যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রযুক্তিতেও এসেছে অপরিসীম পরিবর্তন। মানুষের কাছে প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে বেশ সহজলভ্য। হাতে হাতে এখন স্মার্টফোন। যতই দিন যাচ্ছে মানুষের সামনে আসছে নতুন নতুন ফিচারে ঠাসা সব স্মার্টফোন।
মানুষ আগে যেখানে ২ মেগাপিক্সেল বা VGA ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতো, এখন সেই ক্যামেরা কালের বিবর্তনে হয়ে গেছে ২০০ মেগাপিক্সেল।
প্রযুক্তির কল্যাণে এখন স্মার্টফোন দিয়ে এমন সব ছবি তোলা সম্ভব হয় যেগুলোকে ক্যামেরার ছবির পাশে রাখলে বুঝারই উপায় নেই কোন ছবি কোন গিয়ারে তোলা। হ্যাঁ এটা ঠিক যে, ফোনে তোলা ছবির ফাইলগুলো ক্যামেরার মত এত শক্তিশালী না। তবে প্রযুক্তি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে স্মার্টফোন যে ক্যামেরাকে চ্যালেঞ্জ করে বসবে না তা কি করে বলা যায়?
সবার ক্যামেরা কেনা কিংবা ক্যামেরা কেনার পর তার পিছনে মাঝে মাঝে লেন্সের জন্য ইনভেস্ট করার মত সামর্থ্য থাকে না। তাই বেশিরভাগ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীই চান তার ফোনে থাকা ক্যামেরাটা যেন একটু ভাল হয়। ছবিগুলো যেন শার্প হয়, যেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড উপযোগী হয়।
কিন্তু ফটোগ্রাফির জন্য স্মার্টফোন সিলেকশনের ক্ষেত্রে মানুষ সাধারণ মনে করে, মেগাপিক্সেল বেশি মানেই ক্যামেরা খুব ভাল। আসলেই কি তাই? নাকি আরো কোন ব্যাপার স্যাপার আছে?
চলুন দেখে নেই, কি কি ফ্যাক্টর দেখে ফটোগ্রাফির জন্য স্মার্টফোন বাছাই করবেন।
০১. ক্যামেরা সেন্সর
একটি ভাল ক্যামেরা ফোন সিলেকশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হলো এর ক্যামেরা সেন্সর। সেন্সরকে বলা যায় ক্যামেরার হার্ট। ক্যামেরা হোক কিংবা মোবাইল যে কোন ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রেই ক্যামেরা সেন্সর যত বড় হয় সেটা ততো বেশি আলো ক্যাপচার করতে পারে এবং নয়েজ খুব ভালোভাবে ম্যানেজ করে। যেমন: তুলনমূলক একটি বড় সেন্সরের ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার পারফরম্যান্স একটি ছোট সেন্সরের ১৬ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরার চাইতে ভাল হয়।
বর্তমানে নামিদামি মোবাইল কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ক্যামেরা সেন্সর অনেক বড় করেছে। যে কারণে মোবাইল ক্যামেরাগুলো এখন দারুণ সব ছবি তুলতে সক্ষম। তাই মোবাইল ফটোগ্রাফির শখ থাকলে অবশ্যই ক্যামেরার সেন্সর সাইজ জেনে এরপর কিনবেন।
০২. মেগাপিক্সেল
১৬ এবং ২৪ মেগাপিক্সেলের দুটি ক্যামেরার ভিতর কোনটায় ভাল ছবি আসবে?
আমরা উত্তর দিব, অবশ্যই ২৪ মেগাপিক্সেল। সত্যিই কি তাই?
আসলে মেগাপিক্সেল জিনিসটা সেন্সর সাইজের সাথে রিলেটেড। মেগাপিক্সেল বেশি হলেই ছবি ভাল উঠে, ব্যাপারটা তা না। দু’টি ক্যামেরার সেন্সর যদি একই সাইজের হয়, তবে ২৪ মেগাপিক্সেল ক্যামেরায় তুলনামূলক খারাপ ছবি আসবে।
সেন্সরের সাইজ বড় হলে ক্যামেরায় বেশি আলো প্রবেশ করতে পারে। ফলে ছবির এক্সপোজার ঠিক থাকে এবং শার্পনেসও ভাল হয়। যে কারণে ২৪ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরায় তোলা ছবি ২০০ মেগাপিক্সেলের স্মার্টফোনে তোলা ছবির চাইতে ভাল হয়।
তাই বলে মেগাপিক্সেলের যে কোন কাজ নেই তা কিন্তু না। কম মেগাপিক্সেলের ছবি জুম করলে ফেটে যায়। কিন্তু মেগাপিক্সেল বেশি হলে জুমের পর ফেটে যাবার প্রবণতা কমে। কোন ছবি যদি জুম করে দেখতে চান কিংবা বড় পেইজে প্রিন্ট করতে চান তাহলে মেগাপিক্সেল জিনিসটা অনেক গুরুত্ব বহন করে।
০৩. অ্যাপারচার
অ্যাপারচারকে f number দিয়ে প্রকাশ করা হয়, যা f-stops নামেও পরিচিত।
f stop এর মান যত ছোট হবে সেন্সরে আলো প্রবেশের পরিমাণ তত বাড়বে। আবার, f stop ভ্যালু যত বড় হবে সেন্সরে আলো প্রবেশের পরিমাণ তত কমবে।
মোবাইল ক্যামেরা স্পেসিফিকেশন চেক করার সময় লক্ষ্য করলে দেখবেন, পাশে বিভিন্ন f ভ্যালু দেয়া থাকে। যেমন : f/1.7, f1.8, f/2.0, f/2.2 ইত্যাদি। এগুলো দ্বারা মূলত অ্যাপারচারকেই নির্দেশ করে। এই ভ্যালু যথাসম্ভব কম দেখে কিনলে ছবিতে আলো বেশি পাওয়া যাবে এবং লো লাইটে ভাল আলো পাওয়া যাবে। এমনকি এর মান কম হলে পোর্ট্রেইট ছবিতে ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার হওয়ার প্রবণতাও বাড়ে।
০৪. স্ট্যাবিলাইজেশন
স্মার্টফোনের ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন সাধারণত তিন রকমের হয়ে থাকে- অপটিক্যাল, ইলেকট্রনিক এবং হাইব্রিড।
অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশনকে OIS দ্বারা প্রকাশ করা হয় যা হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে কাজ করে।
ইলেকট্রনিক স্ট্যাবিলাইজেশনকে EIS দ্বারা প্রকাশ করা হয় যা সফটওয়্যারের মাধ্যমে কাজ করে।
হাইব্রিড ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন বা HIS স্থিতিশীল ভিডিও এবং ছবি তৈরি করতে OIS এবং EIS কে একত্রিত করে।
উল্লেখ্য যে, অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন (OIS) ফলাফল তুলনামূলক ভাল।
০৫. প্রসেসর
ক্যামেরা ফোন কিনতে গেলে একটি শক্তিশালী প্রসেসর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছু ভাল হওয়ার পর যদি ছবি তুলতে গিয়ে ক্লিক করার পর ছবি প্রসেসিংয়ে সময়ক্ষেপণ হয়, তা অনেক সময় বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই ক্যামেরা ফোন নির্বাচন করার আগে অবশ্যই প্রসেসর নিয়ে একটু স্টাডি করে নিলে ভাল হয়।
০৬. অটোফোকাস
স্মার্টফোন ক্যামেরার অটোফোকাস টেকনোলজি মূলত তিন ধরনের- কনট্রাস্ট-ডিটেকশন অটোফোকাস, ফেজ ডিটেকশন অটোফোকাস এবং লেজার অটোফোকাস। কনট্রাস্ট-ডিটেকশনের তুলনায় বাকি দুটো অটোফোকাস সিস্টেম অপেক্ষাকৃত ভাল।
দূরের সাবজেক্টের ক্ষেত্রে ফেজ ডিটেকশন ভাল, আবার লো লাইটে লেজার ডিটেকশন ভাল। তবে এই দুই প্রকার অটোফোকাস সিস্টেমের অসুবিধাও আছে। যেমন, ফেজ ডিটেকশন সাধারণত একটু দামি ফোনে থাকে। আবার লেজার ডিটেকশনের জন্য আলাদা হার্ডওয়্যার প্রয়োজন হয়।
০৭. স্টোরেজ
যেহেতু ছবি তোলা কিংবা ভিডিও করার জন্য স্মার্টফোন কিনবেন, তাই ইন্টারনাল স্টোরেজ একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর বলে আমি মনে করি। নয়তো ছবি তুলতে গিয়ে পুরোনো ছবির কারণে স্টোরেজ ফুল হয়ে গেলে অনেক ছবি ডিলেট করে দেয়া লাগে। এর ফলে স্মার্টফোনে থাকা অনেক স্মৃতি অনিচ্ছা সত্ত্বেও ডিলেট করতে হয়। কমপক্ষে ১২৮ জিবি স্টোরেজ আছে এমন স্মার্টফোন কেনা উচিত বলে আমি মনে করি।
০৮. ব্যাটারি লাইফ
কোন ট্যুরে গিয়ে ছবি তোলার সময় আপনার ফোনে নোটিফিকেশন এলো চার্জ শেষের দিকে। তখন কতটা অসহায় আর বিরক্ত লাগে তা বলে বুঝানো সম্ভব না। স্মার্টফোনে ছবি তুললে বা ভিডিও করলে বেশ ভাল চার্জ ক্ষয় হয়। এজন্য ভাল ব্যাটারি ব্যাকআপ প্রয়োজন। কমপক্ষে ৪৫০০+ mah ব্যাটারি হলে ভাল হয়।
উপরের ফ্যাক্টরগুলো ছাড়াও আরও কিছু বিষয় চেক করে নিতে পারেন। যেমন : HDR আছে কি না, RAW ছবি তোলা যায় কি না, Manual/Pro Mode আছে কি না, অপটিক্যাল জুম আছে কি না ইত্যাদি।
উপরের ক্রাইটেরিয়া সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে আপনার প্রায়োরিটি অনুযায়ী একটা তালিকা তৈরি করুন। এরপর সে তালিকা অনুযায়ী বাজেটের ভিতর বেছে নিন আপনার পছন্দ স্মার্টফোনটি।
আজ এ পর্যন্তই।
ইন শা আল্লাহ আবার আসছি নতুন কোন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন।
আমি সাইফুল্লাহ সাকিব। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 7 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 5 টিউনারকে ফলো করি।
I am a Mechanical Engineer. Besides my profession, I like writings and do photography.