বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি আপনারা সকলেই আল্লাহর রহমতে অনেক ভাল আছেন। আমরা দিনের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সময় মানুষের সঙ্গে কথা বলে কাটিয়ে থাকি। এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, আমরা আমাদের দুঃখ-কষ্ট, ভালোলাগা এবং বিভিন্ন অনুভূতির কথা একে অপরের সঙ্গে বলাতে আমাদের মানসিক অবস্থা ভালো থাকে।
আপনি কি জানেন, কারো যদি কমিউনিকেশন স্কিল ভালো হয় তবে তার চাকরি পাবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কারণ সে জানে কীভাবে তার চিন্তাভাবনাকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে হয়। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে কারো সঙ্গে কথা বলতে গেলে যে কনফিডেন্স লাগে, সেখানে আমরা অনেক অভাব বোধ করি। যেখানে আমরা অন্য কারো সঙ্গে কথা বলতে লজ্জাবোধ করি। বন্ধুরা আজকের এই টিউনে আমি Leil Lowndes এর লেখা "How to talk to anyone" বইটি নিয়ে সাতটি বিষয় আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
এই টিউনে আমি যে সব বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব, যে গুলো জানার মাধ্যমে আপনার কমুনিকেশন স্কিল আগের থেকে কিছুটা হলেও বাড়তে সাহায্য করবে। এই বইটিতে এমন সব টিপস এবং হ্যাকস এর কথা বলা হয়েছে, যেগুলো অনুসরণ করলে আপনি আপনার অভিজ্ঞতা কে অনেকটা পরিমাণে বাড়াতে পারবেন। আপনি যদি কারো সঙ্গে কথা বলার সময় ইতস্ত বোধ করে ভালো মতো কথা বলতে না পারেন, তবে এই টিউনটি শেষ পর্যন্ত দেখতে থাকুন। তবে এজন্য অবশ্যই আমাকে ফলো করে সঙ্গেই থাকুন। চলুন তবে আজকের টিউনটি শুরু করা যাক।
কথা বলা হলো Verbal communication বা মৌখিক যোগাযোগ করার মাধ্যম। তবে Non varbal communication ও কিন্তু অনেকটা শক্তিশালী হয়। লেখক এর মতে আপনি একটি কথা না বলেও অন্যের সঙ্গে কমিউনিকেশন করতে পারেন। আর এর জন্য আপনি দুটি কৌশল ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য প্রথমে সঠিক সময়ে বড় করে স্মাইল করুন।
আপনি যখন কারো সঙ্গে দেখা করবেন তখন একটি অবস্থান নিয়ে ভালো করে একটি বড় করে স্মাইল করুন। এক্ষেত্রে আপনাকে Friendly approachable লাগবে। আপনি যদি কোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে চান তবে আপনি দুর থেকে তার সঙ্গে কথা না বলে ও তার সঙ্গে শুরু এভাবে করে ইশারাতে ও আপনার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন। যেখানে আপনার বন্ধুর সঙ্গে আপনার ভালো সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠছে। যেখানে আপনি দুর থেকে আপনার বন্ধুকে হাত উচিয়ে হাই, হ্যালো বা সালাম ও বলতে পারেন।
Non-verbal communication এরমধ্যে আপনি যদি কারো চোখের দিকে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকেন তবে আপনার মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফুটে ওঠে। এতে করে আপনার সামনের জন বুঝবে আপনি তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। আর এতে করে সে ভালো অনুভব করবে। কিন্তু তাই বলে এক ভাবে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকবেন না। খেয়াল রাখবেন Eye contract যেন শর্ট এবং স্ট্রং হয়। আপনি যদি আপনার বন্ধুর চোখে চোখ রেখে কিছুক্ষণ কথা বলেন তবে সে বুঝতে পারবে তাকে উদ্দেশ্য করেই আপনি সকল কথাগুলো বলছেন এবং আপনি তার প্রতি আকৃষ্ট।
আর তখন আপনার সেই বন্ধু আপনার প্রতি কথা বলতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করবে। আপনি যদি কারো সাথে কথা বলার পর্যায়টি দীর্ঘায়িত করতে চান তবে এই ট্রিকসটি অবশ্যই কাজে লাগাবে। এ ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় আপনি যদি অন্যদিকে হয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন, তবে কিছুক্ষণ কথা শোনার পর হয়তোবা তার মন চাইবে না আপনার সঙ্গে কথা বলার। এছাড়া তখন সেই ব্যক্তি আপনার সব কথা ভালোভাবে নাও শুনতে পারে।
আপনি কিভাবে কারো সঙ্গে কথা বলেন? কারো সঙ্গে কথা বলার আগে যেটা করতে হয় তা হচ্ছে কথা শোনা। কেউ যখন আপনার সঙ্গে কথা বলবে তখন আপনি তার কথাগুলো কে ভালোভাবে শুনুন এবং তার মুড বুঝে আপনিও সেই ভাবে কথা বলার চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যার সঙ্গে কথা বলছেন সে যদি সেই মুহুর্তে হাসি-ঠাট্টার মুডে থাকে তবে আপনিও তার সঙ্গে সেই ভাবেই কথা বলুন। আপনার সামনের জন যদি তার খুশি মনে থাকে, তবে সে সময় আপনার কোন সিরিয়াস কথা হঠাৎ করে বলা একেবারেই উচিত হবে না। আপনার বন্ধু যেভাবে কথা বলছে, সেই ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে আপনি সে ভাবেই কথা বলুন।
আপনি যদি আপনার সামনের জনের মুড বুঝে কথা বলতে পারেন, তবে আপনাদের মধ্যে কথা বলার প্রক্রিয়াটি আরো দীর্ঘায়িত হতে পারে। যেমন ধরুন, আপনার বন্ধু যদি গল্পের মাঝে কোন এক সময় আনন্দিত থাকে, তখন আপনার উচিত হবে তার সঙ্গে আনন্দের কোনো কথা বলা। এ সময় গল্পের মাঝে আগে যদি এমন কোনো কথা বলেন যেটি দুঃখের, তবে এক্ষেত্রে হঠাৎ করেই তার মন ভেঙ্গে যেতে পারে। এর উদাহরণ হিসেবে, আপনি যদি কোন আনন্দঘন পরিবেশে কোন বন্ধুর সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেন তবে সে কিন্তু অবশ্যই সেটা ভালোভাবে নেবে না। যাইহোক, এরকম আরো অনেক উদাহরন থাকতে পারে।
আমাদেরকে যখন কোন প্রশ্ন করা হয় তখন আমরা সেই প্রশ্নের উত্তর টি কখনো এক দুই কথায় দিয়ে থাকি। যেমন ধরুন, কেউ আপনাকে প্রশ্ন করল আপনার বাড়ি কোথায় এবং আপনি এর উত্তরে বললেন "ঢাকা"। যে কারণে তাঁর আপনার সঙ্গে কথা বলার আর কোন পথই থাকবে না। তাই এক কথায় উত্তর দেওয়ার বদলে আপনি আরও বিস্তারিত ভাবে আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন। যেমন এ প্রশ্নের উত্তরে আপনি বলতে পারতেন, "ওহ, আমার বাড়ি ঢাকা শহরের এই জায়গায়"।
যেমনটি করলে আপনার কনভারসেশন আরো বেশি ইন্টারেস্টিং হবে এবং সেটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতেও সুবিধা হবে।
প্রত্যেকেই নিজের একটু গুরুত্ব পেতে চায়। তাই বলে কারো সঙ্গে কথা বলার সময় শুধুমাত্র নিজের কথাগুলো বলে গেলেই চলবে না। বরং, এক্ষেত্রে অন্য জনকেও কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। আপনি যার সঙ্গে কথা বলছি আমি তার সখ কিংবা কাজের কথা জিজ্ঞেস করুন। আপনি আপনার কথার মাঝে তার থেকেও তার মন্তব্য শুনতে পারেন।
আমি যখন তাকে কোনো কথা বলবেন তখন অবশ্যই আপনার চেষ্টা থাকবে তাকে যেন আপনার কথা গুলো ভালোভাবে বোঝানো যায়। ঠিক এই ভাবে সেই ব্যক্তির কথাগুলোও আপনি ভালভাবে শুনছেন এরকম মনোভাব তাকে দেখান। দুজনার মাঝে কথা বলার সময় যে শুধুমাত্র আপনি কথা বলে যাবেন, তা কিন্তু হয় না। এক্ষেত্রে দেখা যাবে পরবর্তীতে সে আর আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে না। এজন্য অবশ্যই কারো সঙ্গে কথা বলার সময় তার কথা গুলোকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
আপনার সঙ্গে এরকম কতবার হয়েছে যে, কারো সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কি বলবো সেটি মনে থাকেনা। যে রকম ঘটনা আপনার সাথে হয়তোবা প্রায়ই হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সে সময় আপনি ছোট্ট একটি কৌশল কাজে লাগাতে পারেন। এজন্য আপনাকে সর্বশেষ খবরা-খবর সম্বন্ধে আপডেট থাকতে হবে। কারো সঙ্গে কথা বলার সময় আপনার যখন মনে হবে আপনার কাছে কথা বলার মত এমন কোন টপিক নেই, তখন আপনি যেকোন ট্রেন্ডিং টপিক নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।
এসবের মধ্যে যেমন, খেলাধুলা, ব্যবসা নিয়ে আলোচনা এর কথা জিজ্ঞেস করতে পারেন কিংবা আপনি বলতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার সামনের বন্ধুটির যে বিষয়ে ইন্টারেস্টিং রয়েছে, আপনি সেই বিষয়ে আলোচনা আবার শুরু করতে পারেন। এর ফলে আপনি কে জ্ঞান সম্পন্ন, এটি তারা বুঝতে পারবে এবং এক্ষেত্রে আপনার Personality বা ব্যক্তিত্ব নিয়ে তাদের মধ্যে একটি ভালো ধারণা গড়ে উঠবে। তাই গল্পের মাঝে আপনি আপনার কথাকে চালিয়ে যাবার জন্য বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আপডেট থাকতে পারেন। এজন্য যখন যা প্রয়োজন তখন সেই বিষয় নিয়ে যেন আপনি কথা চালিয়ে যেতে পারেন।
কারো সঙ্গে কথা বলার আগে আপনার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে Body language; যেটির সাহায্যে কমিউনিকেশন এর ৫৫% সম্পন্ন হয়ে থাকে। আপনি যদি নিশ্চিত হন যে, কথা বলার সময় অবশ্যই সোজা হয়ে দাঁড়াবেন অথবা ভালোভাবে বসে কথা বলবেন। এছাড়া কারো সাথে হ্যান্ডশেক করলে সেটা যেন অনেক পাওয়ারফুল হয়। আর যখন আপনি হাঁটবেন তখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে হাঁটবেন। যেখানে আপনার হাটার ধরনঃ এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে সামনের ব্যক্তির মনে আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অনেকটা ধারণা প্রকাশ পায়।
তবে আপনি যদি একটি আত্মবিশ্বাসী Body language প্রদর্শন করতে পারেন তবে এর ফলে আপনাকে আরো বেশি Approachable মনে হবে। কারো সঙ্গে কথা বলার সময় আপনি যদি অন্যদিকে হয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন, তবে সেই ব্যক্তি হয়তোবা বুঝতে পারবে আপনি তার প্রতিবেশী ইন্টারেস্টিং নন। তাই কথা বলার সময় তার দিক হয়ে এবং তার চোখের দিকে চোখ রেখে কথা বললে অপর ব্যক্তি আপনার কথার প্রতি বেশি আকৃষ্ট হবে।
তবে আপনি আপনার কমিউনিকেশন স্কিল কে ডেভেলপ করতে থাকুন। আজকের টিউনটি সম্পূর্ণ দেখার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। টিউন সম্পর্কিত কোন মতামত কিংবা আপনার অন্য কোন মতামত জানাতে নিচের টিউনমেন্ট বক্সে টিউনমেন্ট করবেন। যদি আপনার কাছে টিউনটি ভাল লেগে থাকে তবে জোসস করবেন। আজ তবে এখানেই বিদায় নিচ্ছি, পরবর্তী টিউনে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। সেই সময় পর্যন্ত টেকটিউনস এর সঙ্গেই থাকুন এবং আমাকে ফলো করে রাখুন। আসসালামু আলাইকুম।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 12 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)