ক্যামেরা সম্পর্কে বলার কিছুই নেই। বর্তমান সময়ের DSLR ক্রেজের কথা আমরা সবাই-ই জানি এর বাইরে আমরা SLR, ডিজিটাল ক্যামেরা, আইপি ক্যামেরা, সিসিটিভি ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা সহ অনেক ধরনের ক্যামেরার সাথেই আমরা পরিচিত। কিন্তু আজকে আমরা আমাদের পরিচিত এইসব ক্যামেরা সম্পর্কে কোন কথা বলব না। আজ কথা বলব 'একশন ক্যামেরা(Action Camera)'। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কারণেই একশন ক্যামেরা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ট্র্যাডিশনাল ক্যামেরার বাইরে গিয়ে কেন আপনি কিনবেন 'একশন ক্যামেরা', কি এর সুবিধাগুলি এবং কিনবেন কোনটি সেটা নিয়েই কথা বলব। তো চলুন শুরু করা যাক।
প্রথমেই জেনে নিতে হবে একশন ক্যামেরা কি। অবশ্যই এই ক্যামেরাগুলি অন্যান্য ক্যামেরার মত নয়। সাধারণ ক্যামেরা থেকে এ ধরনের ক্যামেরাগুলো অনেকটাই আলাদা। একশন ক্যামেরা কে অন্যকথায় স্পোর্টস ক্যামেরা ও বলা হয়ে থাকে। একশন ক্যামেরাগুলি ডিজাইন করা হয় হেলমেট, সার্ফবোর্ড, সাইকেল, গাড়ি বা এমন যে কোন বস্তুর সাথে এটাচ করার জন্য। এর কারণ হল একশন ক্যামেরাগুলি বিভিন্ন একশন বা কাজের ভিডীও করতেই ব্যবহার করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, কোন এক ব্যক্তির যদি একটা সাইকেল থাকে আর সে সাইকেল দিয়ে ভ্রমণ করতে খুবই ভালবেসে থাকে এবং অন্য কোণ ব্যক্তির সাহায্য ছাড়াই একটি সম্পূর্ণ বাস্তব এডভেঞ্জার সে রেকর্ড করতে চায় তাহলে সে একশম ক্যামেরা বা একশন ক্যাম ব্যবহার করবে। এক্ষেত্রে সে তার একশন ক্যামেরাটিকে তার সাইকেলের হ্যান্ডেল বার এর মত জায়গায় এটাচ করে নিজের সম্পূর্ণ ভ্রমনটা ভিডিও করতে পারবে। একশন ক্যামেরার আরেকটা বড় সুবিধা হল সব একশন ক্যামেরাই ওয়াটারপ্রুফ এবং ডাস্টপ্রুফ।
কথাটা এমন যে একশন ক্যামেরা হতে হলে অবশ্যই ওয়াটার এবং ডাস্টপ্রুফ হতে হবে কেননা ময়লা এবং পানি যে কোন এডভেঞ্চারের অপরিহার্য একটা ব্যাপার। আর একারণেই ইচ্ছা করলে একশন ক্যামেরা দিয়ে পানির নিচে করতে পারবেন হাই কোয়ালিটির ভিডিও। সিম্পল কিন্তু কার্যকরী। একশন ক্যামেরাগুলি সাধারণ ক্যামেরা থেকে সাইজে অনেক ছোট হয়। উচ্চ রেজুলেশন এমনকি 4K ভিডিও করতে সক্ষম একশন ক্যামেরাগুলি অন্যান্য ক্যামেরার তুলনায় পানির দামে পাওয়া যায়।
এককথায়, একশন ক্যামেরা হল এমন ক্যামেরা যে যে কোন একশনে(কাজ) ব্যবহার করা যাবে নির্দ্বিধায়।
উম. এই কেনটার বেশিরভাগটাই নির্ভর করছে আপনার উপর। আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে আপনার প্রয়োজনের উপর। আপনি যদি শুধুই ক্যাজুয়াল পোজ দিয়ে ছবি তুলতে চান এবং সেগুলো পরে ফেসবুক বা এই ধরনের সাইটে আপলোড করার চিন্তাভাবনা থাকে তাহলে অবশ্যই একশন ক্যামেরা আপনার জন্য নয়।
এমনকি আপনি যদি প্রাকৃতিক ছবি তুলতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলেও একশন ক্যামেরা আপনাকে সন্তুষ্ট করবে না কিংবা আপনি সন্তুষ্ট হবেন না। কিন্তু আপনি যদি হয়ে থাকেন একজন ভ্রমণ পাগল(ভ্রমণ বলতে শুধু দূরে কোথাও ভ্রমণই না, আপনি যদি এক কিলোমিটার দূরেও কোথাও যান মনে ঘুরার ইচ্ছা নিয়ে সেটাকেই ভ্রমণ হিসেবে ধরে নিন) এবং যদি থাকে স্মৃতিগুলি ভিডিও করে রাখার ইচ্ছা তাহলে আপনি অবশ্যই একটা একশন ক্যামেরাই বেছে নিবেন।
আপনি একশন ক্যামেরা কিনবেন বা কিনতে চান এবং একশন ক্যামেরাই আপনার দরকার কিন্তু, জানবেন না কেন একশন ক্যামেরা এখানে অন্যান্য ক্যামেরা থেকে ভাল? অবশ্যই জানবেন। চলুন জেনে নেই;
১) ব্যবহারযোগ্যতা: একশন ক্যামেরাগুলি আকারে খুবই ছোট। যার ফলে আপনি এই ক্যামেরাগুলিকে যে কোন জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন। অত্যন্ত হালকা। আপনার হেলমেট, সাইকেলের সামনের বার, বাইকের সামনের বার, হাতে এমনকি সেলফি স্টিকে এটাচ করে করতে পারবেন ভিডিও।
২) ভিডিও কোয়ালিটি: একশন ক্যামেরাগুলি সাধারণত খুব বেশি দামি হয় না। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি ১০হাজার টাকারও নিচের কোন একশন ক্যামেরা আপনাকে 4K রেজুলেশনে ভিডিও করতে দেয়। একশন ক্যামেরা ভিডিওগুলি একই সাথে খুবই স্মুথ হয় অর্থাৎ ভিডিওতে ঝাঁকি বা কম্পন খুবই কম থাকে। এবং বেশিরভাগ একশন ক্যামেরা কোন লাইট ফেড বা আলো ছড়ানো ছাড়াই রাতে ভিডিও বা লো লাইট ভিডিও করতে পারে। ফলে রাতের বেলাতেও আপনি পাবেন ঝকঝকে এবং বেশি ডিটেইলস সমৃদ্ধ ভিডিও বা ছবি।
৩) লেন্স: সব একশন ক্যামেরার লেন্সই ওয়াইড এঙ্গেল(Wide Angle) হয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্যামেরার লেন্স ১৮০ডিগ্রি এঙ্গেলেরও হয়ে থাকে। তার মানে প্রায় চোখের দৃষ্টির মতই বিস্তৃত দৃষ্টিকোণ পাওয়া যায় একশন ক্যামেরাগুলোতে। এবং একশন ক্যামেরাগুলি আকারে ছোট হলেও এদের লেন্স সবসময়ই বৃহদাকার।
৪) ওয়াটার এবং ডাস্টপ্রুফ: সব একশন ক্যামেরাই ওয়াটার এবং ডাস্টপ্রুফ হয়ে থাকে। ফলে পানি বা ময়লার ভয়ে কোথাও ক্যামেরা না নিয়ে যাবার চিন্তা নেই। এমনকি একশন ক্যামেরাগুলি দিয়ে খুব সুন্দরভাবে আন্ডারওয়াটার ভিডিও ও করতে পারবেন। ক্যামেরা নিয়ে লাফ দিতে পারবেন সাগরে কিংবা সুইমিং পুলে এবং মরুভূমির ভুলার সাগরে।
একশন ক্যামেরা সম্পর্কে তো সবই জানলেন। এখন হয়ত একটা একশন ক্যামেরা কিনে ফেলার কথা ভাবছেন। চলুন আপনাকে একশন ক্যামেরা কেনার ক্ষেত্রে একটু সাহায্য করি। প্রথমেই চিন্তা করুন আপনার বাজেট। হ্যাঁ, আপনি ১০হাজারের নিচে ভাল মানের 4K ভিডিও ধারণে সক্ষম একশন ক্যামেরা পাবেন কিন্তু একই সাথে আপনি ৫০হাজার টাকা দিয়েও একশন ক্যামেরা পাবেন। এবং ১০হাজার আর ৫০হাজারের মাঝে পার্থক্য থাকবেই।
একশন ক্যামেরার বাজারে সবার উপরে আছে GoPro এর Hero সিরিজের ক্যামেরাগুলো। GoPro Hero 4 এর দাম বাংলাদেশে প্রায় ৪০হাজার টাকা।
আর অন্যদিকে Remax এর SD02 একশন ক্যামেরাটি পাবেন ৭হাজার টাকার মাঝেই।
হ্যাঁ, এই দুটি ক্যামেরা মাঝে ভিডিও কোয়ালিটি, লাইফ টাইম, ওয়াটার এবং ডাস্ট প্রতিরোধ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক পার্থক্য আছে। কিন্তু দামের তুলনায় Remax SD02 এর পারফর্মেন্স কিন্তু মোটেও খারাপ না। বরং বেশ কিছু ক্ষেত্রে এটি এগিয়ে আছে Hero 4 এর থেকে।
এখন বাকিটা সম্পূর্ণ আপনার উপর। আপনি কোনটা কিনবেন। আর হ্যাঁ এছাড়াও আরো অনেক ব্র্যান্ডের একশন ক্যামেরা আপনি বাজারে পাবেন। অনলাইন ঘেটে বের করুন আপনার বাজেটে আপনার জন্য সেরা হবে কোনটা আর কিনে ফেলুন একশন ক্যামেরা।
আমি হাসিবুর ইসলাম নাসিফ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 43 টি টিউন ও 76 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
বিষাদময় পৃথিবীতে আমি আনন্দ খুঁজে নিই সবকিছু থেকে। আর স্বপ্ন দেখি মহাকাশ ভেদ করে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেবার। স্বপ্নচারী আমার স্বপ্নগুলোই বাঁচিয়ে রেখেছে আমাকে। হাত ধরে চলো স্বপ্ন দেখি একসাথে।
নতুন কিছু জানতে পারলাম। ছোটকাল থেকেই দেখতাম সুটিংয়ের সময় বলে ক্যামেরা রোল একশান। অথচ এ্যাকশন ক্যামেরা নামে যে একটা ডিভাইস আছে এটা এখন জানলাম। খুব ভালো লাগলো উপকারী টিউনটি। ধন্যবাদ।