প্রাইভেট...
শিক্ষা মন্ত্রনালয় পরিপত্র জারি করেছে স্কুল কলেজের শিক্ষকরা আর প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। আমি একজন সাধারণ HSC পর্যায়ের ছাত্র, আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিষয়টাকে আমি একটু যৌক্তিকভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি। আগেই বলে রাখি এটা আমার একান্তই ব্যাক্তিগত চিন্তাভাবনা, অন্য কারো বা কোন শিক্ষকের প্রভাব এখানে নাই।
আমার মতে হুট করে প্রাইভেট বন্ধের এই সিদ্ধান্ত অনেকটা মাথা ব্যাথা হলে মাথা কেটে ফেলার মতো বিষয়। যে রোগ কয়েক দশক ধরে ধীরে ধীরে দানা বেধেছে তা কখনোই একটি পরিপত্র জারি করে এত অল্প সময়ের মধ্যে দূর করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এতটাই অসংগতিপূর্ণ যে, প্রাইভেট পদ্ধতি এখানে একটা অনিবার্য বিষয়, অন্তত "কলেজ লেভেলে "। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের
মুমূর্ষু রোগী বানিয়ে ফেলছে, এই রোগের চিকিত্সার জন্য কলেজ যথেষ্ট নয়, প্রাইভেটে যাওয়া ছাড়া এই রোগ সারানো কঠিন।
প্রাইভেট এখানে অনেকটা ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের মতো বিষয়, যদি হুট করে পুরো বাংলাদেশে ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়, বা বলা হয় একজন ডাক্তার দিনে দশজনের বেশী রোগী দেখতে পারবেন না, তাহলে চিকিত্সা ব্যবস্থার কী হাল হবে একবার চিন্তা করুন। প্রাইভেট পড়ানোর সংস্কৃতি এত অল্প সময়ের মধ্যে বন্ধ করার চেষ্টা করা হলে শিক্ষাব্যবস্থায় এর চেয়েও বড়
ধরণের বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
আমি প্রাইভেট বন্ধের এই প্রজ্ঞাপন
পড়েছি এবং বেশ ঠান্ডা মাথায়ই পড়েছি। এই প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্তের
পক্ষে কী কী যুক্তি দেখানো হয়েছে তা একটু বলি
১। এক শ্রেণীর শিক্ষক প্রাইভেটের নামে বানিজ্য করছেন যার ফলে শিক্ষার্থীরা জিম্মি হয়ে পড়ছেন।
২। এর ফলে শিক্ষার্থী ও তার পরিবার
আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
৩। শিক্ষকেরা স্কুল কলেজে মনোযোগ
না দিয়ে প্রাইভেটের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন, যার ফলে স্কুল কলেজের মান কমে যাচ্ছে।
৪। শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজমুখী না হয়ে প্রাইভেটমুখী হয়ে পড়ছে।
মোটামুটি একয়টি যুক্তিই দেখানো হয়েছে। এখন এগুলো একটু খতিয়ে দেখি।
১। স্বীকার করছি প্রাইভেট একটা বানিজ্য এবং নোংরা সংস্কৃতি। কিন্তু এই বানিজ্যের দায়ভার কী খালি শিক্ষকেরই??? আমরা বা আমাদের সরকার কী এমন কোন উদ্যোগ নিয়েছে যাতে শিক্ষকদের আর প্রাইভেট না পড়াতে হয়??? "২০০ টাকা বাড়িভাড়া" এটা কী শিক্ষকদের প্রতি চরম উপহাস নয়?? আমাকে এমন একটা মাত্র সরকারি উদ্যোগ দেখান যে জন্য কোন মেধাবী শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে স্কুল বা কলেজের টিচার হওয়ার স্বপ্ন দেখবে। আমি একজন শিক্ষার্থী হিসাবে এসব কথা বললাম।
এছাড়া সব শিক্ষকই টাকার লোভে পড়ান না। আমি তার সাক্ষী।
আমি জানি এবং এ বিষয়ে আমার বাস্তব
অভিজ্ঞতা আছে যে, অনেক শিক্ষক "জোর করে" শিক্ষার্থীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন, নম্বর কম দেয়ার হুমকি দেন (SBA পদ্ধতি চালুর পর এর মাত্রা আরো বেড়েছে)। এরূপ
প্রাইভেট অবশ্যই নিন্দনীয় এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কিন্তু শিক্ষার্থী যখন শিক্ষাব্যবস্থার বেহাল অবস্থার কারণে, নিজ প্রতিষ্ঠানে স্বল্প সময়ে যথাযথ শিক্ষার চাহিদা পূরণ করতে না পেরে নিজ ইচ্ছায় কারো কাছে পড়তে যায় সেটাকে কী "জিম্মি"
বলা যায়??? আমি আমার কলেজেরই উদাহরণ টানছি। আমি একটা সরকারি কলেজে পড়ি। বছরের ২০০ দিনই আমার কলেজে ক্লাস সাসপেন্ড থাকে।
যে কয়দিন ক্লাস হয় সেকয়দিনও ছোট
একটা রুমে ১৫০ জন ছাত্রের জায়গা দেয়া যায় না, ৪৫ মিনিটের ক্লাসের ১৫ মিনিটই চলে যায় রোল কল করতে। বাকি মাত্র ৩০ মিনিটের
ক্লাসে একমাত্র "Extraordinary" হলেই সবকিছু বোঝা সম্ভব। স্যাররা প্রাণপন চেষ্টা করলেও এভাবে HSC ২য় বর্ষের বিশাল কোর্স ৫ মাসে শেষ করা যাবে না। তাহলে আমাকে বলুন, কেন আমি প্রাইভেট পড়বো না???
শিক্ষক কী আমাদের জিম্মি করছেন,
না শিক্ষাব্যবস্থা জিম্মি করেছে???
২। সরকার আর্থিক ক্ষতির যে যুক্তি দেখিয়েছে তা একেবারেই খোঁড়া যুক্তি।
এখনও ১০ জন করে শিক্ষার্থী পড়ানোর সুযোগ আছে, আর যেসব "ব্যবসায়ী শিক্ষক" প্রাইভেট পড়ান তারা এই দশজনের কাছ থেকেই একশজনের
টাকা উসুল করবেন। অনেক টিচার তো ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন "তাঁর " কাছে শুধু "বড়লোকেরাই" পড়তে পারবে!!!
সরকারের এই সিদ্ধান্ত "হিতে বিপরীত" ফল দেবে, শিক্ষা আমার মতো মধ্যবিত্ত বা আমার চাইতে গরিব শিক্ষার্থীর জন্য নয়, তা শুধু বড়লোকের সম্পত্তি!!!
এছাড়া খালি স্কুল কলেজের টিচারদের প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ, এই সুযোগে কোচিং ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠবে। আগে ভালো ডাক্তারের কাছে চিকিত্সা হতো, এখন সেই একই টাকা দিয়ে হাতুড়ে ডাক্তার (কোচিং) এর কাছে যেতে হবে!!
দূর্বল শিক্ষার্থী আরো দূর্বল হবে, আর
জ্ঞানপিপাসী শিক্ষার্থী আদর্শ শিক্ষাগুরুর সাহচর্য থেকে বঞ্চিত হবে।
৪। শিক্ষার্থী প্রাইভেটমুখি কী শিক্ষকের কারণে, নাকি শিক্ষাব্যবস্থার কারণে। স্কুল লেভেলে তাও একরকম পরিস্থিতি আছে, কিন্তু কলেজের পরিস্থিতি আমি আগেই ব্যাখা করেছি।
সরকারের মনে হয় একটা বিষয় মাথায় রাখা উচিত -"পুরো বাংলাদেশই নটরডেম কলেজ নয়।"
এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ
হবে শিক্ষার্থীরা। ধনীরা ঠিকই পড়বে,
গরিবরা পারবে না। এছাড়া বড় শহরে হয়তো University এর ছাত্রদের
কাছে পড়া যাবে, কিন্তু মফস্বলের শিক্ষার্থী বঞ্চিত হবে। সৃষ্টি হবে বৈষম্যের।
আমরাও প্রাইভেট পদ্ধতির বিরুদ্ধে, তবে সব রোগের চিকিত্সারই যথাযথ পদ্ধতি আছে। আগে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি করুন, অন্তত কলেজে যথাযথ শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করুন, মেধাবী শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ান, মেধাবীদের শিক্ষক হতে আগ্রহী করুন, স্কুল কলেজে অনাকাঙ্খিত বন্ধ বা রাজনৈতিক কোন্দল দূর করুন, সঠিক জ্ঞানচর্চার পরিবেশ তৈরী করুন, তাহলে আর আইন করা লাগবে না, আপনাআপনিই প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা না পড়লে স্যারেরা কাকে প্রাইভেট পড়াবে??
কিন্তু যতদিন না এসব করতে পারছেন ততদিন সরকারের প্রতি অনুরোধ - "দয়া করে আমাদের, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে Experiment চালাবেন না !!!"
Courtesy: আসুন গনিত নিয়ে মজা করি!
আমি নিয়াজ মেহেদী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 11 টি টিউন ও 480 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Get Wrecked.
অনেক ধন্যবাদ । আমার মনের কথাটা বলে দিয়েছেন ভাই ।
অফটপিক : আপনি কোন কলেজে ও এখন কোন ইয়ারে পড়েন সেটা কি দয়া করে জানানো যাবে ।