আমরা অনেকেই মুসলমানদের অতীত সমৃদ্ধি ও জ্ঞান বিজ্ঞান সম্পর্কে জানি না। কিন্তু সত্য কখনো আড়ালে থাকে না। যুগে যুগে অসৎ কাজের লোক যেমন জন্মেছে তেমনি ভালো কিছু লোকও জন্মেছে যাদের কারনে আমরা আজ এ সত্য জানতে পেরেছি।
মুসলিম বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের বহু আবিষ্কার ও বৈজ্ঞানীক তত্ত্ব ইউরোপীয়রা সচেতনভাবে নিজেদের নামে চালিয়ে দিয়েছিল। অনেকটা গোয়েবলসীয় কায়দায় দশবার মিথ্যা বলে তাকে সত্য বানাবার প্রচেষ্টায় তারা খানিকটা সফলতাও অর্জন করেছে বলতে হবে। একারনেই তাদের লোভ বেড়ে যায় এবং তাদের উদ্দেশ্যু হাসিল করার জন্য তারা এতটাই তৎপর ছিল যে, পুরো মুসলিম জাতির কাছেই এখন তাঁদের অতীত গৌরব ধোঁয়াশাচ্ছন্ন হয়ে গেছে বলা যায়। এটা তাদেরই কৃতিত্ব। মুসলিম দেশের মুসলিম ছাত্ররাও আজ জানতে পারে না বিজ্ঞান বিষয়ে তারা যে থিওরী পশ্চিমাদের আবিষ্কার বলে মুখস্থ করছে তার কোন কোনটি তাদের পূর্বপুরুষ কোন মুসলিম বিজ্ঞানীরই আবিষ্কার। এমনকি কালজয়ী বহু মুসলিম বিজ্ঞনীর নামও তারা কিম্ভূতকিমাকার করে ছেড়েছে, যাতে তাঁর জাতি-পরিচয় চেনা না যায়।
মুসলিম বিজ্ঞানীদের নাম ও আবিষ্কার বেনামী করণের য়ে সকল নমুনা দৃষ্টিগোচর হয়েছে তার কয়েকটি নিম্ন রুপ:
আল বাত্তানী – (রেথেন), ইউসুফ আল ঘুরী _ (জোসেফ টি প্রিজড), রাজী – (রাজম),
আল খাসিব – (বুবাথের), কায়বিসি – (ক্যাবিটিয়াস), খারেজমি – (আল গরিদম),
ইবনে সিনা – (এভিসিনা), ইবনুল হাইছাম – (হ্যাজেন), যারকালী – (মারজাকেল),
ইবনে বাজ্জা –(এভেনপেজ), বিতরূজী – (পিট্টাজিয়ান), ইবনে রুশদ – (এভেরুন)।
এই ন্যাক্কারজনক কাজ যে ভাষার পরিবর্তন ও অগোচরে ঘটে গেছে তা মনে কারার কোন মানেই হয় না। অতি সচেতনভাবেই, ইতিহাস বিকৃত ও আত্নস্থ করার এই প্রকল্প কয়েকশত বছর আগে পাশ্চাত্যের এক শ্রেণীর কু-মতলবীরা গ্রহণ করে। নইলে পাশ্চাত্য সভ্যতা গ্রীক ও রোমন সভ্যতা থেকে লাপ দিয়ে এসেছে এমন উদ্ভট কথা তারা বলতো না।এখানে বলে রাখা ভাল পাশ্চাত্যেরই সত্য-সন্ধানী অনেক ঐতিহাসিক, বিজ্ঞান বিষয়ক ইতিহাসের গবেষক প্রমান করেছেন যে আরবরাই পাশ্চাত্য সভ্যতার আসল জনক। এ রকম কয়েকজন গবেষক হলেন : Gorge Sarton, Sir T. Arnold, R. A. Nicholson, Hitti Draper, Gibb, Joseph Hell, Levy, Macdonald, Pickthal, Richmond, Breiffault, E. Deutsch, Sedillot, Max-Neuburger, Renan, Lane Poole, Roger Bacon, Humbold প্রমূখ।
তাদের সবার মতেই "আরবরাই প্রথমে গ্রীক লেখকদের পৃথিবীর সাথে পরিচিত করে দিয়েছিল। বর্তমান পৃথিবীর জ্ঞান বিজ্ঞানের কেন্দ্র ইউরোপের বর্তমান সভ্যতা এবং উন্নতি জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হওয়ার বহু আগে আরবরাই প্রথম অন্ধকার ইতিহাসের পাতা জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করেছিল।"
পাশ্চাত্যের ইতিহাসবিদ-গবেষকরাই আবিষ্কার করেছেন, তাদের পূর্বতন অসাধু এক শ্রেণীর লোক আরব জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সুচতুরভাবে আত্নস্থ করতে নিয়োজিত ছিল। ফ্রাঙ্কফুর্ট ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের শিক্ষক , Fuat Sezgin প্রায় ৩৭ বছর আগে এ বিষয়ে গবেষনা শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি ইস্তাম্বুলের লাইব্রেরীতে খুঁজে পেলেন ১ লক্ষ ২০ হাজার পাণ্ডুলিপি, যা মুসলমানদের বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষের অসামান্য দলিলরুপে প্রমানিত হলো। এই পাণ্ডুলিপিগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ব্যাখ্যার পর তিনি জানালেন, সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৫০ লক্ষরও অধিক আরব বিজ্ঞানীদের পাণ্ডুলিপি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তিনি এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণার জন্য জার্মান রিসার্চ এসোসিয়েশনের সহযোগিতায় গড়ে তুললেন একটি প্রজেক্ট। তাঁর এ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে তিনি বাদশা ফয়সল প্রাইজ এবং পরবর্তিতে তার অবদানের জন্য জার্মান সরকার তাকে The Great Medal পুরস্কারে ভূষিত করেন।
Fuat Sezgin তাঁর গবেষনায় দেখিয়েছেন, মধ্যযুগের মুসলিম বিজ্ঞনীদের কাজ নকল করা, অনুকরন করা এবং কখনো কখনো পুরোটাই নিজেদের বলে চালিয়ে দিয়েছে পাশ্চাত্য সভ্যতা। দ্বাদশ খৃস্টাব্দে এ আরবরা এ চাক্রান্ত ধরে পেলে। তাই সেই সময় ডিক্রি জারী করা হয় যে, “খৃস্টানদের কাছেু বিজ্ঞানের কোন লিখা বিক্রি করা যাবে না”। পরে আরো কঠোরভাবে বলা হয় যে, “আরবদের লিখা অনুবাদ ও প্রকাশ করার জন্য কঠোর শাস্তি দেয়া হবে”।
ফলে শুরু হয় আরবদের জ্ঞান ও বিজ্ঞান গোপনে পাচারের কাজ। দশম শতকে স্পেনের টলেডো শহর ছিল এই জ্ঞান ও প্রযুক্তি পাচারের প্রধান ঘাঁটি। এখানে দলবেঁধে পাশ্চাত্যের দূর-দূরান্তের শহরে থেকে ছাত্ররা পড়ত আসতো। পরে ফান্সের কাস্ট্রেস শহর, টোলাউজ শহর, রেইমস্ শহর, টুরস্ শহর এবং প্যারিস প্রভৃতি শহর এই অপকর্মের পীঠস্থান হিসাবে যুক্ত হয়। ইতালি এবং কৃষ্ণ সাগরের পাড়ে অবস্থিত ট্রাবজোনের গ্রীক অনুবাদের স্কুলও এ জন্য বিখ্যাত। দ্বাদশ শতকে গেরহার্ট ভন ক্রেমোনা নামক এক অনুবাদক একাই নব্বইটি পাণ্ডুলিপি অনুবাদ করেন।১১২০ খ্রিস্টাব্দে সুপ্রসিদ্ধ আরব বিজ্ঞানী আল বাত্তানীর লিখা অনুবাদ করেন প্লেটো ভান টিতোলী এবং বইটির নতুন নাম দিলেন “Hand book of Astronomy”। পরবর্তিতে যা টলেমীল নিজের জ্ঞান হিসাবেই পরিচিতি লাভ করেছিল।
এ চুরি ইউরোপীয় আধিপত্যের যুগে আরও কত ব্যাপকভাবে হয়েছিল তা অনুমান করা কঠিন কোন ব্যাপার নয়। পাশ্চাত্যের কিছু বিবেকবান গবেষক সত্য সন্ধানে এগিয়ে এসেছিল। আমাদেরও আমাদের ঐতিয্য ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস উদ্ধারে এগিয়ে আসা উচিত।
ভাই আসুন আমরা প্রকৃত সত্য জানার চেষ্টা করি। কারন এটা আমাদের অধিকারের প্রশ্ন। যদি আমরা আমাদের অধিকার না আদায় করতে পারি তাহলে এই ঘটনা আমাদের ক্ষেত্রে আবার ঘটতে পারে। কিভাবে একাজ করা যেতে পারে সে বিষয়ে আপনাদের সকলের মন্তব্য সাদরে গ্রহণ যোগ্য।
দয়াকরে মুসলমানদের প্রতি এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন।
আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
তথ্যসূত্র: বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান।
আমি TareqMahbub। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 47 টি টিউন ও 464 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Programmer at Business Innovation & Incubation Center, Banani. Worked @ Harry & Michael IT Center as a Web Developer. Worked @ Kazi IT Center as a Web Developer, Graphic Designer, Virtual Assistant. Worked @ IQRA MODEL SCHOOL & COLLEGE as a full time teacher & typist. Student at American International...
TareqMahbub ভাই আপনি ঠিকই বলছেন। কিন্ত আমাদের মত গরীব, আশান্ত, দূর্নীতিগ্রস্থ দেশের বা আমাদের কি করার আছে।