে তা বুঝবার চেষ্টা করছেন।ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলীয় সাউদ্যাম্পটনে ওয়েব সায়েন্স নামের এক নতুন বিজ্ঞানের স্থপতিরা বিভিন্ন সম্পর্কিত তথ্যের একটি নেটওয়ার্ক তৈরির নতুন ধরনের ওয়েবের কথা বলছেন, যেই নেটওয়ার্ক নাকি আমরা কি করতে চাই ওয়েব তা আরো ভাল বুঝতে পারবে।
সাউদ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটির দুই কম্পিউটার বিজ্ঞানী ওয়েন্ডি হল এবং নাইজেল শ্যাডবল্টের সঙ্গে মিলে ওয়েবের স্রষ্টা টিম বার্ণার্স লি এই নতুন ধারণা উদ্ভাবন করেছেন।
ঠিক কি কি ধরনের নতুন ক্ষমতা দেবে এই নতুন ধরনের ওয়েব?
সে প্রশ্নের জবাবে সাউদ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞানী নাইজেল শ্যাডবল্ট বলছেন যে এই ক্ষমতার মূল বিষয় হচ্ছে, ওয়েবে কোন তথ্য খোঁজা বা সার্চ করার সুবিধে আরো বাড়বে, আরো সুনির্দিষ্ট ফলাফল পাওয়া যাবে।“ট্রেনের সময়সূচি, কোন রেস্তোরায় খেতে যাওয়া উচিত, কোথায় সবচেয়ে ভাল দামে সবচেয়ে ভাল খাবার পাওয়া যাবে এসব তথ্য সার্চ করলে পাতার পর পাতা তথ্য আসবেনা বরং ওয়েবের সব তথ্য যাচাই করে একটা উত্তর আসবে। কাজেই ওয়েব শুধু ল্যাপটপেই সীমাবদ্ধ থাকবেনা বরং অন্যান্য মাধ্যমেও ওয়েবের সেবা মিলবে।"
এই ধারণাটি হয়তো শুধুই কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের স্বপ্ন পূরণ করবে কিন্তু আমাদের জন্যে নতুর ধরনের ওয়েব কি পার্থক্যের সূচনা করবে?
আসলে, ওয়েবের এই উত্তরণের মাধ্যমে একে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্কে পরিণত করবার প্রক্রিয়া কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। আর সে কারণেই পরিবর্তনটা সেভাবে চোখে পড়ছেনা সাধারণ ব্যবহারকারীদের ।কম্পিউটার বিজ্ঞানী ওয়েন্ডি হল চান যেন ওয়েবের এমন উত্তরণ ঘটে, এবং তা যেন কম্পিউটারের ওপর নির্ভর না করে।তিনি বলছেন যে তাঁর অবাক লাগে যে আমরা এখনো কীবোর্ড সহ নানা যন্ত্রপাতির ওপরে পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে আছি। তাঁর মনে হয় অ্যাপল এই বাঁধন ছিঁড়ে কিছুটা বেরিয়ে আসতে চাইছে এবং যেখানে মানুষের মুখের কথা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তিনি মনে করছেন যে যখন সবখানে কম্পিউটার থাকবে, যেদিকে তাকাবো সেদিকেই সেন্সর থাকবে, যেকোন জায়গা থেকে ইন্টারনেটে ঢুকা যাবে, প্রায় কোনো যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই।“আমরা হয়তো চোখে কোন কাঁচের চশমা বা তেমন কিছু পড়ে সেই ওয়েব দেখতে পাবো। মোবাইল ওয়েবই তখন বহুল ব্যবহৃত হবে আর আমি সত্যি বিশ্বাস করি , আজকে আমরা ব্রাউজার যেভাবে চিনি সেটা হারিয়েই যাবে।"
কিন্তু ওয়েবের ব্যবহার এতটাই ব্যাপক আমাদের প্রতিদিনকার জীবনে যে এর উপস্থিতির বিষয়টিতেই আর তেমন করে সচেতন নই আমরা। ওয়েন্ডি হল বলছেন, “আমি বহু আগেই এই নিয়ে লিখেছিলাম। মানে আমি বলতাম, ওয়েব খুব শিগগিরই পর্দার অন্তরালে চলে যাবে।“তিনি মনে করেন যে ভবিষ্যতে লোকে কিভাবে ওয়েব ব্যবহার করবে তার একটা আদর্শ উদাহরণ হচ্ছে আইফোন"। ওয়েন্ডি হল বলছেন, “আইফোনেও কিন্তু ওয়েব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় কিন্তু আপনি সেটা বুঝতে পারেননা। আপনি শুধু ঐ যন্ত্রটাই খালি ব্যবহার করেন। ভবিষ্যতে এসব যন্ত্রেরও প্রয়োজন পড়বেনা।"আশঙ্কার বিষয় হলো, যদিও আমরা আর সেভাবে টের পাবোনা কিন্তু ওয়েব তো থেকেই যাবে৻ বরং আগের যেকোন সময়ের চাইতে আরো শক্তিশালী হবে, এবং এর নিয়ন্ত্রণের জন্যে লড়াইও নিশ্চিতভাবেই আরো জোরদার হবে।
শুধু কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা নন, শক্তিধর কর্পোরেশনগুলোও কাজ করছে এই নতুন ধারণার উন্নয়নে। একসময় যে মাইক্রোসফট ওয়েবের গুরুত্ব বুঝতেই দারুণ গড়িমসি করছিল, তারাই এখন গুগলের সঙ্গে ওয়েবে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নেমেছে।
ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে মাইক্রোসফটের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগার রয়েছে। অ্যান্ড্রু হার্বার্ট মাইক্রোসফট ল্যাব চালান। তিনি বলছেন, “আমি ওয়েবকে দুটো অংশে ভাগ করে দেখি । ব্রাউজার - যার মাধ্যমে আমরা ওয়েব ব্যবহার করি এবং সেখানে থাকা বিভিন্ন কনটেন্ট আর অ্যাপলিকেশন পাই। আরেক অংশ হলো যারা আমাদের এসব কনটেন্ট আর অ্যাপলিকেশন সরবরাহ করে।“
মাইক্রোসফটের মি. হার্বাটের মতে ব্রাউজিংয়ের অভিজ্ঞতায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। তিনি বলছেন, “আগে ওয়েবে শুধু লেখা থাকতো। এখন গান, ভিডিও, ডায়াগ্রাম সবই ঢুকে গেছে। আমাদের এখন যতরকমের যন্ত্রপাতি আছে, টাচ স্ক্রিন সহ সেখানে কিন্তু থ্রি ডি গ্রাফিক্সের মত কম্পিউটার গেমিংয়ের প্রযুক্তিও ব্যবহৃত হয়।“ তিনি বলছেন যে “অন্যদিকে এধরনের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের কথা বলছি। যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা সব তথ্য এবং অ্যাপলিকেশন পাবো ওয়েবের মাধ্যমে।“ মি. হার্বার্টের মতে, “কিভাবে আমরা ঐ ক্লাউডের ভেতরে বড় তথ্য ভান্ডার গড়ে তুলবো , কিভাবে সেসব তথ্য পাওয়া যাবে সেগুলো বের করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। একভাবে বলা যেতে পারে যে, ওয়েব নিজেই এখন বিরাট একটা কম্পিউটারে পরিণত হচ্ছে।“
একটা বিষয় পরিষ্কার - ওয়েবের ভবিষ্যৎ হচ্ছে মোবাইল। অন্তত গুগল সেটাই বিশ্বাস করছে। গুগলের প্রধান এরিক স্মিডট বলছেন, “খুব মৌলিক একটা পরিবর্ত আসছে। ফোন আর শুধু ফোন নয়। ফোন পরিণত হয়েছে এক অভিন্ন স্ত্ত্বায়।“মি. ম্মিডট বলছেন, “ফোন এখন আর আপনি শুধু ব্যবহারই করেননা, আপনি যা যা করেন তার সঙ্গেই অপরিহার্য হয়ে পড়েছে ফোন। আমাদের মত হয়তো তেমন চিন্তা করতে পারেনা ফোন, কিন্তু, এর স্মৃতিশক্তি আমাদের চাইতে ভাল।“ মোবাইলকেই ভবিষ্যতের পথ হিসেবে দেখছে গুগল। এরিক স্মিডট বলছেন, “আমরা ঠিক কোথায় আছি তা ধারণা করতে পারে ফোন, ছবি তুলতে পারে। কাজেই নতুন যুগে মোবাইলই হবে প্রথম কথা।“
- বিবিসি অবলম্বনে।
আমি ভিন্ন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 12 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 12 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
একজন সাধারন মানুষ হিসেবে বাচতে চাই। অসাধারন/ভিন্ন ভালো কিছু কাজ করে যেতে চাই আগামী কালকের জন্য। আমার পছন্দ কোয়ালিটি, কোয়ান্টিটি না। ধন্যবাদ। - ভিন্ন
সুন্দর টিউন। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।