গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী একুশে বই মেলা । ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনের স্মারক এ মেলার গুরুত্ব আমাদের জাতীয় জীবনে অনস্বীকার্য। ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের স্বীকৃতি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মাধ্যমে সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত। অন্যান্য বারের মত এবারও একুশের বই মেলায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রকাশনার পসরা বসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গল্প, উপন্যাস, কবিতা-ছড়ার বইয়ের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রকাশনাও একটি বড় জায়গা দখল করেছে আমাদের একুশের মেলায়। কম্পিউটারের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহের কারণেই দিন দিন কম্পিউটার বিষয়ক প্রকাশনা বেড়েই চলেছে। এমনকি কেবলমাত্র কম্পিউটার বিষয়ক বই নির্ভর প্রকাশনাও গড়ে উঠেছে ইতোমধ্যেই। এদের মধ্যে প্রথমেই চলে আসে সিসটেক পাবলিকেশন্স এর নাম। এছাড়াও জ্ঞানকোষ, পাঞ্জেরী সহ আরো বেশকিছু প্রতিষ্ঠান আইসিটি বিষয়ক প্রকাশনা অব্যহত রেখেছে এবারের বই মেলাতেও।
অন্যান্য বারের মত এবার ও বই মেলাতে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক দুই ধরণের প্রকাশনা হয়েছে। এদের একটি চিরাচরিত কাগুজে প্রকাশনা এবং অপরটি ডিজিটাল প্রকাশনা। কম্পিউটার ও প্রযুক্তি বিষয়ক বইয়ের পাশাপাশি কয়েকটি স্টলে শিক্ষামূলক বেশকিছু উল্লেখযোগ্য সিডি বিক্রি করতে দেখা গেছে। গতবারের তুলনায় এ ধারাটিতে এবার নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে ভাবছেন সংশ্লিষ্ট প্রকাশকরা। মেলায় আসা দর্শকেরা বেশ আগ্রহ ভরেই উভয় মাধ্যমে প্রকাশিত প্রকাশনাগুলো নেড়ে চেড়ে দেখছেন এবং সেখান থেকে তাদের প্রয়োজনীয় ও পছন্দের বই বা সিডিটি সংগ্রহ করছেন। এবারের মেলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কম্পিউটার ও প্রযুক্তি বিষয়ক ছাপানো বই বিক্রি করছে সিসটেক পাবলিকেশন. জ্ঞানকোষ প্রকাশনী ও পাঞ্জেরী পাবলিকেশন। ডিজিটাল প্রকাশনীগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণ প্রকাশনা বের করেছে এবিসি ডিজিটাল, একুশে ডিজিটাল, মাইক্রোস ডিজিটাল, শৈলী ডিজিটাল, ডেফোডিল মাল্টিমিডিয়া এবং সিসটেক ডিজিটাল। তবে ডিজিটাল প্রকাশনা নিয়ে মেলা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে ডিজিটাল প্রকাশনীগুলো নতুন প্রকাশনার ক্ষেত্রে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে বলে জানিয়েছেন।
মেলায় আসা আইসিটি বিষয়ক কাগুজে প্রকাশনা:
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রকাশনী সংস্থা সিসটেক পাবলিকেশন এবারের মেলায় তাদের বেশ কয়েকটি নতুন বই প্রকাশ করেছে। তবে সংখ্যায় বেশ কম। এছাড়াও আগের প্রকাশিত বইগুলোর মেলা সংস্করণও বের করেছে তারা। এবারের বই গুলোর মধ্যে রয়েছে-
- মাহবুবুর রহমানের লেখা ‘কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন: একের ভেতর চৌদ্দ’। একই লেখকের লেখা অপর আরেকটি বই হচ্ছে- এডোবি পেজমেকার।
- মোজাহেদুল ইসলাম ঢেউ ও মাহবুবুর রহমানের যৌথ লেখা ডিজিটাল ফটোগ্রাফি এবারের মেলায় বেশ আলোড়ন তুলেছে।
- সিসটেক পাবলিকেশন্স এর মতে এডোবি পেজমেকার বাংলাদেশে এখনও জনপ্রিয় না হলেও অল্প কিছু দিনের মধ্যে এ সফটওয়্যারটি বাজার মাত করবে। তাই এ বইটির কদর বাড়বে অচিরেই।
- সিসটেক পাবলিকেশন্স এর মেলা উপলক্ষে আরেকটি প্রকাশনা হচ্ছে- ‘ইন্টারনেটে হাতে খড়ি’। ইন্টারনেটে কাজ করার সহজ কলাকৌশল সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে এ বইটিতে। এর মধ্যে রয়েছে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করা, ইমেইল করা, সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে দ্রুত তথ্য খুঁজে আনার কলাকৌশল ইত্যাদি।
- জ্ঞানকোষ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘লিনাক্স এন্টারপ্রাইস সলিউশন’ বইটি। এবইটির লেখক ইঞ্জিনিয়ার মো: মিজানুর রহমান। এখন পর্যন্ত বাংলায় লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম সম্বন্ধে যতগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্যে এ বইটি যথেষ্ট ব্যতিক্রম এমনই দাবী করলেন জ্ঞানকোষ প্রকাশনী।
- বাংলায় ওপেনসোর্স জগৎকে আরো সমৃদ্ধশালী করার জন্য জ্ঞানকোষ প্রকাশনী প্রকাশ করেছে– ‘এপাচি-মাই এসকিউএল- পিএইচপি সহজ পাঠ’। এপাচি হচ্ছে ওয়েব সার্ভার যা ইন্টারনেট ইনফরমেশন সার্ভারের পরিবর্তে ব্যবহার করা যায়। মাই এসকিউএল হচ্ছে ডেটাবেজ ল্যাংগুয়েজ এবং পিএইচপি হচ্ছে একটি জনপ্রিয় ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন। আলোচিত এ তিনটি সফটওয়্যারই বিনামূল্যে পাওয়া যায় ইন্টারনেটে।
- এছাড়াও পাঞ্জেরী প্রকাশনী এনেছে তথ্যপ্রযুক্তির নানান বিষয়ের উপর হ্যান্ডবুক। এর মধ্যে রয়েছে ‘ইন্সটলিং সফটওয়্যার’ , ‘তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা’, ‘মাইক্রোসফট পাবলিশার এক্সপি’,‘মাইক্রোসফট ফ্রন্টপেজ এক্সপি’, ‘কম্পিউটার পরিচালনায় উইন্ডোজ এক্সপি-থ্রি’, ‘এম.এস.ওয়ার্ড এক্সপি-থ্রি’,
- প্রেডশিট ফরমেটিং এন্ড প্রিন্টিং’ , ‘ইন্টারনেটে ১০১ ধরণের কাজ’, ‘মাল্টিমিডিয়া ১০১ টিপস’, ‘ডিজিটাল মুভি মেকিং’, ‘জাভা স্ক্রিপ্ট’, ‘ডিজিটাল ফটোগ্রাফি’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। পাঞ্জেরী প্রকাশনী পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, ইতোমধ্যেই তাদের প্রকাশিত বইগুলো একটি আলাদা জায়গা দখল করেছে এবং দারুণ পাঠক প্রিয়তাও পেয়েছে।
দর্শকের অভিমত :
তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রকাশনা আজ কোন গুরুত্বহীন বিষয় নয়। দিন দিন মানুষ যত প্রযুক্তিমূখী হয়ে উঠছে ততই এ বিষয়ক প্রকাশনার গুরুত্ব বেড়েই চলেছে। মেলায় আসা বেশ কয়েকজন দর্শকের সাথে কথা বলে জানা গেল যে, কম্পিউটার এবং প্রযুক্তি বিষয়ক বইয়ের খোঁজেই তারা এখানে এসেছেন। তারা মাতৃভাষায় প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষা নিজে নিজেই নিতে চান। তারা চান আরো বেশি রেশি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বই প্রকাশিত হোক মেলা থেকে বাংলা ভাষায়।
কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ মেলা চলবে। তথ্যপ্রযুক্তি ইতোমধ্যেই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা সেক্টর হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। ক্রমেই এ সেক্টরটি আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে এমনটাই ভাবছেন তথ্যপ্রযুক্তি অংগনের লোকেরা। নিজের ভাষায় জ্ঞান চর্চা করলে তা হয় সহজ এবং দীর্ঘস্থায়ী। প্রতি বছর একুশে মেলায় প্রকাশিত হচ্ছে নতুন নতুন তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রকাশনা। এসব বইপত্র কম্পিউটার ও প্রযুক্তি শেখার ক্ষেত্রে আরো গতিশীল ভূমিকা পালন করবে এবং আমাদেরকে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করবে এমনটাই ভাবছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
আমি দুরন্ত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 16 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 7 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
প্রযুক্তিতেই মুক্তি
তবে দাম বেশী ছিল। এ তথ্য প্রযুক্তি বিষেয় আরো প্রকাশনা দরকার। এবং স্বাভাবিক মুল্য রাখা দরকার।